পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট শেষ হল। উত্তপ্ত পরিবেশে এই নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ। কোন দলই ভোটে রিগিংয়ের অভিযোগ করেনি। আবার ভোট গণনাপর্বে কোথাও রিকাউন্টিংয়ের পরিবেশ হয়নি একমাত্র মূখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম থেকে হারার পর রিকাউন্টিংয়ের দাবী করবেন বলে তাঁর দল জানিয়েছে। এসবই নির্বাচন কমিশনের মুকুটে নতুন নতুন পালক যোগ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু রিকাউন্টিংয়ের কথা বলা হলেও তা হয়ত বিক্ষুব্ধদের দৃষ্টি ঘোরানোর অপচেষ্টা। কারন, রিকাউন্টিং হলে তার উল্লেখ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকে। এইসবের কোন ভিত্তি নেই। নির্বাচন কমিশন পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস উইথ ডিস্টিংশান।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফল রাজনীতির ময়দানের অনেক রথী মহারথীকে অবাক করলেও তা কিন্তু আসলে অবাক করার মত নয়। পশ্চিমবঙ্গের গত ৪০-৪৫ বছরের বিধানসভা নির্বাচনগুলিকে বিশ্লেষণ করলে কিন্তু তা স্বাভাবিক মনে হবে। কারন এই সময়ে যত কটি নির্বাচন হয়েছে সবেতেই একটি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এই ২০২১এও তার অন্যথা হয়নি।
এবারের নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ নির্বাচনী প্রচারকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। বিজেপি পুরো প্রচারকে হাইটেক ও জৌলুশে ভরিয়ে দিতে চয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে হৃদয়ের টান আর বুদ্ধিমত্তার কোন ছাপ ছিল না। পক্ষান্তরে তৃণমূলের প্রচারে জৌলুষ অনেক কম থাকলেও তারা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বেশী রেখেছিল। ফলে, তাদের বক্তব্য মানুষ অনেক বেশী গ্রহণ করেছে। তবে, তৃণমূলের অভূতপূর্ব জয় ও বিছেপির শোচণীয় পরাজয়ের কারন বহুবিধ। এক এক করে এই ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
সবচেয়ে প্রধান কারন হল, এই ভোট মেরুকরণের ভোট। মেরুকরণ তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে নয়। রাজনীতির পঙ্কিল পরিসর এখন মেধাকে আকর্ষণ করে না। শুধু নিম্ন ও মধ্যমেধার মানুষজন স্বার্থের কামড়া কামড়ির জন্র রাজনীতি করে। এখানে ভোটের লড়াইয়ে বিজেপি বাঙ্গলার ইতিহাস না জেনে রাজনীতি করতে গেছে। বাঙ্গালী অস্মিতাই যে শশাঙ্কের বিজাতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জয় পেতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে তাকে নির্বোধের মত ইসলামী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হিন্দুত্বের জয় বলে চালাতে গেছে। প্রচারের মূল সুর ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের মসিহা হিসেবে বিজেপির অবস্থান! আগে মুসলমান সমাজ ভোট রাজনীতিতে তিন ভাগে বিভক্ত থাকলেও তাদের অস্তিত্বের জন্য বাধ্য করল তৃণমূলকে ভোট দিতে। মোট ভোটারের প্রায় ৩৩% মুসলমান যারা প্রায় শতকরা একশ ভাগ ভোট দিল। মোটা মাথার বিজেপি সেনাপতিরা ধরে নিল, মুসলমানরা তৃণমূলের সঙ্গে আছে বলে হিন্দুরা বিজেপির সঙ্গে! এই অতি সরলীকরন তাদের মূর্খামির প্রতিফলন মাত্র। বিজেপির CAA ও NRC নিয়ে অবস্থান আসামে তাদের সুবিধা দিলেও বাঙ্গলায় তা শুধু সংখ্যালঘু ভোটকেই এককাট্টা করেনি, সেইসঙ্গে তাদের নমশূদ্র ভোটেও ফাটল ধরিয়েছে। এর জন্য মমতা ব্যনার্জীকে কৃতিত্ব দেওয়ার চেয়েও তৃণমূলের দিকে এই ভোট ঠেলে দেওয়ার কৃতিত্ব দেব বিজেপি নেতৃত্বকে!
এই ভোটের একটি লক্ষ্যণীয় দিক হল, ১৯৪৬ সালের পর থেকে কখনো পশ্চিমবঙ্গের এমন বিধানসভা হয়নি যেখানে কম্যুনিষ্ট ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কোন প্রতিনিধি নেই। নীতিহীন, পরিবারতন্ত্র দ্ধারা চালিত কংগ্রেস দল অবক্ষয়ের রাস্তায়। কম্যুনিষ্টদের অবস্থা আরো শোচনীয়।প্রকাশ কারাটের নেতৃত্বের সময় থেকেই তারা ভারতে অবলুপ্তির পথে এগুচ্ছে। কিন্তু নেহেরু পরিবারের বদান্যতায় তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনভাবে নিজেদের গ্রোথিত করেছে যে শিক্ষায় তাদের আদর্শ ও ধান্দা শুধুযে প্রতিফলিত হচ্ছে তাই নয়, তাদের রাষ্ট্রবিরোধী 'ইজম'এ বলীয়ান হয়ে একদল অর্ধশিক্ষিত মানুষ মিডিয়া কন্ট্রোল করছে। সর্বভারতীয় স্তরে ততটা না হলেও এই রাজ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় পুরোটা এবং প্রিন্ট মিডিয়ার অনেকটাই তাদের কন্ট্রোলে। এর জন্য সিপিএমের ৩৪ বছরের নোংরা রাজনীতির অবদান যথেষ্ট। একটা অকাট্য প্রমান দিচ্ছি। যে কোন টিভি চ্যনেলে লোচনার যে প্যানেল থাকে তাতে একজন বামপন্থী অর্থাৎ সিপিএম থাকবে। কংগ্রেসীত থাকবেই। অথচ এই বামপন্থীদের বিধানসভা বা লোকসভায় এই রাজ্য থেকে কোন আসন নেই। এই জনসমর্থনহীন দলেয বক্ত্ব্য দর্শক ও শ্রোতাদের শুনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরা খেঁকশিয়ালের মত একযোগে বলতে থাকে তৃণমূল খারাপ কিন্তু বিজেপি বিপজ্জনক। সুতরাং বিজেপিকে একটিও ভোট নয়! ফলে, এই সিপিএম ও কংগ্রেসের সমস্ত সংখ্যালঘু ভোটাররা তৃণমূলের সঙ্গেই গেল। এরা রাজনৈতিক হারিকিরি করল। এর পিছনের গূঢ় কারন পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে।
এরপর আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যক্টরে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৮৭ সালের পর থেকে মুসলমান জনসংখ্যা প্রজননের থেকেও দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিপিএমের প্রত্যক্ষ মদতে সীমান্তপারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশেষতঃ অর্থনৈতিক কারনে অনুপ্রবেশে সাহায্য করে তাদের রেশান কার্ড ও ভোটার কার্ড করে দিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরী করা শুরু হল। এই সময় অসমীয়াদের প্রতিবাদ আন্দোলনে সেখানকার মুসলমানদের বড় অংশ রাজনৈতিক মদতে পশ্চিমবঙ্গে জামাই আদর পেল। কোন কেন্দ্রীয় সরকার ব্যপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে জন্মহার দেখলেই তা পরিষ্কার হয়। বঙ্গীয় রাজনীতিকদের মাথায় এর পিছনের পরিকল্পনা ঢোকেনি! এখানে ২০১১ সালে পালা বদলের পর মমতা ব্যানার্জী সরাসরি মুসলিম তোষনের রাস্তায় গেলেন। মুসলমানরাও দেখল এই সুযোগ, অনুপ্রবেশ ও তার সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক কাজকর্ম বাড়িয়ে দিল। এদিকে রাজ্যের ভাড়ারে চাপ বৃদ্ধি ও এই জনবিস্ফোরনের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের একটি বড় অংশ অসন্তুষ্ট হলেও তাঁদের অন্যভাবে চুপ করিয়ে রাখা হল। এর বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখি সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মসজিদ,মাজার, কবরস্থানের সংখ্যাবৃদ্ধি। সাধারণ একটি হিন্দু পরিবারে একটি সন্তান জন্মালে ঐ সময় গড়ে একটি মুসলমান পরিবারে চারটি সন্তান জন্মায়। এখন যারা তের বা চোদ্দ বছর বয়সের, তারা আগামী বিধানসভায় ভোট দেবে। এখন ৩৩% মুসলমান ভোটার আছে পশ্চিমবঙ্গে। সুতরাং পরের নির্বাচনে এই মুসলমানরা একজোট হয়ে ভোট দিলে তারা ৫০% ভোটার হওয়ার কারনে তাদের মন্ত্রীসভাই গঠিত হবে। এটাই তাদের লক্ষ্য। সুতরাং এখন থেকে তারা এক ব্লক হিসাবে ভোট দেবে। এই নীতির রূপায়নের চেষ্টা প্রথম অসমে শুরু হয়। কারণ সেখানে জনঘণত্ব তুলনায় কম আর অনুপ্রবেশও সেখানেই প্রথম শুরু হয়। তারপর সেখানে ভূমিপুত্রদের আন্দোলন, অসম অ্যাকর্ড, শেষে সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে NRC শুরু হল। তখন বাধ্য হয়ে বাঁচার জন্য হিন্দু জনগোষ্ঠী সেখানে জোট বেঁধে ব্লক ভোটিং শুরু করল। এরপর এই ভোটিং প্যাটার্নের জন্য সাম্প্রতিক নির্বাচনে কংগ্রেস মুসলমান জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়েও নির্বাচনে পরাস্ত হল। এতে বিজেপি বা তৃণমূল কোন ফ্যাক্টর নয়, ফ্যাক্টর হল দখলদারি ও বাঁচার লড়াই। এই একই কায়দায় আমরা কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতদের বিতাড়নের সময়ও দেখেছি। তবে, সেখানে শাসকগোষ্ঠী একই সম্প্রদায়ের হওয়ায় কাশ্মীর থেকে বড় মাত্রায় হিন্দু নিধন ও বিতাড়ন সম্ভব হয়েছিল। সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের জেহাদী আক্রমণ ও সেখানকার আন্তজার্তিক পরিস্থিতি সরকারে আসীন বিজেপি দলকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। এটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জানে বলেই বিজেপির বিরুদ্ধে যে দল লড়াইয়ে জিতবে তাকেই তারা ভোট দিয়েছে। আজ তৃণমূলকে ভোট দিলেও প্রথম সুযোগেই নিজের গোষ্ঠীর শাসন প্রতিষ্ঠা করে তৃণমূলকেও এরা ছুঁড়ে ফেলে দেবে। দ্রুত জনসংখ্যাবৃদ্ধি এদের নতুন নতুন জমি দখল ও অন্যান্য আগ্রাসনে যাওয়ার চাহিদা বাড়াচ্ছে। ফলে, এরা সেই চেষ্টা করবেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটাররা এই অত্যাচার ও দখলের পরিকল্পনা আঁচ করতে পারেনি। তাই এই ভয় তাদের মনে রেখাপাত করেনি।
এরসঙ্গে হিন্দু বাঙ্গালীর মনে বহুদিনের কম্যুনিষ্ট শাসনের কুফলে সর্বদা একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী 'ইমেজ' কাজ করে - বিশেষতঃ উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে। যেমন রান্নার গ্যাসের ও পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি। এর সব দায় যেন কেন্দ্রের সরকারের রাজনৈতিক দল বিজেপির! যদি এই দাম কমিয়ে ভর্তুকি দিয়ে আমাদের পকেট থেকে উচ্চহারে ট্যাক্স চাপিয়ে অনেক বেশী টাকা নেওয়া হত তাহলে বোধহয় এদের কিছু বলার থাকত না! এরা প্রতিষ্ঠান বিরোধী। এদিকে বিজেপির প্রচার বৈভবে তারাই শাসকদল হওয়ার ভাণ করেছে আর তাতে প্রকৃত শাসক দল তৃণমূল ফয়দা পেয়েছে। তাদের দূর্ণীতি, ঘুষ, খুণের মত অপশাসনের কোন প্রভাব ভোটে পড়ল না। বিজেপির নেতারা জনসংযোগ অপেক্ষা চোখধাঁধানো প্রচার, মিছিল, রোড শোতে ব্যস্ত থাকায় মিডিয়াতে তাদের ছবি বারবার এসেছে, বিনিময়ে ভোট কমেছে। উত্তর ভারতের ও বাঙ্গলার প্রচারের ধরন আলাদা। বাঙ্গলায় 'বানিয়ে দেওয়া' নেতাদের এই বোধটাও কাজ করেনি।
বরিষ্ট নাগরিকদের, বিশেষতঃ যাদের সম্মানজনক পেনশানের ব্যবস্থা নেই, তাদের জন্য একমাত্র সামাজিক সুরক্ষাছিল ব্যঙ্কের সুদ। তাঁদের অল্প কিছু সংস্থান (প্রয়োজনের তুলনায় মুষ্ঠিভিক্ষা মাত্র) করেই কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্ব ছেড়েছে। সুদের হার আমেরিকার মত করেছে, কিন্তু সেখানকার সকল মানুষের সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নে সরকার উদাসীন! আবার সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষজন, বিশেষতঃ মহিলাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের স্কীমগুলিকে চালু না করে রাজ্য সরকার নিজের মত করে ভিন্ন নামে চালু করেছে। এতে মানুষের মনে রাজ্য সরকারের জনদরদী ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। পক্ষান্তরে এই টাকা যুগিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপির ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এভাবে "ভাবের ঘরে চুরি" করে বিজেপির ক্ষতিই হয়েছে। কারন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুফল মানুষকে বিজেপি নেতৃত্ব বোঝাতে পারেনি। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, টিভিতে বিতর্কসভায় বিজেপির যারা অংশগ্রহন করতেন তাদের দু একজন বাদ দিয়ে অন্যদের যোগ্যতা অত্যন্ত সীমিত। এর দায় বিছেপির মিডিয়া সেলের। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের থেকে যারা বিতর্কে যেতেন তাদের সকলেই একই সুরে কথা বলতেন, অর্থাৎ তাদের হোমওয়ার্ক ঠিক ছিল। তৃণমূলের সরকার দ্বারা উন্নয়নের কথা তারা বারবার বলতেন।
তারপর বলতে হয় প্রার্থী নির্বাচন। আইপ্যাকের থেকে পেশাদারী সাহায্য নিয়ে সবকটি কেন্দ্রে প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, এই মূহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফল রাজনীতিক শ্রীমতি মমতা ব্যনার্জী নিজে তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী কে বা কারা নির্বাচন করেছে তা পরিষ্কার নয়। রাজ্য নেতারা দিল্লীর মুখাপেক্ষী। দিল্লী থেকে জম্মে রাজনীতি না করা লোকজনকে উড়িয়ে এনে প্রার্থী করা হল! এক সাংবাদিক, যিনি আবার মনোনীত সাংসদ, সেই পদের অমর্যাদা করে ভোটে দাঁড়িয়ে পরলেন। দিল্লীর তাবড় নেতারা এসে তার হয়ে বক্তৃতা করলেন। আমি একে যতটা জানি, বাঙ্গলায় ইনি কোন রাজনীতি বা সেবামূলক কাজ করেন নি। যখন তার সাংসদ পদের অমর্যাদা নিয়ে তৃণমূল সরব হল, তখন তিনি বাধ্য হয়ে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। এমন মানুষকে বাঙ্গলা কখনো গ্রহণ করে না। আবার একজন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর জেনারেলকে ভোটে নামিয়ে বিছেপির মুখ পুড়ল। মনে হয় না, বুথস্তরে এবং মন্ডলগুলিতে প্রার্থীপদ নিয়ে কোন প্রস্তাব দেওয়া নেওয়া হয়েছে। নীচের স্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের দলের খানসামা ভাবা, ঠান্ডা ঘরে বসে থাকা জনসম্পর্কহীন নেতাদের এখন এমন অবস্থা যে দলের কোন নেতাই এই ভোট বিপর্যয়ের দায়িত্ব নিতে রাজী নয়! সংঘ পরিবার পশ্চিমবঙ্গে মোটামুটি শক্তিশালী। কিন্তু তাদের বঙ্গ বিজেপির উদ্ধত, সবজান্তা নেতারা কোন পাত্তাই দেয়নি। উপদেশ শোনা ত দূরের কথা। বহু পুরোনো জাতীয়তাবাদী পার্টিকর্মীদের অপমান করা হয়েছে। দলে জামাই আদরে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূলের 'ছাটমাল' নেতাদের। এভাবে জনসাধারণের কাছে বার্তা দেওয়া হল, বিজেপিতে তাদের নিজেদের যোগ্য প্রার্থী নেই। দু মাস আগে বিজেপিতে আসা একজন কলেজ শিক্ষক, যিনি টিভির পর্দায় বসার নিরিখে নেতা - একসময় সিপিএম, তৃণমূল, সব দলের হয়ে কথা বলা মানুষ, তাকে প্রার্থী করা হল! অবধারিতভাবে ঐ বিধানসভায় দলের কর্মীরাইহতোদ্যম হয়ে পড়ল। উনি ওনার বিধানসভায় সমস্ত পৌর ওয়ার্ডে হেরেছেন। শুধু তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দের কারনে একটিমাত্র ওয়ার্ডে কিছু ভোট বেশী পেয়েছেন। আরেকজন তৃণমূলের বড় নেতা, যাকে তার এলাকার লোকজন তোলাবাজীর জনক বলে জানে, যিনি গত পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে রিগিংয়ের নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ, সেই দলত্যাগী নেতাকে বিজেপি প্রার্থী করল। এই উদ্ধত নেতাটি নির্বাচনে দাঁ দাঁড়িয়ে প্রথমেই সাংবাদিকদের বলল, "আমাকে ওয়াকওভার দেওয়া হল"! সেই নেতা তার এলাকাতেই হেরেছে। এই উদ্ধত নেতা তার ব্যবহার ও এলাকার বিজেপি কর্মীদের ব্যবহার না করার জন্য বর্তমান মন্ত্রী ও জনপ্রিয় এমএল একে গতবারের থেকেও বেশী ভোটে জিততে প্রকৃতপক্ষে সাহায্য করল। তৃণমূলের এত সমালোচনা করা হয় অভিনেতা, অভিনেতৃদের দলে নেওয়ার জন্য, অথচ বিজেপি দলে দলে সফল, অসফল অভিনেতা, অভিনেত্রীদের তা মঞ্চ, টিভি, সিরিয়াল, ওটিটি, বড় পর্দা - যাই হোকনা কন - জাপটে ধরে কোন বাছবিচার ছাড়া প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল! অধ্যাপক সংঘ, বিজেপি এবং অন্য সব বিরোধীদল শিক্ষামন্ত্রীর পাহাড়প্রমান ব্যর্থতা নিয়ে সরব। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হল এমন একজন অভিনেত্রীকে যিনি কখনো স্কুলের গন্ডি পেরোননি। তিনি তার নিজের এলাকাতেও কখনো রাজনীতি বা সমাজসেবামূলক কাজ করেননি। উপরন্তু ভোটপর্ব চলাকালীন এক তৃণমূল নেতার সঙ্গে তার ঘণিষ্টতা সংবাদমাধ্যমে খবর হোল। যিনি বা যারা এইসব প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছেন তারা তার দায় নিতে বাধ্য। সবশেষে বলি এই লেখা পাঠনোর সময় পর্যন্ত কোন বিজেপি নেতা ভোট বিপর্যয়ের দায় নেয়নি। কেউ পদত্যাগ করেনি! তবে কি ধরে নিতে হবে, এইসব নেতারা পদের জন্য রানীতি করছেন - সমাজসেবা ভড়ং মাত্র?
পরিশেষে শ্রীমতি মমতা ব্যনার্জীর উদ্দেশ্যে বলি, আপনি এখন পশ্চিমবঙ্গের সকল মানুষের মূখ্যমন্ত্রী - তৃণমূলের মূখ্যমন্ত্রী নন। এই যুদ্ধে আপনি জিতেছেন তৃণমূলের পজিটিভ ভোটে নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোটে। আপনি যদি সুষ্ঠুভাবে সমদর্শী নীতিতে রাজ্য চালান, বাঙ্গালী অস্মিতাকে যথাযথ সম্মান করেন, সর্বোপরি বর্ডার রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যত্নবান হোন, তবে আপনি আবারো জিতবেন - অন্যথায় মনে রাখবেন, পলিটিক্যাল সায়েন্সের নীতি অনুসারে কোথাও রাজনৈতিক শূন্যতা (political void) থাকেনা।
Hi, this is a comment.
To get started with moderating, editing, and deleting comments, please visit the Comments screen in the dashboard.
Commenter avatars come from Gravatar.