পৃথিবীর সব ভাষাতেই বলা হয় – “জলই জীবন”। প্রবহমান প্রাণের স্পন্দনের অন্যতম শর্ত হল – জল। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ জানে না যে, পৃথিবীর সমগ্র জলের পরিমাণের মাত্র ২.৭% জল পানীয়! গত ৪০-৫০ বছর ধরে জলের অপচয় বিষয়ে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরন করা হচ্ছে! ১৯৮৭-৮৮ সালে যখন UNICEF এর বিভিন্ন প্রোগ্রামে জল-বিশেষজ্ঞ হিসেবে গিয়েছি, সেখানেও জল সংরক্ষণের বিষয়ে জোর দেওয়া হত। কিন্তু মানুষের লোভ এবং স্বাচ্ছন্দের জন্য উন্মত্ততা বর্তমান প্রজন্মকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে!
গত ১৪ই এপ্রিল, ২০২৩ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী শহর কেপটিউনকে পৃথিবীর প্রথম রাজধানী শহর হিসেবে খরা-প্রবণ বলে ঘোষণা করা হয়। এই সঙ্গে সেখানে প্রশাসন পানীয় জল সরবরাহ করতে অপারগ বলে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। বুঝুন অবস্থা! কেন্দ্রীয় সরকারের National Aquifer Mapping & Management Programme (NAQUIM) যে সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট পেশ করেছে সেটি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের দুই চব্বিশ পরগণা ও হাওড়া জেলার পক্ষে ভয়াবহ। বর্তমান শতাব্দীর শুরুতে কলকাতায় ৭ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জল পাওয়া যেত। বর্তমানে তা ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ৫ থেকে ১৬ মিটার নীচে নেমে গেছে! ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, আলিপুর, বালিগঞ্জ, কালিঘাট ও পার্কসার্কাস অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ১৪ থেকে ১৬ মিটারে নেমে গেছে! বাঁশদ্রোণী, গড়িয়া অঞ্চলে, যেখানে আগে ভূগর্ভের ৫ – ৬ মিটারের মধ্যে জল পাওয়া যেত, সেখানে এখন ৮ থেকে ১১ মিটারে জল মিলছে! যেজন্য রাজ্য-সরকার ব্যক্তি মালিকানার বাড়িতে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। কিন্তু এখনো সরকারের তরফে কোন comprehensive কার্যকরী প্ল্যান করতে দেখা যাচ্ছে না। যেমন, KMC নিজেই ২৬৪ টি ডিপ টিউবওয়েল এবং প্রায় ১০,০০০ শ্যালো টিউবওয়েল চালু রেখেছে, যার থেকে গড়পরতা ৪ হাজার লক্ষ লিটার জল তোলা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের “চালের ভান্ড” বলে পরিচিত বর্ধমানে এই ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার পরিমাণ সর্বাধিক! এই জেলায় উন্নয়নের নামে যেমন ব্যপকহারে নগরায়ণ হয়েছে, তেমনি পাম্প করে যথেচ্ছভাবে মাটির তলার জল তোলা হয়েছে, এমনকি সেচের কাজেও পাম্প করে প্রচুর জল তোলা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এই জেলার এবং পার্শবর্তী বীরভূমের নদীগুলি গ্রীষ্মকালে প্রায় জলশূণ্য হয়ে পড়ছে! এভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে এই রাজ্যেও কেপটাউনের মত পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে!
রাজ্যের ৩৪১ টি ব্লকের মধ্যে প্রায় ৮০% ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলস্তর বিপজ্জনকভাবে নামছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে রাজ্য বা কেন্দ্র, কোন সরকারই এখনো পর্যন্ত ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত নেয়নি। দ্রুত ও দীর্ঘ নগরায়নের প্রভাবে বৃহত্তর কলকাতায় ভূগর্ভের জলস্তর ৭ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে – এমনই ২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় জানা যায়। আবার ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার কারনে বিভিন্ন নদী, জলাশয়ে গ্রীষ্মকালে জলস্তর অতি দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখা উচিৎ। দ্রুত নগরায়নে জলের চাহিদা বাড়ায় যেমন ভূগর্ভস্থ জলের চাহিদা বেড়েছে, তেমনি জলস্তর নেমে যাওয়ার কারনে জলে লবণাক্ততা সহ বিষাক্ত রাসায়নিক – যেমন আর্সেনিক, সীসা ইত্যাদির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, পেটের রোগ, চামড়ার রংয়ের পরিবর্তন এমনকি শরীরের ঘা পযর্ন্ত হচ্ছে! যেহেতু এই বিষ জলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মানুষের শরীরে ঢুকছে, এর পুঞ্জীকৃত বিষক্রিয়ায় মৃত্যু পযর্ন্ত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু সংবাদ এখানে তুলে ধরছি – পাণীয় জলের সমস্যার প্রতিবাদে সিউড়িতে বিক্ষোভ ; প্রতি বাড়িতে কল থাকলেও নলে জল না আসায় দেবেনন্দপুরে রাস্তা অবরোধ; আর্সেনিকমুক্ত জল প্রকল্পের ৮০% মেশিন বিকল, চলছে অবৈধ কারবার; বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সমস্যায় সাগরদত্তে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ ; গরম পড়তেই উখড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে পানীয় জলের সংকট; পানীয় জলের দাবীতে সাহাপুরে বাসিন্দাদের অবরোধ; রতুয়ার শ্রীপুর ২ পঞ্চায়েতে পরিস্রুত পানীয় জলের সংকট; গরমের দাপট বাড়তেই তীব্র পানীয় জলের সংকট জয়নগরে ; কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতে ছয়টি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার ভুগছে তীব্র জল সংকটে; দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার লক্ষ্মীনারায়ণপুরে জল সংকট। বাড়ি বাড়ি কল থাকলেও নেই জল! ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকাবাসী।
আরেকটি বড় ক্ষতি চাষাবাদের। সেখানে চাষের প্রয়োজনে শ্যালো পাম্পের ব্যবহার যত বেশী হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ জলস্তর ততো নীচে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে বড় গাছের গোড়া শুষ্কতায় ভূগে দ্রুত মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে। বিশেষভাবে দুই চব্বিশ পরগনায় আম, লিচু এবং পেয়ারা চাষে এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। যত সময় যাচ্ছে, এই সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একথা সত্যি যে, সারা বিশ্বেই আধুনিকতার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নগরায়ণের চাহিদা বৃদ্ধির কারনে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু ভূগর্ভস্থ অ্যাকোয়াফার লেভেলকে রিচার্জ করার জন্য আমাদের দেশে বৃষ্টির মত প্রাকৃতিক কারনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। এখন দ্রুত নগরায়ণের কারনে বড় গাছ কেটে ফেলার জন্য বৃষ্টিও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সেজন্য খরা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে সমস্যা আরো মারাত্নক হচ্ছে। বিশেষভাবে তামিলনাড়ুতে এই অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য rain water harvesting ও বৃষ্টির জল সংরক্ষণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তার কিছু সুফলও মিলেছে।
আমরা এখুনি সতর্ক হয়ে যদি বহুমূখী পরিকল্পনায় ভূগর্ভস্থ জলস্তর রিচার্জিংয়ের ব্যপারে যত্নবান না হই, তাহলে আগামী দিনে রাজ্যে চিরস্থায়ী খরা নেমে আসবে! প্রথমত, উন্নয়নের নামে বৃক্ষছেদন ও নগরায়ণের নামে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি বানানো বন্ধ করা আশু প্রয়োজন। তাছাড়া, প্রতিটি বড় গাছ কাটার সময় ঐস্থানের আশেপাশে অন্ততঃ দশটি একই ধরনের গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। তাছাড়া, যে সব পাবলিক টয়লেট ও মিউনিসিপালিটির কল দিয়ে জলের অপচয় হয়, তা বন্ধ করা আশু প্রয়োজন। বিশেষভাবে ব্যবহার করার সময় ছাড়া অন্য সময় যাতে কলে জল না আসে, সেই পদ্ধতি ব্যবহার করা দরকার। নগরায়ণের প্রশ্নে ভার্টিকাল এক্সপানশান অপেক্ষা হরাইজন্টাল এক্সপানশানের উপর জোর দেওয়া উচিৎ। সম্প্রতি আইসল্যান্ডে আমি দেখেছি, একমাত্র রাজধানী রিকিয়াভিক ছাড়া অন্য কোথাও বহুতল বাড়ি নেই! সেখানে তিনতলার চেয়ে উঁচু বাড়ি দেখিনি। বহুতল বাড়ির সংখ্যা যত বাড়বে, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর তত নামবে। কারন, বড় শহর ছাড়া অন্য সব জায়গায় নদীর জল শোধন করে নলের মাধ্যমে সর্বত্র পাঠানো সম্ভব নয়। ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গেলে আরেকটি সমস্যা হল, মাটির বাঁধন আলগা হয়ে যাওয়া। এর ফলে, যেমন ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়বে, তেমনি এইসব বাড়ির দেওয়ালে দ্রুত ফাটল দেখা দেবে।
ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ায় সেচের জন্য খরচের পরিমাণ বাড়ছে, সেইসঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। জমির ফসলের পরিমাণ কমছে।
তার সঙ্গে এই রাজ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত জলাভূমি বুজিয়ে ইট-কাঠ-পাথরের নির্মাণ করে শুধু ভূগর্ভস্থ জলস্তরকেই নীচে ঠেলে দেওয়া নয়, জল-দূষণ অত্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে! কলকাতার পূর্বদিক জুড়ে যে বিশাল জলাভূমি একসময় কলকাতাকে তার পানীয় জলের স্তর ঠিক রেখে, বিভিন্ন অ্যাকোয়াফারের প্রাকৃতিক ফিল্টারের মাধ্যমে জলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে সাহায্য করত, এবং সেইসঙ্গে বায়ুদূষণ কমিয়ে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখত, তা বুজিয়ে দিতে দিতে আজ পঞ্চাশ বছর আগের তুলনায় ৫% জলাভূমিও অবশিষ্ট নেই। উচ্চ-আদালতের নির্দেশে জলাভূমি বুজিয়ে বাড়ি তৈরী করা বেআইনি – এই রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে আইনের ফাঁক-ফোকোর দিয়ে জলাভূমি বোজানো চলছে! শুধু কলকাতা নয়, সারা রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ারে এই একই অবস্থা! যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাটির নীচের জলস্তর নেমে যাচ্ছে, তার ফলে আর ১৫-২০ বছরের মধ্যে রাজ্যে জলের খরা অবশ্যাম্ভাবী।
আজ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র শিক্ষা নিয়ে ওরিগনের ক্রেটার লেককে সংরক্ষণ করে ক্রেটার ন্যাশনাল পার্ক তৈরী করেছে। গত শতাব্দীর আশির দশকে এই লেকের জলে আর্সেনিক দূষণ পাওয়ার পরসে দেশের সরকার নড়েচড়ে বসে। কিন্তু আমাদের সরকার – কাকস্য পরিবেদনা! কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগণা সহ রাজ্যের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক, সীসা সহ e-coli ও আরো অনেক প্রাণঘাতী বিষের প্রদূষণ বাড়তে থাকলেও রাজ্য, কেন্দ্র – উভয় সরকারই কমিটি, আইন এসব করেই ক্ষান্ত! কোন কার্যকরী সুরাহার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এভাবে পশ্চিমবঙ্গের হৃদয় – কলকাতা, তার পার্শবর্তী জেলাগুলি ধীরে ধীরে মঙ্গলগ্রহের মত জলশূণ্যতার দিকে এগিয়ে চলেছে! অন্ততঃ কেপটাউন মিউনিসিপালিটির মত কবে শুনব KMC বিজ্ঞপ্তি জারি করছে – জনগণকে আর পাণীয় জল সরবরাহের দায়িত্ব নেওয়া হবে না! তবু, তার আগে জলের অপচয়টুকু কি বন্ধ হবে না!
Category: Social
লাভ-জিহাদের মূল উদ্দেশ্য
সোশাল মিডিয়ায় বদরুদ্দিন আজমল নামের একজনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে – ইসলামী ছেলেরা ২২ ও মেয়েরা ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করে বলে নাকি তাদের বাচ্চার সংখ্যা বেশী! এই লোকটি তার অন্ধ হিন্দু-বিদ্বেষের পরিচয় দিয়ে বলে, হিন্দুরা ৪০ বছরের আগে বিয়ে করে না আর তার আগে তিন, চারটি করে অবৈধ স্ত্রী রাখ – সেখানে মজা লোটে আর বাচ্চা হয় না! ৪০ বছরের পর কোথাও ফেঁসে গিয়ে যখন তারা বিয়ে করে তখন নাকি তাদের বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা থাকে না! সেজন্য নাকি হিন্দুদের বাচ্চার সংখ্যা কম!
এমন একজন হিন্দু-বিদ্বেষী উন্মাদকে যদি প্রশ্ন করা যায়, একজন ইসলামী একসঙ্গে কতজন স্ত্রী রাখতে পারেন? তার উত্তর সে দিতে পারবে না। হাদিসে আছে – চারটি! অবশ্য ওসামা-বিন-লাদেন বা মোল্লা ওমরের কটি স্ত্রী ছিল তা জানলে পরে, তারা ইসলামকে কতটা মেনেছিলেন, তার ব্যাখ্যা কোন জিহাদী মোল্লা-মৌলবীর পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আসলে মৌলবাদী জিহাদীরা ইসলামের আড়ালে তাদের বিস্তারধর্মী কার্যসিদ্ধি করার উদ্দেশ্যে মসজিদ, মাদ্রাসাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে – খিলাফৎ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে। এই সময় থেকে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম এবং মোল্লা, মৌলবীদের আর্থিক প্রলোভন দেখানো শুরু হয়। তখন থেকে বিশেষভাবে ভারতের হিন্দু নারীরা তাদের টার্গেট ভিক্টিম!
২০০৯ – ১১ সালে এভাবে অমুসলিম মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে মুসলিম ছেলেরা তাদের সঙ্গে সম্ভোগ-ক্রিয়া করে তাদের ‘নিকাহ’ করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কাজ ব্যাপকভাবে শুরু করে। ধর্মীয় সংগঠনগুলি এ কাজে যুক্ত জিহাদী এই ছেলেদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে বলে অভিযোগ। এতে ইসলামী মৌলবাদীদের একাধিক উদ্দেশ্য সার্থক হয়। প্রথমতঃ, এই অমুসলিম মহিলারা ইসলামের ভাষায় “শষ্যক্ষেত্র” হিসাবে ইসলামী সন্তান জন্মের জন্য ব্যবহৃত হয়! এর ফলে ইসলামী জনসংখ্যার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অমুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমবে। যার অবিসংবাদী ফল হল, ধীরে ধীরে একটি দার-উল-হার্ব রাষ্ট্র একদিন দার-উল-ইসলামে পরিণত হবে। এই কাজকে শুধু যে ইসলামী পুরুষদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী অবশ্য পালনীয় করার কথা বলে, তাই নয়, এ কাজের জন্য ধর্মীয় সংগঠন ও জিহাদী সংগঠন থেকে অর্থ সাহায্য পর্যন্ত করা হয় – সাম্প্রতিক শ্রদ্ধা ওয়ালকার মার্ডার কেসের অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি অনুসারে এই তথ্য সামনে এসেছে। একে পশ্চিমী দুনিয়া প্রথম “লাভ জিহাদ” আখ্যা দেয়।
গত ২০১৪ সাল থেকে ভারতে এই লাভ জিহাদের ঘটনার পরিসংখ্যান সামনে আসতে শুরু করে। জিহাদী ও কম্যুনিস্ট মানসিকতার সংবাদ-মাধ্যম ও তাদের বেতনভূক তথাকথিত “বুদ্ধিজীবী”রা রে রে করে নেমে পড়ে একে লাভ জিহাদ না বলে মহিলাদের উপর অত্যাচারের “বিচ্ছিন্ন” ঘটনা বলে চালাতে চায়। কয়েকটি ঘটনা-প্রবাহ ও পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যাবে, এইসব সংবাদ-মাধ্যম পেইড নিউজ ও পেইড বুদ্ধিজীবী দ্বারা দুর্বল মিথ্যাকে সত্যি বলে চালাতে চায় – অনেকটা গোয়েবেলসীয় কায়দায়! স্বাধীনতার সময়ে পাকিস্তানের জনসংখ্যার ২৪% ছিল হিন্দু। এখন পাকিস্তানে হিন্দু ২% মাত্র! পূর্ব পাকিস্থানে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময়ে ৩৩% হিন্দু থাকলেও এখন সেই সংখ্যা এসে ৯% এ দাঁড়িয়েছে! অর্থাৎ দুই দেশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা ক্রমশঃ বিলীয়মান হওয়ার পথে। হিন্দুরা দুটি দেশেই মার্জিনালাইজড্।
গান্ধীজীর সমর্থনে জওহরলাল ও অন্যান্য গান্ধীবাদী নেতাদের আত্মঘাতী নীতিতে স্বাধীনতার সময় ভারতে সর্ব ধর্ম সমন্বয় এবং পরবর্তীতে জওহর কন্যা ইন্দিরা গান্ধীর চাতুরীতে ভারত হল ধর্মনিরপেক্ষ (!) রাষ্ট্র। এটি যে “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতা”, সেকথা আগে অনেক লেখায় তথ্য সহকারে উপস্থাপিত হয়েছে। সে কারনে ভারতে ইসলামী জনসংখ্যা ১০% থেকে বেড়ে ১৪% হয়েছে। ইসলামী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৯১-২০০১ সালে ৩৬% হয়েছে! এখন তা নিঃসন্দেহে ৪০% অতিক্রম করেছে। এই পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে লাভ জিহাদের বিচার-বিশ্লেষণ আবশ্যক।
লাভ জিহাদের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ইসলামী ছেলেদের জড়িত থাকার ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব যে ধর্মীয় উন্মাদনার কারনে, সেটা তাদের অপরাধের ধরনেই বোঝা যায় – এই অপরাধের বিভৎসতা সভ্য সমাজের চিন্তার অতীত। ২০২০ সালে হলদিয়ার রমা দে (৪০) ও তার মেয়ে রিয়া দে (১৯) কে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় মুল অভিযুক্ত হয় শেখ সাদ্দাম নামের এক ইসলামী যুবক। মৃতদেহ দুটির পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায় মা ও মেয়ে দুজনেই গর্ভবতী ছিল! গ্রেপ্তারের পর সাদ্দামের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, মা ও মেয়ে দুজনেই তার দ্বারা গর্ভবতী হয়! এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন – হিন্দুদের মধ্যে নারীদের মা, স্ত্রী, মেয়ে বা বোন হিসেবে দেখা হয়। সেজন্য এই ধরনের অপরাধের রেকর্ড তাদের মধ্যে নেই। আবার হিন্দু রমনী মাত্রই “শষ্যক্ষেত্র” মনে করে শেখ সাদ্দাম মা ও মেয়ে দুজনের সঙ্গেই মিলিত হয়ে তাদের গর্ভবতী করে! একসময় ব্যপারটা জানাজানি হতে সে বাধ্য হয়ে নাকি বন্ধু মঞ্জুর আলমের সহযোগীতায় রমা ও রিয়াকে একসঙ্গে খুন করে।
সাম্প্রতিক কালে দিল্লীর শ্রদ্ধা ওয়ালকারের কথা ধরা যাক। তার লিভ পার্টনার আফতাব পুনাওয়ালা (পার্শী নয়, মুসলমান) শ্রদ্ধাকে খুন করার পর তার দেহ ৩৫টি টুকরো করে ছড়িয়ে দেয়! শ্রদ্ধার ২০২০ সালে লেখা একটি চিঠি থেকে জানা যায়, আফতাব নাকি শ্রদ্ধার উপর রেগে গেলে প্রায়শঃই তাকে মের টুকরো করার হুমকি দিত! অথচ, মুসলিম জাস্টিস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাফিউদ্দিন কুদরোলি এই ঘটনাকে লাভ জিহাদ মানতে অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে! Times of India ও বেশ কিছু জিহাদী মদতপুষ্ট সংবাদ-মাধ্যম সেই লাইনে প্রচার পর্যন্ত করছে! অবশ্য হুবলির হিন্দু জাগ্রুতি সমিতি এই লাভ জিহাদের অপরাধী আফতাব পুনাওয়ালার কঠিনতম শাস্তি দাবী করেছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ধর্মীয় এবং অন্য গূঢ় কারনে এমন জঘণ্য অপরাধীদের আড়াল করার প্রবনতা আছে – যা সমাজকে অবধারিতভাবে নরকের দড়জায় নিয়ে যাবে।
এই দুটি অপরাধের প্রকৃতি অনুধাবন করলে বোঝা যায়, এগুলি সাধারণ শ্লীলতাহাণি করে খুণ নয়। পৃথিবীতে মানুষ দূরের কথা, কোন পশুও একসঙ্গে মা ও মেয়ে দুজনের সঙ্গে সম্ভোগে লিপ্ত হতে পারে না। শেখ সাদ্দামের পক্ষে সেটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ধর্মের আফিমে বিভোর থেকে সে বিধর্মী রমনীদের “শষ্যক্ষেত্র” হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামী শিশুর জন্ম দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেছে বলে! এখানে কোন ভালবাসার ব্যাপার নেই। আজে শুধু যৌণ লালসা চরিতার্থ করা এবং তা বিধর্মী রমণীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রসূত ধর্ষণ হতে পারে মাত্র। বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জিহাদের একটি অস্ত্র এই “লাভ জিহাদ”। শ্রদ্ধা হত্যাকান্ডও লাভ জিহাদের অন্যরকম বহিঃপ্রকাশ। কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে খুণের হুমকি দিতে দিতে একসময় খুন করে তার দেহ ৩৫ টুকরো করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে না! একমাত্র হৃদয়হীণ পাকা খুনী সম্ভোগের পর সঙ্গীকে এভাবে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে পারে। সেটাও সম্ভব শুধুমাত্র বিধর্মী শষ্যক্ষেত্রের উপর তীব্র ধর্মীয় ঘৃণা প্রসূত বিদ্বেষ থেকে।
এইসব লাভ জিহাদের উদ্দেশ্য ও কার্যপ্রণালীর ছক একটাই – ভারতে বিধর্মী, বিশেষতঃ হিন্দু, রমণীদের ছলে-বলে-কৌশলে ঘনিষ্ঠ হও। সুযোগ বুঝে তাদের গর্ভে ইসলামী ‘ফসল’ ফলাও – তারপর “শষ্যক্ষেত্র”কে ধর্মান্তরিত করে ইসলামে শামিল কর! এক্ষেত্রে কোন স্তরে কোন বাধা এলে তাদের খতম করে দাও! এই কাজের জন্য যদি জিহাদীকে মরতে হয় তবে বেহেস্তের বাহাত্তর হুরী (সুন্দরী স্বর্গ-বেশ্যা) সম্ভোগ কর! পুরোপুরি যৌন সম্ভোগের লোভ দেখিয়ে নিজেদের বিস্তারধর্মী কাজের প্রসারের মাধ্যমে ভারতকে দার-উল-হার্ব থেকে দার-উল-ইসলামে রূপান্তরিত করা।
অবাক করার মত যা, তা হল, এই কাজে ভারতের অমুসলিম কম্যুনিস্ট ও তথাকথিত “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতার” ধারক ও বাহক কিছু মানুষ, সংবাদ-মাধ্যম তাৎক্ষণিক লাভের কড়ি গুনতে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব, ইতিহাস – সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। এভাবে চললে ভারতের অমুসলিম অধিবাসীদের অবস্থা কুর্দীস্থানের কুর্দ, ইয়াজিরীদের মত হবে। অতঃপর, তাদের সামনে বেছে নেওয়ার রাস্তা একটাই – হয় লাভ জিহাদীদের তাদের দেশে (পাকিস্তান বা বাংলাদেশ) পাঠাও অথবা নিজেদের অস্তিত্ব শেষ কর। এজন্যই মহম্মদ আলী জিন্নার অভিমত – মুসলমান একটি পৃথক জাতিসত্বা – তা হিন্দু, শিখ, খৃষ্টান সকলের থেকে পৃথক। তাই মুসলমানরা তাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র চায়। এমন সহজ, সত্যি কথাটা বুঝেও নিজেদের স্বার্থের জন্য গান্ধী-নেহরু তা মানতে চাননি। তাদের “হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই” এর নামে ভারতকে “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতা”র দেশ করার খেসারৎ আজ ভারতের অমুমসলিম অধিবাসীদের দিতে হচ্ছে। এর সমাধান প্রয়োজন।
রাজ্যের ভোটযুদ্ধে বিজেপির ব্যর্থতা কেন
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট শেষ হল। উত্তপ্ত পরিবেশে এই নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ। কোন দলই ভোটে রিগিংয়ের অভিযোগ করেনি। আবার ভোট গণনাপর্বে কোথাও রিকাউন্টিংয়ের পরিবেশ হয়নি একমাত্র মূখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম থেকে হারার পর রিকাউন্টিংয়ের দাবী করবেন বলে তাঁর দল জানিয়েছে। এসবই নির্বাচন কমিশনের মুকুটে নতুন নতুন পালক যোগ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু রিকাউন্টিংয়ের কথা বলা হলেও তা হয়ত বিক্ষুব্ধদের দৃষ্টি ঘোরানোর অপচেষ্টা। কারন, রিকাউন্টিং হলে তার উল্লেখ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকে। এইসবের কোন ভিত্তি নেই। নির্বাচন কমিশন পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস উইথ ডিস্টিংশান।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফলাফল রাজনীতির ময়দানের অনেক রথী মহারথীকে অবাক করলেও তা কিন্তু আসলে অবাক করার মত নয়। পশ্চিমবঙ্গের গত ৪০-৪৫ বছরের বিধানসভা নির্বাচনগুলিকে বিশ্লেষণ করলে কিন্তু তা স্বাভাবিক মনে হবে। কারন এই সময়ে যত কটি নির্বাচন হয়েছে সবেতেই একটি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এই ২০২১এও তার অন্যথা হয়নি।
এবারের নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ নির্বাচনী প্রচারকে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। বিজেপি পুরো প্রচারকে হাইটেক ও জৌলুশে ভরিয়ে দিতে চয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে হৃদয়ের টান আর বুদ্ধিমত্তার কোন ছাপ ছিল না। পক্ষান্তরে তৃণমূলের প্রচারে জৌলুষ অনেক কম থাকলেও তারা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক বেশী রেখেছিল। ফলে, তাদের বক্তব্য মানুষ অনেক বেশী গ্রহণ করেছে। তবে, তৃণমূলের অভূতপূর্ব জয় ও বিছেপির শোচণীয় পরাজয়ের কারন বহুবিধ। এক এক করে এই ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যখ্যা দেওয়া যেতে পারে।
সবচেয়ে প্রধান কারন হল, এই ভোট মেরুকরণের ভোট। মেরুকরণ তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে নয়। রাজনীতির পঙ্কিল পরিসর এখন মেধাকে আকর্ষণ করে না। শুধু নিম্ন ও মধ্যমেধার মানুষজন স্বার্থের কামড়া কামড়ির জন্র রাজনীতি করে। এখানে ভোটের লড়াইয়ে বিজেপি বাঙ্গলার ইতিহাস না জেনে রাজনীতি করতে গেছে। বাঙ্গালী অস্মিতাই যে শশাঙ্কের বিজাতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জয় পেতে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে তাকে নির্বোধের মত ইসলামী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হিন্দুত্বের জয় বলে চালাতে গেছে। প্রচারের মূল সুর ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের মসিহা হিসেবে বিজেপির অবস্থান! আগে মুসলমান সমাজ ভোট রাজনীতিতে তিন ভাগে বিভক্ত থাকলেও তাদের অস্তিত্বের জন্য বাধ্য করল তৃণমূলকে ভোট দিতে। মোট ভোটারের প্রায় ৩৩% মুসলমান যারা প্রায় শতকরা একশ ভাগ ভোট দিল। মোটা মাথার বিজেপি সেনাপতিরা ধরে নিল, মুসলমানরা তৃণমূলের সঙ্গে আছে বলে হিন্দুরা বিজেপির সঙ্গে! এই অতি সরলীকরন তাদের মূর্খামির প্রতিফলন মাত্র। বিজেপির CAA ও NRC নিয়ে অবস্থান আসামে তাদের সুবিধা দিলেও বাঙ্গলায় তা শুধু সংখ্যালঘু ভোটকেই এককাট্টা করেনি, সেইসঙ্গে তাদের নমশূদ্র ভোটেও ফাটল ধরিয়েছে। এর জন্য মমতা ব্যনার্জীকে কৃতিত্ব দেওয়ার চেয়েও তৃণমূলের দিকে এই ভোট ঠেলে দেওয়ার কৃতিত্ব দেব বিজেপি নেতৃত্বকে!
এই ভোটের একটি লক্ষ্যণীয় দিক হল, ১৯৪৬ সালের পর থেকে কখনো পশ্চিমবঙ্গের এমন বিধানসভা হয়নি যেখানে কম্যুনিষ্ট ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কোন প্রতিনিধি নেই। নীতিহীন, পরিবারতন্ত্র দ্ধারা চালিত কংগ্রেস দল অবক্ষয়ের রাস্তায়। কম্যুনিষ্টদের অবস্থা আরো শোচনীয়।প্রকাশ কারাটের নেতৃত্বের সময় থেকেই তারা ভারতে অবলুপ্তির পথে এগুচ্ছে। কিন্তু নেহেরু পরিবারের বদান্যতায় তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনভাবে নিজেদের গ্রোথিত করেছে যে শিক্ষায় তাদের আদর্শ ও ধান্দা শুধুযে প্রতিফলিত হচ্ছে তাই নয়, তাদের রাষ্ট্রবিরোধী 'ইজম'এ বলীয়ান হয়ে একদল অর্ধশিক্ষিত মানুষ মিডিয়া কন্ট্রোল করছে। সর্বভারতীয় স্তরে ততটা না হলেও এই রাজ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রায় পুরোটা এবং প্রিন্ট মিডিয়ার অনেকটাই তাদের কন্ট্রোলে। এর জন্য সিপিএমের ৩৪ বছরের নোংরা রাজনীতির অবদান যথেষ্ট। একটা অকাট্য প্রমান দিচ্ছি। যে কোন টিভি চ্যনেলে লোচনার যে প্যানেল থাকে তাতে একজন বামপন্থী অর্থাৎ সিপিএম থাকবে। কংগ্রেসীত থাকবেই। অথচ এই বামপন্থীদের বিধানসভা বা লোকসভায় এই রাজ্য থেকে কোন আসন নেই। এই জনসমর্থনহীন দলেয বক্ত্ব্য দর্শক ও শ্রোতাদের শুনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরা খেঁকশিয়ালের মত একযোগে বলতে থাকে তৃণমূল খারাপ কিন্তু বিজেপি বিপজ্জনক। সুতরাং বিজেপিকে একটিও ভোট নয়! ফলে, এই সিপিএম ও কংগ্রেসের সমস্ত সংখ্যালঘু ভোটাররা তৃণমূলের সঙ্গেই গেল। এরা রাজনৈতিক হারিকিরি করল। এর পিছনের গূঢ় কারন পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে।
এরপর আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যক্টরে। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৮৭ সালের পর থেকে মুসলমান জনসংখ্যা প্রজননের থেকেও দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিপিএমের প্রত্যক্ষ মদতে সীমান্তপারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিশেষতঃ অর্থনৈতিক কারনে অনুপ্রবেশে সাহায্য করে তাদের রেশান কার্ড ও ভোটার কার্ড করে দিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরী করা শুরু হল। এই সময় অসমীয়াদের প্রতিবাদ আন্দোলনে সেখানকার মুসলমানদের বড় অংশ রাজনৈতিক মদতে পশ্চিমবঙ্গে জামাই আদর পেল। কোন কেন্দ্রীয় সরকার ব্যপারটাকে গুরুত্ব দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে জন্মহার দেখলেই তা পরিষ্কার হয়। বঙ্গীয় রাজনীতিকদের মাথায় এর পিছনের পরিকল্পনা ঢোকেনি! এখানে ২০১১ সালে পালা বদলের পর মমতা ব্যানার্জী সরাসরি মুসলিম তোষনের রাস্তায় গেলেন। মুসলমানরাও দেখল এই সুযোগ, অনুপ্রবেশ ও তার সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক কাজকর্ম বাড়িয়ে দিল। এদিকে রাজ্যের ভাড়ারে চাপ বৃদ্ধি ও এই জনবিস্ফোরনের ফলে ভারতীয় মুসলমানদের একটি বড় অংশ অসন্তুষ্ট হলেও তাঁদের অন্যভাবে চুপ করিয়ে রাখা হল। এর বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখি সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মসজিদ,মাজার, কবরস্থানের সংখ্যাবৃদ্ধি। সাধারণ একটি হিন্দু পরিবারে একটি সন্তান জন্মালে ঐ সময় গড়ে একটি মুসলমান পরিবারে চারটি সন্তান জন্মায়। এখন যারা তের বা চোদ্দ বছর বয়সের, তারা আগামী বিধানসভায় ভোট দেবে। এখন ৩৩% মুসলমান ভোটার আছে পশ্চিমবঙ্গে। সুতরাং পরের নির্বাচনে এই মুসলমানরা একজোট হয়ে ভোট দিলে তারা ৫০% ভোটার হওয়ার কারনে তাদের মন্ত্রীসভাই গঠিত হবে। এটাই তাদের লক্ষ্য। সুতরাং এখন থেকে তারা এক ব্লক হিসাবে ভোট দেবে। এই নীতির রূপায়নের চেষ্টা প্রথম অসমে শুরু হয়। কারণ সেখানে জনঘণত্ব তুলনায় কম আর অনুপ্রবেশও সেখানেই প্রথম শুরু হয়। তারপর সেখানে ভূমিপুত্রদের আন্দোলন, অসম অ্যাকর্ড, শেষে সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে NRC শুরু হল। তখন বাধ্য হয়ে বাঁচার জন্য হিন্দু জনগোষ্ঠী সেখানে জোট বেঁধে ব্লক ভোটিং শুরু করল। এরপর এই ভোটিং প্যাটার্নের জন্য সাম্প্রতিক নির্বাচনে কংগ্রেস মুসলমান জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়েও নির্বাচনে পরাস্ত হল। এতে বিজেপি বা তৃণমূল কোন ফ্যাক্টর নয়, ফ্যাক্টর হল দখলদারি ও বাঁচার লড়াই। এই একই কায়দায় আমরা কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতদের বিতাড়নের সময়ও দেখেছি। তবে, সেখানে শাসকগোষ্ঠী একই সম্প্রদায়ের হওয়ায় কাশ্মীর থেকে বড় মাত্রায় হিন্দু নিধন ও বিতাড়ন সম্ভব হয়েছিল। সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের জেহাদী আক্রমণ ও সেখানকার আন্তজার্তিক পরিস্থিতি সরকারে আসীন বিজেপি দলকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে। এটা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জানে বলেই বিজেপির বিরুদ্ধে যে দল লড়াইয়ে জিতবে তাকেই তারা ভোট দিয়েছে। আজ তৃণমূলকে ভোট দিলেও প্রথম সুযোগেই নিজের গোষ্ঠীর শাসন প্রতিষ্ঠা করে তৃণমূলকেও এরা ছুঁড়ে ফেলে দেবে। দ্রুত জনসংখ্যাবৃদ্ধি এদের নতুন নতুন জমি দখল ও অন্যান্য আগ্রাসনে যাওয়ার চাহিদা বাড়াচ্ছে। ফলে, এরা সেই চেষ্টা করবেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটাররা এই অত্যাচার ও দখলের পরিকল্পনা আঁচ করতে পারেনি। তাই এই ভয় তাদের মনে রেখাপাত করেনি।
এরসঙ্গে হিন্দু বাঙ্গালীর মনে বহুদিনের কম্যুনিষ্ট শাসনের কুফলে সর্বদা একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী 'ইমেজ' কাজ করে - বিশেষতঃ উচ্চমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে। যেমন রান্নার গ্যাসের ও পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি। এর সব দায় যেন কেন্দ্রের সরকারের রাজনৈতিক দল বিজেপির! যদি এই দাম কমিয়ে ভর্তুকি দিয়ে আমাদের পকেট থেকে উচ্চহারে ট্যাক্স চাপিয়ে অনেক বেশী টাকা নেওয়া হত তাহলে বোধহয় এদের কিছু বলার থাকত না! এরা প্রতিষ্ঠান বিরোধী। এদিকে বিজেপির প্রচার বৈভবে তারাই শাসকদল হওয়ার ভাণ করেছে আর তাতে প্রকৃত শাসক দল তৃণমূল ফয়দা পেয়েছে। তাদের দূর্ণীতি, ঘুষ, খুণের মত অপশাসনের কোন প্রভাব ভোটে পড়ল না। বিজেপির নেতারা জনসংযোগ অপেক্ষা চোখধাঁধানো প্রচার, মিছিল, রোড শোতে ব্যস্ত থাকায় মিডিয়াতে তাদের ছবি বারবার এসেছে, বিনিময়ে ভোট কমেছে। উত্তর ভারতের ও বাঙ্গলার প্রচারের ধরন আলাদা। বাঙ্গলায় 'বানিয়ে দেওয়া' নেতাদের এই বোধটাও কাজ করেনি।
বরিষ্ট নাগরিকদের, বিশেষতঃ যাদের সম্মানজনক পেনশানের ব্যবস্থা নেই, তাদের জন্য একমাত্র সামাজিক সুরক্ষাছিল ব্যঙ্কের সুদ। তাঁদের অল্প কিছু সংস্থান (প্রয়োজনের তুলনায় মুষ্ঠিভিক্ষা মাত্র) করেই কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্ব ছেড়েছে। সুদের হার আমেরিকার মত করেছে, কিন্তু সেখানকার সকল মানুষের সামাজিক সুরক্ষার প্রশ্নে সরকার উদাসীন! আবার সমাজের অন্যান্য শ্রেণীর মানুষজন, বিশেষতঃ মহিলাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের স্কীমগুলিকে চালু না করে রাজ্য সরকার নিজের মত করে ভিন্ন নামে চালু করেছে। এতে মানুষের মনে রাজ্য সরকারের জনদরদী ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। পক্ষান্তরে এই টাকা যুগিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপির ভাবমূর্তির বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এভাবে "ভাবের ঘরে চুরি" করে বিজেপির ক্ষতিই হয়েছে। কারন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুফল মানুষকে বিজেপি নেতৃত্ব বোঝাতে পারেনি। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, টিভিতে বিতর্কসভায় বিজেপির যারা অংশগ্রহন করতেন তাদের দু একজন বাদ দিয়ে অন্যদের যোগ্যতা অত্যন্ত সীমিত। এর দায় বিছেপির মিডিয়া সেলের। পক্ষান্তরে, তৃণমূলের থেকে যারা বিতর্কে যেতেন তাদের সকলেই একই সুরে কথা বলতেন, অর্থাৎ তাদের হোমওয়ার্ক ঠিক ছিল। তৃণমূলের সরকার দ্বারা উন্নয়নের কথা তারা বারবার বলতেন।
তারপর বলতে হয় প্রার্থী নির্বাচন। আইপ্যাকের থেকে পেশাদারী সাহায্য নিয়ে সবকটি কেন্দ্রে প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, এই মূহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফল রাজনীতিক শ্রীমতি মমতা ব্যনার্জী নিজে তৃণমূলের প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী কে বা কারা নির্বাচন করেছে তা পরিষ্কার নয়। রাজ্য নেতারা দিল্লীর মুখাপেক্ষী। দিল্লী থেকে জম্মে রাজনীতি না করা লোকজনকে উড়িয়ে এনে প্রার্থী করা হল! এক সাংবাদিক, যিনি আবার মনোনীত সাংসদ, সেই পদের অমর্যাদা করে ভোটে দাঁড়িয়ে পরলেন। দিল্লীর তাবড় নেতারা এসে তার হয়ে বক্তৃতা করলেন। আমি একে যতটা জানি, বাঙ্গলায় ইনি কোন রাজনীতি বা সেবামূলক কাজ করেন নি। যখন তার সাংসদ পদের অমর্যাদা নিয়ে তৃণমূল সরব হল, তখন তিনি বাধ্য হয়ে সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। এমন মানুষকে বাঙ্গলা কখনো গ্রহণ করে না। আবার একজন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর জেনারেলকে ভোটে নামিয়ে বিছেপির মুখ পুড়ল। মনে হয় না, বুথস্তরে এবং মন্ডলগুলিতে প্রার্থীপদ নিয়ে কোন প্রস্তাব দেওয়া নেওয়া হয়েছে। নীচের স্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের দলের খানসামা ভাবা, ঠান্ডা ঘরে বসে থাকা জনসম্পর্কহীন নেতাদের এখন এমন অবস্থা যে দলের কোন নেতাই এই ভোট বিপর্যয়ের দায়িত্ব নিতে রাজী নয়! সংঘ পরিবার পশ্চিমবঙ্গে মোটামুটি শক্তিশালী। কিন্তু তাদের বঙ্গ বিজেপির উদ্ধত, সবজান্তা নেতারা কোন পাত্তাই দেয়নি। উপদেশ শোনা ত দূরের কথা। বহু পুরোনো জাতীয়তাবাদী পার্টিকর্মীদের অপমান করা হয়েছে। দলে জামাই আদরে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে তৃণমূলের 'ছাটমাল' নেতাদের। এভাবে জনসাধারণের কাছে বার্তা দেওয়া হল, বিজেপিতে তাদের নিজেদের যোগ্য প্রার্থী নেই। দু মাস আগে বিজেপিতে আসা একজন কলেজ শিক্ষক, যিনি টিভির পর্দায় বসার নিরিখে নেতা - একসময় সিপিএম, তৃণমূল, সব দলের হয়ে কথা বলা মানুষ, তাকে প্রার্থী করা হল! অবধারিতভাবে ঐ বিধানসভায় দলের কর্মীরাইহতোদ্যম হয়ে পড়ল। উনি ওনার বিধানসভায় সমস্ত পৌর ওয়ার্ডে হেরেছেন। শুধু তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দের কারনে একটিমাত্র ওয়ার্ডে কিছু ভোট বেশী পেয়েছেন। আরেকজন তৃণমূলের বড় নেতা, যাকে তার এলাকার লোকজন তোলাবাজীর জনক বলে জানে, যিনি গত পৌর নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে রিগিংয়ের নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ, সেই দলত্যাগী নেতাকে বিজেপি প্রার্থী করল। এই উদ্ধত নেতাটি নির্বাচনে দাঁ দাঁড়িয়ে প্রথমেই সাংবাদিকদের বলল, "আমাকে ওয়াকওভার দেওয়া হল"! সেই নেতা তার এলাকাতেই হেরেছে। এই উদ্ধত নেতা তার ব্যবহার ও এলাকার বিজেপি কর্মীদের ব্যবহার না করার জন্য বর্তমান মন্ত্রী ও জনপ্রিয় এমএল একে গতবারের থেকেও বেশী ভোটে জিততে প্রকৃতপক্ষে সাহায্য করল। তৃণমূলের এত সমালোচনা করা হয় অভিনেতা, অভিনেতৃদের দলে নেওয়ার জন্য, অথচ বিজেপি দলে দলে সফল, অসফল অভিনেতা, অভিনেত্রীদের তা মঞ্চ, টিভি, সিরিয়াল, ওটিটি, বড় পর্দা - যাই হোকনা কন - জাপটে ধরে কোন বাছবিচার ছাড়া প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল! অধ্যাপক সংঘ, বিজেপি এবং অন্য সব বিরোধীদল শিক্ষামন্ত্রীর পাহাড়প্রমান ব্যর্থতা নিয়ে সরব। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হল এমন একজন অভিনেত্রীকে যিনি কখনো স্কুলের গন্ডি পেরোননি। তিনি তার নিজের এলাকাতেও কখনো রাজনীতি বা সমাজসেবামূলক কাজ করেননি। উপরন্তু ভোটপর্ব চলাকালীন এক তৃণমূল নেতার সঙ্গে তার ঘণিষ্টতা সংবাদমাধ্যমে খবর হোল। যিনি বা যারা এইসব প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েছেন তারা তার দায় নিতে বাধ্য। সবশেষে বলি এই লেখা পাঠনোর সময় পর্যন্ত কোন বিজেপি নেতা ভোট বিপর্যয়ের দায় নেয়নি। কেউ পদত্যাগ করেনি! তবে কি ধরে নিতে হবে, এইসব নেতারা পদের জন্য রানীতি করছেন - সমাজসেবা ভড়ং মাত্র?
পরিশেষে শ্রীমতি মমতা ব্যনার্জীর উদ্দেশ্যে বলি, আপনি এখন পশ্চিমবঙ্গের সকল মানুষের মূখ্যমন্ত্রী - তৃণমূলের মূখ্যমন্ত্রী নন। এই যুদ্ধে আপনি জিতেছেন তৃণমূলের পজিটিভ ভোটে নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোটে। আপনি যদি সুষ্ঠুভাবে সমদর্শী নীতিতে রাজ্য চালান, বাঙ্গালী অস্মিতাকে যথাযথ সম্মান করেন, সর্বোপরি বর্ডার রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যত্নবান হোন, তবে আপনি আবারো জিতবেন - অন্যথায় মনে রাখবেন, পলিটিক্যাল সায়েন্সের নীতি অনুসারে কোথাও রাজনৈতিক শূন্যতা (political void) থাকেনা।