ভারত সরকার দেশবাসীর জন্য “আয়ুস্মান ভারত স্বাস্থ্য প্রকল্প” করেছে – যার ৬০% টাকা ভারত সরকারের আর ৪০% টাকা রাজ্য সরকারের থেকে আসে। যেহেতু স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র-রাজ্য সরকারের যৌথ দায়িত্বে পড়ে, এই প্রকল্পে উভয়ের অংশগ্রহণে প্রকল্পটি রাজ্যের গরীব ও প্রান্তিক মানুষজনের উপকারে আসতে পারত। কিন্তু আমাদের পশ্চিমবঙ্গে “ভারত” নাম থাকলে সেই প্রকল্প চালাতে দেওয়া হয়না! সে কারনে ২০১৬ সালে প্রান্তিক মানুষের জন্য রাজ্য সরকারের নিজস্ব প্রকল্প “স্বাস্থ্য-সাথী” চালু করা হল। অত্যন্ত দুঃখের হলেও একথা সত্যি যে, এই রাজ্যে সরকারের সব কাজকর্ম চলে শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থে।
দেশের গরীব ও প্রান্তিক মানুষের জন্য ২০০৮ সালে অনেক ঢক্কানিনাদের সাথে চালু হয় “জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প”। ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের বদলে আধুনিক, যুগোপযোগী প্রকল্প এল “আয়ুস্মান ভারত” – এটি অনেক broad based প্রকল্প। এই প্রকল্পে দেশের প্রায় ৫০ কোটি মানুষকে কভার করা হয়েছে। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল, স্বাস্থ্যখাতে অত্যধিক খরচের কারনে দেশের যে ৬ কোটি প্রান্তিক মানুষকে দারিদ্রসীমার নীচে নেমে যেতে হয়েছে, তাদের সেকেন্ডারী ও টারসিয়ারী স্বাস্থ্য পরিষেবায় হাসপাতাল খরচের বোঝা লাঘব করা। যেজন্য এই প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপক চয়নের প্রক্রিয়ায় শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে তাদের চাহিদা ও socio-economic caste অনুযায়ী ২০১১ সালের জনগণনাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এই প্রকল্প তৈরী হয়েছে। এতে বহির্বিভাগর চিকিৎসাকে যেমন রাখা হয়নি, তেমনি প্রতি পরিবারের (একজনের নামে কার্ড থাকলেই পুরো পরিবার কভার হবে) জন্য প্রতি বছর ৫ লাখ টাকার ক্যাপ করা হয়েছে। এই খরচের হিসেব কেন্দ্রীয় বাজেটে আলাদাভাবে ধরা আছে।
রাজ্যের “অনুপ্রাণিত” সরকারের “ভারত” বা “আয়ুস্মান” – কোন নামে এলার্জি আছে জানিনা – পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ২০১৬ সালে “স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্প” ঘোষণা করা হল! প্রকল্পটি চালু হলেও বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল, যারা এই প্রকল্পে যোগদান করেছে, স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডের রোগীদের ভর্তি নিতে অস্বীকার করে! কারন হিসেবে রাজ্যসরকারের তরফে চিকিৎসা খরচের প্রাপ্য টাকা না মেটানোর কথা বলা হয়। যার ফলে, রোগীর হেনস্তা ও হাসপাতাল ভাঙ্গচুরের মত ঘটনা ঘটে। যে বীমার মাত্র ৪০% টাকা রাজ্য সরকারের দায়, তা না নিয়ে ১০০% দায় নেওয়া প্রকল্প চালু করা কতখানি প্রশাসনিক বিচক্ষণতার পরিচয়, সেটা বোঝার জন্য বিশেষ বুদ্ধির দরকার হয়না। সময়ের সঙ্গেসঙ্গে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের অপমৃত্যু প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল দল ভাবতে লাগল – কিভাবে ২০২১এর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন জেতা যাবে। এই দলের modus operandi দেখলে এদের কার্যপদ্ধতির একটি নির্দিষ্ট ছক লক্ষ্য করা যায় – এরা এমন কোন আর্থিক দিক থেকে সুবিধাজনক প্রকল্প নিয়ে আসে যাতে রাজ্যের অধিক সংখ্যক মানুষ উৎফুল্ল হয় এবং তাৎক্ষণিক কিছু সুবিধা পায়। পুরো প্রকল্পের বাস্তবতা এবং তার স্থায়ীত্বের বিষয়ে এরা মোটেই চিন্তাভাবনা করে না! সবকিছুই একজনের অনুপ্রেঢ়না উদ্ভুত আইডিয়া – তার সম্ভাব্যতা বিষয়ে এই রাজ্য প্রশাসনের কোন সুস্থ চিন্তা-ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। আর সে কারনেই এইসব প্রকল্পের অপমৃত্যু ঘটে।
স্বাস্থ্য-সাথীর ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যত্যয় হল না। ২০২১এর নির্বাচনের আগে “অনুপ্রাণিত” পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৬শে নভেম্বর, ২০২০র বিধানসভার নির্বাচনের আগে ঘোষণা করে দিল যে, পশ্চিমবঙ্গের সকল বাসিন্দা (যারা ইতিমধ্যেই সরকারী কোন স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে আছেন তারা বাদে) স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্পের আওতায় আসবে। পরিবারের একজনের নামে স্বাস্থ্য-সাথী কার্ড থাকলেও কার্ডের চিপ-এ পরিবারের সকল ব্যক্তির নাম ও পরিচয় পাওয়া যাবে। খরচের ক্যাপ অবশ্য সেই পরিবার পিছু বাৎসরিক ৫ লক্ষ টাকাই থাকল। এই কার্ডটিও কিন্তু সেকেন্ডারী ও টারসিয়ারী স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে (hospitalization) শুধু প্রযোজ্য। কিন্তু গ্রাম বাংলার বেশীরভাগ মানুষ আউটডোরে যে প্রাইমারী স্বাস্থ্য পরিষেবা নেয়, সেখানে কোন রকম সাহায্য এই কার্ডে পাওয়া যাওয়ার কথা নয়! অনেকটা আয়ুস্মান ভারত প্রকল্পের নাম বদলে কপি-কাট-পেস্ট! ঐ ঘোষণার দিনের আগে পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৫০০টির মত হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের সঙ্গে রাজ্যসরকারের টাই-আপ থাকলেও পরবর্তীকালে ২০২১ সালে সেটি বেড়ে গিয়ে ১৫৯০টি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের লিস্ট পাওআ গেল। রাজ্য সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী এতে দেড়কোটি পরিবারের মোট ৭.৫ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন!
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, “বিজ্ঞাপনের গরু গাছে চড়ে”। স্বাস্থ্য- সাথী প্রকল্পের “অনুপ্রাণিত” ঢক্কানিনাদ ও পদলেহনকারী কিছু সংবাদ-মাধ্যমের “হুক্কা হুয়া” রবে রাজ্যের সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ ভাবতে লাগলেন, রাজ্য সরকার এই সুযোগ করে দিয়ে স্বাস্থ্য ফ্রন্টে বিশাল বিপ্লব ঘটিয়ে দিল!
আসলে সব ফক্কা। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্প প্রথম থেকেই একটি অসুস্থ চিন্তাধারার (ill-conceived) প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুস্মান ভারত প্রকল্পে যে সুবিধা দেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য আনা হয়েছে সেখানে মোট খরচের মাত্র ৪০% রাজ্য সরকারের বহন করার কথা। কারন, খরচের ৬০% কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়ার কথা। সব রাজ্যে এই ব্যবস্থা চলছে। এই প্রকল্প গ্রহণ করে রাজ্য সরকার রাজ্যের প্রান্তিক মানুষদের স্বল্পব্যায়ে এই প্রকল্পের সুফল দিতে পারত। কিন্তু, এই রাজ্য সরকার বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতায় কাজ করে না – রাজ্য চলে “অনুপ্রেঢ়ণা”য়। হয়ত কারো মনে হল, কেন্দ্র এই প্রকল্প চালু করলে বিজেপির রাজনৈতিক লাভ হবে – এমন ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তী হয়ে একরোখাভাবে “স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্প” প্রান্তিক মানুষের পরিবর্তে রাজ্যের প্রায় সকল মানুষের জন্য চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হল! অথচ এই খরচের জন্য বীমা সংস্থাগুলি যে টাকা নেবে তা দেওয়ার কোন সংস্থান বাজেট বরাদ্দে রাখা হল না! সুতরাং “সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে” – গোছের ছেলে ভুলানো বিজ্ঞপ্তি ও বশংবদ সংবাদ-মাধ্যম মারফৎ তার প্রচার, যেখানে স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্পের কথা বারবার এমনভাবে প্রচার করা হতে লাগল, যেন পৃথিবী ত দূর, বিশ্বব্রহ্মান্ডের আর কোথাও মানুষ এমন স্বাস্থ্য পরিষেবা পায় না, যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পেতে চলেছেন!
সময় এগিয়ে চলল। ভোটশেষ। আবার অনুপ্রেঢ়ণায় সরকার প্রতিষ্ঠিত হল। তারপর স্বাস্থ্য-সাথীর হাল কি হল? কিছু বশংবদ সংবাদ-মাধ্যম অব্দি জানালো যে, স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোম মানছে না! এর কারন খুব পরিষ্কার। এই কার্ডে চিকিৎসার খরচ রাজ্য সরকারের মেটানোর কথা। কোন বীমা সংস্থা খুব কম টাকায় অর্থ বীমা করলে তারা নিশ্চয়ই চিকিৎসার অধিকাংশ অর্থ বহন করবে না। এটাই স্বাভাবিক। এদিকে রাজ্য সরকারের এই টাকা দেওয়ার পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ নেই। সেজন্য এক অন্য খেলা শুরু করা হল। সরকার এমন পদক্ষেপ করল যাতে সরকারের উপর আর্থিক চাপ না পড়ে আর এই কার্ডও ধীরে ধীরে রাজ্য সরকারের সবার জন্য রেশন কার্ডের মত হয়ে যায়!
যখন সরকার “দুয়ারে সরকার” প্রকল্প চালু করল, তখন এই স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডের জন্য খুব কম সময় ধার্য করে রাখল। আবেদনের মাসের পর মাস অতিক্রান্ত হলেও কোন খবর নেই যে কবে বায়োমেট্রি করে কার্ড দেওয়া হবে! বিশেষতঃ যেখানে একজন মানুষের পরিবার, সেখানে কোন স্বাস্থ্য-সাথী কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে না! আবার এমন কোন সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি যে, এদের স্বাস্থ্য-সাথী কার্ড দেওয়া হবে না – কারন তাদের স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার প্রথমে বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন বেসরকারী বীমা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই খাতে সরকারের খরচ হবে ২০০০ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছরের হিসেব বলছে যে এখনো পর্যন্ত এই খাতে খরচ হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা মাত্র! এখন বীমা সংস্থাগুলির চিকিৎসা বীমার খরচ মেটানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম রাইডার থাকার কারনে রাজ্য সরকার সরাসরি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডের চিকিৎসা খরচ মেটায়। এই নিয়ে সরকারের পেমেন্ট মেটানোর ব্যপারে বিস্তর অভিযোগ থাকায় বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির সিংহভাগই স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডে সুবিধা দিতে নারাজ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং “অনুপ্রেঢ়ণা” অনেক হম্বিতম্বি করলেও এখনো অব্দি সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার শুধু মাঝেমধ্যে এ্যাডভাইসারি জারি করেছে, যা মানার কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই। এইভাবেই স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডের কার্যকারিতা ও গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট না করলে এই প্রকল্পের বিপুল খরচের বোঝা টানার ক্ষমতা কোন রাজ্য সরকারের নেই – এই সরল সত্যিটা উপলব্ধি করেই প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ! অবশ্যই অনুপ্রাণিত সংবাদ-মাধ্যম এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।
এখানে একটি বিষয়ের অবতারনা করার প্রয়োজন। দিল্লীর আম আদমী সরকার এমন প্রকল্প করে টাকা নষ্ট (দুর্জনে বলে টাকা নয়ছয়) করেনি। তারা স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দের একটা বড় অংশ রাজ্যের হাসপাতালগুলির মানোন্নয়নে কাজে লাগিয়ে দিল্লীবাসীকে হাসপাতালের সহজলভ্য – অনেকক্ষেত্রে ফ্রি – চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছে। পক্ষান্তরে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডের রাজনৈতিক ফয়দা তুললেও রাজ্যের সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির স্বাস্থ্যকেই সময়ের সাথে সাথে রুগ্ন থেকে রুগ্নতর করেছে। সরকারী হাসপাতালগুলির তথাকথিত “রোগী কল্যাণ সমিতি” তৈরী করে এবং দলীয় নেতৃত্বের হাতে তার দায়িত্ব তুলে দিয়ে হাসপাতালগুলিতে সমান্তরাল প্রশাসন তৈরী করা হয়েছে। হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নতি দূরের কথা, অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য সাপোর্টকর্মীর অপ্রতুলতা প্রতিটি হাসপাতালের সুষ্ঠু সেবা চালানোর অন্তরায় হচ্ছে। দিনকে দিন অবস্থা ঘোরালো হচ্ছে।
পরিশেষে স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্পের বিষয়ে গত ৯ই জুন, ২০২২ তারিখের একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করছি যেখানে ভেলোরের খ্রীষ্টান মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে স্বাস্থ্য-সাথী কার্ডে চিকিৎসার ব্যাপারে আগে অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে! দুটি বিন্দু উল্লেখ করা হয়েছে – প্রথমটিতে বলা হয়েছে, গুরুতর অসুস্থ (critical cases) রোগীদের ওখানে চিকিৎসা করা যাবে যদি তাদের স্বাস্থ্যভবনের থেকে ঐ প্রকল্পের জন্য “prior approval” থাকে। দ্বিতীয় বিন্দুতে বলা হয়েছে, কোন চিকিৎসকের সুপারিশ থাকা এবং তা রাজ্যের নোডাল এজেন্সির দ্বারা গৃহীত হলে তবেই এই চিকিৎসা করানো যাবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, এই রাজ্যের কোন চিকিৎসা কেন্দ্রেই ঐ চিকিৎসা সম্ভব নয়! এমন সার্টিফিকেট এই “অনুপ্রানিত” রাজ্যের কোন চিকিৎসক দেওয়ার হিম্মত রাখেন কি? অতয়েব, স্বাস্থ্য-সাথী কার্ড নাও, কিন্তু ফ্রি চিকিৎসা চেয়োনা! স্বাস্থ্য-সাথী প্রকল্পের গঙ্গাজলী যাত্রা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
Author: admin
অগ্নিপথ একটি যুগান্তকারী প্রকল্প
ভারত সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্প আমাদের সেনাবাহিনীকে শুধু সম্বৃদ্ধ করবে তা ই নয়, দেশের যুবশক্তির মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মানুবর্তিতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করবে। অল্পকথায় বলতে গেলে, এটি ১৭ থেকে ২৩ বছর (শুধু বর্তমান বছরের জন্য, অন্যথায় ২১ বছর) বয়সের যুবকদের জন্য (যুবতীরা নেভির জন্য বিবেচিত হবেন) একটি ঐচ্ছিক ট্রেণিং প্রকল্প। এই প্রকল্পে ছমাসের ট্রেণিংসহ মোট কাজ করার সময় চার বছর। শিক্ষান্তে ট্রেণিদের, যাদের “অগ্নিবীর” বলা হবে, থেকে বাছাই করে ২৫% অগ্নিবীরকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে স্থায়ী কমিশন্ড হিসেবে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। বাকীরা চার বছরের শেষে সার্টিফিকেট পাবে এবং এই ট্রেণিংয়ের পরে তাদের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থায় কর্মসংস্থানের সুবিধে হবে। এছাড়া সরকারের কিছু কিছু দপ্তরে, যেমন সিভিল ডিফেন্স, চাকরীর ক্ষেত্রে এই অগ্নিবীরদের ১০% সংরক্ষণ কোটা করা হবে। তাদের বছরে প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। ভাতার উপর নির্ভর করে মাসে ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা কেটে রেখে চার বছরের শেষে সর্বোচ্চ সুদসহ করমুক্ত ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। প্রত্যেক অগ্নিবীরের জন্য সরকার ৪৮ লক্ষ টাকার বীমার সংস্থান রাখছে। এছাড়া, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মত এদেরও ফ্রি রেশন, মেডিক্যাল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।
পৃথিবীর বহু দেশ, যেমন সুইডেন, নরওয়ে, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইরান, ইজরায়েল, বারমুডা, সাইপ্রাস, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, সিঙ্গাপুর, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়া – এইসব দেশে এমন প্রকল্প আছে। সেগুলো কিন্তু আমাদের মত ঐচ্ছিক নয় – আবশ্যিক, অর্থাৎ conscription করা হয়। এদের প্রত্যেকের প্রকল্পগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সবার মধ্যে আমাদের দেশের প্রকল্পই ট্রেণিদের পক্ষে সবচেয়ে সুবিধাজনক। তাছাড়া, ট্রেণিংয়ের শেষে ২৫% শিক্ষার্থীর স্থায়ী ক্যাডারে যোগদানের সুযোগ এইসব দেশের প্রায় কারোরই নেই। উত্তর কোরিয়াতে ত ১৪ বছরেই conscriptuon করা হয় – চলে ৩০ বছর বয়েস অব্দি! তাদের ভাতাও অতি নগণ্য। আমাদের ভাতা রাশিয়ার থেকে বেশী! আমাদের অগ্নিপথ প্রকল্প রাশিয়া, ইজরায়েল, ইরান ও তুরস্কের থেকে অনেকটাই ভালো।
তবু কিছু রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতৃবৃন্দ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে – হিংসাত্মক বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করা! কংগ্রেস দলের পারিবারিক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দলকে অগ্নিপথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই – ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা দুর্বল হোক। সোনিয়া গান্ধীর বাবা, স্টেফানো মাইনো ছিলেন রাশিয়ার কম্যুনিস্ট দলের অনুগামী (তখনকার ইটালীর বেশ কিছু মানুষ রাশিয়ার অনুপ্রেরণায় ইটালীয়ান কম্যুনিস্টদল গঠন করে)। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইটালীর সৈন্যদলে যোগ না দিয়ে পালিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। আবার সেই রাশিয়াতে কিন্তু আইনমাফিক সামরিক ট্রেণিং বাধ্যতামূলক! বিহারের এক কম্যুনিস্ট নেতা (যিনি আবার জেহাদী ইসলামের সমর্থক) বলেছেন, অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিল করতে হবে! আমি সরাসরি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে একই রকম প্রকল্প চালু রাখার জন্য রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া আর তাদের বিশেষ বন্ধু রাষ্ট্র তুরস্ক ও ইরানকে এমন প্রকল্প চালু রাখার জন্য নিন্দা করে বিবৃতি দিক – সে ক্ষমতা এসব বিদেশী রাষ্ট্রশক্তির দালালী করা কাগুজে নেতাদের নেই। ভারতের প্রতিরক্ষা দূর্বল করার চেষ্টা একটি কারনেই করা – পাকিস্তান ও চীনের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করা। একই কথা সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এখানে একটি তথ্যের অবতারনা করা বোধহয় প্রাসঙ্গিক হবে। তাহল, গত কয়েক বছরে দেশে অনলাইন কোচিং সেন্টার বা কোচিং কোম্পানীগুলির বাড়বাড়ন্ত। এদের এক একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ বিশাল! এতে বিদেশ থেকেও মোটা অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি কেন্দ্রীয়ভাবে এবং রাজ্য বিশেষে হাজার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়! এদের সম্পর্কে সাধারন মানুষের আলাদা করে কোন কৌতুহল ছিল না। কিন্তু হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু ও বিহারে অগ্নিপথ প্রকল্প বিরোধী মূখ্য চরিত্র হিসেবে এমন ই-কোচিংয়ের মালিকদের নাম উঠে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ এইসব কোম্পানীর modus operandi এবং এদের অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা। এরা বিভিন্ন ট্রেণিং ও পেশার ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির পরীক্ষারও তালিম দেয় – অবশ্যই উচ্চহারে ফি নিয়ে। পরীক্ষার কৃতকার্যতার কোন নিশ্চয়তা নেই! আবার, বিভিন্ন গবেষণার কাজে, এমনকি পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গবেষণার কাজে যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্নাতকোত্তর প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ ভাতার চেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ অগ্নিবীরদের ভাতার পরিমাণ অনেক বেশী। এছাড়া, অগ্নিবীরদের খাওয়া থাকা সহ বিভিন্ন পরিসেবা একদম ফ্রী। মেয়াদ অন্তে ২৫% অগ্নিবীরের স্থায়ী ক্যাডারে চাকরীর সুযোগ থাকায় এদের মধ্যে একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগীতা থাকবে। যেসব অগ্নিবীর সেনাবাহিনীতে স্থায়ী চাকরী পাবে না, তারা বিভিন্ন সরকারপোষিত ও সরকারী সংস্থায় চাকরীতে ১০% সংরক্ষণ পাবে। এছাড়া তাদের ট্রেণিংয়ের কারনে তারা বেসরকারী সংস্থায় চাকরী পাবে। যারা ব্যবসা করতে চায়, সেসব অগ্নিবীরদের মূলধনের জন্য ব্যাঙ্কগুলি সহজ প্রকল্পে তাদের মূলধন যোগাবে। অন্য কোন দেশ কিন্তু এই সুবিধা দেয় না।
এক অদ্ভুত যুক্তি খাড়া করে এই প্রকল্পের বিরোধীতা করা হচ্ছে – চার বছর ট্রেণিংয়ের পর সবাইকে নাকি স্থায়ী চাকরী দিতে হবে! কম্যুনিস্টসহ যে সব বিরোধী রাজনীতিবিদ একথা বলছেন, তারা তাদের শাসনে থাকা রাজ্যে কিন্তু কোন ট্রেণিং বা কোর্স করার পর স্থায়ী চাকরী দেননি বা দেওয়ার কোন প্রকল্প করেননি! সদ্য পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় পাশ করা হয়েছে একটি ট্রেণিং প্রকল্প, যেখানে ট্রেণিং শেষে চাকরীর কোন প্রতিশ্রুতি নেই – শুধুমাত্র ট্রেণিংকালে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে – অবশ্যই অন্য কোন সুবিধাছাড়া! পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী চাকরীগুলো তুলে দিয়ে শুধু চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। বিনা ট্রেণিংয়ে নিযুক্ত “সিভিক” পুলিশের চুক্তিভিত্তিক বেতন মাসিক পাঁচ হাজার টাকা, আবার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানোর “সিভিক” শিক্ষকেরও মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা। এখানে “অনুপ্রেঢ়না”য় চাকরী হয় বা যায়! এখান থেকে যখন অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অনুপ্রেঢ়না-বাণী শুনতে হয়, তখন একটিই পুরানো প্রবাদ মনে পড়ে – “চোরের মায়ের বড় গলা”! এইসব যারা করে, তারা যখন “অগ্নিপথ প্রকল্প”কে আটকাতে হিংসাত্মক ও ধ্বংসকারী আন্দোলনকে উস্কানি দিয়ে বক্তব্য রাখেন, তখন দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তারা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করছেন শুধু ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার জন্য – শত্রুরাষ্ট্রের “হাতে তামাক খাওয়া”। এরা কেউই কম্যুনিস্ট দেশগুলি ও ইসলামী দেশগুলির বাধ্যতামূলক (conscripted) সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলে না বলেই এদের ভারতের জাতীয়তাবাদ বিরোধী অভিপ্রায় বুঝতে অসুবিধা হয় না।
এই বিরোধীরা আমাদের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ সময় ধরে চালু ব্যাবস্থার কথা কিছু বলছে না। আমাদের সেনাবাহিনীতে দু ধরনের কমিশন্ড হয়। একটি পার্মানেন্ট বা স্থায়ী – এখানে অফিসাররা তাদের র্যাঙ্ক অনুযায়ী ও চাকরীর সময় অনুসারে তাদের চাকরীর মেয়াদ পূর্ণ করেন এবং অবসরগ্রহণের পর পেনশন পান। আবার বড় সংখ্যায় মানুষ সেনাবাহিনীর সব বিভাগেই শর্ট কমিশন্ড হিসাবেই সার্ভিস দেন। এদের বাহিনীতে বিশেষ কয়েকবছরের সার্ভিস দেওয়ার কথা। তারপর এঁরা যখন সেনাবাহিনী থেকে সরে যান, এককালীন exgratia সহ এঁরাও অবসরকালীন টাকা পান। সেইসঙ্গে এরা যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারী চাকরীতে – এমনকি ক্যাডার ভিত্তিক IAS ও IPsএও এরা যোগ দিতে পারেন। এঁদের জন্য সংরক্ষিত কোটার প্রবন্ধন করা আছে। সোনিয়া গান্ধীর কাছে আমার জিজ্ঞাস্য – আপনার স্বামী, শাশুড়ি এবং দাদাশ্বশুর প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় যে সিস্টেম চালু ছিল, আপনি কি তার বিরোধীতা করছেন? এই অগ্নিপথ প্রকল্প ত শর্ট কমিশন্ড সার্ভিসেরই আধুনিক ও উন্নততর সংস্করণ। এর বিরোধীতা করা মানুষজনের মোটিভ ও তাঁদের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করলে বোঝা যায় যে, তাঁরা কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরোধীতা করার অছিলায় ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরোধীতা করছেন, যা দেশের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক।
অগ্নিবীরদের তৈরী করার মাধ্যমে ভারতের যুবশক্তির মধ্যে জাতীয়তাবোধের চারাগাছ রোপধ করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অবশ্যই একাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে – গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে ভারতবিরোধী শক্তির হাতে তামাক খাওয়া রাজনীতিবিদদের শতবাধা সত্বেও। আরেকটি ব্যপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে – জেহাদীশক্তি যেন কোনভাবে এর সুযোগ নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে না পারে।
অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধীতা কেন
সম্প্রতি ভারত সরকার দেশের যুবশক্তির জন্য সামরিক ট্রেণিংয়ের একটি ঐচ্ছিক প্রকল্প ঘোষণা করেছে। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে “অগ্নিপথ প্রকল্প”। এর মাধ্যমে নির্বাচিত যুবকরা (১৭ থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত) তাদের সামরিক ট্রেণিংসহ চার বছর সামরিক বিভাগের কোন একটি জায়গায়, যেমন, স্থলবাহিনী, বিমান বা নৌবাহিনীতে সার্ভিস দেওয়ার পর তারা আবার সমাজের অসামরিক কাজে ফিরতে পারবে। আবার তারা নির্বাচিত হলে সামরিকবাহিনীতে স্থায়ী কমিশন্ড পদে যোগ দিতে পারবে। যে সকল যুবক-যুবতী এই প্রকল্পে যোগ দেবে তাদের “অগ্নিবীর” বলা হবে। এদের মধ্যে থেকে দক্ষতার ভিত্তিতে ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে স্থায়ী সামরিক কমিশনে নিয়োগ করা হবে। চার বছর শেষে সব অগ্নিবীরকে একটি শংসাপত্র certificate) দেওয়া হবে। এই শংসাপত্রের জোরে এরা বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কাজে যোগ দিতে পারবে। তাছাড়া, কিছু সরকারী সংস্থায়, যেমন, সিভিল ডিফেন্সে এদের জন্য ১০% চাকরী সংরক্ষণ করা হবে। যদিও এই প্রকল্প ঐচ্ছিক, তবু অধিক সংখ্যক আবেদন জমা পড়লে বিভিন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়া (যা সামরিক বাহিনীতে যোগদানের সময় দেখা হয়) সম্পন্ন করার পরই এদের অগ্নিপথ প্রকল্পে যোগ দেওয়ানো হবে। এদের ট্রেণিংয়ের শুরুতে বাৎসরিক ৪.৭৬ লক্ষ টাকা (আনুমানিক) স্টাইপেন্ড দেওয়া হবে ; যা ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চতুর্থ বর্ষে ৬.৯২ লক্ষ টাকায় পৌঁছাবে। এছাড়া সামরিক বাহিনীর থাকা, রেশন ইত্যাদির সব সুবিধা মিলবে। এছাড়া, এদের স্টাইপেন্ডের থেকে বাধ্যতামূলক কেটে রাখা সুদসহ করমুক্ত ১১.৭১ লক্ষ টাকা চার বছরের শেষে ফেরত দেওয়া হবে। এই সময়ে প্রত্যেক অগ্নিবীরের জন্য সরকারের তরফে ৪৮ লক্ষ টাকার বীমা করানো থাকবে।
অগ্নিপথ একটি সুচিন্তিত প্রকল্প। এটি বিভিন্ন দেশে চালু এধরনের প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। সত্যি বলতে কি, আমাদের দেশের স্বাধীনতা লাভের জন্য দেশের তথাকথিত নেতা ও রাজনৈতিক দলগুলির যতটা প্রভাব, তার থেকে অনেক বেশী প্রভাব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অর্থনৈতিক চাপ ঠেকাতে বৃটিশ রাজশক্তির ভারত ছাড়ার তাগিধের। মনে রাখতে হবে, ১৯৪৭ সালে দেশ কিন্তু বৃটিশ রাজশক্তির ছাতার তলায় ভারতীয় নেটিভদ্বারা ভারতীয়দের শাসন করার স্বাধীনতা (dominion status) পেয়েছিল। তখনকার সময় নেহেরুর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের বিনা কারনে ইসলামী-তোষণ ও দেশবিরোধী এবং পাকিস্তানপন্থী কম্যুনিস্টদের তোল্লা দেওয়া (নেহরু নিজেকে সোশ্যালিস্ট বলতে পছন্দ করতেন), কালে কালে দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ালো। এদের সম্মিলিত বাধাদানে শুধু যে জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয়ত্বের সার্থক স্ফুরণ হল না তাই নয়, তারা কম্যুনিস্ট পার্টির ভারতীয়ত্ব বিরোধী প্রাক্তণ জেনারেল সেক্রেটারী গঙ্গাধর অধিকারীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত থিসিস – যা আমাদের ভারতীয়ত্বের অ্যান্টিথিসিস – এখনো আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছে! গঙ্গাধর অধিকারীর মূল বক্তব্যগুলি হল – (১) ভারত কখনো একটি রাষ্ট্র নয়, কিছু সার্বভৌম রাজ্য/ প্রদেশের সমষ্টি; (২) ভারত শাসনের অধিকার শুধু ইসলামীদের আছে কারন তারা বৃটিশ পূর্ববর্তী শাসক; (৩) শুধু পাকিস্তান গঠনকে সমর্থন করা নয়, আসামসহ সম্পূর্ণ বাংলা ও বিহারের একাংশ পাকিস্তানের প্রাপ্য। এমন জেহাদী ইসলামী এবং ভারত বিরোধী মানুষের আজগুবী তত্ত্বকে আঁকড়ে ধরে যারা ভারতের বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশকে কলুষিত করে ভারত ভাঙ্গার চেষ্টা করছে সেই রাজনীতিবিদরা কতটা ভারতীয় ও কতটা গণতান্ত্রিক তা বোঝা দুষ্কর। পৃথিবীর সমস্ত দেশ তাদের জাতীয়তাবাদকে সবচেয়ে উঁচুতে রেখে তারপর গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার কথা বলে। আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের দেশের তথাকথিত বিরোধী নামধারী রাজনীতিবিদ আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রের নামে জাতীয়তাবাদকে অস্বীকার করে। এমন এক অস্বস্তিকর পরিবেশে এই “অগ্নিপথ প্রকল্প” শুরু হতে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের যুবক-যুবতীদের মনে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হবে। এখানেই জেহাদী ও ভারতবিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভয়! তারা জানে যে ভারতের যুবশক্তির হৃদয়ে যদি একবার দেশাত্মবোধক জাতীয়তাবাদ জেগে ওঠে তবে এই রাজনীতিকদের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি আর কল্কে পাবে না। সেজন্য বিরোধী নেতৃবৃন্দ অগ্নিপথ প্রকল্প আটকাতে দেশের যুবকদের একাংশকে মিথ্যাচারের সুচতুর জালে জড়িয়ে নিয়ে এই ধ্বংসাত্মক আন্দোলন চালাচ্ছে। এভাবে এরা সরকারে অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের বিরোধীতা ছেড়ে সরাসরি দেশের বিরোধীতায় নেমে পড়েছে!
এমন কয়েকটি দেশের কথা বলছি যাদের দেশের সেনাদলে বাধ্যতামূলক সার্ভিস দিতে হয়। তাদের সকলের প্রকল্পগুলির তুলনায় আমাদের অগ্নিপথ অনেক বেশী নমনীয় ও আর্থিকভাবে লাভজনক। দেশগুলি হল : নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, গ্রীস, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া, ইজরায়েল, সাইপ্রাস, ইরান, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, মেক্সিকো, এরিট্রিয়া এবং বারমুডা। এদের মধ্যে শুধু নরওয়ে ও সুইডেনে ছেলে মেয়ে উভয়ই সমানভাবে এবং সম বেতনে একই সময়ের জন্য conscripted হয়। অন্যদের ক্ষেত্রে বিবিধ পার্থক্য আছে। আবার ইরান ও ইজরায়েলের ক্ষেত্রে কিছু ধর্মীয় কারনে এবং উচ্চশিক্ষায় ব্যাপৃত থাকার কারনে ছাড় দেওয়া হয়। অন্যথায় এগুলো বাধ্যতামূলক অর্থাৎ conscription করে এদের নেওয়া হয়। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে কিন্তু এই প্রকল্প পুরোটাই ঐচ্ছিক। যার ইচ্ছে নেই সে আবেদন করবে না। যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই প্রকল্পের বিরোধীতা করছেন, তাদের পরিবারের কজন সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশরক্ষার কাজে ব্যাপৃত আছেন – জানার অপেক্ষায় রইলাম। আসলে এদের রাজনীতি ফোকটে কিছু পাওয়ার জন্য – দেওয়ার জন্য নয়। এরা নিজেদের ধান্দায় মানুষকে ক্ষেপায়। এদের আত্মসেবা ও পরিবার পরিসেবার মধ্যে দিয়েই এদের সেবাকার্যের পরিসমাপ্তি ঘটে!
অগ্নিপথ প্রকল্পের ফলে দেশের বিপুল যুবশক্তির মধ্যে শুধু যে জাতীয়তাবোধ বিকশিত হবে তাই নয়, এর ফলে যেমন দেশের সামরিক বাহিনীতে নতুন রক্তের সঞ্চার হবে, তেমনই দেশের জরুরী প্রয়োজনে ট্রেণিংপ্রাপ্ত দ্বিতীয়সারির সেনাদলের জোগান বাড়বে। এতে একমাত্র দেশবিরোধীশক্তি ছাড়া আর কারোর ত অসুবিধা হওয়ার কারন নেই।
এবার একএক করে এই প্রকল্প সম্পর্কে যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে তার বিশ্লেষণে আসি। প্রথমে বলি, এটি উপরে উল্লিখিত দেশগুলির মত বাধ্যতামূলক নয় – একটি ঐচ্ছিক প্রকল্প – যেখানে আবেদনের পর নির্বাচন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে নির্বাচিত হতে হবে। এরপর সাফল্যের সঙ্গে চার বছর কাটানোর পর এই অগ্নিবীরদের মধ্যে থেকে সেরা ২৫% কে স্থায়ী কমিশন্ড চাকরীতে (যোগ্যতা অনুযায়ী) নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, কম্যুনিস্টসহ দেশের যে রাজনৈতিক দলগুলি এই প্রকল্পের বিরোধীতায় নেমেছেন, তাদের না-পসন্দের একটি বড় কারন, এই প্রকল্পের ফলে যে যুবশক্তি শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা পাবে তারা আর এই রাজনীতিকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে নিজেদের জড়াবে না। এছাড়া ট্রেণিংপ্রাপ্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের সেনাদলের প্রয়োজন সব দেশেরই আছে। এরফলে দেশের সুরক্ষা শক্তিশালী হবে। যারা তা চান না, তারাই এই প্রকল্পের বিরোধীতায় নেমেছেন। এদের মনের সুপ্ত বাসনা হল, ভারতের সামরিক শক্তি দূর্বল করতে না পারলেও, কোনভাবেই তাকে আরো শক্তিশালী করা যাবে না। কিন্তু ভারতে রাজনীতি করে সেকথা সরাসরি বলা সম্ভব নয়। তাই ঘুরিয়ে অবাস্তব যুক্তি তুলে এই বিরোধীতা।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার প্রতিষ্ঠানগুলিতে গবেষকরা ভাতার বিনিময়ে গবেষণা করেন। গবেষণা অন্তে তাদের ডিগ্রি অর্থাৎ সার্টিফিকেট মিললেও স্থায়ী চাকরীর নিশ্চয়তা কেউ দেয় না। তাহলে, এই রাজনীতিকরা সেসব ক্ষেত্রে আন্দোলন করেন না কেন! এইসব গবেষকদের গবেষণা করিয়ে অধ্যাপকরা নিজেদের প্রমোশন নিশ্চিত করেন – আর এই অধ্যাপকদের বড় অংশই ভারতীয় কম্যুনিস্টদের অনুগামী। গবেষকদের ভাতাও অগ্নিবীরদের ভএভাতার চেয়ে কম। গবেষকদের নূন্যতম যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি হলেও অগ্নিবীরদের নূন্যতম যোগ্যতা বারো ক্লাশ উত্তীর্ণ হওয়ার সার্টিফিকেট। অবশ্যই শারীরিক দিক থেকে সক্ষম অগ্নিবীরদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরী পাওয়া সহজ হবে।
আবার, কম্যুনিস্ট শাসিত কেরল রাজ্যসরকার শিক্ষকদের একাংশকে ঝাড়ুদার বানিয়ে দিয়েছে! সেসময় এই রাজনীতিকরা নিদ্রামগ্ন থাকেন! এরা পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন রাজ্যে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগের সময়ও “শীতঘুম”এ আচ্ছন্ন থাকেন! শুধু “অগ্নিপথ প্রকল্প”এর সময় রিপ-ভ্যান-উইঙ্কলের মত জেগে ওঠেন! এইসব রাজনীতিকরা যেখানে ক্ষমতায় আছেন, সেখানে কম বেতনে ‘চুক্তিভিত্তিক’ ও ‘অস্থায়ী’ কর্মী নিয়োগ করলেও তাদের মাথাব্যথা শুধু অগ্নিপথ নিয়ে! যদি ভারতের সামরিক শক্তি বেড়ে যায়, যদি যুবশক্তির মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়, তবে তাদের বিদেশী “বন্ধু” ও “মনিব”দের অসুবিধা হবে! তাই এমন আন্দোলনের নামে সাধারন মানুষের অসুবিধা করা ও জাতীয় সম্পত্তি ধ্বংস করা।
কম্যুনিস্ট ও তাদের জেহাদী বন্ধুদের বলতে চাই যে, তারা কি এধরনের প্রকল্প চালু রাখা দেশগুলির, বিশেষতঃ রাশিয়া, তুরস্ক, উত্তর কোরিয়া, ইরান বা সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর নিন্দা করছে? এভাবে “ভাবের ঘরে চুরি” করে ভারতবিরোধী শক্তির হাত শক্ত করা হচ্ছে মাত্র।
পরিশেষে বলতে চাই যে, ইরান, ইজরায়েল এইসব দেশে যেমন ধর্মের ভিত্তিতে conscription থেকে কিছু ছাড় দেওয়া হয়, তেমনই ধর্মের বা ধর্মীয় কারন যেন ভারতীয় বাহিনীতে জাতীয়তাবাদের ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী না হয়, সেদিকে এই প্রকল্প পরিচালকদের নজর রাখা বাঞ্ছনীয়।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মূলে
রাজনৈতিক অসততা
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য চলছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা – সব স্তরেই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও আর্থিক উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠছে। বেআইনী নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় – যা সরকার চেষ্টা করেও আটকাতে পারেনি – তা সরকারের বিপক্ষে গেছে। শুধুমাত্র এটুকু হলে বলা যেত বিক্ষিপ্ত ঘটনা বা মুষ্ঠিমেয় ব্যক্তির দুর্নীতি ! কিন্তু না, শিক্ষাজগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির ফলে পুরো সিষ্টেমেই পচন ধরেছে।ভুয়ো শিক্ষক ও “সিভিক” শিক্ষকরা শিক্ষাদানের ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এর চেয়েও বড় কথা হল, শিক্ষার প্রতিটি স্তরের প্রতি পর্যায়ে যে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে, তা সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলের সমর্থন, বিশেষতঃ, “অনুপ্রেঢ়না” ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। দুর্নীতির বিভিন্ন পর্যায় ভালোভাবে অনুধাবন করলে বোঝা যায় যে, শিক্ষা দপ্তর থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা এবং শিক্ষার নামে শিক্ষাদানের গঙ্গাজলী যাত্রা করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। একাজে সুনিপুণভাবে অতিমারীর সুযোগ নেওয়া হয়েছে।
এই সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে “অনুপ্রেঢ়না” পেয়ে নতুন নতুন বিদ্যায়তন, মহাবিদ্যালয়, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে শিক্ষার বিস্তারের ঢক্কানিনাদ শুরু করল! আসলে, বিভিন্ন ঠিকাদাররা নির্মাণকাজ শুরু করে – আর এইসব নির্মাণে সরকারী কোষাগার হাল্কা হলেও শিক্ষার কোন উন্নতি হয় না। অবশ্য দুর্জনে বলে, এর ফলে ঠিকাদারদের মাধ্যমে বিশেষ ঘরে লক্ষ্মী আসতে থাকে! বাড়ি তৈরী হলেই “শিক্ষাঙ্গন চালু হল” বলে বশংবদ সংবাদ-মাধ্যমগুলির হুক্কাহুয়া রবে প্রথমে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হলেও পরে বোঝা গেল সব ফক্কা – কারন, কোথাও ঠিকমত অবকাঠামো (infrastructure) তৈরী হল না! নির্মানকার্যের চারগুণেরও বেশী অর্থ প্রয়োজন হয় যথার্থ অবকাঠামো তৈরীর জন্য। সেই টাকার সংস্থান (budgetory allocation) কখনো করা হয়নি। এভাবে সরকারী কোষাগার শূণ্য হলেও আখেরে শিক্ষার কোন উন্নতি হয়নি। বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবোরেটরীর খরচ অনেক বেশী; তাই চাহিদা থাকলেও অনেক জায়গায় বিজ্ঞান বিভাগ খোলাই হয়নি। শিক্ষক নিয়োগে হয়ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু লোকের লাভ হয়েছে, কিন্তু, বিভিন্ন পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করা হল – যেখানে নিঃসন্দেহে শিক্ষকের ও শিক্ষার অবমূল্যায়ন হল। এইসব শিক্ষকের অনেকেরই পড়ানোর নূন্যতম যোগ্যতা নেই আর এদের বেতন সরকারের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী, যেমন, পিওন, ঝাড়ুদার ইত্যাদির থেকেও কম। চুক্তিভিত্তিক হওয়ায় এদের চাকরীর স্থিরতাও নেই! একটা উদাহরণ দিই – মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক, এমনকি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানোর জন্য মাসিক পাঁচ হাজার টাকা মাইনের শিক্ষকও নিযুক্ত করা হল! জানিনা এক্ষেত্রে ‘কাটমাণি’ কত দিতে হয়! এমন বিদ্যায়তনও আছে, যেখানে সবেধন নীলমণি ‘মাস্টার’, যিনি সব শ্রেণীর একসঙ্গে পাঠদান করেন, তিনিই মিড-ডে-মিলের তত্বাবধায়ক, তিনিই করনিক থেকে পিওন, এমনকি ঝাড়ুদার কাম দারোয়ান! এই আমাদের অনুপ্রাণিত শিক্ষার মডেল!
উৎকোচ বা কাটমানি দিয়ে চাকরী পাওয়া শিক্ষকরা আর যাই করুন, ছাত্রদের ঠিকমত শিক্ষা দিতে অপারগ – সেকথা একমাত্র অনুপ্রাণিত সরকার ও তার আমলারা ছাড়া রাজ্যের অন্য সব মানুষই জানেন। ফলে, শিক্ষিত (!) ছাত্র-ছাত্রী রাজ্যে তৈরী হতে লাগল! আমরা রাজ্যের উচ্চতম নীতি নির্ধারকের কাল্পনিক বিশ্ববিদ্যালয় – ইস্টজর্জিয়া ইউনিভার্সিটির ডক্টরেটের কথা যেমন জানি, তেমনি রাজ্যের পায়াভারী মন্ত্রী, যিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত শিক্ষা দপ্তর সামলেছেন, তাঁর ডক্টরেট ডিগ্রির থিসিস টোকার দায়ে (plagiarism) অভিযুক্ত, সেকথাও জানি। এমন কুম্ভীলকবৃত্তির মানুষরা যদি রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের কাজকর্মে ছড়ি ঘোরান, তাহলে সেই দপ্তরের কি অবস্থা হতে পারে তা ভেবেই মানুষ শিহরিত হচ্ছে।
এভাবে যে বিষবৃক্ষ রোপন করা হল, এখন তার ফল ফলতে শুরু করেছে। এই শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্ররা বিভিন্ন বিশ্ব রেকর্ড(!) করছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্র ও তৃণমূল দলের নেতা গিয়াসউদ্দিন মন্ডল তার সাঙ্গোপাঙ্গো সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাঁকে ঘিরে ধরে অশ্রাব্য গালিগালাজ ও মারধোর করে – এমন ঘটনার ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় পুলিশ গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হলেও এখনো আমরা জানি না তার কোন শাস্তি হল কিনা। আবার বেকায়দায় পরে তৃণমূল দল জানিয়েছিল যে, গিয়াসউদ্দিন তাদের দল থেকে বহিস্কৃত – অর্থাৎ তারা স্বীকার করে নিল যে, এই নেতা তাদের দলেই ছিল। এমনই বহু রত্নের সমাহার শাসকদলের ছাত্রকুলে! ছাত্রভর্তির সময় বিভিন্ন মহাবিদ্যালয়ে শাসকদলের ‘ছাত্রনেতা’দের কন্ট্রোলে ছাত্রভর্তির পদ্ধতি চলে। কলেজ প্রশাসন ও অধ্যক্ষ এদের অঙ্গুলীহেলনে চলতে বাধ্য হন। এখানেও ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন, ছাত্রভর্তির সময় মেধা নয়, টাকার বিনিময় ব্যবস্থা প্রাধান্য পায়। অনেক হৈচৈ হলেও, বছরের পর বছর অনলাইনে ভর্তির পদ্ধতি এই রাজ্যে চালু করা হয়নি। পরে যখন তীব্র সমালোচনার চাপে সরকার সাম্প্রতিককালে অনলাইনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করল, তারপর থেকে পরীক্ষাটাকেই হাস্যকর করে তোলা হল। কিভাবে? প্রথমে অর্ধেক পরীক্ষা নিয়ে, অতিমারীর অজুহাতে বাকি অর্ধেক পরীক্ষার তথাকথিত গড় নম্বরের নামে মনগড়া বিশাল নম্বর দিয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থাকেই প্রহসনে পরিণত করা হল। না জেনে এবং না পড়েও বিশাল নম্বর পাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা খুশী হল। তাদের অভিভাবকেরা উজবুকের মত আনন্দে মিষ্টি খাওয়ালেন! তারপর দেখা গেল, এত বিশাল নম্বরেও মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাচ্ছে না! সবাই ত ঝুড়িঝুড়ি নম্বর পেয়েছে – মুড়ি মিছরি এক দর! সুতরাং, সেই ভর্তি প্রক্রিয়ায় চোরা পথ ও অর্থদন্ড….। এবার এই নেতিবাচক শিক্ষানীতির পর্যালোচনা করা যাক।
আগে একাধিকবার লিখেছি, আমাদের রাজ্যে অনলাইনে পড়াশুনা ভাঁওতা ছাড়া আর কিছু নয়। অতিমারীর সময় দুবছর পড়াশুনা বন্ধ ছিল। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানের বদলে অনলাইন পড়াশুনার স্মার্ট ক্লাস ও ই-লার্নিং পদ্ধতির সঙ্গে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ত দুরের কথা, উচ্চশিক্ষায় ৯০% এর বেশী ছাত্র-ছাত্রী পরিচিত নয়। এমনকি অধিকাংশ শিক্ষকেরও এই ব্যবস্থায় মানিয়ে নিতে অসুবিধা আছে। তাছাড়া, রাজ্যের অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা, বিদ্যায়তনগুলির অবকাঠামো এমন নয় যে, ই-লার্নিং সেখান থেকে সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে। এর অবিসংবাদী ফল হল, দু বছর কোন রকম লেখাপড়া নেই; অথচ মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেল, অনলাইন পরীক্ষার নামে টুকে পরীক্ষার পদ্ধতি (সহযোগী বা অভিভাবকের সহযোগীতায়) এবং পরীক্ষার মূল্যায়নের নামে প্রহসন শুরু হওয়ায়! কিছু না পড়ে এবং না জেনে উচ্চমানের নম্বরসহ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশ করানোয় রাজনৈতিক তুষ্টিকরন হলেও সমাজ কয়েকটি অপুরনীয় ক্ষতির মুখে পড়ল। প্রথম, ক্লাস সিক্সে পড়ার শুরু থেকে কিছু না পড়ে দু বছর বাদে ক্লাস এইটের পড়া বোঝা কারোর কম্মো নয়! সময় দিয়ে ধীরে ধীরে আরো কয়েক বছরের সরকার ও শিক্ষক-অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টায় এই অসুবিধা দূর হতে পারত। সরকার সেই রাস্তায় না হেঁটে, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা বজায় রাখায় শর্টকাট পথে না গিয়ে এবং পাঠ্যক্রম ও পঠন পদ্ধতির পরিবর্তন না করে পরীক্ষার নামে ধ্যাষ্টামো করা হল। অন্যায্যভাবে নম্বর বাড়ানোর প্রক্রিয়া গণতন্ত্রীকরণ করা হল! এর ফলে, ছাত্র-ছাত্রী ত বটেই, তাদের অভিভাবকদের মনেও অহংকার ও পড়াশোনা না করেও নম্বর পাওয়ার অধিকার জন্মাল!
অতিমারী শেষ হওয়ার পর যখন শ্রেণীকক্ষে পঠন-পাঠন শুরু হল, তখন আবার ধীরে ধীরে সেই পদ্ধতি – লেখাপড়া করার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদের ছুতো খোঁজা শুরু হল। সরকারের এমন “অনুপ্রাণিত” সিদ্ধান্তের ফলে যে প্যানিক বাটন দাবানো হল, তার ফলে সাধারণ জনগণও বুঝে ফেলল যে, এই সরকার শিক্ষাদানের দায়িত্ব না নিয়ে বিভিন্ন ছুতোনাতায় স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার যোজনা করছে। এরা যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ণ করছে তাতে তারা খুশী হলেও রাজ্যের শিক্ষার সামগ্রিক অবমূল্যায়নের ছবি রাজ্যের বাইরের মানুষদের কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেল। এরমধ্যে উচ্চশিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীরা অনলাইন পরীক্ষার সুযোগে টুকে পরীক্ষা দেওয়ার যে গণতান্ত্রিক (!) অধিকার গত দু বছরে অর্জন করেছে, তা ছাড়তে তারা স্বাভাবিকভাবেই রাজী নয়। এমনিতেই রাজ্যের উচ্চশিক্ষার হাল সর্বজনবিদিত; তার উপর অনলাইনের পরীক্ষা পদ্ধতির নেপথ্য কারন সবার জানা। কাজেই সরকার পরীক্ষার নিয়ম বদল করে পুরোনো অফ লাইন পরীক্ষা ফিরিয়ে আনার উদ্দোগ নিল। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা সরকারী অনুপ্রেঢ়নার তল্পিবাহক হয়ে কাজ করেন বলে এ ব্যপারে তাদের আলাদা কোন বক্তব্য থাকল না। শিক্ষাব্যবস্থায় অশিক্ষার অনুপ্রেঢ়না যেভাবে ফল্গুধারায় প্রবাহিত হয়ে চলেছে, তাতে এর সদগতি আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে মাত্র। কারন, উচ্চশিক্ষায় নম্বর পাওয়ার সামাজিক দায়বদ্ধতা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অন্যদেরও আছে। এরা গাঁটের কড়ি খরচ করে (কাটমাণি বাবদ) ভর্তি হয়েছে – এদের বদ্ধমূল ধারণা দেওয়া হয়েছে যে ভর্তি হলেই ঝুড়িঝুড়ি নম্বর সহ পাশ করানোটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার! আবার রাজ্যে মেধার ভিত্তিতে চাকরীর সুযোগ না থাকায় এই ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরীক্ষেত্রে মেধার মূল্যায়ণ হচ্ছে না। এরাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি হচ্ছে, কাটমাণিযোগে সরকার ও সরকারপোষিত সংস্থায় চাকরীর দরজা খোলে – সেখানে মেধার প্রয়োজন নেই। সে কারনে সরকার তথা শাসকদলও হয়ত চাইছে মেধা বিকাশের খরচসাধ্য ও শ্রমসাধ্য পদ্ধতি জলাঞ্জলী দিয়ে কম খরচে বিনা ঝামেলায় স্ফীত মার্কশিট ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষার দায় মেটানোর!
এইভাবে দুবছর অতিক্রান্ত হওয়ায় শিক্ষা ব্যবস্থায় যে বাৎসরিক ক্রমোন্নয়ণ পদ্ধতি চালু ছিল তা নষ্ট হয়ে গেল। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার মূল্যায়ণ সম্পর্কে নিশ্চিন্ততার উচ্চ ধারনা জন্মালো। ২০২২ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমরা এই ধারনার বহিঃপ্রকাশ দেখলাম। সরকারী মদতে শিক্ষায় দুর্নীতির সর্বব্যাপী প্রভাবে বশীভুত শিক্ষক সমাজের একাংশ দুর্নীতির সুযোগ গ্রহণ করল। এমন অনেক স্কুল “হোমসেন্টার”-এর সুযোগ নিয়ে মেধা তালিকায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব (অন্য কথায় দৌরাত্ম) জাহির করল। আবার অনেক ভালো স্কুল, যেমন রামকৃষ্ণ মিশনের অধীনে থাকা স্কুলগুলি, মেধা তালিকায় পিছিয়ে গেল। নৈতিকতার বিনাশের সঙ্গেসঙ্গে শিক্ষার বিনাশের পথ তৈরী হল। এই পরিস্থিতিতেও যেসব ছাত্র-ছাত্রী ফেল করল, তারা রাস্তা অবরোধসহ আন্দোলন শুরু করল আর আমাদের রাজ্যের সংবাদ-মাধ্যম সেসব প্রচার করতে লাগল! সংবাদে দেখলাম, এক ছাত্রী বলছে তারা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে লেটার পেলেও ইংরাজীতে “ফেল” করেছে। সাংবাদিকের একজন তাকে umbrella বানান জিজ্ঞেস করায় সে প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে উত্তর দিল, “amrela”!সেখানে একজন অভিভাবিকা জানালেন, যারা স্মার্টফোনে বাংলায় মেসেজ করে তারা ইংরাজীতে পাশ করলেও তাঁর মেয়ে ইংরাজীতে মেসেজ করে, তাই তাকে ইংরাজীতে ফেল করানো চলবে না- পাশ করাতে হবে! এতেই বোঝা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের অনুপ্রাণিত শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় গেছে।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার জলছবি দেখে সাধারন মানুষ আঁতকে উঠলেও “অনুপ্রেঢ়না” ও “অনুপ্রাণিত সরকার” খুশী! কারন, ডাক্তারের বদলে মুদ্দোফরাস দিয়ে মানুষের চিকিৎসা করলে যা হয়, জালি বা টোকা পিএইচডিরা যখন শিক্ষা জগৎ পরিচালনা করেন, তখন এইভাবেই শিক্ষার চিকিৎসা হয়! শুধু, মাঝখান থেকে রোগীমৃত্যু স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়।
এখন সময় এসেছে, পশ্চিমবঙ্গের অভিভাবকদের ভাবতে হবে, তাদের সন্তানরা “ভাতাজীবি” হয়ে কুকুরের মত বাঁচবে নাকি যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। ভাবনা ও দায়িত্ব দুইই রাজ্যের জনগণের।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দপ্তরে মাৎসন্যায়
কথায় আছে, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে যুদ্ধ নয়, তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দাও – তা হলেই সে জাতি ধ্বংস হবে। এই কথার গুরুত্ব বুঝেই ভারতের ক্ষতি সাধনে উৎসুক বিদেশী রাষ্ট্র, যারা আবার ভারতীয় কম্যুনিষ্টদের গডফাদারও বটে, তাদের অঙ্গুলী হেলনে ও কেন্দ্রের পরিবারকেন্দ্রীক সরকারের সহযোগীতায় ভারতের শিক্ষা জগতের সকল দায়িত্ব দেওয়া হল দেশের কম্যুনিষ্টদের! যে কটি নতুন কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী হল, সবকটি জাতীয়তাবিরোধী এবং জেহাদীদের আঁতুরঘর হিসেবে কাজ করতে লাগল! গভর্নিং বডি থেকে শিক্ষক নির্বাচন – প্রমোশান, ছাত্রভর্তি, সিলেবাস তৈরী – সকল ক্ষেত্রেই এদের মানসিকতা প্রতিফলিত হল। এই কম্যুনিষ্টদের মধ্যে বড় সংখ্যক মানুষ পশ্চিমবঙ্গের হওয়ায় এবং পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ সময় বামফ্রন্টের আড়ালে সিপিএমের শাসন কায়েম থাকায়, শিক্ষাক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ বিরোধী চিন্তা, জেহাদীদের সমর্থনকারী চিন্তাধারার স্ফুরণ শুরু হল! শিক্ষক চয়নের ক্ষেত্রে মেধার বদলে কম্যুনিষ্ট আদর্শে বিশ্বাসীদের শিক্ষক হিসেবে নেওয়া হল! শিক্ষক চয়নে দলদাস প্রথা একমাত্র প্রাধান্য পেল! পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে, আলিমুদ্দিনে অদৃশ্য cv যদি বিবেচিত হত তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হওয়া যেত! ক্রমে তা স্কুল পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়ল। প্রধান শিক্ষক, প্রিন্সিপাল ও উপাচার্য চয়নেও আলিমুদ্দিনের সবুজ সংকেতের কথা তখন সবাই জানত। ফলে, যারা এসব পদের প্রার্থী হতে আকাঙ্খা করতেন, তাঁরা “আগে কেবা প্রাণ, করিবেক দান” গোছের পার্টিঅন্ত প্রাণ বা আগমার্কা কম্যুনিষ্টের ভেক ধরে কাজ হাসিল করতে চাইতেন!
২০১১ সালে পরিবর্তনের নামে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতার সিংহাসনে বসলেন “সিপিএমের মেধাবী ছাত্রী” শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জী। তিনি ক্ষমতায় এসেই “টাকা নাই” আর “কেন্দ্র দেয় না” গোছের সিপিএম মার্কা অজুহাতগুলি সামনে রেখে সরকার চালাতে শুরু করলেন। দশ বছর পর তাঁর সরকারের দুর্ণীতিগুলি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করল। সিপিএম শিক্ষা দপ্তরকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করলেও ব্যক্তিগত অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি। কিন্তু ঐ যে “মেধাবী ছাত্রী” – তিনি ত গুরুকেও ছাপিয়ে যাবেন – আর সেটাই ত স্বাভাবিক। শিক্ষা দপ্তর থেকে অর্থ উপার্জনের নতুন নতুন টেকনিক আবিষ্কার হল! এটি সম্ভব হল দুটি কারনে – প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কশূণ্য মানুষজনের দায়ীত্বে শিক্ষা দপ্তরকে আনা; এবং দ্বিতীয় কারন অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের শিক্ষার রাজনীতিকরনের সঙ্গে পরিচিতি থাকায় এই বিষয়ে তাদের অনাগ্রহের কারনে দুর্ণীতির নতুন নতুন টেকনিকের প্রয়োগ!
২০১৬ সালের নির্বাচনে জেতার পর মমতা ব্যানার্জী শিক্ষামন্ত্রী করে আনলেন শিল্পমন্ত্রী হিসেবে চুড়ান্ত অকৃতকার্য এবং নিজের ডক্টরেট ডিগ্রির থিসিসটি প্লেজিয়ারিজমের অভিযোগে অভিযুক্ত – শ্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এর থেকেই বোঝা যায় মূখ্যমন্ত্রীর শিক্ষা দপ্তর থেকে প্রত্যাশা কি ছিল!
শিক্ষা দপ্তরের দায়ীত্ব নিয়ে পার্থবাবু উন্নয়ণের বন্যা বইয়ে দিলেন! এমনকি, রাজ্যের প্রত্যন্ত জায়গায় বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর হিড়িক পড়ে গেল! নির্মানের কন্ট্রাক্ট পাওয়া ঠিকাদাররা সুদৃশ্য নির্মান শুরু করলেন – ঢক্কানিনাদে শিক্ষার উন্নয়ণ ঘোষিত হল! মোসাহেব এবং অর্ধশিক্ষিত পেড ‘বুদ্ধিজীবী’র দল উদ্বাহু হয়ে নৃত্য শুরু করল! নতুন এইসব শিক্ষায়তন দুরের কথা, যেসব শিক্ষায়তন আগে থেকেই চলছে, তাদের পরিকাঠামোর অবস্থা সরকারের পর্যাপ্ত অর্থ না দেওয়ার কারনে ধুঁকছে। ফলে, জোড়াতালি দিয়ে এই শিক্ষায়তনগুলি চালু করলেও এদের শোচনীয় পরিকাঠামোর কারনে শিক্ষার মানের সঙ্গে সমঝোতা করতে হচ্ছে। এরপর আসে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের প্রশ্ন। এখানে মন্ত্রী মহোদয় প্রবল শক্তিশালী উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরী করলেন এবং নিয়োগ সংক্রান্ত যে কমিশনগুলি আছে, তার উচ্চপদে কিছু মানুষকে পছন্দমত নিয়োগ করলেন! এই কমিটিতে মন্ত্রী মহোদয়ের OSDকেও তিনি সদস্য করলেন! তাঁরা এমন কাজ করলেন যে, বাগ কমিটির সুপারিশে ও মহামাণ্য হাইকোর্টের আদেশে তদন্তকারী সংস্থা CBI এই কমিটির চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহা সহ মাধ্যমিক বোর্ডের সভাপতি কল্যানময় গাঙ্গুলী, সৌমিত্র সরকার, সমরজিৎ আচার্য ও অশোক কুমার সাহার বিরুদ্ধে পুলিশে FIR দায়ের করেছে! এছাড়া, বাগ কমিটি বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেছেন, সুবীরেশ ভট্টাচার্য, চৈতালী ভট্টাচার্য, শর্মিলা মিত্র, মহুয়া বিশ্বাস, শেখ সিরাজউদ্দিন ও শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে! এই মন্ত্রীকৃত কমিটি ও বোর্ড যোগ্যতামানের এবং পরীক্ষার নম্বরের তোয়াক্কা না করে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডির কর্মী নিয়োগে পাহাড় প্রমাণ দুর্ণীতি করছে। চাকরী পাওয়া ৩৮১জন প্রার্থীর মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষাতেই বসেনি! আকী ১৫৯ জন মেধা তালিকার নীচের দিকে থাকায় তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরী পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। আবার মেধা তালিকায় নাম থাকলেও ৬৫০০ জনের চাকরী হয়নি! উচ্চ-প্রাথমিক, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক হারে দুর্ণীতি হয়েছে। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডির নিয়োগের ক্ষেত্রে বেনিয়মের জেরে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে ৫৪২ জনের বেতন বন্ধ হয়েছে।
সুতরাং দপ্তরের দুর্ণীতি সর্বব্যাপ্ত – fountain of corruption এর শিখরে আছেন পরম ব্রহ্মরূপী দপ্তরের প্রাক্তণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়! কারন এই মন্ত্রীর নির্দেশেই FIRএ নাম থাকা বিদ্বজনরা (দুর্জনে বলে দালালরা) সকলেই তাঁদের নিয়োগপত্র পান! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি শিক্ষা দপ্তরকে ব্যবহার করে এই পাহাড়-প্রমাণ দুর্ণীতি সংঘটিত হয়েছে? কেন? এর সোজা উত্তর – আর্থিক লেনদেন! সাধারণ মানুষ থেকে ধরে তৃণমূল দলেরই প্রাক্তণ মন্ত্রী তথা প্রাক্তণ CBI আধিকারিকের অভিযোগ – লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে এই সব সরকারী চাকরী বিক্রি করা হয়েছে! এখানে দুটি কথা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রথম হচ্ছে, মন্ত্রী এসবের কিছু জানতেন না – একথা একদম অবিশ্বাস্য – তাহলে বলতে হয় এই রকম অযোগ্য মন্ত্রী পৃথিবীতে কখনো কেউ দেখেনি। দ্বিতীয় হচ্ছে, যিনি ভোটপর্বে সবসময় বলতেন, “২৯৪টা সিটে আমিই প্রার্থী” অর্থাৎ তাঁকে দেখেই সবাই তাঁর দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন; এবং যাঁর অনুপ্রেঢ়ণা ছাড়া যে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় না – সেই মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এই দুর্ণীতির কিছুই জানতেন না – একথা হাস্যকর শোনাবে। যেজন্য CBI একাধিকবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যে টাকা দুর্ণীতিতে তোলা হয়েছে তার হদিশ খুঁজলেই আসল মাথাদের খোঁজ মিলবে। CBI একাজে ব্যর্থ হলে কিন্তু সেটিং তত্ত্বের বাতাস গতি পাবে।
এরপর আসি শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী পরেশ অধিকারীর কথায়। এই স্বনামধন্য (!) মন্ত্রী মহোদয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্কুল লেভেলেই সমাপ্ত হয়েছে! এইসব মানুষকে যিনি শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রীত্বে চয়ন করেন তাঁর উদ্দেশ্য শিক্ষার বিকাশ কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। এই তালেবর মন্ত্রীর কণ্যা অঙ্কিতা অধিকারী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে শিক্ষিকা নিয়োগের পরীক্ষায় ৬১ নম্বর পেয়ে ইন্টারভিউতে কোন ডাক পাননি। অথচ অন্য একজন চাকরী প্রার্থী ববিতা বর্মন একই পরীক্ষায় ৬৯ নম্বর পেয়ে ইন্টারভিউতে ডাক পান এবং সেখানে আরো ৮ নম্বর পেয়ে মোট ৭৭ নম্বর পাওয়ায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে প্রথম স্থানে থাকেন। যখন চাকরী প্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, দেখা যায়, অঙ্কিতা অধিকারী প্রথম এবং ববিতা বর্মন ওয়েটিং লিস্টে! মন্ত্রী-কণ্যা নিয়োগপত্র পাবার সঙ্গেসঙ্গে বাড়ির পাশের সরকার পোষিত স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন! হাইকোর্টে করা ববিতা বর্মনের মামলায় এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসে। SSCর চেয়ারম্যানকে মহামান্য বিচারক তথ্য দিতে বলায় চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার এই তথ্য হাইকোর্টে পেশ করেন। ফলে, হাইকোর্ট অঙ্কিতাকে বেআইনী নিয়োগের কারনে বরখাস্ত করার আদেশ দেন। এদিকে এই ঘটনার পরেই সিদ্ধার্থ মজুমদার তাঁর পদ থেকে অব্যহতি নেন! এর থেকে বোঝা যায় যে দুর্ণীতির উন্মোচন করতে যিনি সহায়তা করবেন, এ রাজ্যের প্রশাসনে তাঁর কোন স্থান নেই।
এই পরেশবাবুকে তদন্তকারী সংস্থা CBI জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালে তিনি সকণ্যা পদাতিক এক্সপ্রেসে চেপে কোলকাতায় আসার বদলে মাঝরাস্তায় ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান। তারপর হয়ত মহামান্য আদালতের কড়া পদক্ষেপের ভয়ে তিনি একদিন পর CBIএর দপ্তরে হাজির হন। শিক্ষা দপ্তরের দুই দুই মন্ত্রীকেই তদন্ত চলার সময় মহামান্য আদালত সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এটি শোভনভাবে দেওয়া পরামর্শ – আদেশ নয়। সুতরাং মূখ্যমন্ত্রী এই পরামর্শ মানতে বাধ্য নন। তিনি তা মানেননি। মন্ত্রীসভার অন্যতম সিনিয়ার সদস্য জনাব ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেছেন, “পার্থদা দায়ী হলে আমরাও দায়ী” – অর্থাৎ উনি সঠিকভাবেই মন্ত্রীসভার যৌথ দায়ীত্বের কথা বলেছেন। যৌথ দায়ীত্ব থাকলে এই দুর্ণীতির কাদা কি মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, এমনকি মূখ্যমন্ত্রীর গায়েও লাগবে না? তদন্তকারী সংস্থা মন্ত্রীর বানানো কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্ণীতির জন্য FIR করেছে; মন্ত্রীকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করছে – যা আটকানোর জন্য মন্ত্রী যত রকম সম্ভব, ততরকমভাবে পদক্ষেপ করছেন! আরেক মন্ত্রীর দেশসেবা নিজের পরিবারকে সেবা ও অন্যদের অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করার মাধ্যমেই স্ফুরিত হয়েছে – এই অভিযোগে তিনি CBIএর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি। এদের মন্ত্রীসভায় রেখে দেওয়া আইনত ঠিক হলেও কতটা শোভন? অবশ্য দু কান কাটা মানুষ শোভনীয়তার ধার ধারেন না। তবে, এই পদক্ষেপের পর সন্দেহের তীর মন্ত্রীসভাসহ মূখ্যমন্ত্রীর দিকে যে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। তথাকথিত ‘সেটিং তত্ত্ব’ মিথ্যা প্রমাণের দায় এখন CBIএর উপর! পশ্চিমবঙ্গের অগণিত শিক্ষিত বেকারকে বঞ্চিত করে যরা অসৎ উপায়ে শিক্ষার পরিকাঠামোকেই ধ্বংস করছে তাদের ক্ষমা করাও পাপ।
শিক্ষাঙ্গনে দলদাস ছাত্র নামধারী সমাজবিরোধীদের হুঙ্কার, অনলাইন পরীক্ষার নামে গণটোকাটুকির সুযোগ চালু রাখা, রাজনৈতিক স্বার্থে পাঠ্যক্রম তৈরী, শিক্ষকতার নামে শুধুই রাজনীতি আর শিক্ষাঙ্গনের উন্নয়ণের নামে ঠিকাদারদের থেকে কাটমাণি সংগ্রহ – এইসব ব্যাধি রাজ্যের শিক্ষা-ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে তীব্র গণ-আন্দোলন সংগঠিত করা।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দপ্তরের গঙ্গাজলী যাত্রা
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী, উচ্চমাধ্যমিক পাশ, শ্রী পরেশ অধিকারী মহাশয়। তাঁর মেয়ের চাকরীর ক্ষেত্রে দুর্ণীতির গন্ধ থাকায় তদন্তের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা (মহামাণ্য হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক) CBI তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকায় তিনি পদাতিক এক্সপ্রেসে কোলকাতায় আসার নাম করে মাঝপথে ‘হাওয়া’ হয়ে যান। তিনি শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী এবং তাঁর নিজের মেয়েকে স্কুল, শিক্ষা কমিশনের ইন্টারভিউ ব্যতিরেকে প্রথম স্থান দেওয়া হয় এবং তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী বাড়ির পাশের সরকার পোষিত স্কুলে পাকা চাকরীতে যোগ দেন! যে মেয়েটির যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরী পাওয়ার কথা সেই মেয়েটি, ববিতা বর্মণের মামলার ভিত্তিতে মহামাণ্য আদালত এই বিধান দেন। SSCর সদ্য প্রাক্তণ চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার হাইকোর্টে জানান, অঙ্কিতার মোট নম্বর ৬১ হওয়ায় সে ইন্টারভিউতে ডাক পায়নি! এদিকে ববিতা বর্মণের নম্বর ৬৯ হওয়ায় সে ইন্টারভিউতে ডাক পায় ও ইন্টারভিউতে ৮ নম্বর পেয়ে মোট ৭৭ নম্বর নিয়ে ওয়েট লিস্টে দ্বিতীয় হয়! প্রথম স্থানে ৬১ নম্বর পেয়ে ইন্টারভিউতে ডাক না পাওয়া অঙ্কিতা অধিকারী! মন্ত্রী মহোদয় আর কি করেন- যঃ পলায়তি সঃ জীবতি – নীতিতে পালালেন। হাইকোর্টে তাঁর যখন রক্ষা কবচ মিলল না তখন বাধ্য হয়ে গ্রেপ্তারীর ভয়ে তিনি পরদিন CBIএর জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হলেন! বামফ্রন্টের আমলে খাদ্য দপ্তর সামলেছেন – দুর্ণীতির অভিযোগ ছিল বিস্তর। তারপর হাওয়া মোড়গের দলবদলু অবস্থানে এখন তৃণমূলে। এহেন সংরক্ষিত জাতির নেতা এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর যোগ্যতা যা তাতে যিনি একে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বানিয়েছেন তাঁর শিক্ষা দপ্তর সম্পর্কে ধারনা নিয়ে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। দলটির নাম তৃণমূল – যা বামফ্রন্টের বকলমে সিপিএমের উন্নততর(!) সংস্করণ।
যদি শিক্ষায় দুর্ণীতিকরণ দলের নীতি না হয়, তবে প্রাক্তণ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে দল কি অবস্থান নিচ্ছে – তাঁকে কি সমর্থন করছে না? বরং দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “পার্থদা দায়ী হলে আমরাও দায়ী” – তিনি বলতে চেয়েছেন যে, পার্থবাবুর কাজের দায়িত্ব যৌথভাবে সমগ্র মন্ত্রীসভার। খুব ভালো কথা। মহামাণ্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ দুর্ণীতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাঁকে এবং পরেশ অধিকারীকে মন্ত্রীসভা থেকে সরানোর জন্য মূখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। যে কোন মোটা মাথার দলীয় সমর্থক বলবেন যে মন্ত্রীসভায় মূখ্যমন্ত্রী কাকে রাখবেন আর কাকে সরাবেন তা তঁর এক্তিয়ারে পড়ে। শুধু তাদের মনে করিয়ে দিই, এর পরও যদি এই দুই কালিমালিপ্ত মন্ত্রীকে মূখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীসভায় বহাল রাখেন, জনাব ফিরহাদ হাকিমের কথার রেশ টেনে বলতেই হয় যে, এদের দপ্তরের দুর্ণীতির দায় পুরো মন্ত্রীসভার সঙ্গে সঙ্গে মূখ্যমন্ত্রীর উপরেও বর্তায়!
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মন্ত্রীত্বে থাকাকালীন SSC সহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক নিয়োগ ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে pick and chose পদ্ধতিতে যেসব কমিটি তৈরী করেছিলেন এবং যেসব কর্মকর্তা চয়ন করেছিলেন, তাদের সকলের সঙ্গেই দুর্ণীতি চক্রের একাত্মতা – এসবই যে ‘পরম ব্রহ্ম’ থেকে উৎপত্তি – সেই তিনি হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়! এক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ সহ গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগে পাহাড়প্রমাণ দুর্ণীতির প্রাথমিক প্রমাণ মহামাণ্য হাইকোর্টের নজরে এসেছে। আদালত নিযুক্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বাগ কমিটির রিপোর্ট অনুসারে ৩৮১ জন চাকরী প্রাপকের মধ্যে ২২২ জন পরীক্ষায় বসেনি! বাকী ১৫৯ জন নম্বরের নিরিখে যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের তুলনায় অনেক কম নম্বর পাওয়া! কমিশনের লিস্টে নাম থাকলেও ৬৫০০ জন প্রাথমিকে চাকরী পায়নি! বাগ কমিটি চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল্যানময় গঙ্গোপাধ্যায় সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলার সুপারিশ করেছেন। এছাড়া বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে সুবীরেশ ভট্টাচার্য সহ শিক্ষা জগতের ৬ জন উচ্চস্থানীয় হাইপ্রোফাইল ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ৫৪২ জন বেআইনীভাবে নিযুক্ত গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মচারী(!)র বেতন বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীকণ্যা অঙ্কিতা অধিকারীকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন হিসেবে পাওয়া সমস্ত অর্থ সরকারকে ফেরৎ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবু, দু কান কাটার মত এই দুই মন্ত্রীকে এখনো বহাল রাখার অর্থ হচ্ছে এদের দুর্ণীতিতে দল ও রাজ্য সরকারের শিলমোহর প্রদান।
প্রথমে যখন পরেশ অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হল তখনই তিনি “ঠাকুর ঘরে কে”, “আমি কলা খাইনি” গোছের কাজ করলেন – অর্থাৎ আপীলে জেতার আশায় মেয়েকে নিয়ে পালালেন। এতে ওর মোটিভ পরিষ্কার হল। তেমনি, পার্থবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও তিনি উচ্চতর ও উচ্চতম আদালতে চেষ্টা চালালেন তা বানচাল করতে! তিনি যদি নির্দোষ হন ত ভয়টা কিসের! তিনি কি নিজেকে দোষী বলে জানেন বলেই এতগুলো যোগ্য ছেলেমেয়ের চাকরী না দিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া মানুষগুলোর বিচারের রাস্তায় কাঁটা বিছাতে চাইছেন!
যদিও এই গুণধর মন্ত্রীদ্বয়কে মন্ত্রীসভায় রেখে দিতে মূখ্যমন্ত্রীর কোন আইনী অসুবিধা নেই; যদি শেষমেশ এদের দুর্ণীতি প্রমাণিত হয়, তখন মহামাণ্য আদালত মূখ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভার বিরুদ্ধে কোন আদেশ দিলে তা মানতে প্রশাসন বাধ্য। ভোটে জিতে যা খুশী তাই করা যায় না – নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে কাজ করতে হয় – এ শিক্ষা রাজনীতিকরা কবে নেবেন? তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, “দল তার পাশে নেই”! এদিকে পরেশবাবু এখনো মন্ত্রীসভার সদস্য! এমন দ্বিচারিতা “অনুপ্রাণিত” দলের পক্ষেই সম্ভব। এখানে একটি ব্যাপার মনে রাখা দরকার – সংবাদ-মাধ্যমের প্রতিক্রিয়ার যেমন আইনী গুরুত্ব নেই, তেমনি কোন মন্ত্রী, এমনকি মূখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেঢ়নায় প্রশাসন চলে না। প্রশাসন চলে প্রশাসনের কর্তা বা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধানদের নির্দেশে – যার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছেন মূখ্য সচিব। তিনি আদালতের আদেশ মানতে বাধ্য। কোন অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু করতে পারেন না। মন্ত্রীরা (মূখ্যমন্ত্রীসহ) নীতি নির্ধারণ করেন। তবে তা পালন করার দায় বিভাগীয় সচিবদের। সেজন্য এই মন্ত্রীদ্বয়কে যদি আদালতের আদেশে সরাতে বাধ্য হয়, তার প্রেক্ষাপট তৈরীর জন্য দল তার পাশে নেই – ধরনের কথা বলতে হচ্ছে!
জনমানসে যে ব্যাপারগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে তা হল, পরীক্ষা নিয়ে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিষ্ঠিত আইনী পদ্ধতিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে টাকা ও পরিচিতির (এক্ষেত্রে মন্ত্রীর মেয়ে ধরা পরেছে) মাধ্যমে নিয়োগ হয়েছে যেখানে মেধার কোন মূল্য নেই! বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ছাত্রভর্তিতে শাসকদলের ছাত্র নামধারী মাসলম্যানদের দৌরাত্ম ও টাকা নিয়ে ভর্তির অভিযোগ করছে তার সারবত্তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। এমনকি শিক্ষকদের বদলীর ক্ষেত্রে যে মোটা টাকার হাতবদল হয় বলে অভিযোগ তা এসবের পরে গতি পেল। আবার, মুদ্দোফরাস দিয়ে যে শল্য চিকিৎসা হয় না তা সাধারন মানুষ জানলেও, রাজ্য সরকারের বোধহয় অজানা! শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শিক্ষিত, নামী নাট্টব্যক্তিত্ব ও ভদ্রলোক। কিন্তু মুশকিল হল, রাজ্যের সব দপ্তর ‘অনুপ্রেঢ়না’য় চলে! গরমের কারনে রাজ্যে অভূতপূর্ব আদেশে শ্রেণীকক্ষে পঠনপাঠন লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল! তার পর বর্ষা নামায় গরম অনেক কমলেও শ্রেণীকক্ষে পঠনপাঠন বন্ধই রইল! মনে হয়, এই রাজ্যে অনুপ্রানিত শিক্ষাদপ্তরের কাজ হচ্ছে কি অজুহাতে কত বেশী শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদান বন্ধ রাখা যায়। এদিকে বিপুল সংখ্যক দুর্ণীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিযুক্ত হওয়া মানুষরা স্বাভাবিক কারনেই পঠনপাঠনের গঙ্গাজলী যাত্রায় খুশী হবে! শিক্ষাদপ্তর থেকে যত রকমে পারা যায়, অবৈধ অর্থ তোলার জন্যই কি এই দপ্তর খুলে রাখা হয়েছে?
বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নামে দাদাগিরি এমনপর্যায়ে গেছে যে শিক্ষকদের অপমান করা ত সাধারণ ব্যাপার – গায়ে হাত তুলতেও তারা পিছপা হয় না! তাদের দাবীগুলির মধ্যে আছে, ভর্তির সময় তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে মোটা ‘তোলা’ আদায়ের অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে! অনলাইন পরীক্ষার সময় অবাধে টোকা যায় বলে অনলাইন পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে! পরীক্ষায় পাশ করানো বাধ্যতামূলক – নইলেই জঙ্গী আন্দোলন; আর ক্লাশ না করলেও ফাইনাল পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে হবে ইত্যাদি! এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের দৌরাত্মের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দলের বশংবদ শিক্ষক ইউনিয়নের দৌরাত্মও! এইসব শিক্ষক নেতাদের মধ্যে একাধিক নেতার নামে অভিযোগ আছে চাকরী দুর্ণীতি ও বদলী দুর্ণীতিতে সরাসরি যোগাযোগের! পালের গোদা – প্রাক্তণ শিক্ষামন্ত্রী নামের আগে ডঃ লেখেন – তিনি পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত। তাঁর পিএইচডির থিসিসটি প্লেজিয়ারিজমের দায়ে অভিযুক্ত! তিনি অন্যের গবেষণা ‘টুকে’ এই ডিগ্রি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। মোদ্দা কথা, রাজ্যের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই চুরি ও দুর্ণীতির দপ্তরে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। দুর্ণীতির গণতন্ত্রীকরণ রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের একমাত্র সাফল্য! দলীয় আনুগত্য ও বেআইনী আর্থিক লেনদেন যদি শিক্ষকতার অন্যতম যোগ্যতা হয়, তাহলে এমন পরিবেশ দেখাই ত স্বাভাবিক।
আবার, রাজ্যের উন্নয়ণের জোয়ার এমন যে তা শিক্ষা ক্ষেত্রকেও নাকি ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! শিক্ষার প্রসার বলতে আমরা, অর্থাৎ রাজ্যের অনুপ্রাণিত জনগণ কয়েকটি বিশেষ জিনিষ বুঝি – রাজ্যজুড়ে, এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে ছাত্র-ছাত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম, সেখানেও শিক্ষাঙ্গন খোলার নামে বড় বড় বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ‘বিশ্ববঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়’ খোলার নামে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়ির সারি তৈরী করে একটি বড়সড় রিসর্ট উপনিবেশের মত তৈরী করা হয়েছে! ব্যস – ঐ পর্যন্তই! বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় যে বাড়ি বানালেই তৈরী হয়ে যায় তা আমরা এই প্রথম জানলাম! নতুনগুলি ত দুরস্ত্, পুরোনো শিক্ষায়তনগুলির ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অবস্থাও শোচনীয়। রাজ্যের “লক্ষ্মীর ভান্ডার” রমরমিয়ে চললেও সরস্বতীর ভান্ডারের ভাঁড়ে মা ভবানী! যেহেতু শিক্ষাঙ্গন চালানোর জন্য তার ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী এবং শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ শিক্ষা দপ্তরের এক্তিয়ারে পড়ে – সেকাজে রাজ্য সরকারের “অনুপ্রেঢ়না” না থাকায়, শিক্ষক নিয়োগের নামে আর্থিক দুর্ণীতি থেকে ধরে শিক্ষক নিয়োগ মানের জলাঞ্জলী দেওয়া শিক্ষা ধ্বংসের নীতিকেই রূপায়িত করে! উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে সিভিক পুলিশের মত কিছু তাঁবেদার যোগ্যতাহীণ দলদাস নিয়োগের ফর্মূলা প্রয়োগ করে বিভিন্ন গালভরা নাম দিয়ে ‘সিভিক শিক্ষক’ নিয়োগ এখন রাজ্যের শিক্ষানীতির অঙ্গ! ‘ছাত্র’ নামের হিংস্র দলীয় কর্মীদের ‘আন্দোলন’ এখন তোলাবাজদেরও হার মানায়।
দুর্ণীতি এবং টেকনিক্যাল জ্ঞানরহিত ‘অনুপ্রানিত’ সরকারের ‘অনুপ্রানিত’ শিক্ষা দপ্তর একদম বেআব্রু হয়ে পড়েছে। পরিশেষে বলি, শিক্ষার অবমূল্যায়ন বাম আমলে শুরু হলেও শিক্ষার সর্বাঙ্গে ক্ষতের মত দুর্ণীতির গণতন্ত্রীকরন হয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই। আবার, এই দুর্ণীতিকে জনসমক্ষে আনার জন্য যেমন মহামান্য আদালতের অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে বাম যুবশক্তি এবং তাদের আইনজীবীদের। আশ্চর্য হয়ে যাই, যখন দেখি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এমন ইস্যুতেও যুবমোর্চার কিছু বিক্ষিপ্ত আন্দোলনছাড়া কিছুই করছে না! শুধু সোশ্যাল মাধ্যমে বিদ্রুপ করেই তাদের আন্দোলন শেষ! জানিনা, বহুল প্রচারিত ‘সেটিং তত্ত্ব’ এর কারন কিনা। আমরা ভবিষ্যতের আশায় রইলাম।
Unsung Teacher Hero of Our Independence
A tryst with destiny was achieved on 15th of August, 1947. This was true to the sense of essence of freedom struggle achieved due to the sacrifice of so many heros……Most of them forgotten or have the honour to mention only! The total light of the history of freedom struggle was focussed on the Congress party and its chosen leaders who were obedient to Gandhiji. An idea of our independence struggle was given by the concerted begging for independence to the British government under the leadership of Mohandas Karamchand Gandhi.
There are the revolutionists and freedom fighters who sacrificed their lives for the independence of their motherland but were forgotten in the ‘doctored’ history of Indian independence. Here, I’ll discuss about some of these forgotten heros of our independence who were basically from our teaching fraternity.
Surya Sen, popularly known as “Mastarda”, born on 22nd March,1884 at Chittagong district, now in Bangladesh. Initially, he was a member of Indian National Congress. Frustrated with the soft and dilly dallying approach of the INC and the futility of so-called non-cooperation movement, he left the party and joined Anushilon Samity – one of the two main revolutionary outfits of the country. Masterda, in fact, was the District President of the INC. Dis-illusioned with the compromising attitude of the leadership, not only he joined the Anushilon Samity after quitting the INC, he single handedly induced fresh bloods into the organization. He was an outstanding organizer, an unpretentious, soft spoken, brilliant personality. Soon he made the Anushilon Samity of Chittagong district, a strong unit of revolutionary outfit. Masterda was the first President of Anushilon Samity of Chittagong. Actually, none of his recruits have ever betrayed to the cause. His eyes could identify the quality in the young generation.
Masterda Surya Sen, the son of a teacher, graduated from Berhampore college (now Krishnath college) of Murshidabad district of West Bengal in 1916. Then, he started teaching at the National School of Chittagong. His teaching ability impressed the students and his disciples alike. He was popularly addressed as Masterda with respect and dignity. His brilliant organizing power made him the undisputed leader of Anushilon Samity of Chittagong. Uder his able and versatile leadership, the revolutionary activity of Bengal in general and Chittagong in particular, got tremendous impetus. Surya Sen was inspired by Sarat Chandra Bose and Arabindo Ghosh.
Masterda was first arrested for his anti-British activities in 1926 and joined for two years. After his release from jail, he embarked upon the harder mission of Chittagong Armoury Raid. In an immaculate planning, on 18th April, 1930, Surya Sen with his revolutionary group, in the name of Indian Republic Army, embarked on the mission of Chittagong’s two armary raids to show that the Bengalis are able to show the might of the revolutionaries to the British empire. One group of six, led by Ganesh Ghosh, a disciple of Surya Sen, took out the Chittagong Police Armoury. Ten other members in anorher group, led by Lokenath Paul, a close associate of Surya Sen, captured the Auxiliary Force Armoury with army rifles and Lewis guns. They also cut off the telephone and telegraph lines and broke down the railway lines between the Chittagong city and the rest of Bengal. Surya Sen’s plan was to capture the two armouries and then the captured guns and ammunitions would be distributed to the revolutionaries. Unfortunately they could not find the ammunitions and consequently theur valiant efforts went in vain.
In the name of Indian Republican Army, Chittagong Branch, Masterda Surya Sen being the leader of the group, took military salute from the other revolutionaries gathered there, altogether sixtyfive in number. They started their operation by shouting “Bande Mataram” and proclaimed the Provisional Revolutionary Government there.
With no hope of winning against massive might of British army, Surya Sen showed his skills in guerrilla warfare and retreated to Jallalabad hill. In the brutal standoff, 12 revolutionaries including Lokenath Paul entered martyrdom and 80 British soldiers were killed. Surya Sen in sudden guerrilla raids surprised the British Force for a ling time.
Though the Armoury raids were fizzled out and many of the revolutionaries lost their lives, Surya Sen escaped from the British clout to reach Calcutta. Hiding out at many places around Calcutta, he was finally caught by British police due to the betrayal of his relative Netra Sen on 16th February,1933.
After his capture, British Government tortured Surya Sen to such an extent that the civilized world could not dream of. Eventually, semi-dead body if Surya Sen was hanged in Chittagong jail on 12th January, 1934. Surya Sen’s last letter to his fellow revolutionaries and disciples, “Death is knocking at my door. My mind is flying away towards eternity. Only one thing, that is my dream, a golden dream – the dream of free India……..Never forget, 18th of April,1930, the day of the eastern rebellion in Chittagomg……..Write in red letters in the care of young hearts the names of the patriots who have sacrificed their lives at the alter of India’s freedom”.
Surya Sen was the first revolutionary leader who permitted the entry of lady members in the revolutionary outfit Anushilon Samity. Two ladies, Kalpana Dutta and Pritilata Waddedar were his recruits. Of the two ladies, Pritilata, a brilliant student, was a school teacher. Her nick nane was Rani. She was born on 5th May, 1911 at Chittagong to parents Jagabandhu Waddedar and Prativa Devi. She was the second child among six children of her parents. Pritilata passed her Matriculation examination from Dr. Khastagir Government Girl’s Shool of Chittagong. Then she passed her Intermediate examination from Eden College, Dhaka. Afterwards, she passed graduation with distinction in Philosophy from Bethun College under Calcutta University. Astonishingly, her University Certificate was withheld by the chicken hearted British administration followed by the Independent government of India too! Only in the year 2012, Pritilata’s degree certificate along with the degree certificate of another unsung freedom fighter Bina Das, were handed over posthumously to their respective relatives. The government of India cannot deny their criminal neglect to these freedom fighters. After graduation, Pritilata went back to her native place Chittagong and became headmistress of an english medium school, Nandankanan Aparnacharan School.
Pritilata got inspiration from the revolutionary Ramkrishna Biswas. Ramkrishna Biswas was hanged by British for the killing of Chandpur SP and one inspector Tarini Mukherjee. Pahartali European Club of Chittagong had a signboard written, ” Dogs and Indians not allowed”. Surya Sen thought to teach these arrogant British people a fitting lesson and decided to attack this club. Pritilata was asigned to lead a team of male revolutionaries. Dressed like a Punjabi male, Pritilata attacked the club at 10-45 PM on 24th September, 1932. In the attack, one woman died and four men and seven wonen were injured. Pritilata was cornered in the courtyard of the club by the police and without giving them chance to arrest her, she committed suicide by consuming potassium cyanide. “A beacon of light for women” Pritilata cherished two wishes, independence of her country, that is India; and a society without gender discrimination. She was the first Bengali lady martyr in the independence struggle.
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন জিততে বাঙ্গালীয়ানা জরুরী
ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের অনন্যসাধারণ ক্যারিশ্মা ও স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ের বৃহত্তম রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের দল কংগ্রেসের সরকার হওয়ায় তখন পশ্চিমবঙ্গে “ডাবল ইঞ্জিন”এর সরকার ছিল। পরবর্তী সময়ে কখনোই কেন্দ্রের শাসকদল পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক আধিপত্য করতে পারেনি (১৯৭২ সালের বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া)। এর কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তা সবই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। তাই নিরপেক্ষভাবে এর কারন অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হল।
পশ্চিমবঙ্গের জন্মের আগে থেকেই বাঙ্গালীদের স্বাতন্ত্রতা ঔ বোধের উপর ভিনরাজ্যের মানুষজনের বিমাতৃসূলভ ব্যবহারের ইতিহাস বাঙ্গালী জাতির অস্মিতাকে বারবার আঘাত করেছে। এখানে সংক্ষিপ্তাকারে কয়েকটি মাত্র ঘটনার উল্লেখ করা হচ্ছে।
জাতীয় কংগ্রেসের ‘পালক পিতা’ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর বিভিন্ন সময়ের উক্তি ও ব্যবহার বাঙ্গালী মনে গভীর আঘাত করেছে। এমনকি লাল-বাল-পাল ত্রয়ীর বিপিনচন্দ্র পাল যে “পূর্ণ স্বরাজ” আদায়ের জন্য অরবিন্দের বিপ্লবী পথ অনুসরণ করেছিলেন, তার তীব্র বিরোধীতা করেছিলেন এই গান্ধীজী! তাঁর তাবেদারী করা কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ বৃটিশ বিরোধীতার বিপ্লবী পথকে সরাসরি বিরোধীতা করেছিল। এই কারনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে জীবনের শেষ ছ বছর বিপিনচন্দ্র পাল রাজনীতির সঙ্গে সকল সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন। বাংলা থেকে দুটি বৃটিশ বিরোধী বিপ্লবী সংগঠন, যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতি তৈরী হয়েছিল। ইংরেজের কারাগারে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক যে বিপ্লবীদের ফাঁসি হয়েছিল তারা বাঙ্গালী। তার পরেই আছেন পাঞ্জাবীরা। গান্ধীজী অত্যন্ত রূঢ়তার সঙ্গে এই বিপ্লবীদের নিন্দা করতেন ও বৃটিশের রক্ত ঝরানোর কোন পদ্ধতিকেই তিনি সমর্থন করতেন না। তাছাড়া, গান্ধীজী ও জওহরলাল নেহরু নির্বাচিত কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে তঞ্চকতাপূর্ণ ব্যবহার করেন। তাদের বাঙ্গালী বিদ্বেষ ও সৈরাচারী কাজকর্ম বাঙ্গালী নেতাদের লাগাতার বিরুদ্ধাচরন বাঙ্গালীকে ‘গান্ধীর চরকায় স্বাধীনতা’ তত্ত্বকে বিদ্রুপ করতে প্ররোচিত করেছে। এমনকি, গুজরাতি রাজনীতিকদের মধ্যে গান্ধীজীর মতের বিরোধী নেতাদের কাউকেই তিনি রেয়াত করেননি। বিঠলভাই প্যাটেলের মত ব্যক্তিত্ব গান্ধীজীর কঠোর সমালোচক ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের সমর্থক ছিলেন বলে গান্ধীজীর চেলা জওহরলাল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এখন অব্দি বিঠলভাইয়ের জীবন ও কাজ নিয়ে কোন প্রচার হয়নি। অথচ বিঠলভাইয়ের ছোট ভাই বল্লভভাই প্যাটেল গান্ধীজী ও জওহরলালকে সাথ দেওয়ায় তাঁকে বিশাল স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে দেখানো হয়। এই বল্লভভাই প্যাটেল কিন্তু জওহরলালের মতই নিজের মেয়েকে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করান। এখনকার কেন্দ্রীয় সরকার বল্লভভাই প্যাটেলের বিশাল স্ট্যাচু বানিয়ে তাঁর কর্মকান্ডকে মাণ্যতা দিয়েছেন! এদিকে সুভাষচন্দ্র ও চিত্তরঞ্জন দাশকে সমর্থন করা বিঠলভাইয়ের কপালে জুটেছে অবহেলা, অবজ্ঞা ও বঞ্চনা। বিলভাই তাঁর মৃত্যুর পূর্বে উইল করে তাঁর সম্পত্তির তিন চতুর্থাংশ দিয়ে যান সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁর স্বাধীনতার জন্য লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আশ্চর্যজনকভাবে বিঠলভাইয়ের মৃত্যুর পর বল্লভভাই এই উইলকে চ্যালেঞ্জ করেন। অনেকে বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে বৃটিশের তলায় তলায় ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে বল্লভভাই আদালতে মামলা জিতে বিঠলভাইয়ের সম্পত্তির দখল নেন। সেখান থেকে কোন অর্থ সুভাষচন্দ্রের কাছে যাতে না যায়, তা একটি বড় কারন ছিল এই মামলার! এসব ঘটনা বাঙ্গালী জানে! সেই বল্লভভাইয়ের স্ট্যাচু পুজারীরা বাঙ্গালী ও বাংলার কাছে কি বিশ্বাস বা সম্মান আশা করেন?
এবছর রিপাবলিক ডের গুজরাতের ট্যাবলোতে বৃটিশরাজের সময় ১৯২২ সালে, ১২০০ আদিবাসী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গুলি করে হত্যা করার একশ বছর পূর্তিতে সসেই ঘটনাকে স্মরণ করা হয়। কিন্তু, এছাড়া কোন গুজরাতি স্বাধীনতা সংগ্রামী বা বিপ্লবীর খোঁজ মেলে না, যিনি বৃটিশ শাসকের হাতে শহীদ হয়েছেন! আবার, ১৯৪৫ সালে এই বাংলায় নীলগঞ্জের কারাগারে বন্দী প্রায় ২৩০০ জন INAর অফিসার ও জওয়ানকে বিনা প্ররোচনায় বৃটিশ ফৌজ গুলি চালিয়ে হত্যা করে। হিসেব অনুযায়ী ঐ সময় ঐ কারাগারে দশ হাজার INAর যোদ্ধাদের রাখা হয়েছিল। সংখ্যার বিচারে এই হত্যা জালিয়ানওয়লাবাগের চেয়েও অনেক বেশী প্রাণঘাতী। আশ্চর্য হচ্ছে, স্বাধীনতা উত্তর কোন কেন্দ্রীয় সরকার ইতিহাস বই ও পাঠ্য পুস্তকে এই ঘটনাকে স্থান দেয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, বৃটিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গিন্ধী ও তার অনুচর জওহরলালের কংগ্রেস সরকার INAর বন্দীদের যুদ্ধবন্দীর স্বীকৃতি দেয়নি। এখনকার কেন্দ্রীয় সরকারও একই পথের পথিক! জানিনা কোন গুজরাতি একাত্মতার ব্যপার আছে কিনা! এসব কিন্তু বাঙ্গালী মনে রেখেছে। অথচ, জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা বহুল প্রচারিত – এ কারনে বাঙ্গালী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃটিশের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে লর্ড মাউন্টব্যটেনের সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর চুক্তি মোতাবেক INAর কোন পদাধিকারীর কোন সম্পান, অর্থ এবং অন্য কোন প্রকারের স্বীকৃতি থাকবে না! অধিকন্তু তাদের স্বাধীন ভারতের সেনাবাহিনী বা অন্য কোন সরকারী দায়ীত্বে রাখা যাবে না। জওহরলাল ওই চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে মেনেছিলেন। শুধু তাইনয়, আজ পর্যন্ত কোন কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তি বাতিলের জন্য পদক্ষেপ করেনি। এতে ক্ষতির চেয়ে বড় কথা – বাঙ্গালীর হৃদয়মণি সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর INAকে অপমান করা – যা বৃটিশ সরকারের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকার ও তার পরিচালনায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলি বাঙ্গালীর কাছে শত্রু হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে।
যখন জওহরলাল ও তার পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়নের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ দিতে গড়িমসি করেন (যা এখনো অনেকাংশে বজায় আছে), তখন অন্য কিছু রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বদান্যতায় উন্নয়নের জন্য অর্থের অভাব হয় না। সেই ট্র্যাডিশান এখনো চলেছে।
১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ ও জেহাদী ইসলামের তাড়নায় পূর্ববঙ্গ থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে বাঙ্গালী হিন্দুর ‘রিফিউজি’ তকমা নিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে আগমন এই রাজ্যের মানুষের উপর প্রচন্ড অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে। উদ্বাস্তু পূনর্বাসনের কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকায় এবং পঞ্জাবের তুলনায় বাংলার রিফিউজিদের সঙ্গে বিমাতৃসূলভ আচরণ করায় কেন্দ্রের শাসক রাজনৈতিক দলের উপর বাঙ্গালীর ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। এরপর উদ্বাস্তুদের নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। কেন্দ্রের ও রাজ্যের দুই সরকারই মৌখিক আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই করেননি। রাজ্য সরকার তবু উদ্বাস্তুদের দখলীকৃত সরকারী জমির উপর বসবাসকে আইনী স্বীকৃতি না দিলেও তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করেননি। যার ফল স্বরূপ এই রিফিউজিকুল রাজ্য সরকারের সরাসরি বিরোধীতা না করলেও কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, এই সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গে দখলীকৃত কলোনিগুলির উদ্ভব শুরু হয়। কলোনিগুলির নামকরনে স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ হওয়া বাঙ্গালী বিপ্লবীদের প্রাধান্য দেখে বাঙ্গালী মানসিকতার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায়। ১৯৭৯ সালে মরিচঝাঁপির নির্মম গণহত্যার ঘটনা এই মানুষগুলির অনেককেই রাজ্যের সরকারের বিরোধী করে তুললেও তার জন্য তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থক হয়ে ওঠার কোন কারন ঘটেনি।
এদিকে রাজ্যের মানুষের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলগুলির দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস ধীরে হলেও নিশ্চিতভাবে রাজ্যের হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঙ্গালীকে কেন্দ্র বিরোধী অবস্থান নিতে প্ররোচিত করে। তখন থেকেই বাঙ্গালীর ভাগ্যাকাশে চরম দূর্ভোগ শুরু হয়। ইতিমধ্যে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জন অসন্তুষ্টিকে বিপথগামী করার জন্য এক রাজনৈতিক ছক কষা হয়। তা হল “কেন্দ্রে দোস্তি, রাজ্যে কুস্তি” নীতিতে সেটিংয়ের রাজনীতি! অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, হরিয়ানা ইত্যাদির সঙ্গে এ রাজ্যেও এই রাজনীতি শুরু হল আশির দশকে – ইন্দিরা গান্ধীর দ্বিতীয় ইনিংস ও রাছ্যের বামফ্রন্টীয় মোড়কে জ্যোতি বসুর সিপিএমের সময়ে। প্রথম কয়েক বছর এই খেলা ভালোভাবেই চলল। এমনকি নরসিমহা রাওয়ের সময় পযর্ন্ত অসুবিধা না হলেও দু পক্ষের পরবর্তী কয়েকটি পদক্ষেপে এই সেটিং পাল্টে গেল! পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উল্কার গতিতে উত্থান হল নতুন তারকা শ্রীমতি মমতা ব্যানার্জীর। জ্যোতি বসুর রাজনীতি অনুধাবন ও অনুসরণ করে তিনি বাঙ্গালী জণগনের মনের কাছাকাছি চলে এলেন। বাঙ্গালী মানসিকতা বোঝার ক্ষমতা এই মূহুর্তে সবচেয়ে বেশী যে রাজনীতিকের আছে তিনি মমতা ব্যানার্জী। বঞ্চিত, অবহেলিত বাঙ্গালী যখন সিপিএমের রিগিং ও সন্ত্রাস মেশিনারীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হল, তখন বাঙ্গালী মননে যে পলায়ণবৃত্তি দেখা দিল তাকে অনেকে মেরুদন্ডহীণতা বলেছেন! আসলে, বাঙ্গালীর পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাওয়ায় তার অর্থনৈতিক পঙ্গুতার কারনে ধীরে ধীরে বাঙ্গালী এক “ভাতাজীবি” জাতিতে পরিণত হল। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনেক সময় খেটে খাওয়ার কথা বলা হয়; অবশ্যই শ্রমের বিনিময়ে রোজগার সম্মানজনক – কিন্তু আমার জিজ্ঞাস্য যে, কাটমাণি,সিন্ডিকেটের বাঙ্গলায় – কলকারখানাহীণ বাঙ্গলায় – যেখানে পুলিশ শাসকদলের তাঁবেদাদ এবং সংবাদ-মাধ্যমগুলির মধ্যে শাসকের মোসাহেবীর প্রতিযোগিতা চলে – সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে এমন কোন আশার আলো এই রাজ্যের মানুষকে দেখানো হয়েছে কি?
পূর্বের মতই কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বাঙ্গালীর জন্য লিপ সার্ভিসের চেয়ে বেশী কিছু করেছে বলে ত জানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে – যাদের ১৮টা লোকসভা সিটে জেতালো (সঙ্গে প্রায় ৫০% ভোট), তারনর থেকে সেই রাজনৈতিক দল কি করল? জেহাদীদের বিরুদ্ধাচরণ করার নামে একটি ধর্মকে ও সেই ধর্মের সকল মানুষকে অপমান করতে লাগল! বাংলার বাইরের কয়েকজন ভূঁইফোড় মানুষকে দলের নেতা নাম দিয়ে এই রাজ্যে মাতব্বরি করতে পাঠানো হল – এর মধ্যে জনা দুয়েক বাঙ্গালী নাম ছিল! মাটির সঙ্গে, মানুষর সঙ্গে সম্পর্কহীণ মানুষরা ২০১৬র নির্বাচনে ভূতের নৃত্য শুরু করল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সমর্থন ছাড়া এসব কি সম্ভব ছিল? আজ যখন কেন্দ্র-রাজ্য সেট-ইন দিনের আলোর মত পরিষ্কার, তখন একটা কথা উল্লেখ না করে পারছি না – এই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ২০২১শে র নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল দলের জয়লাভ করা নিয়ে নিঃসন্দেহ ছিল! কারন, তাদের দল যদি রাজ্যে ক্ষমতায় আসার জাতগায় থাকত, তবে নির্বাচনে এমন অর্বাচীনের মত প্রার্থী চয়ন না করে এমনভাবে প্রার্থী নির্বাচন করত, যাতে করে দলের জয়ী প্রার্থীরা প্রশাসন চালানোর মত দক্ষ হন। আরেকটি কথা, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর একটিও এমন রাজ্য আছে কি যেখান থেকে ১৮ জন এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরেও একজন এমপিও ক্যাবিনেট মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন না! এই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বাঙ্গালীর প্রতি অবিশ্বাস ও অবহেলার জবাব বাঙ্গালী দিতে শুরু করেছে।
শেষে বলি, সেট-ইনের চিত্রনাট্য বড্ড মেলোড্রামাটিক হয়ে যাচ্ছে। সেই এক খেলা – ইডি,সিবিআই, জামিনযোগ্য শমন, তারপত IPGMR এর ভিআইপি কেবিনে ভর্তি এবং সবশেষে ‘দিদিমণি’র দিল্লী আগমণ – বিশেষ আলোচনা – তারপর সব ঠান্ডা ঘরে! এর অবিসংবাদী ফল হচ্ছে, রাজ্যের বিরুদ্ধে মানুষ যখন বিক্ষুদ্ধ হবে, তখন কিন্তু তার গোপন সহযোগী রাজনৈতিক দলকেও ছুঁড়ে ফেলে দেবে। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলের বোঝা উচিৎ, বাঙ্গালীকে অবহেলা, অবজ্ঞা, অবিশ্বাস করে এবং শুধুমাত্র ধর্মের নামে ভোট চাইলে এই রাজ্যে সেট-ইনে থাকা সর্বভারতীয় দলের ঝুলিতে ২০২৪এ একটি আসনও জুটবে না।
ধর্ম ও ধর্ম ব্যবসার প্রভাব
ধর্ম জীবকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উত্তীর্ণ করে। যে কারনে মানুষ মাত্রেই তার ধর্ম থাকে। মনুষ্যধর্ম মানুষের আদর্শ ধর্ম। মানুষ যখন স্বার্থ, হিংসা ও লোভকে প্রাধান্য দিয়ে মনুষ্য ধর্মের বিপরীত কর্মে লিপ্ত হয়, তখন মানুষের বিবেক-বুদ্ধি নষ্ট হওয়ায় সে পশুর তুল্য আচরণ করে। এই সময় অনেক ক্ষেত্রে সে তার ঘৃণ্য কাজের সমর্থনে যে যুক্তি দেখায়, তা হল ‘ধর্মের দোহাই’! যাকে পৃথিবী জুড়ে বলা হয়, “for the shake of religion” – ধর্ম ও religionএর তফাৎ এখানেই। সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারনা তৈরী করা হয়েছে, ধর্ম হল আফিমের মত নেশার জিনিষ; তাই তা বর্জনীয়! আর সেই একই যুক্তিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ সব ধর্ম থেকে দূরে থাকার প্রয়াস বলে তা প্রশংসনীয় একটি গুণ (virtue)! এই অপ-ধারনার বশবর্তী হয়ে আমাদের দেশের, বিশেষতঃ আমাদের রাজ্যের এক বিপুল সংখ্যার মানুষ তাদের নিজেদের জীবন, জীবিকাসহ সামাজিক জীবনে অস্থিরতা ডেকে আনছে।
মানবিক আচরণ ও চিন্তাকে অর্থাৎ মনুষ্য ধর্মকে অন্য পথে চালানোর জন্য সবচেয়ে বেশী যা ব্যবহার করা হয়, তা হল, ধর্ম বিশ্বাস ও ধর্মীয় আচার-পদ্ধতি – যাকে সংক্ষেপে religion বলে। মানুষের religion যাই হোক না কেন, তা কখনো মানুষে মানুষে বিভেদ, হিংসা বা সহাবস্থান বিরোধী অবস্থান নিতে পারে না। আবার ধর্মের যে পরম সত্য – সর্বজ্ঞানের আধার – তা সব ধর্মের ক্ষেত্রেই এক – ধারনা বা বিশ্বাস এক নিরাকার রূপ মাত্র। তিনি অদ্বৈতবাদী হিন্দু ধর্মের ভগবান পরম ব্রহ্ম, ইসলামে আল্লা, আব্রাহামিক ধর্মে ঈশ্বর বা গড।
ভারতবর্ষ যখন ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ত্রিখন্ডিত হয়ে স্বাধীনতা পেয়েছিল, তখন মুসলিম লীগের দাবি মোতাবেক সব পক্ষই মেনেছিল যে হিন্দু ও মুসলমানদের সহাবস্থান সম্ভব নয় বলে এই স্বাধীন দুটি খন্ডের ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ইসলামীদের বসবাসের জন্য স্বীকৃত হল। অথচ, হিন্দু, শিখ, জৈন ও বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য স্বাধীন ভারতের কোন রাষ্ট্রধর্ম না রেখে ইসলামসহ সব ধর্মের সামান অধিকার (মাইনোরিটির নামে ইসলাম ও খ্রীষ্টীয় ধর্মকে বিশেষ সুবিধা) দেওয়ার সংবিধান রচনা করে তদানীন্তন রাজনীতিকরা ভারতের অমুসলিম নাগরিকদের সঙ্গে তঞ্চকতা করেছিলেন। পৃথিবীর দুই সফল ভন্ড দেশপ্রেমিক জওহরলাল এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এর জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী। এটি ভারতের জন্মের সময়ের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ভুল। জওহরলাল নেহরুর রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতার খেসারত এখনো ভারতকে দিতে হচ্ছে কাশ্মীরে। এই দেশের রাজনীতিকরা যেমন দেশের স্বার্থের আগে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ ও পারিবারিক স্বার্থকে দেখে সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন, তেমনি তাঁরা আন্তরিকতাবিহীন সেবা দিয়ে দেশের জনগণের ভোট পাওয়ার চেষ্টা করেন! এই ধরনের রাজনীতির প্রভাব উপমহাদেশের সবকটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উপর প্রভাব ফেলেছে।
আমাদের ভারতের সংবিধান অনুসারে এই দেশের যে কোন নাগরিকের তাঁর religion অনুযায়ী ধর্মাচরনের অধিকার স্বীকৃত। এখানেই যত গোলমাল! ভারতে স্বেচ্ছায় ও কারো কোন প্রভাব ব্যতিরেকে মানুষ তাঁর ধর্ম পরিবর্তন করতে পারেন। ফলে, বিদেশী সাহায্যে পুষ্ট খ্রীষ্টান মিশনারীগুলি দারিদ্র ও অজ্ঞানতার সুযোগ নিয়ে স্বাধীন ভারতে ধর্মান্তরকরন শুরু করে। বিশেষতঃ দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণে তারা সাফল্য পায়। এই ধর্মান্তরকরন যেহেতু অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে করা হয়েছে, সেহেতু এটি বেআইনি – সংবিধানগত দিক থেকে। কিন্তু তা মানে কে? কারন, এসব দেখতে গেলে এই হতভাগ্য মানুষগুলোর দারিদ্র ও অসহায়তা দূর করার দায় দেশের সরকারকে নিতে হয়! সরকার চালানো রাজনীতিক ও প্রশাসকেরা সে কাজে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
তারপর গঙ্গা, যমুনা, শতদ্রু, বিপাশা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল। ধর্মান্তরকরনের সুবিধা ব্যবহার করে ভারতে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় অনুপ্রবেশের সুযোগ নিতে শুরু করল ইসলাম। একথা ঐতিহাসিক সত্য যে, ইসলামের ধর্মীয় অনুশাসনের অনমনীয়তা এবং তার বিস্তারবাদী চরিত্র এ কাজে সহায়ক হয়েছে। সামাজিক অনমনীয়তা ও ধর্মীয় প্রভূত্ববাদী চরিত্র একমাত্র ইসলামকে আবদ্ধ করে না রাখলেও, এই ধর্মীয় আবশ্যকতার দিকগুলিকে সবিস্তারে তুলে ধরার কাজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে এই ধর্মের ঠিকাদার মৌলভীদের মারফৎ ইসলামী সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া চলতে লাগল। ধর্মস্থান ও শিক্ষায়তনগুলিকে ব্যবহার করেই ১৯৪৬ সালের কোলকাতা গণহত্যা ও নোয়াখালী গণহত্যা সংঘটিত হল। তার পরেও এই ধরনের গণহত্যা যাতে আর না ঘটে তার জন্য ভারতীয় রাজনীতিকরা মোটেই যত্নবান ছিলেন না।
এরমধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত ভারতীয় কম্যুনিষ্টরা তাদের জেহাদী ইসলামী চরিত্র তথাকথিত “ধর্মনিরপেক্ষতা”র আড়ালে লুকিয়ে রেখে সমাজে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বাড়াতে যার পর নাই ইন্ধন যোগালো। এরা অবশ্য প্রথম থেকেই হিন্দু ধর্ম বিরোধী এবং ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা শুধু ভারতের ক্ষেত্রে জেহাদী ইসলামের সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা হিসেব করে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে। কাশ্মীরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু নিধন ও হিন্দুবিরোধী কার্যকলাপে যেমন, পালঘর সন্ন্যাসী হত্যা, বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তাদের রিফিউজি মর্যাদা দেওয়া – ইত্যাদির দাবীতে এদের ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে জেহাদী ধর্মীয় চরিত্রের রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আবার চীনে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ইসলামীদের উপর সে দেশের সরকারের অমানবিক অত্যাচারের প্রশ্নে এই কম্যুনিষ্টরা সম্পূর্ণ মৌণব্রত নিয়েছে – পাছে পালিত বাবা চীনা কম্যুনিষ্ট পার্টি চটে যায়! এভাবেই এরা ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় বিভেদ ও জেহাদী উত্থানের মদতদাতা হিসাবে নিজেদের চিহ্নিত করেছে।
এরপর আসি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রভাবে। এখানে একটা কথা বোঝা দরকার। তা হল ভারতীয় হিন্দুদের সহিষ্ণুতা – যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক স্বার্থের পরিপন্থী হয়েছে। যেমন, সামাজিক চাপসহ বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, লাভ জেহাদের ঘটনা বাড়িয়ে একদিকে যেমন জেহাদী ইসলামকে ছড়িয়ে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তা ব্যুমেরাং হয়ে বিপরীত ক্রিয়ায় হিন্দু-সংহতিকে নতুন ভাবে সজীব করে তুলেছে। এখান থেকেই রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ভারতে ধর্মের নামে গোষ্ঠী সংঘাত শুরু হয়। নিউটনের পদার্থবিদ্যার সূত্র – প্রতিক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া – রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেই ক্রিয়া যখন শুরু হল, তখনই চারদিকে ‘গেল গেল’ রব উঠল। তখন প্রত্যেক ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ – অবশ্যই বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শুরু হল। কোন ভারতীয় নাগরিক – তিনি যে ধর্মাবলম্বীই হোন না কেন – কাশ্মীরের প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থান এবং কাশ্মীর থেকে তার ভূমিপুত্র, হিন্দু পন্ডিতদের বিতাড়ণ ও হত্যাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন জানাতে পারে? ভারতের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও তাদের স্বার্থান্বেষী নেতৃবৃন্দ সে কাজটিই করছে! ফল – রাজনীতিতে হিন্দু-ইসলামী বিভাজন যার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতির মুখে দুই ধর্মের মানুষজন। যারা এই বিভাজন শুরু করেছেন ও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের বুঝতে হবে যে তাদের অনুগামীদের তারা এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে চলেছেন।
ইসলাম ধর্ম মোতাবেক, যারা পবিত্র রমজানের রোজা রাখেন, তাঁরাই একমাত্র উপবাসভঙ্গের ইফতারে অংশগ্রহনের অধিকারী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মসূত্রে প্রেসিডেন্সী কলেজ লাগোয়া হিন্দু হোস্টেলে আমি কখনো হিন্দু ছেলেমেয়েদের আধুনিক পোষাকে ফেজটুপী পড়ে ইফতার পালন করতে দেখিনি।একে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে না – আত্মসম্মানবোধ হারানো, ধর্মের নামে দালালীর পরাকাষ্ঠা হতে পারে মাত্র। ইসলামে হিন্দু মহিলারা পরিবারের বাইরের পুরুষদের সঙ্গে বসে পুরুষের মত ফেজটুপী পড়ে ইফতার করছে – এই দৃশ্য ইসলামকে কলুষিত করছে। সাচ্চা ইসলামী এসব সমর্থন করেন না। আবার, আজকাল বারোয়ারী দূর্গাপুজায় কোথাও কোথাও কোরান পাঠ হচ্ছে! এতে দূর্গাপুজা ও পবিত্র কোরান উভয়েরই অপমান করা হচ্ছে। এগুলো ধর্মনিরপেক্ষতার নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধ্যাষ্টামো ছাড়া আর কিছু নয়।
দুটি ঘটনার উল্লেখ করছি। ২০১৪ সালে তুরষ্কের ইস্তানবুলে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্রের শেষে প্রায় শ খানেক গণ্যমান্য অতিথিদের জন্য বসফরাসের উপর এক গালা ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে দু তিনজন ভারতীয় হিন্দুর সঙ্গে আমিও ছিলাম। ডিনার টেবিলে আমার প্লেট দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এক অস্বস্তিকর গন্ধ পাওয়ায় ওয়েটারকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে সে জানালো টেবিলে সকলের জন্য ‘বিফি’ সহ ডিনার সার্ভ করা হয়েছে। আমার ধর্মীয় পরিচয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা প্লেট তুলে নিয়ে গিয়ে আমাকে আলাদা প্লেটে কিছু ভাত, বাটার আর আলুভাজার প্যাকেট দিয়ে গেল। জানালো, এসব পুরোপুরি ‘ভেজ’। এটাই স্বাভাবিক। এদিকে খবরে দেখলাম, বাংলাদেশে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ইফতার পার্টিতে আবশ্যক ছিল গোমাংস। এতে অস্বাভাবিকতা নেই। কারন ইফতারের জন্য রোজা রাখা মানুষজন ইসলামী হওয়ায় এটা তাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে পড়ে। সমস্যা হল, ইফতারে হিন্দুদের আমন্ত্রণ করা নিয়ে। কোন হিন্দু যদি তার অনুষ্ঠানে ইসলামী মানুষদের নিমন্ত্রণ করে শুয়োরের মাংসের আইটেম পরিবেশন করেন, তখন তা কি শোভন হবে? এই যুক্তিতেই বাংলাদেশের বিএনপি দলের নেত্রীর আচরণকে হিন্দু বিরোধী জেহাদী আখ্যা দেওয়া যেতেই পারে। মুশকিল হচ্ছে, ভারতে এমনই বিনপি মার্কা রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার বাণী শুনে শুনে জনসাধারণ ক্লান্ত, বিভ্রান্ত। এভাবেই ‘হালাল’ জিনিষ ব্যবহার ইসলামী ঐতিহ্য হলেও রাজনীতির ঔদাসীন্যে ও সামাজিক নিষ্ক্রিয়তায় তা হিন্দুদের গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অথচ, হিন্দু ঐতিহ্যের ‘ঝটকা’ মাংসের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগীতা পাওয়া যায় না।
এসবের প্রভাবে সমাজে ধর্মীয় বিভেদের শুরু মৌলবাদী মৌলভী ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ভারত বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিরা করলেও এখন তা মহামারীর আকার নিয়েছে।এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সব ধর্মের মানুষই। তাই, দেশের রাজনৈতিক শাসকদের থেকে জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ধর্মীয় অনুশাসন আরোপ করা জরুরী।
পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব আর কতদিন
ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু বাঙ্গালীদের প্রধান আশ্রয়স্থল ছিল আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৭১ সালের পর সেই পূর্ব পাকিস্তান যখন স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ হল, তখনো হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে রিফিউজি হিসেবে আগমন বন্ধ হল না। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” – আল্লাহ্ বিনা কোন সত্য মাবুদ বা উপাস্য নাই, মুহম্মদ ছাড়া কোন নবী নাই। এটি ইসলামের মূল কথা। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে কোন ধর্মীয় নমনীয়তা বা সহনশীলতা নেই। এই কারনে কোন ইসলামী ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে পারেন না। অথচ, ইসলামে আরো অনেক কিছু আছে – কোরানেও এমন আয়াত আছে, যেখানে অমুসলিমদের রক্ষা করার বার্তা মুসলিমদের দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এটি প্রাথমিক হলেও শেষ কথা নয়। গন্ডগোলের জায়গাটা ভিন্ন। আরব মরুভূমিতে যাযাবর মরুদস্যুদের মধ্যে প্রথম এই ধর্মের সূচনা হয়। সেই মানুষদের চিন্তাধারা ও জীবনশৈলীর প্রতিফলন তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে এবং আচার আচরণে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। আরব মরুভূমির কৃষ্টি, সভ্যতা ও জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য সারা পৃথিবীর মুসলিমদের মত বাংলাদেশের মুসলিমদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে দেখা যায়। আধুনিক বিশ্বের আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে ইসলামী জনগণকে (বিশেষতঃ অশিক্ষা ও দারিদ্রের মধ্যে থাকা মানুষদের) দূরে রাখার প্রচেষ্টা শুরু হয় মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে – যার হোতা মৌলবী ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা। ১৯৪৬ এর “দি গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং” ও “নোয়াখালী গণহত্যা” থেকে কাশ্মীরের হিন্দু নিধন – সবই শুরু হয় এই ধর্মীয় ও শিক্ষার স্থান থেকেই! আসলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও হিংসার উৎস হচ্ছে ধর্মগ্রন্থের খন্ডিতভাবে কিছু আয়াতের উদ্ধৃতি ও তার অপব্যাখ্যা। যেমন, পৃথিবীতে ভালো কাজের জন্য আল্লাহ্ মুসলমান পুরুষকে জন্নতে আরামে রাখবেন বলা হলেও সেখানে বাহাত্তর হুরী (সুন্দরী বেশ্যা) উপভোগ করার কথা পরবর্তীতে এই সব মৌলভীদের অপব্যাখ্যা। আবার মহিলারা ভালো কাজের জন্য জন্নতে গিয়ে কি পাবেন সে সম্বন্ধে এরা নিশ্চুপ। এভাবে পুরুষদের সকল ভোগ- অধিকার – মহিলাদের নয়- এমন পুরুষতান্ত্রিক মরুদস্যুদের মধ্যযুগীয় ব্যবস্থাকে আধুনিক যুগে মানানোর জন্য ধর্মের আশ্রয় নেওয়া ভিন্ন আর কিছু নয়। ইসলাম একটি প্রভূত্ত্ববাদী, বিস্তারক চিন্তার ধর্ম হওয়ায় এই ধর্মকে অনৈতিকভাবে তার জেহাদী আগ্রাসনে ব্যবহার করে রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক ফয়দা তোলার চেষ্টা সবসময় দেখা যাচ্ছে। মধ্যযুগের আরব বেদুইনদের (যারা আদি ইসলামী) ধর্ম হওয়ায় এবং তাদের সমাজ পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় এখনো, বিশেষতঃ, জেহাদী ইসলামীরা তাদের সমাজের নারীদের প্রাপ্য সম্মান দেয় না। অথচ, সেই মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত দেশগুলিতে এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় শিক্ষিত, পরিশীলিত, ভদ্র ইসলামী সমাজে আধুনিকতার স্পর্শে নারী পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত। জেহাদীদের কাছে নারী, বিশেষ করে বিধর্মী নারী (মালাউন) শুধু ‘ভোগের সামগ্রী’। মধ্যযুগীয় আরবী বেদুইন সভ্যতার ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক এই জেহাদী ধর্মীয় মৌলবাদ শুধু ভারতেই নয়, এরা যখন যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় থাকে, সেখানেই তাদের ধর্মীয় মৌলবাদ কায়েমের চেষ্টা করে। বিজিতের ধনসম্পত্তি লুঠ, হত্যা ও নারীর ইজ্জত হরণ এদের ঐতিহাসিক পরম্পরাকে বহন করে।
ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সভ্যতা আবার এখানকার জাতিসত্ত্বা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে। সে অর্থে এই উপমহাদেশের হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই একই জাতিসত্ত্বা ও সংস্কৃতি থাকার কথা। কিন্তু, নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নতি ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা এই মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে পরধর্ম ঘৃণার বাণী ছড়িয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষের বীজ বপন করে চলেছেন। তা স্বাভাবিক নিয়মেই ভারত বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়েছে। তিন তিনবার ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে decisively হারের পর পাকিস্তান ও জেহাদী শক্তি তাদের আক্রমণের ধরন বদলায়। তারা ভারতের অভ্যন্তরে জেহাদী তৈরী ও অন্য ধর্মের মানুষ অপেক্ষা মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নজর দেয়। এক্ষেত্রে হিন্দুদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও চিন্তাধারা তাদের কাজের সহায়ক হয়। সঙ্গে তারা তাদের ছদ্মবেশী বন্ধু হিসেবে “ধর্মনিরপেক্ষ” ভারতীয়দের সমর্থন পায়। আগে একাধিক লেখায় দেখিয়েছি, ইসলাম ও খ্রীষ্ট ধর্মে এই “ধর্মনিরপেক্ষ” ভালো কথা বা ভালো গুণ নয়। ধর্ম – তা সে যে ধর্মই হোক না কেন, জীবকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উন্নীত করে। আবার, ভারতের কিছু দেশবিরোধী ছদ্মবেশী রাজনৈতিক নেতার ধর্মনিরপেক্ষ আচরণে তাদের “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতা”র সপক্ষে যুক্তি সাজানোকে বৃহত্তর হিন্দু সমাজ গ্রহণ না করলেও তারা তাদের কুযুক্তি দেশের কিছু জায়গায় অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে! অজস্র ইসলামী সেকুলার কাজের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এক তথাকথিত হিন্দু অভিনেত্রী কাম রাজনীতিক তাঁর ভালো লাগার কথা প্রকাশ করলেন – দূর্গাপুজোয় তিনি গরুর মাংস খাওয়া পছন্দ করেন! এই অর্ধশিক্ষিত মহোদয়াকে যদি ঈদের দিনে শুয়োরের মাংস খাওয়ার নিমন্ত্রণ করা হয়, তিনি আসবেন না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিন্ত। আবার এক সর্বভারতীয় কম্যুনিষ্ট দলের (যারা সবাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’) বঙ্গের সর্বোচ্চ নেতা তাঁর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজের ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রের উপরে ‘ইনশাল্লা’ লেখেন। তার ধর্ম তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ না ইসলাম? এক দেশের এক আইন – সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত ও আদৃত। আমাদের উপমহাদেশের অন্য দেশগুলিতেও তাই ঠিক। কিন্তু ভারতে একই দেওয়ানী আইনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড! ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পর এই ল বোর্ডের অস্তিত্ব থাকাটাই ভারতের স্থায়ীত্ব বিরোধী। আবার দেখা যাচ্ছে, মসজিদ থেকে দিনে পাঁচবার মাইকে আজান দেওয়া হচ্ছে! মন্দিরের সকাল সন্ধ্যা মঙ্গলারতি ও ঘন্টাধ্বনি মুসলিমরা তাদের এলাকায় বন্ধ করে দিচ্ছে! এভাবে, দেশের মধ্যে ইসলামাইজেশানের দিকে সমগ্র ভারতকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক নেতারা রাস্তা আটকে পূজো করার বিরুদ্ধে। তারা কেউ কখনো রাস্তা আটকে নামাজ পড়ার বিরোধীতা করেননি! দূর্গাপুজো ও কালীপুজোর সম য় মাইক ও বাজীর আওয়াজে এই নেতাদের অসুবিধা ও সাধারণ মানুষের ক্ষতির খতিয়ান “বাজারী” সংবাদ-মাধ্যমগুলি প্রতি বছর প্রচার করে; আজানের মাইকের শব্দ ও শবেবরাতের বাজীর শব্দ যখন হয় তখন তাদের নিঃশব্দতা অন্য ধারনা জাগায় না কি? এরা রামনবমীর অস্ত্রসহ মিছিলের বিপক্ষে হলেও মহরমের অস্ত্রসহ মিছিলের পক্ষে! ভাবের ঘরে এরা আর কতদিন এভাবে চুরি করতে থাকবে!
বেশ কিছুদিন আগে এক দৈনিক সংবাদপত্রে আমি লিখি, ভুল পদ্ধতিতে TFR (Total Fertility Rate) গণনার কারনে ভারতে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে শিশু জন্মহার সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। কারন, এক্ষেত্রে মায়েদের জন্ম দেওয়ার হার গণনা করা হয়। কিন্তু একজন ইসলামী পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকতে পারে বলে ইসলামী শিশুর জন্মহার কম দেখানোর সুযোগ আছে। জেহাদী ইসলামের প্রভাবে ভারতে লাভ জিহাদ ও মুসলমানদের মধ্যে যৌন অপরাধ অনেক বৃদ্ধি পেলেও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ তথাকথিত হিন্দুরা নিশ্চুপ থেকে যান। এসবের থেকে একটা ছবি পরিষ্কারভাবে উঠে আসে – জেহাদী ইসলামের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত ‘সোনার চাবি’র একাংশ এই নমাজপন্থী সমাজবাদীদের অর্থাৎ “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষ” হিন্দুদের কাছে আসে।
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের কথা বলতে গেলে তাকে শোচনীয়র থেকেও খারাপ বলতে হয়। একে ত এই রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মানুষ ইসলামী, উপরন্তু এখানে হিন্দু নামধারী ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক। ফলে, এখানে তারা ভোট গণতন্ত্রে জেহাদী মতবাদ ও জেহাদী সভ্যতাকে রাজ্যের জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম। এ রাজ্যের সংবাদ-মাধ্যম পর্যন্ত ‘সোনার চাবি’র গুণে বশীভূত। এ রাজ্যে ‘হালাল মাংসের সমর্থক ধর্মনিরপেক্ষদের একজনকেও ঝটকা মাংসের সমর্থনে এগিয়ে আসতে দেখিনি। আসলে এরা মনে প্রাণে “ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে” গ্যাংয়ের সমর্থক। এদের মত অর্ধশিক্ষিতদের একটা কথা মনে করিয়ে দিই – পৃথ্বীরাজকে মহম্মদ ঘোরী জয়চাঁদের বিশ্বাসঘাতকতায় হারালেও প্রথম দিনের দরবারে ঘোরী প্রথম যাকে কোতল করে সে হল এই জয়চাঁদ! মহম্মদ ঘোরীদের আরব সভ্যতা এভাবেই বিচার করে।
বাঙ্গালী ‘ভদ্রলোক’ হিন্দু ঐতিহ্যের অপব্যখ্যা করার পরম্পরা পেয়েছেন কম্যুনিষ্ট লিগ্যাসীর উত্তরাধিকার হিসেবে। যেমন “বসুধৈব কুটুম্বকম” এর কম্যুনিষ্ট ব্যখ্যা হল, “জেহাদী, রোহিঙ্গাকো আপনাও, ঔর উসকে বাদ হিন্দুত্ব সে আজাদী লাও”! যেমন কিছু অর্ধশিক্ষিত বুদ্ধিজীবী “অমৃতস্য পুত্রাঃ”র সমালোচনা করে বলেছিলেন – এখানে নারীর সম্মান নেই! কারন, পুত্রের কথা বলা হলেও পুত্রীর কথা নাকি বলা নেই! এই বাঙ্গালী তথাকথিত বুদ্ধিজীবির দল এখন আমজনতার কাছে বিরক্তি উৎপাদক আর কমিক চরিত্র হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা কয়েকশ গুণ বৃদ্ধি পেলেও গুরুকুল সংখ্যা কমে এক দশমাংশ হয়ে গেছে। এই মাদ্রাসাগুলি শুধু এদেশেই নয়, বাংলাদেশও জেহাদী তৈরীর কারখানা। মাদ্রাসা-শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙ্গালীদের দাপটে বাঙ্গালী সংস্কৃতির অঙ্গ – বাউল গান, কবি গান – এসব অমূল্য সম্পদ বাংলাদেশে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। তার বদলে আরবী সংস্কৃতির জলসা-মেহফিল বেড়েছে।
এপার ও ওপার, দুই বাংলাতেই আরবী সংস্কৃতির চাপে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমান। তাঁরা না পারছেন বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে ভুলতে; না পারছেন আরবী সংস্কৃতিকে আপন করে নিতে। এভাবে বেশীদিন চললে পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালী হিন্দুরা নিজেদের স্বভূমে পরবাসী মনে করবেন। তাই দরকার, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জেহাদের বিরুদ্ধে সবল প্রতিরোধ। একথাও সত্যি যে, বাঙ্গালীর সংস্কৃতি না বাঁচলে শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমানদের আরবী সংস্কৃতির ক্রীতদাস হয়ে কাটাতে হবে। আর হিন্দু বাঙ্গালী নতুন করে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করার জন্য তৈরী হবে। এই লড়াইয়ের একদিকে বাঙ্গালী মননের শিক্ষিত মুসলমান এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী বাঙ্গালী আর অন্যদিকে জেহাদী ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদের শত্রু,”ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে” গ্যাংয়ের সমর্থক হিন্দু।
