করোনাকে ইউহান ভাইরাস বলাই ঠিক

করোনা বা সার্স-কোভ-২ এখনো জিন মিউটেশানে পরিবর্তন ঘটিয়ে তার খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ভাইরাসের মানবদেহে আক্রমণ করার ক্ষমতার প্রথম প্রমান আমরা পাই চীনের ইউহান প্রদেশে। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ইউহানের বিশ্ববিখ‍্যাত ভাইরোলজি ইন্সটিটিউটের একটি বিশেষ ল‍্যাব থেকে। এই ল‍্যাবের তিনজন বিজ্ঞানীর দেহে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের উপসর্গ দেখা যায়। এরা সকলেই করোনা ভাইরাস নিয়ে কাজ করছিলেন। সুতরাং এই ভাইরাসটি ল‍্যাবোরেটরী সৃষ্ট কিনা, সে প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক। এই ভাইরাসের সংক্রমণকে অতিমারী আখ‍্যা দেওয়া হয়েছে আর এর সংক্রমণে ইতিমধ‍্যেই ত্রিশ লক্ষের বেশী মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এই অতিমারীর জন্মস্থান অর্থাৎ ইউহানের ঐ ল‍্যাবের প্রথম সংক্রমণের জায়গাটা এখনো, দু বছর বাদেও গভীর রহস‍্যে ঢাকা। এই রহস‍্য ভেদ করার চেষ্টায় আমি বৈজ্ঞানিক তথ‍্যের উপরই নির্ভর করে থাকছি। যে তথ‍্যগুলি পাওয়া যাচ্ছে তা একসঙ্গে গ্রোথিত করে পুরো ব‍্যপারটা উত্থাপনের চেষ্টা করছি।
মোটামুটিভাবে দুটি প্রারম্ভিক সংক্রমণের সূত্রপাতের তত্ত্ব সামনে এসেছে। প্রথম, এটি প্রাকৃতিকভাবে বাদুরের থেকে কোন পশুর মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকেছে! এই তত্ত্বকে তড়িঘড়ি WHO মান‍‍্যতা দিয়েছে। দ্বিতীয়টি হল, যখন ভাইরাসটি গবেষনাগারে পরীক্ষার স্তরে ছিল, সেই সময় পরীক্ষা নিরীক্ষার ফাঁকে ভাইরাসটি গবেষণাক্ষেত্র থেকে পালায়। ভাইরাসের এই ধরনের পলায়ন (escape) খুবই দুর্লভ হলেও অসম্ভব নয়। তবে, lancet জার্নলে যে চিঠি প্রকাশ নিয়ে সারা বিশ্ব তোলপাড়, সেই বক্তব‍্যের সারবত্তা ও চিঠি লেখার নেপথ‍্য কারন নিয়ে ভাবার কথা। চিঠির বয়ান দেখলেই বোঝা যায়, এর ছত্রে ছত্রে আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে যে চীনের ঐ ল‍্যাবোরেটরীতে কখনোই ভাইরাসটিকে জৈব অস্ত্র হিসেবে ব‍্যবহার করার জন‍্য গবেষণা করা হচ্ছিল না! ডঃ পিটার ডাসজেকের নেতৃত্বে ২৭ জন বিজ্ঞানী ও ডাক্তার ঐ চিঠিটা লেখেন। যে মার্কিন সংস্থা ইউহানের ঐ গবেষণাকেন্দ্রে গবেষণা করার জন‍্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে, সেই সংস্থার চেয়ারম‍্যান হলেন ডঃ ডাসজেক। এছাড়া, আরেকজন স্বাক্ষরকারী জেরেমি ফারার, যিনি ইংল‍্যান্ডের ওয়েলকাম ট্রাষ্টের ডিরেক্টার। এমন অনেকেই আছেন যারা স্বাক্ষরকারী এবং তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ ইউহানের ঐ গবেষণা কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত। মনে রাখতে হবে, এটি lancetএ প্রকাশিত একটি চিঠি মাত্র। কোন গবেষণাপত্র নয়। এটিকে গবেষনাপত্রের মর্যাদা দেওয়া ভুল। একটি চিটি, স্বাক্ষর ২৭ জনের! এদের অধিকাংশেরই বাণিজ্যিক স্বার্থের দিকে নজর রেখে চিঠিটি লেখা হয়েছে এমন ধারনা অযৌক্তিক নয়। কারন, ভাইরাসটিকে জৈব অস্ত্র তৈরীর গবেষণায় ব‍্যবহার করা হয়েছে, এমন প্রমাণ হলে শুধু চীনের সরকারই নয়, ইউরোপ, আমেরিকার যে প্রতিষ্ঠানগুলি এইসব প্রজেক্টকে আর্থিক সহযোগীতা করেছে, তারাও বিশ্বের কাছে অতিমাত্রায় নিন্দিত হবে এবং সমালোচনার জেরে তাদের ভবিষ‍্যৎ কর্মপদ্ধতি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এমনকি তারা কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে। সেজন‍্য তারা তথ‍্য প্রমাণ ব‍্যতিরেকে, করোনা ভাইরাসকে গবেষণাগারের ভাইরাস বলার তত্ত্ব সাত তাড়াতাড়ি খারিজ করে চিঠি লিখেছে। আবার বলছি, এটি যেহেতু একটি চিঠি মাত্র, lancetএ ছাপার মাহাত‍্য এই চিঠির সঙ্গে যুক্ত করা যায় না।
এটা ঠিক যে করোনা ভাইরাসের মত একই ধরনের অনেক ভাইরাস জংলী বাদুরদের মধ‍্যে দেখা গেছে। সুতরাং বাদুর স্বাভাবিকভাবেই এই ভাইরাসের একটি সোর্স হতে পারে যা অন‍্য কোন পশুর মাধ‍্যমে মানবদেহে প্রবেশ করেছে। এখানে উল্লেখ‍্য যে SARS ও MERS এর সোর্সও এই বাদুর। Shan-lu-liuর নেতৃত্বে ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, করোনা ভাইরাস একটি জৈব অস্ত্র হওয়ার মত তথ‍্য তারা এখনো পাননি। ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং কয্বরে দেখা গেছে যে, এর সিকোয়েন্সিংএ জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংএর কোন লক্ষণ নেই – যা জৈব অস্ত্র তৈরীতে অবশ‍্যই থাকতে হবে।
এরপর আসি অন‍্য সম্ভাব‍্য বিকল্পগুলিতে। প্রথমটি হল, স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই প্রাকৃতিকভাবে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে এমন কান্ড বাধিয়েছে। এখানে কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যার উত্তর মিলছে না। প্রথমতঃ, ইউহানের ভাইরোলজি ইন্সটিটিউটের যে ল‍্যাবের যে তিনজন বিজ্ঞানীর (তাঁরা সবাই এখন মৃত) প্রথম করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা যায়, তাঁরা সবাই এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করছিলেন। অন‍্য যে খবরে বলা হয়েছে যে মাংসের বাজার থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার সত‍্যতা খুবই লঘু কারন আক্রান্তদের সবাই ঐ বাজারের মাংস কেনেন নি – অথবা অন‍্য মানুষজন প্রথম আক্রান্ত হননি। আবার চীন সরকারপ্রথম থেকে এই সংক্রমণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরী করে; শুধু তাই নয়, তারা প্রথমদিকে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে বাধা দেয়। এতেই বোঝা যায়, “ডালমে কুছ কালা হ‍্যায়”। পরে অবশ‍্য WHOর প্রতিনিধিদের অনুমতি দেওয়া হয়। তখন চীনা কর্তৃপক্ষ অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে। এতে বোঝা যায়, ঘটনার আকস্মিকতায় তারা প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও দ্রুত পরিস্থিতি সামলানোর মত রসদ ও বিদ‍্যা দুইই তাদের জানা ছিল। সুতরাং এই ভাইরাস জৈব অস্ত্র হিসেবে ব‍্যবহৃত নাহলেও, এর ব‍্যবহারের গবেষণা যে ঐ ল‍্যাবে হচ্ছিল তার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এখনো অব্দি এই তত্ত্বের বিরুদ্ধে কোন জোরালো প্রমাণ পেশ করা যায়নি। উপরন্তু, পারিপার্শিক প্রমাণ এই তত্ত্বের পক্ষেই যাচ্ছে। যেমন, ভাইরাসের সংক্রমণের চিকিৎসায় চীন অতি অল্প সময়ে যে অভূতপূর্ব সাফল‍্য পেল তার শতাংশের একাংশও অন‍্য কোন দেশ পায়নি। এটা সম্ভব হয়েছে কারন তারা এই ভাইরাসের সম্পর্কে ও তার আক্রমণের ব‍্যপারে আগে থেকেই সতর্ক ছিল, কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা আগে থেকেই করা ছিল।নাহলে একটি সম্পূর্ণ অজানা RNA ভাইরাসের সংক্রমণ এত অল্প সময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব। আর এই জন‍্যই প্রথম অবস্থায় চীন তাদের দেশে কোন রকম অনুসন্ধানী দলকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বিশেষতঃ ইউহানের ঐ ইন্সটিটিউট সম্পূর্ণভাবে বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল।
আবার দেখা যায়, চীনের তৈরী প্রতিষেধক টীকা তাদের তাঁবেতে থাকা কয়েকটি দেশ ছাড়া অন‍্য কেউ নিচ্ছে না। কিন্তু চীন এই টীকায় নাকি প্রভূত সাফল‍্য পেয়েছে! এই প্রতিষেধকের গবেষণার ব‍্যপারে সারা বিশ্ব অন্ধকারে! যদি ল‍্যবে কোন দুর্ঘটনাজনিত কারনে এই ভাইরাস বেরিয়ে পড়ে তবে তার প্রতিষেধক তখনই তৈরী রাখার কথা। এই ধরনের গবেষণায় এই দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। ফলে, প্রথমে দ্রুত ছড়ালেও, ভাইরাসের প্রকৃতি ও গঠন সম্পর্কে ধারনা থাকায় এবং প্রতিষেধক প্রস্তুত থাকায় চীন এত কম ক্ষয়ক্ষতির মাধ‍্যমে এই ভাইরাস সংক্রমণ সমস‍্যা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।
এবার আসি কেন ‘জৈব অস্ত্র’ তত্ত্ব পুরোটা ঠিক নয়, সেই যুক্তিতে। প্রথম হচ্ছে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংএর প্রমাণ এই ভাইরাসের জেনেটিক সিকোয়েন্সিংএ মেলেনি। কিন্তু এমন ত হতে পারে, এই জৈব অস্ত্র তৈরীর গবেষণার অন্তিম পর্যায়ের আগেই ভাইরাস পলায়ণ করে সব গোলমাল করে দিয়েছে। আবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে দেখলে চীনের বাণিজ্যিক বাজারের বড় খদ্দের আমেরিকা, ইউরোপ ও ভারত। এর মধ‍্যে প্রথম ধাক্কাতেই যদি আমেরিকা ও ইউরোপের বাজার নষ্ট হয়, সঙ্গে ভারতের বাজারও যদি যুক্ত হয়, চীনের অর্থনীতি নিশ্চিতভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে। সুতরাং, এই ভাইরাসের সংক্রমণকে এই মূহুর্তে জৈব অস্ত্রের আক্রমণ বলা ঠিক হবে না। কিন্তু দুর্ঘটনা তত্ত্বের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আবার জৈব অস্ত্র যদি কোন দেশ, যেমন ভারতের বিরুদ্ধে ব‍্যবহার করা হয়, তবে তার যে সূদুরপ্রসারী প্রভাব দেখা গেছে তাতে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ কিন্তু এর ধ্বংসলীলা থেকে বাদ যাবে না। এর মধ‍্যে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১১৫.৭ বিলিয়ন USD (যা ঐ দেশের GDPর অর্ধেক)। এর মধ‍্যে চীনের কাছে অর্থনৈতিক করিডোর বাবদ ঋণ ১৭.১ বিলিয়ন USD যা বৈদেশিক ঋণের ১৫%। সুতরাং এমন একটি ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যাওয়া বশংবদ দেশের ক্ষতি চীন করবে না। আবার বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ৭০.৭ বিলিয়ন USD যা গত এক বছরে ১৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর একটি বড় অংশ ঋণ চীনের দেওয়া। এছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের স্ট্র‍্যাটেজিক পার্টনার। সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষতিও চীন করতে চাইবে না। সাধারণত জৈব অস্ত্রের প্রয়োগ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। এমন অবশ‍্য অস্বাভাবিক নয়, পারমানবিক বোমার বিকল্প হিসেবে এই জৈব অস্ত্র তৈরীর প্রক্রিয়া চলছিল। তবে কোনোমতেই এটি সম্পূর্ণ ‘জৈব অস্ত্র’ নয়। কারন এর উদ্ভাবক দেশ প্রতিষেধক সম্পূর্ণ প্রস্তুত না করে এর প্রয়োগ করবে না।
এখন চীনের সঙ্গে ভারতের যে বর্ডার সমস‍্যা চলছে, যে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের অবমূল‍্যায়ন হয়েছে, তা মাথায় রেখে বলা যায় যে চীন ভারতকে ‘সমঝে দেওয়ার’ মত উপায় পেলে তা প্রয়োগ করবেই। আর ভারত মহাসাসাগর ও চীন সাগর নিয়ে চীনের চিন্তার শেষ নেই। তাদের বহির্বাণিজ‍্যই শুধু নয়, খনিজ তেল আমদানির জন‍্যও এই দুটি অঞ্চলের উপর তার প্রাধান্য বিস্তার করার দরকার। এখানে অষ্ট্রেলিয়া ও জাপানের সাথে ভারতই প্রধান বাধা। কাজেই ভাইরাসের আকস্মিক পলায়নকে কাজে লাগিয়ে চীন সংক্রমণকে নিজের দেশে আয়ত্তে আনলেও অন‍্য দেশগুলি, বিশেষতঃ উন্নত দেশ এবং অধিক জনঘণত্বের দেশগুলি বিপদের মুখে পড়েছে। এর থেকে বাঁচার রাস্তা দ্রুত টীকাকরণ। কিন্তু একশ ত্রিশ কোটি মানুষের দেশে দ্রুত টীকাকরণ মোটেই সহজ কাজ নয়। সেছন‍্য চীন ইউহান ল‍্যাবোরেটরী থেকে যে RNA ভাইরাস পালিয়ে গেছে তার ব‍্যপারে নিজের অধিগত জ্ঞান বিশ্বের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করে গেছে।
এখনো অব্দি বৈজ্ঞানিক ও ডাক্তারদের দল এমন অকাট‍্য প্রমাণ দিতে পারেনি যে এই ভাইরাসটি প্রাকৃতিক উপায়ে বাদুর থেকে মানুষের মধ‍্যে সংক্রমিত হয়েছে। বরঞ্চ ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষনে প্রমান হয় যে এটি ল‍্যাবোরেটরীতে পরীক্ষা করার জন‍্য নেওয়া একটি RNA ভাইরাস – যার আকস্মিক পলায়নের সুযোগ পুরোপুরিভাবে চীন নিয়েছে এবং তার অন্তিম লক্ষ‍্য ভারতকে বিব্রত ও ব‍্যতিব‍্যস্ত করে তোলা। সেইজন‍্য করোনা রোগের জন‍্য দায়ী এই ভাইরাসকে আমরা অন‍্য কোন নাম না দিয়ে “ইউহান ভাইরাস” নামকরণ করতে পারি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বাড়বাড়ন্ত কেন

         "মরিয়া না মরে রাম এ কেমন বৈরী" - কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আজ সারা দেশের সঙ্গে আমাদের পশ্চিমবঙ্গকেও ছারখার করে দিচ্ছে। প্রত‍্যেকদিন সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ‍্যে কোভিডে মৃতের সংখ‍্যা দেড়শোর আশেপাশে। এবারের যে ঢেউ প্রবহমান তা একটি বৈশিষ্ট্য হয়ত অনেকের নজর এড়িয়ে গেছে। সেটি হল আক্রান্তের সংখ‍্যা মফস্বল ও প্রত‍্যন্ত গ্রামের দিকে অস্বাভাবিক রকম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারন হল দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তারকালে বিধানসভার নির্বাচন। হ‍্যাঁ, ঠিক তাই। আর এরজন‍্য নিঃসন্দেহে বড় এবং স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলি দায়ী। তবে, সবচেয়ে বেশী দায় আমাদের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের। কোভিডবিধি না মানলে এই রোগের সংক্রমণ আটকানো অসম্ভব। হ‍্যাঁ, যে রাজ‍্যে নির্বাচন হয়নি, তেমন রাজ‍্য যেমন, মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বেশী হয়েছে। কিন্তু তার কারন ভিন্ন। যদি তামিলনাড়ুর দিকে তাকানো যায়, নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও সংক্রমণ বেড়েছে। সংক্রমণ বেড়েছে অসমেও। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মত আট দফায় তাদের নির্বাচন হয়নি। তামিলনাড়ুতে এক দফা এবং অসমে তিন দফায় নির্বাচন হয়েছে। সেখানে এত হাই ভোল্টেজ প্রচারও হয়নি। মিটিং, মিছিল, জনসমাবেশ - মানুষের ভিড়ে সারা রাজ‍্য জুড়ে কোভিডবিধি শিকেয় উঠেছে। কোন রাজনৈতিক নেতাই এই বিধি মেনে প্রচার করেননি, আর সাধারণ মানুষকেও মেনে চলতে বলেননি। নেতাদের মধ‍্যে আক্রান্তরা ভিআইপি চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে যান সাধারণ মানুষ আম আদমী ঠাকুরের দয়ায় বাঁচে বা ছবি হয়ে যায়। কত মানুষ অক্সিজেন না পেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে; কোন ভিআইপি রাজনীতিক অক্সিজেনের অভাবে দেহ রেখেছেন - এমন কোন অভিযোগ নেই। এখানেই ছিল নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। তাদের নির্বাচন সংঘটনের সর্বময় ক্ষমতা থাকায় তারা কোভিডবিধি মেনে নির্বাচন করার সমস্ত রকম ব‍্যবস্থা যাতে মেনে চলা হয় তা দেখতে পারত।
             আবার প্রশ্ন উঠতে পারে, নির্বাচনের জন‍্যই যে কোভিড আক্রান্তের সংখ‍্যার এমন বৃদ্ধি তার প্রমাণ কি? উত্তর হল, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় যেসব গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বল শহর তেমনভাবে আক্রান্ত হয়নি, সেখানেও নির্বাচনের মিটিং মিছিল, সমাবেশের পর আক্রান্তের সংখ‍্যা ধীরে ধীরে অনেক বেড়েছে। গত শীতের সময় নিউ নর্মালে শান্তিনিকেতন-শ্রীনিকেতনের মানুষজনের মনে ধারনা হয়েছিল যে কোভিড বিদায় নিয়েছে। তারপর, নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মিটিং মিছিল, কেন্দ্র ও রাজ‍্যস্তরের ভিভিআইপি নেতা নেত্রীদের হাই ভোল্টেজ সমাবেশ, পদযাত্রা - সবই মানুষ দেখল। এখন সেখানে স্থানীয় হাসপাতালে বেড পাওয়া যাচ্ছে না। অনেককে কোলকাতায় আনতে হচ্ছে। অনেককে চিরতরে বিদায় দিতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার, মালদা - যেসব জায়গায় এই ধরনের মিটিং মিছিল, জমায়েত হয়েছে, তার অধিকাংশ জায়গাতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ বহুগুণ বেড়েছে। সরকারের স্বাস্থ‍্য দপ্তর নিউ নর্ম‍্যালে ঘোষণা করেছিল যে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা করোনামুক্ত জেলা।তারপর ভোটের জাঁতাকলে পড়ে সেখানেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে শুধু আক্রান্তই নয়, মৃত্যু ও নিত‍্যনৈমিত্তিক ব‍্যপারে দাঁড়িয়েছে। জেলাগুলির মধ‍্যে প্রথম থেকেই খারাপ অবস্থা ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণার। এই ভোটপর্বের পর সেই জেলা প্রতিদিন আক্রান্ত আর মৃতের সংখ‍্যার শীর্ষে থাকছে। যদিও তারপরেই স্থান কোলকাতার, এখানে কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ যখন মিটিং মিছিল, জমায়েত সব কিছুই বাড়তে শুরু করেছে, তখনই আক্রান্তের সংখ‍্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে লাগল। অন‍্যান‍্য এলাকাও পিছিয়ে নেই। সুতরাং এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের অতিবৃদ্ধির একটি বড় কারন যে নির্বাচনী প্রচারের সময় কোভিডবিধি না মানা - সে সন্দেহ অমূলক নয়।
       এখানে একটি তথ‍্য দিলে এই যুক্তির সপক্ষে জোরালো প্রমাণ পাওয়া যাবে। প্রথম ঢেউয়ের সময় রাজ‍্যের গ্রাম-গঞ্জ ও প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ‍্যা ছিল খুবই কম - মোট আক্রান্তের ৫-৭ শতাংশ মাত্র। কিন্তু ভোটের পর এই সংখ‍্যাটা পৌঁছে গেছে ২৩ শতাংশে! একটু খোঁজ করলে দেখা যাবে এইসব প্রত‍্যন্ত অঞ্চলে ভোটের যে জমায়েত, মিটিং মিছিল হয়েছে তাতে কোভিডবিধি পালনের লেশমাত্র ছিলনা। আবার, এইসব দূরবর্তী অঞ্চলে চিকিৎসা পরিষেবার মান অত‍্যন্ত খারাপ থাকায় আক্রান্তদের একটি বড় অংশ কার্যকরী চিকিৎসা পাচ্ছেনা। এমন অনেকের মৃত্যু হচ্ছে, যারা হয়ত ঠিক চিকিৎসা পেলে বেঁচে যেত।
          এদিকে যত সময় যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে ভাইরাস তার আক্রমণের গতির পরিবর্তন করছে। এটি কোভিডের মত RNA ভাইরাসের পক্ষে স্বাভাবিক। এই সময় দেশের বিপুল সংখ‍্যক নাগরিককে যত দ্রুত সম্ভব, টীকাকরন করে সম্ভাব‍্য সুরক্ষা দেওয়া আশু কর্তব‍্য ছিল। মনে রাখতে হবে, এটি WHO দ্বারা ঘোষিত "অতিমারী"। আর আক্রান্তের নিরিখে ভারত আছে দ্বিতীয় স্থানে। আমেরিকা প্রথম স্থানে। তাদের ১৬% নাগরিকদের টীকাকরন সম্পূর্ণ হয়েছে। ভারতের ১% নাগরিকের সম্পূর্ণ টীকাকরন পর্যন্ত এখনো হয়নি। এই অবস্থায় আমরা নির্বাচনের পিছনে অযথা অনেকটা সময় ও অর্থ ব‍্যায় করে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইকেই ঘোরালো করে তুললাম। প্রশ্ন উঠতে পারে, একবার নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে তা স্থগিত করা যায়কি? এছাড়া এই সংক্রান্ত আরো যেসব প্রশ্ন থাকবে তার সবেরই উত্তর আমাদের সংবিধানে বলা আছে।
          প্রথমেই বলি, ভোট যদি অতিমারীর মত অভুতপূর্ব বা অশ্রুতপূর্ব পরিস্থিতিতে করানো সম্ভব না হয় ( জনসাধারণের স্বাস্থ‍্য ও জীবনের সুরক্ষা মাথায় রেখে ) তাহলে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের সময় হয়ে গেলেও, নির্বাচন স্থগিত রাখতে পারেন। এমনকি নির্বাচনের পর্যায় শুরু হলেও পরবর্তী পর্যায়গুলি স্থগিত করা যায়। অতীতে এর উদাহরণ আছে। কোন নির্বাচিত সরকার তার সময়কাল অতিবাহিত করার পর রাজ‍্যের শাসনভার কি পুরানো সরকারের হাতে থাকবে না অন‍্য কারো হাতে? এ সম্পর্কে সংবিধানে সুস্পষ্ট বিধান আছে। তাহল, রাজ‍্যপাল ঠিক করবেন, তাঁর সরকার আইনি পরিকাঠামোর মধ‍্যে কিভাবে পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে পুরানো উদাহরণ আছে। তা উল্লেখ করলে হয়ত গত নির্বাচনে সাইনবোর্ডে পর্যবসিত হওয়া দুটি সহযোগী দলের বিড়ম্বনা বাড়বে। তাই সে চেষ্টায় বিরত থাকলাম। কাজেই নির্বাচন নির্দিষ্ট সময় করতেই হবে বা নির্বাচন চলাকালীন তা স্থগিত করা যাবেনা এমন কোন আইনি বা সংবিধানগত বাধা নেই। তবে, নির্বাচন কমিশন কোন রাজনৈতিক চাপে কাজ করে থাকলে তা একমাত্র কমিশনই বলতে পারবে। এব‍্যপারে আমাদের ধারনার কোন অবকাশ নেই। সুতরাং এই অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতা বৃদ্ধির দায় নিশ্চিতভাবেই যেসব প্রতিষ্ঠানের উপর পরবে তার অন‍্যতম নির্বাচন কমিশন।
         আবার কেমন অদ্ভুত ব‍্যপার - নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন যে ভোট প্রচারে কোভিডবিধি মেনে চলতে হবে। শুধু বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শেষ হয়না। সেই বিজ্ঞপ্তি যথাযথ পালিত হল কিনা, না হলে কমিশন কি কি পদক্ষেপ করল - সবই তার দায়িত্বের মধ‍্যে পড়ে। আমার ত একটি ঘটনাও মনে পড়েনা যেখানে নির্বাচন কমিশন কোভিডবিধি না মানার দায়ে প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন! যখন ভোটপর্ব শুরু হল,ভোট কেন্দদের লাইনে আমার অন্ততঃ দু গজের দুরত্বে ভোটারদের লাইন দেওয়ার ব‍্যপারটা চোখে পড়েনি। হ‍্যাঁ, দুরত্ব ছিল, ছয় থেকে আট ইঞ্চি! প্রমাণ হিসাবে ঐ সময়ের টিভি ফুটেজগুলি দেখলেই হবে। আবার দেখুন, নির্বাচন কমিশন অশীতিপর ভোটারদের জন‍্য নিজের বাড়িতে বসে ভোটদানের বড‍্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ঐসঙ্গে তাঁদের বাড়িতে টীকাকরন প্রক্রিয়াটি ও করানো উচিৎ ছিল - যেমন ভোটকর্মীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব‍্যবস্থায় টীকাকরন করা হয়েছে। এছাড়া ভোটকক্ষের মধ‍্যে হাতে কালি লাগানোর সময় বডি কন্ট‍্যাক্ট অবশ‍্যম্ভাবী। ভোটের মেশিনে আঙুলের চাপ দেওয়া, ভোটার লিষ্টে সই করা বা টিপছাপ দেওয়া - কোনটাই দৈহিক কন্ট‍্যাক্ট ছাড়া হয়নি। এমন প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যায় যেখান থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সুতরাং ভোট প্রক্রিয়ায় কোভিড সংক্রমণের কারনগুলি অবশ‍্যই আছে।আর এই আট দফায় ভোট হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গও সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
      ভোট প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ায় শুধু যে কোভিডের দ্বিতীয় সংক্রমণ গতি পেয়েছে তাই নয়, আমাদের ভাবার সময় এসেছে এই প্রক্রিয়া কি আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার লড়াই নাকি 'গণতন্ত্র' নামের এক অচলায়তনের রাজনৈতিক উৎসবের বিয়োগান্তক সফল রূপায়ণ, যার লাভ রাজনীতি ও রাজনৈতিকদের, ক্ষতি অতিমারীর বৃদ্ধিতে সমাজের। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলির একটি মূল স্তম্ভ নির্বাচন কমিশন। সেই স্তম্ভই যদি রাজনীতির স্বার্থকে সমাজের স্বার্থের উপরে স্থান দেয়, তাহলে গণতন্ত্রের অবক্ষয় আটকাবে কে! এখানে জর্জ অরওয়েলের অ‍্যনিম‍্যাল ফার্মের একটি লাইন খুব মনে পড়ছে, "In democracy, all are equal; but some are more equal than other equals"। এই নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তাদের জীবন, জীবিকার বিনিময়ে প্রমাণ করে দিল সমাজবদ্ধ গণতান্ত্রিক মানুষ বেঁচে আছে রাজনীতির জন‍্য, রাজনীতির স্বার্থে, রাজনীতির কাছে বলিপ্রদত্ত হিসাবে।

পশ্চিমবঙ্গে ২০২১ এর নির্বাচনে বিজেপির হার কেন

সদ‍্য সমাপ্ত পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে শ্রীমতি মমতা ব‍্যানার্জী তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সফলতম জয় হাসিল করেছেন। তাঁকে অভিনন্দন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির সফলতম ব‍্যক্তি, যিনি বাঙ্গালী অস্মিতাকে শুধু যে তুলে ধরেছেন তাই নয়, একই সঙ্গে অত‍্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে তিনি বাঙ্গলার উপর অবাঙ্গালী শাসন চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধীতা করে বাঙ্গালীর প্রতিবাদী চরিত্রকে উস্কে দিয়েছেন। তাঁর প্রচার অভিযানের কয়েকটি নির্দিষ্ট অভিমুখ ছিল। প্রথমতঃ অন‍্যান‍্য রাজ‍্যে সম্ভব হলেও পশ্চিমবঙ্গে মূখ‍্যমন্ত্রীর মূুখ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দল সাফল‍্য পায়নি। সেক্ষেত্রে মমতাদেবী একমাত্র মূখ‍্যমন্ত্রীর মুখ। প্রধান দলগুলির মধ‍্যে লড়াইয়ের ময়দানে থাকা একমাত্র দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে মূখ‍্যমন্ত্রীর মুখ ঘোষণা না করে রাজনৈতিকভাবে ভুল করেছে। হয়ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এমন কোন মুখকে মূখ‍্যমন্ত্রী করার বাসনা ছিল, যা আগে ঘোষণা করে দিলে তাঁদের অসুবিধা হত। কিন্তু আমার মনে হয়, এটা করতে গিয়ে বিজেপি ব‍্যকফুটে চলে গিয়েছিল।
তৃণমূল বোদ্ধা, শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবীদের সুকৌশলে কাজে লাগালেও রাজ‍্য বিজেপি আর এস এস ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী ও অধ‍্যাপক সংঘকে কাজে লাগাতে উৎসাহী ছিল না। মনে হয়, বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের জয়ের ব‍্যপারে এতটাই আত্মতৃপ্ত ছিল যে তাঁরা এই ধরনের প্রচারে কোন আস্থা রাখেনি। বিজেপি তৃণমূলস্তরের রাজনীতিটা বুঝতেই পারেনি। তাঁদের অনেক নেতাই ধমক, চমক, কুকথার রাজনীতির মধ‍্যে দিয়ে নিজেদের আত্মম্ভরিতা প্রকাশ করেছেন আর সেইসঙ্গে মানুষের বিরক্তির কারণ হয়েছেন। বিজেপি সর্বভারতীয় দল হওয়ায় তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারে রাজ‍্যে আসবেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের মাত্রাতিরিক্ত প্রচারে উপস্থিতি মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। রাজ‍্য নেতৃত্ব ভেবেছিল, প্রচারের ঔজ্বল‍্য, চাকচিক‍্য, মানুষের ভিড় – তাদের ভোটবাক্সে জিতিয়ে দেবে! এটা তাদের অনভিজ্ঞতার ফল। একটি ঘটনার কথা বলি। রাজীব গান্ধী তখন প্রধানমন্ত্রী। তিনি কোলকাতায় এলেন তাঁর দলের প্রার্থীর সমর্থনে জনসভা করতে। মিটিংয়ে জনজোয়ার। তখন মমতাদেবীও কংগ্রেসে। সেইদিন রাতে এক সিপিএম নেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, “আমরা অন্ততঃ পঞ্চাশ হাজার ভোটে জিতবো”! আমি বললাম, “আপনি জনসভার ভিড় দেখেছেন”? ত তিনি বলেছিলেন, “ভাই, লোকে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে গেছে, উজ্বল প্রচার দেখতে গেছে, কিন্তু ভোটটা আমাদেরই দেবে”। নির্বাচনের ফল বেরনোর পর ঐ নেতার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলেছিল। বাঙ্গলার ভোটের যে একটা নিজস্ব ধারা ও সমীকরণ আছে তা এই বিজেপি নেতৃত্বের অজানা। আর এই চাল মমতাদেবীর নখদর্পনে।
আগে বিজেপি নেতৃত্বের ভুল প্রার্থী চয়ন ও দলবদলুদের অতিরিক্ত প্রাধান্য দেওয়ার কথা বিস্তৃতভাবে লেখা হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচনের একটা বড় দিক, যা শ্রীমতি ব‍্যানার্জী খুব সূহ্মভাবে ভোটারদের সামনে তুলে ধরেছেন, তা বিজেপি খন্ডন করার কোন চেষ্টা করেনি। সেটা হল, ‘বহিরাগত তত্ত্ব’। এটা অত‍্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তৃণমূল নেতারা প্রচারে রাখলেও বিজেপি নেতারা ধরতেই পারেনি যে অভিযোগটি কোন পর্যায়ের।
মমতা ব‍্যানার্জীর গত দশ বছরের শাসনে মানুষ যে স্বস্থিতে নেই, তা প্রচার করে জনমত সংঘটিত করা হল না, আবার “সোনার বাঙ্গলা” যে একজন স্বপ্নের ফেরীওয়ালার স্বপ্ন ফেরীর গল্প, তা বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রতিভাত হল। কিভাবে? অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগুলি আমমধ‍্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের চরম অসুবিধায় ফেলেছে। আমাদের দেশে সিনিয়ার সিটিজেনদের অধিকাংশই ব‍্যঙ্কের সুদের উপর নির্ভরশীল। সুদ কমছে। নিত‍্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম ঊর্ধমুখী। ইওরোপ, আমেরিকার মত ‘সোশ‍্যাল সিকিউরিটি’ আমাদের দেশে নেই তা বোধহয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী জানতেন না! আবার দেশ থেকে যে কজন ব‍্যবসায়ী ব‍্যঙ্কের টাকা মেরে বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাদের একটা লিষ্ট সোশ‍্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। সেখানে ত্রিশজনের নাম দেখা যাচ্ছে। যা মধ‍্যে উনত্রিশজনই গুজরাতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং রাজ‍্যসরকারের বিভিন্ন কেলেঙ্কারী, কাটমানির অভিযোগ ইত‍্যাদি ধামাচাপা দিয়ে তোলা হল বহিরাগত তত্ত্ব। অর্থাৎ বাইরের রাজ‍্য থেকে লোকেরা বাঙ্গলা লুঠ করতে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত ভ্রান্ত নীতিগুলিকে মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হল। রাজ‍্যের সংবাদমাধ্যমগুলো এই প্রচারকে গুরুত্ব দিল। বিজেপির মিডিয়া সেল নাকি স্বঘোষিত “জাতীয়তাবাদী” বিজেপি সমর্থক জপসাধারনের মন বোঝার চেষ্টা না করে কেন্দ্রীয় সরকার, বিশেষতঃ মোদী ভজনায় নিবেদিত প্রাণ হয়ে আরো বিরক্তির কারন হল। অন‍্যদিকে বিজেপির ট্র‍্যাডিশানাল সমর্থক, অবাঙ্গালী ও একটি বড় অংশের হিন্দু বাঙ্গালী ব‍্যবসায়ীরা চাপের মধ‍্যে পড়ে গেলেন। এইভাবে বাঙ্গালী অস্মিতায় সূক্ষ ধোঁয়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে “বাংলা তার মেয়েকেই চায়” হোর্ডিং যথেষ্ট মনোগ্রাহী হল। তৃণমূল একের পর এক তাদের বক্তব‍্য বলে গেছে। বিজেপির নেতৃত্ব তাদের ব‍্যঙ্গ, বিদ‍্যুপ করেই কালহরণ করেছে! তৃণমূল নেত্রী অত‍্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অন‍্য দলের, যেমন বামপন্থীদের, মিডিয়া সেলের প্রচারকে নিজের দিকে টেনে নিলেন। বামপন্থী নেতৃত্বের চিন্তার স্থবিরতা ব‍্যপারটাকে বুঝতেই দিল না। প্রথমতঃ, যে ‘বহিরাগত’ তথ‍্য মমতাদেবী দিলেন, তাতে ধুনো দিল নেট দুনিয়ায় বামপন্থীদের প্রচার। এর মধ‍্যে দেশের ব‍্যঙ্কগুলির টাকা মেরে পালিয়ে যাওয়া ব‍্যবসায়ীদের তালিকা অগ্রগণ‍্য। মমতাদেবী বামপন্থীদের প্রচারকে নিজের ভোটবাক্সের স্বার্থে ব‍্যবহার করেছেন আর বিজেপি এ বিষয়ে কোন কথা না বল মৌণং সম্মতি লক্ষণম্ বোঝাতে চেয়েছে! যেহেতু বামপন্থীদের ভোট দিয়ে বিজেপি বিরোধী শক্তি ভোট নষ্ট করতে চায়নি, সেহেতু আসন প্রাপ্তির নিরিখে বামপন্থীরা সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে।
আরেকটি ব‍্যপার লক্ষণীয়। এবারের ভোটের মেরুকরন তৃণমূল ও বিজেপির মধ‍্যে হলেও যেমন মুসলিম ভোট শুধু তৃণমূলে গেছে, তেমনি হিন্দু ভোট তাদের দিকে টানতে বিজেপি ব‍্যর্থ‍। মমতা ব‍্যনার্জীকে অনুদানের রাজনীতি করার জন‍্য বিজেপি নেতৃত্ব দোষারোপ করেছে। কিন্তু শ্রীমতি ব‍্যনার্জী এভাবে অনুদানের রাজনীতি করে নিজে বাহবা নিলেন। আর একই পথের পথিক বিজেপির কিশান বিকাশ যোজনা, অটল পেনশান যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা ইত‍্যাদি প্রকল্পগুলি কি অনুদান নয়? আমার একটা পাঞ্জাবী কথা মনে পড়ল: মেরা কুত্তা কুত্তা, অর তুয়ারা কুত্তা টমি! দেশের মানুষকে নূন‍্যতম ভাত, কাপর আর বাসস্থানের সংস্থান যোগানো সরকারের প্রাথমিক কাজ। সেই কাজে অবহেলা করে প্রান্তিক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থনীতিকে বিপথগামী করার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বর্তায়। ভোটে তার ফল বিজেপিকে ভুগতে হয়েছে। ব‍্যঙ্কের টাকা আত্মস্বাৎ করে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের সম্পর্কে বিজেপির নেতাদের মৌণীবাবা সাজাটা জনমানসে অভিযোগের সত‍্যতাকে ঘণীভূত করেছে।
কোটা সিস্টেমে বিজেপির এম পিদের কোটায় যেসব প্রার্থী দাঁড়িয়েছে তাদের অধিকাংশই পরাজিত। এতে মন্ডল বা শুধু জেলা সভাপতিদের দোষারোপ করা মনে হয়, ভাবের ঘরে চুরি করা। কারন এই এম পিদের জনসংযোগের হাল কি তা বোঝাই গেল। এই জায়গায় তৃণমূল সুপ্রিমোর দল অনেক বেশী দায়বদ্ধতা দেখিয়েছে। কোথাও প্রার্থী দাঁড় করানোর জন‍্য শুধু যে আইপ‍্যাকের পেশাদারী পরামর্শ নিয়েছে তাই নয়, স্থানীয় নেতৃত্বের উপর দায়িত্ব দিয়েছে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনবার। ফলে দলীয় অসন্তোষ, অন্তর্ঘাতের সম্বাবনা অনেক কমে গিয়েছিল। পক্ষান্তরে, বিজেপি বুথ স্তরের সংগঠনও অধিকাংশ জায়গায় তৈরী হয়নি। কারন সাধারণ কর্মীদের কনফিডেন্সে নেওয়া হয়নি। উপর থেকে আদেশ এসেছে মাত্র। কোলকাতার উপকন্ঠে একটি কেন্দ্রে কর্মরত এক কর্মী মন্তব‍্য করেন, খেতে দেওয়ার নাম নেই, কিল মারার গোঁসাই। ওই কেন্দ্রের সাধারণ মানুষ জানতেন যে বিজেপি প্রার্থী হারছেন; যদিও প্রর্থী নিজে বলেছিলেন, তিনি নাকি ওয়াকওভার পাচ্ছেন! এই এদের জনসমর্থনের ভিত্তি!
এরপর যেকথায় আসতে যাচ্ছি তার গুরুত্ব শুধু বাঙ্গলা বা ভারতের পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর প্রভাব পরতে বাধ‍্য। এই মূহুর্তে আমাদের দেশে মুসলমান ও হিন্দু শিশুর জন্মের গড় হল, কুড়ি লক্ষ মুসলমান শিশুর সঙ্গে দশ লক্ষ হিন্দু শিশু প্রতি বছর (প্রতিটি মুসলমান নাগরিকের গড়ে দুজন স্ত্রী ধরে নিয়ে TFR থেকে গণনা করা হয়েছে) জন্মগ্রহণ করছে। ভারতবর্ষের মুসলমান জনসংখ্যা দশ বারোটি রাজ‍্যে ঘণীভূত হয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ‍্য। এখানে আবার প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র থেকে শুধু জেহাদী অনুন্রবেশই নয়, অধিক সংখ‍্যায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরাও ছড়িয়ে পরেছে। বেআইনিভাবে তারা কিছু সময় বাদে অন‍্য অনুপ্রবেশকারীদের মত ভোটার কার্ড করিয়ে নিয়ে ভারতের নাগরিকদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবেই। এদের জঙ্গী ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপের জন‍্য কোন রাষ্ট্র, এমনকি কোন মুসলিম রাষ্ট্র পর্য‍‍্যন্ত আশ্রয় দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় এই রাজ‍্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল দল তথাকথিত মানবিক কারনে নরম ব‍্যবহার করায় বৃহত্তর মুসলিম সমাজের থেকে ভোটবাক্সে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া সাংঘাতিক। কি ভাবে? প্রথমতঃ, এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ‍্যার এক তৃতীয়াংশ মুসলমান আর বাকী প্রায় সবাই হিন্দু। মুসলমান শিশুদের বৃদ্ধির হার যদি হিন্দু শিশুদের বৃদ্ধির হারের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে এই রাজ‍্যে আর কয়েক বছের মধ‍্যেই হিন্দু জনসংখ‍্যার তুলনায় মুসলমান জনসংখ্যা বেশী হয়ে যাবে। আর তখনই আসল সংঘাত শুরু হবে। কারন পৃথিবীতে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে মুসলিম সংখ‍্যাগুরু রাষ্ট্র, কিন্তু সেখানে অন‍্য ধর্মাচরনের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। এতে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের অসুবিধার জায়গাটা হল – তখন এই রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব রাখার তাগিদে উচ্চতম থেকে নিম্নতম সব পদই মুসলিম প্রার্থীদের দ্বারা পূর্ণ করা হবে। ভারতের একটি অঙ্গরাজ‍্যে এ ধরনের অবস্থায় আরেকটি কাশ্মীরের জন্ম হবে। যেভাবে কাশ্মীরে ন‍্যাশনাল কন্ফারেন্সের শাসনের অবসান হয়েছে, সেভাবে এখানে তৃণমূল শাসনেরও অবসান হবে। মমতা ব‍্যানার্জী কিন্তু ভারতের সংবিধান মেনে চলা নির্বাচিত নেত্রী। তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবন তখন বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়তে বাধ‍্য। এই মূহুর্তে মনে হয় এই ইসলামীকরনের চোরা কারেন্টের বিরুদ্ধে শ্রীমতি ব‍্যানার্জীকে তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সাহায্যে মোকাবিলা করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক ভোটে এই ইসলামিক মেরুকরণের জন‍্য সবচেয়ে বেশী দায়ী বিজেপির প্রচার। তাঁদের CAA ও NRC নিয়ে আত্মম্ভরী অপপ্রচার রাজ‍্যের মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষের মনে অমুলক ভয় ধরিয়ে দিল, এতে ভারতীয় বংশদ্ভুত মুসলমান এমনকি ছিন্নমূল হিন্দুদেরও ঘাড় ধরে কন্সেনট্রেশান ক‍্যাম্প হয়ে অন‍্য দেশে ‘পুশ ব‍্যাক’ করা হবে। এতে ইন্ধন দিল সোশ‍্যাল মিডিয়ায় লাফালাফি করা কিছু স্বঘোষিত বিজেপি সমর্থক এবং সুচারুরূপে কম‍ু‍্যনিষ্ট অপপ্রচার।
যদি ইসলামিক মেরুকরণের ফলে পশ্চিমবঙ্গে শরীয়তি শাসন প্রতিষ্ঠা হয়, তাহলে শুধু হিন্দুরাই নয়, শিক্ষিত, মার্জিত, ভারতীয় মুসলমানদের কাছেও তা সমূহ বিপদের কারন; বিশেষভাবে বাংলাভাষী মুসলমানদের কাছে। উদাহরণ – সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান। জঙ্গী জেহাদের আগুন অন‍্যের সঙ্গে নিজের ঘরও পোড়ায়। অতয়েব, সাধু সাবধান।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ‍্যের স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সারা দেশের সঙ্গে আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও আছড়ে পরেছে। তার প্রভাবে এই মূহুর্তে রাজ‍্যের স্বাস্থ‍্য পরিষেবা সম্পূর্ণ বেসামাল হয়ে পড়েছে। কারনগুলি খতিয়ে দেখে প্রতিকারের বিধান দেওয়ার চেষ্টায় এই প্রতিবেদন।
২০২০ সালের প্রথম করোনার ঢেউয়ের সময় থেকে এখনকার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কিছু মৌলিক পার্থক‍্য আছে। প্রথমত, এই দ্বিতীয় ঢেউ অনেক অল্প সময়ে বিপুল সংখ‍্যক মানুষকে সংক্রমিত করেছে – অর্থাৎ এর সংক্রমণ ক্ষমতা প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশী। দ্বিতীয়ত, এই ভাইরাসটি অতি দ্রুত ফুসফুস ও কিডনীকে নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। এর চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হল রেমডিসিভির। পাঁচদিনের কোর্সে ওষুধটি IV পুশ করতে হয়। প্রথম দিকে প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রিতার কারনেএর যোগান রাজ‍্যের সরকারী হাসপাতালগুলিতে খুব কম ছিল। সেজন‍্য করোনা রোগীর চিকিৎসায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই আমাদের রাজ‍্য পিছিয়ে পরে। এর দায় রাজ‍্য প্রশাসনের, সঠিকভাবে স্বাস্থ‍্যদপ্তর, বিশেষতঃ স্বাস্থ‍্যভবনের। এরপর আসি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায়। এই রাজ‍্যে রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা অনেক সময়ই অত‍্যন্ত মারমুখী এবং তারা যখন ডাক্তার ও অন‍্যান‍্য স্বাস্থ‍্যকর্মীদের উপর চড়াও হয়ে মারধোর করে সেসব এত বছরেও রাজ‍্য সরকার এবং তার পুলিশ বন্ধ করতে ব‍্যর্থ। ফলে, হাসপাতালের চিকিৎসায় work-to-rule এর উপরে যে মানবিক দিক থাকে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। তবুও বলতে দ্বিধা নেই, ডাক্তার, সিস্টার ও স্বাস্থ‍্যকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাজ‍্য সরকার রাজ‍্যের স্বাস্থ‍্য পরিকাঠামোর মূল সমস‍্যাগুলি সমাধানে ব‍্যর্থ হওয়ায় আজ যখন স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থার উপর করোনা রোগীর অতিরিক্ত চাপ এসে পরেছে, তখন তারা দিশেহারা হয়ে গেছে। এর একটি জ্বলন্ত উদাহরন অক্সিজেনের ঘাটতি। তাহলে আমাদের রাজ‍্যসহ কোন রাজ‍্যেই অক্সিজেনের ঘাটতি থাকার কথা নয়। সারা দেশে অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতা দিন প্রতি সর্বোচ্চ ৭৫০০ মেট্রিক টন। এর মধ‍্যে করোনা পরিস্থিতিতে মেডিকেল অক্সিজেনের গড় চাহিদা দিনপ্রতি ৫৫০০ মেট্রিক টন। সুতরাং বাণিজ্যিক কাজে অক্সিজেনের ব‍্যবহার সাময়িক বন্ধ করে অক্সিজেনের যথাযথ বন্টন ব‍্যবস্থা চালু রাখলে অক্সিজেনের অভাব হওয়ার কথা নয়। আসলে সমস‍্যা অন‍্য জায়গায়। সেটা হল অক্সিজেন বহনকারী সিলিন্ডারের ঘাটতি। সাধারণত দরকারের থেকে ১৫-২০% অব্দি বেশী সিলিন্ডার মজুত রাখা হয়। সেজন‍্য চাহিদা হটাৎ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় এই ঘাটতি। সুযোগ বুঝে একশ্রেণীর অসাধু ব‍্যবসায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডারের কালোবাজারী শুরু করেছে; কেউবা বাণিজ্যিক কাজে (ওয়েল্ডিং সহ ) এই অক্সিজেন ব‍্যবহার করছে। এর জন‍্যই অক্সিজেনের ঘাটতি। এগুলো রাজ‍্য সরকারের দেখার কথা। তারা এই কাজে এখনো অব্দি ব‍্যর্থ। আবার একই সাপ্লাইয়ের অক্সিজেন ফ্লো-রেগুলেটারের সাহায‍্যে কয়েকজন রোগীকে দেওয়া যায়। অবশ‍্য এই ব‍্যবস্থা সাময়িক আর এতে অক্সিজেনের ব‍্যবহার কম হয় না। কিন্তু সাময়িক অক্সিজেন ঘাটতির সময় রোগীদের বাঁচিয়ে রাখার জন‍্য এই ব‍্যবস্থা জরুরী। খবরে দেখলাম, ফ্লো-রেগুলেটার খারাপ থাকায় এক সরকারী হাসপাতালে দুজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অবশ‍্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন‍্য কথা বলেছেন। আমরা প্রতিদিন সংবাদ মাধ‍্যম মারফৎ জানতে পারছি দিল্লী, অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানায় অক্সিজেনের অভাবে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। করোনার প্রথম আক্রমণের সময় যেমন রাজ‍্য প্রশাসন মৃত ও আক্রান্তের হিসেবের গোলমালে জড়িয়ে গিয়েছিল, এবারেও আবার দেখছি অক্সিজেনের অভাবে নাকি মানুষ এই রাজ‍্যে মারা যাননি। অথচ রাজ‍্যবাসীর অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এই অতিমারীর মোকাবিলায় আমাদের রসদ পর্যাপ্ত নয় – সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আন্তরিক চেষ্টা ও সততা নাথাকলে তা অপরাধ।
আমাদের স্বাস্থ‍্যদপ্তর শুধু যে অক্সিজেনের কালোবাজারী রুখতে ব‍্যস্ত তাই নয়, ওষুধের কালোবাজারীও দেদার চলছে। হার্টের সমস‍্যায় কিছু রোগীকে atrial fibrillation আটকানোর জন‍্য একটি ওষুধ rivaroxaban। এটির ১৪ ট‍্যবলেটের পাতার এমআরপিতে দাম ১২০ টাকা। ওষুধটি অনেক জায়গায় করোনা রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বাজারে এই ওষুধটি আর পাওয়া যাচ্ছেনা। বহুগুণ বেশী দাম দিলে পরিচিত দোকানে মিলছে!
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা জানাচ্ছি – যদিও এমন ঘটনা আমাদের রাজ‍্যে আকছার ঘটছে। সোদপুরের সুভায়নী হাসপাতালে একজন করোনার রোগী মারা গেলেন। নিম্ন মধ‍্যবিত্ত পরিবারের ঐ রোগীর জন‍্য হাসপাতালে একলক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। তারপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব‍্য, পুরো বিলের তিনলক্ষ আঠারো হাজার টাকা না দিলে মৃতদেহ ছাড়া হবে না! এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্য‍্যন্ত (ত্রিশ ঘন্টা) মৃতদেহ আটকে রাখা হয়েছে। প্রশাসন কি করছে? সরকার এ ব‍্যপারে শুধু ‘অ‍্যডভাইসারি’ জারি করছ! অ‍্যডভাইসারি প্রাইভেট স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রগুলি শুনলেও মানতে আইনত বাধ‍্য নয়। সরকার ‘বিজ্ঞপ্তি’ জারি করলে তারা সেটা মানতে বাধ‍্য। এই দ্বিচারিতা কিন্তু গোপন আঁতাতের সন্দেহ তৈরী করে।
যখন সাধারণ মানুষজন সবাই জানেন যে প্রথম ঢেউয়ের পর করোনার মত RNA ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসা সময়ের অপেক্ষা মাত্র, তখন সরকারের তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সরকারকে কি পরামর্শ দিয়েছিল? আমরা দেখলাম, প্রথম ঢেউয়ের প্রকোপ কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সরকারী, বেসরকারী হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগীদের জন‍্য নির্দিষ্ট বেড এবং সর্বোপরি পরিকাঠামো বন্ধ করেদেওয়া হতে লাগল। অথচ এই সময় দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন‍্য তৈরী হলে – পরিকাঠামোর আরো উন্নতি করলে, এই বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেত। এর সঙ্গে উৎসবের মরসুমে সংযম দেখানো মানুষদের কাছে বিনোদনের সকল উপকরণ, সিনেমা হল, রেষ্টুরেন্টে, শপিং মল, ক্লাব, সুইমিংপুল, চিড়িয়াখানা এমনকি পর্যটন ও হোটেলগুলিও দেশের অর্থনীতির দোহাই দিয়ে খুলে দেওয়া হল! এগুলো রাজ‍্য সরকার অত‍্যন্ত ভুল কাজ করেছে যার খেসারত এখন জনসাধারণকে দিতে হচ্ছে। একজন পরামর্শদাতাও কিন্তু পরিকাঠামো আরো মজবুত করার কথা বললেন না। এরপর ট্রেন, মেট্টো, বাস, অটো সমেত সমস্ত গণপরিবহণের উপর থেকে সব রকমের বাধানিষেধ তুলে নেওয়া হল! হ‍্যাঁ, ইতিমধ্যে সাধারণ নির্বাচনে রাজনীতির মিটিং, মিছিল, জমায়েত দ্বিতীয় ঢেউয়ের দ্রুত ছড়িয়ে পরতে সাহায্য করল। এখন রাজ‍্যে দৈনিক সংক্রমণের সংখ‍্যা বিশ হাজারের উপর। দৈনিক মৃত্যু তিনশো থেকে সাড়েতিনশোর মধ‍্যে। মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরীক্ষার হার অন‍্য রাজ‍্যের তুলনায় কম।
এমনকি করোনা রোগীর মৃত্যুর পরেও শান্তি নেই। সরকার সৎকারের নিয়ম আর মূল‍্য বেঁধে দিয়েছে! কিন্তু এখানে এসব খাতায় লেখা থাকে। মানুষের অভিজ্ঞতা অত‍্যন্ত খারাপ। একভদ্রমহিলা টিভিতে জানিয়ে ছিলেন তাঁর আত্মীয়ের সৎকার করার জন‍্য তাঁকে কিভাবে খেপে খেপে ত্রিশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এম্বুল‍্যান্স থেকে, শববাহী গাড়ি থেকে, ডোম অব্দি, সব জায়গায় মানুষ তোলাবাজির শিকার। মর্গ থেকে দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য দশ থেকে পঁচিশ হাজার, যে কোন রকম টাকা চাওয়া হচ্ছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন‍্য দায়ী করোনা ভাইরাসের পরিবর্তিত জিন মিউটেশান – এটি সব RNA ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য যার ফলে ভাইরাসের চরিত্রগত কিছু পরিবর্তন হতে পারে। এখন যে কথাটা প্রায়শঃই শোনা যায় – ডাবল মিউট‍্যান্ট, ট্রিপল মিউট‍্যান্ট ভ‍্যরিয়েন্ট ইত‍্যাদি। আমাদের দেশে এখনো অব্দি নয় রকমের মিউটেট করা করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। ভাইরাসের ধর্ম বোঝা যায় তার জিনোম সিকোয়েন্সিং অনুধাবন করলে। এই জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে একবার পরিবর্তন হলে তা সিঙ্গল মিউট‍্যান্ট, দুবার হলে ডাবল মিউট‍্যান্ট, তিনবার হলে ট্রিপল মিউট‍্যান্ট ইত‍্যাদি। এইভাবে পরিবারের যে আলাদা রকমের ভাইরাস তৈরী হয়, তাদের ভ‍্যরিয়েন্ট বলে। আর এই ভ‍্যরিয়েন্টগুলি যখন তাদের ধর্মের পরিভর্তন ঘটিয়ে সংক্রমণ ক্ষমতা, মিউটেশান ক্ষমতা, সণাক্তকরণ ক্ষমতা (যার উপর ভ‍্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ভর করে) ইত‍্যাদির পরিবতন করে তখন তাদের বলে আলাদা স্ট্রেইন। আমাদের দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সবচেয়ে বেশী সংক্রমণ পাওয়া গেছে দুটি স্ট্রেইনের – ব্রিটেন স্ট্রেইন (B.1.1.7), এছাড়া E484Q এবং L424R এই দুটি ভ‍্যরিয়েন্টের সংমিশ্রণে উৎপন্ন ডাবল মিউট‍্যান্ট স্ট্রেইন – এটির সংক্রমণ ক্ষমতা অন‍্যদের তুলনায় কয়েকশোগুণ বেশী। এছাড়া সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেইন, ব্রাজিল স্ট্রেইন, অষ্ট্রেলিয়া স্ট্রেইন, ক‍্যলিফোর্ণিয়া স্ট্রেইন ইত‍্যাদিও পাওয়া গেছে। আমাদের রাজ‍্যে এখনো অব্দি একটি ট্রিপল মিউট‍্যান্ট ভ‍্যরিয়েন্ট স্ট্রেইন পাওয়া গেছে (B.1.618)। এর দ্রুত সংক্রমণ করার ক্ষমতা এবং replication ক্ষমতার জন‍্য এটি মারাত্মক রূপ ধারন করেছে। যত বেশী ভ‍্যরিয়েন্টের স্ট্রেইন পাওয়া যাচ্ছে, তত আমাদের বায়োটেকনোলজির জ্ঞানে বোঝা যাচ্ছে, এই স্ট্রেইনগুলির ভ‍্যাকসিনকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতাও ততই বাড়ছে। নতুন নতুন স্ট্রেইনের জন‍্য নতুন নতুন ভ‍্যকসিনের আবশ‍্যকতা অবশ্যই আছে।
এবার আসি এই রাজ‍্যের ভ‍্যকসিনেশানের কথায়। এখনো অব্দি প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে দেশে সতেরো লক্ষের মত মানুষের টীকাকরন হয়েছে। যদি দুটি ডোজের সম্পূর্ণ টীকাকরনের হিসাব ধরা হয়, তবে ১% মানুষের টীকাকরন শেষ হয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গে এখনো পর্য‍্যন্ত এককোটি বিশলক্ষের মত টীকা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ টীকাকরনের হার ০.৫% মাত্র। কিন্তু এই রাজ‍্যে সবচেয়ে বড় সমস‍্যা হল অনুপ্রাণিত আদেশনামা। এই পরিস্থিতিতে যখন প্রায় সব কিছু লকডাউনের পর্যায়ে চলে গেছে তখন, ১লা মে পরবর্তী টীকাকরনের ক্ষেত্রে সরকারী আদেশ হল, সব বেসরকারী টীকাকেন্দ্রে টীকা ব‍্যবস্থা তুলে দিয়ে শুধু সরকারী হাসপাতাল, সরকারী স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রে এবং পৌরসভা দ্বারা টীকাকরন করতে হবে। এমনকি যারা প্রথম ডোজ বেসরকারী স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রে নিয়েছেন, তাদেরও এই সরকারী ব‍্যবস্থার মধ‍্যে দিয়ে যেতে হবে। আবার ১৮+ বয়েসের মানুষদের টীকাকরন শুরু হয়েছে। সুতরাং টীকাকরনের সংখ‍্যা অনেক বাড়বে। এদিকে টীকাকরনকেন্দ্রের সংখ‍্যা কমবে। আমরা যুবা-বৃদ্ধ নির্বিশেষে একই লাইনে দাঁড়িয়ে গুঁতোগুঁতি করে টীকা নেব! হয়ত যারা টীকা নেবেন তাদের অনেকেই করোনা সংক্রমণ ফ্রি পাবেন। অথচ যে মানুষছন অল্প কিছু কনভেনিয়েন্স ফি দিয়ে আগের মত বেসরকারী স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রে টীকা নিচ্ছিলেন, সেই ব‍্যবস্থাটা চালু রাখলেসরকারের কি অসুবিধা ছিল তা আমাদের অজানা।
পরিশেষে বলি, করোনা রোগীর চাপে এমনিতেই হাসপাতালের পরিকাঠামো চাপের মধ‍্যে। এখন যদি ডেঙ্গু, ফ্লু ইত‍্যাদির বাড়বাড়ন্ত হয় (বর্ষাকাল আসছে), তবে অন‍্য রোগীরা আমাদের রাজ‍্যে চিকিৎসা পাবে কি করে সেটা যেন প্রশাসন মাথায় রাখে।

করোনা যুদ্ধে রাজ‍্যের অপরিনামদর্শিতার ফল ভুগতে হচ্ছে

       কোভিড১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা ভারতের সঙ্গে আমাদের পশ্চিমবঙ্গও বিপর্যস্ত। এখন অবস্থা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখানে সরকার প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে। এখন একমাত্র ভগবান ভরসা। অথচ কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপগুলির সুফল পেয়েছি। আমার মত অনেকেই যখন রাজ‍্য সরকারের ত্রুটিগুলি ধরিয়ে দিয়েছি, বলতে বাধা নেই, রাজ‍্য সরকারও চেষ্টা করেছে সেই ত্রুটি মেরামত করার। ফলে ধীরে ধীরে কোভিড অতিমারী চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির দৌলতে কোভিডবিধি না মেনে প্রচার, মিছিল, এবং পুরো ভোটপর্বটাই কোভিড সম্প্রচারে পুরোদমে সহায়তা করেছে! এর দায় অবশ‍্যই সব রাজনৈতিক দলের। শুধু নির্বাচন কমিশনকে তার নরম মনোভাবের জন‍্য দায়ী করা ঠিক নয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ের অব‍্যবহিত আগে অর্থাৎ প্রথম দু দফার পরেই যদি নির্বাচন স্থগিত করা যেত তবে হয়ত এই রাজ‍্যের করুণ পরিণতি অনেকটা আটকানো যেত।অনেক তথাকথিত বোদ্ধা দেখলাম মন্তব‍্য করেছেন, যে একবার নির্বাচনের পর্ব শুরু হলে তা আরস্থগিত করা যায় না - সম্পূর্ণ ভুল কথা। ১৯৯১ সাশে রাজীব গান্ধীর হত‍্যা হয়েছিল নির্বাচন পর্ব চলার মধ‍্যে। সে সময় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরে তা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এখনকার নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ দেখে আমার মনে হয়েছে, এই কমিশনের এত শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসের অভাব আছে। যাই হোক, শুধু নির্বাচন অতিমারী ছড়ানোর একমাত্র কারন নয়। অন‍্যতম একটি কারন হল, সাধারণ মানুষের মনে বেপরোয়া ভাব, যেন আমরা করোনা জয় করে ফেলেছি। এদিকে রাজ‍্য সরকারও ঘরের বাইরের সকল বিনোদনের জায়গা - সিনেমা হল, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, শপিং মল, চিড়িয়াখানা, পার্ক এমনকি খেলার মাঠ খোলা রেখে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সং?ক্রমণ বাড়াতে সাহায‍্য করেছে।
       একটি অত‍্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে কোভিড মোকাবেলায় আত্মম্ভরী ঢক্কানিনাদ। ভারতে হাসপাতালের পরিকাঠামো থেকে ধরে ভ‍্যকসিন তৈরী - সবেতেই নাকি আমরা বিশ্বসেরা! এর ফলে সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে সরকারী প্রশাসন, সকলেই মিথ‍্যা আত্মতৃপ্তিতে মশগুল ছিল। সরকার হয়ত কিছু ভালো কাজ করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক চাটুকারিতা সরকারের কর্মদক্ষতার উপর অপপ্রভাবও ফেলেছে। এর আরেকটা কারন হল এই সময় ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতার অতিবৃদ্ধি।
     এর ফলে প্রথম যেটির অভাব হল তা কোভিড রোগীর বেডের ঘাটতি। তাও যদিবা সামলানো খেল, তারপর এলো প্রাণদায়ী অক্সিজেনের ঘাটতি। চাহিদার তুলনায় কিছু বেশী অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখাই দস্তুর। কিন্তু রোগীর সংখ‍্যা গুণিতকে বাড়তে থাকায় বর্ধিত অক্সিজেন সিলিন্ডার যোগানো সম্ভব হলনা। ফল, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু,যা সারা দেশে সংবাদ মাধ‍্যমগুলি প্রচার করল। এভাবে মানুষকে অযথা ভীত সন্ত্রস্ত ও সরকারকে চাপে ফেলে দিল। কিছু কিছু জায়গায় বন্টন ব‍্যবস্থার গোলমাল ও তজ্জনীত রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টায়বেশী সময় ধরে অবস্থা খারাপ থাকল। আমরা দিল্লীতে, উত্তর প্রদেশে ও হরিয়ানায় বিনা অক্সিজেনে কত মানুষ মারা গেছে তার পরিসংখ‍্যান সংবাদ মাধ‍্যমে দেখেছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বা মহারাষ্ট্রে অক্সিজেনের অভাবে কত রোগী মারা গেলেন তার পরিসংখ‍্যান দেখিনি। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় যে, পশ্চিমবঙ্গে অক্সিজেনের অভাবে কোন রোগী মারা যায়নি। তাহলে কি অক্সিজেন নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার যে অভিযোগ মূখ‍্যমন্ত্রী করেছেন তা অসত‍্য? না। মূখ‍্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। তবে রাজ‍্যের মেরুদন্ডহীণ সংবাদ মাধ‍্যম এমন কোন সংবাদ পরিবেশন করে না যাতে রাজ‍্যের কোনরকম ঘাটতি প্রকাশ পায়। এটা করতে গিয়ে নিজেদের দায়িত্ব বিস্মৃত হয়ে 'চাটুকারিতা পরম ধর্ম' ব্রত উদযাপন করে তারা সরকারকে সঠিক পথ দেখাতে পারছে না।
        পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ‍্যপরিকাঠামো এমনিতেই খুব উন্নতমানের নয়। অধিকন্তু মারমুখী আত্মীয়স্বজনের চাপে রোগী পরিষেবায় ডাক্তার, সিস্টার ও অন‍্যান‍্য স্বাস্থ‍্যকর্মীরা যথেষ্ট চাপের মধ‍্যে থেকে কাজ করেন। এর উপর আছে স্বাস্থ‍্যভবনের ডাক্তার -আমলাদের অপ্রয়োজনীয় এবং অবান্ছিত হস্তক্ষেপ। ফলে, বেশীরভাগ সময়েই হাসপাতালে work-to-rule পরিষেবা পাওয়া যায়। এছাড়া বেসরকারী হাসপাতাল ও বড় নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে রাজনীতির উপর মহলের অশুভ আঁতাতের কথা সর্বজনবিদিত। এসবের মিলিত ফলশ্রুতিতেই কোভিড১৯এর দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে এভাবে মুখ থুবরে পড়েছে স্বাস্থ‍্য পরিষেবা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশা করা যায়সরকার এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবে। অতিমারী নিয়ে কেন্দ্র-রাজ‍্য কুস্তির একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। এই রাজ‍্যে প্রধান বিরোধী দল এখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে। সেজন‍্য রাজনীতির খেলায় মেতে এ রাজ‍্যের মূখ‍্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে দরবার করলেন, কোভিডের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং অক্সিজেনের উপর যেন GST মকুব করা হয়। তিনি জবাব পেলেন GST আগেই মুকুব করা হয়েছে! রানীতির টানাপোড়েন চলতেই থাকে। Atrial fibrillation আটকানোর ওষুধের ১৪টি ট‍্যবলেটের দাম mrpতে ১২০ টাকা। যখন থেকে এটি কোভিড রোগীর চিকিৎসায় ব‍্যবহার করা শুরু হল, আর এই ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। যাদের হার্টের সমস‍্যার জন‍্য এই ওষুধ লাগে তারা একই compositionএর  অন‍্য কোম্পানির ওষুধ কিনছেন যার দাম ৫০৯ টাকা। কেন্দ্র বা রাজ‍্য, কোন সরকারই এ ব‍্যপারে উচ্চবাচ্য করছেনা! স্বাস্থ‍্যভবনের চিকিৎসক আমলারা, যাদের একমাত্র যোগ‍্যতা চাটুকারিতা, তারা এ খবর রাখেন কিনা জানা নেই।
     এই মূহুর্তে বলা যেতে পারে কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র টীকাকরণ। আমাদের দেশের সমস্ত মানুষজনের টীকাকরণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ‍্যে শেষ করার জন‍্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ‍্য হচ্ছি, রাজনৈতিক কারণে ামাদের দেশে তৈরী টীকা বিদেশে বিক্রি ও সাহায্য হিসেবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষদের সুষ্ঠু টিকাকরনের পরিকল্পনা করা হয়নি। প্রথমে ষাটোর্ধ মানুষের টীকাকরণ শুরু হল। দুটি কোম্পানির টীকা। আমাদের কোন পছন্দের সুযোগ নেই। যে কোম্পানির টীকা পাওয়া যাবে তাই নিতে হবে। সরকারী বা নির্দিষ্ট বেসরকারী স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রে টীকাদান কর্মসূচি শুরু হল। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব প্রথম টীকার পরে দ্বিতীয় টীকা নির্দিষ্ট সময়ের ব‍্যবধানে দিয়ে টীকাকরণ সম্পূর্ণ করা। সরকারের ভুল নীতি এবং কিছুক্ষেত্রে নীতিহীণতার জন‍্য দেশের টীকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হওয়ার মুখে। রাজ‍্যের জনসংখ্যা অনুপাতে সব রাজ‍্যকে টীকা সরবরাহ করার কথা কেন্দ্রের। পরের পর্যায়ে রাজ‍্যগুলি তার নাগরিকদের নির্দিষ্ট কর্মসূচির মধ‍্যে দিয়ে টীকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে। এটাই হওয়ার কথা। অথচ পুরো প্রক্রিয়াই বিপর্যস্ত। কেন?  প্রথম কারন হচ্ছে, দুটি টীকা উৎপাদনকারী সংস্থা তাদের ভিন্ন ভিন্ন উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে টীকা তৈরী করছে। দেশের জনসংখ্যার হিসেবে প্রত‍্যেক রাজ‍্যকে কেন্দ্রের টীকা পাঠানোর কথা। পাঠানো হয়নি। না কেন্দ্র, না রাজ‍্য, কোথাও সুষ্ঠু প্ল‍্যানিংয়ের কোন ছাপ নেই। এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ভারতে ১৬,৮২,৭৬,২১৪টি টীকা দেওয়া হয়েছে। যদি দুটি ডোজের সম্পূর্ণ টীকাকরণকে ধরা হয়, তা সলে দেশের জনসংখ‍্যার মাত্র ১% এর কাছাকাছি মানুষ এখনো অব্দি সুরক্ষিত হয়েছে। এইভাবে চললে আগামী দু বছরেও টীকাকরণ সম্পূর্ণ হবেনা। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সহাস‍্য মুখ দেখিয়ে প্রচার করা হল, আমাদের মহান প্রধানমন্ত্রী নিজেই টীকা তৈরী করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি তা দান খয়রাত করছেন! এটি সত‍্যি হলে তা সামাজিক অপরাধ আর তা না হয়ে থাকলে এমন প্রচার করা সামাজিক অপরাধ। পশ্চিমবঙ্গে এখনো পযর্ন্ত ১,১৯, ৬৩, ৫৩২ টি টীকা দেওয়া হয়েছে। যদি দুই ডোজের টীকাকরণ ধরে টীকা সম্পূর্ণ করার হিসেব করা হয় তবে এখনো অব্দি ০.৫%  মানুষও এই রাজ‍্যে সুরক্ষিত হয়নি। cowin.gov.in এর হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ‍্যের জন‍্য প্রেরিত টীকার সংখ‍্যার সঙ্গে রাজ‍্যের জনসংখ্যার কোন মিল নেই। শতকরা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক অনেক বেশী টীকা পেয়েছে। কোন নীতিতে কেন্দ্র টীকা পাঠাচ্ছে তা একদম স্বচ্ছ নয়।
       আবার দেখা যাচ্ছে যে দুটি সংস্থা টীকা তৈরী করছে, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা, কত পরিমাণ টীকা তারা সরকারকে দিচ্ছে তার সঠিক হোমওয়ার্ক না করেই সরকার প্রথমে সিনিয়ার সিটিজেন্স, পরে ৪৫+ বয়েসের এবং সবশেষে ১৮+ বয়েসের সব নাগরিকদের টিকাকরণ শুরু করার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এই রকম অদ্ভুত বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের কর্মদক্ষতার ছাপ নেই। কারন এখনো পর্যন্ত সারা দেশের বয়স্ক নাগরিকের বেশীরভাগেরই এক বা কোন টীকাকরণ হয়নি। এদিকে টীকার সংখ‍্যা কমে যাওয়ায় টীকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে টীকা গ্রহীতার লাইন ও দুর্ভোগের শেষ নেই। মনে হচ্ছে নিজের ক্ষমতার যথাযথ পরিমাপ না করতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার ছনসাধারনের জীবন দুর্বিষহ করে দিচ্ছেন। 'কোভ‍্যকসিন' টীকা প্রস্তুতকারী সংস্থা সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় এবং এদের টীকা তৈরীর সব উপাদান দেশীয়। সরকারের উচিৎ ছিল এই সংস্থাটির উৎপাদন বাড়ানোর জন‍্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করা। প্রয়োজনে এদের multi centered production unit তৈরী করতে আর্থিক ও প্রশাসনিক সাহায‍্য করা। সরকার তা যথাযথভাবে করেনি। আবার 'কোভিশিল্ড' প্রস্তুতকারী সংস্থা যারা সারাদেশে প্রায় ৯০% টীকা সরবরাহ করেছে, তারা ব্রিটিশ সংস্থা অ‍্যস্ট্রাজেনিকার লাইসেন্সে টীকা তৈরী করছে। ফলে, এর একটা আন্তর্জাতিক  সমঝোতার শর্ত আছে। তাছাড়া এর এমন কাঁচামাল লাগে যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সরকার এটি বেশী কিনছে কারন এর দাম কম। আমার প্রশ্ন, সরকারের কাজ কি তার নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ নাকি বানিয়ার মত লাভ-ক্ষতির হিসাব করা।
      জনসাধারণের আরো জানা উচিৎ, এই টীকা তৈরীর জন‍্য বিদেশ থেকে আসা কাঁচামালের আমদানী শুল্ক সরকার তুলে নিয়েছে বলে প্রচার করা হলেও এর অন‍্যান‍্য দেশীয় কাঁচামালের উপর সরকার GST এখনো তুলে নেয়নি। এই ধরনের পদক্ষেপ কিসের সংকেত? অর্থাৎ, এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে সরকারের ভারতীয় নাগরিকদের টীকাকরনের জন‍্য সুষ্ঠু কার্যক্রম নির্মানে ঘাটতি ছিল এবং আছে। সরকারের এবং শাসকদলের কিছু পদাধিকারীর বাগাড়ম্বর পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। আমাদের দেশের টীকা উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে থাকলে এখন সরকার বিদেশের জনসন, ফাইজার, স্পুটনিকের মত টীকাগুলিকে আনার জন‍্য আকুলি বিকুলি করত না।
       এদিকে দেশের সম্পূর্ণ টীকাকরনের প্রক্রিয়া আরো ধীরে চলতে শুরু করার জন‍্যও কেন্দ্রীয় সরকারের অপরিণামদর্শীতাই দায়ী। তারা টীকাপ্রতি ১৫০ টাকা মূল‍্যে স্বল্প কিছু টীকা কিনে টীকাকরণ শুরু করে দিয়ে বাহবা নিতে গেল। তারপর শর্ত অনুযায়ী সংস্থা দুটি যখন দাম বাড়াতে চাইল, তখন টীকা সংগ্রহের দায়িত্ব অনেকাংশে সরকার নিজের ঘাড় থেকে ছেটে ফেলল! তারা রাজ‍্যগুলির ঘাড়ে টীকার বাড়তি বোঝা আর বেসরকারী টীকাকরণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত সংস্থাগুলির ঘাড়ে আরো সুউচ্চ মূল‍্যের বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিল। সারা দেশে একই দামে টীকাকরণ প্রক্রিয়া না চালালে প্রতিবাদ হবেই। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপকারী চরিত্রের বদলে বানিয়া চরিত্র প্রকাশ পেল। সরকার জনসাধারণের উপকার করার বদলে নিজের ব‍্যবসায়িক লাভের দিকটাই দেখল। ফলে সরকারের জনপ্রিয়তার উপর কালো ছায়া পড়ল। সারা দেশে সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট কালিমালিপ্ত হল।
      আরেকটি কথা। এই যে কয়েক বছর ধরে টীকাকরন প্রক্রিয়া চালানো - একটি অবাস্তব পদক্ষেপ। কারন এই RNA ভাইরাস তার রূপ বদল করে মানুষের ইমিউন সিস্টেমে আঘাত করে। সুতরাং সে দীর্ঘ সময় পেলে টীকাকে বোকা বানিয়ে তার ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। সরকারের আপাত ব‍্যর্থ পরামর্শদাতাদের এটা মাথায় রাখা উচিৎ।
        পরিশেষে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ত্রুটির জায়গাটা ধরিয়ে দিই। এখানে প্রশাসন চলে অনুপ্রেঢ়নায় আর রাজনৈতিক লক্ষ‍্যে। এমনিতেই টীকাকরণের হার ও মাত্রা অনেক কম হওয়ায় টীকাকরণকেন্দ্রগুলিতে আগ্রহীদের লাইন অনেক বড় হচ্ছে। সরকারের ঘোষিত নীতি সকলকে বিণামূল‍্যে টীকাকরণ - সাধু প্রস্তাব। এদিকে ১লা মে থেকে টীকাকরণের যোগ‍্য মানুষজনের সংখ‍্যা অনেক বেড়ে গেল (১৮+ বয়সের নাগরিকদের টীকাকরন শুরু )। তখনই সরকার বেসরকারী টীকাকরণকেন্দ্রগুলিতে টীকার যোগান বন্ধ করে দিল। ফলে, সরকারী টিকাকরণকেন্দ্রগুলিতে ভিড় বাড়তে লাগায় সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে গেল। অনেক বয়ষ্ক নাগরিক দ্বিতীয় ডোজের সময় হয়ে গেলেও টীকা পাচ্ছেন না। সরকার তাদের জন‍্য বেসরকারী টীকাকেন্দ্রগুলি খোলা রাখলে এই অব‍্যবস্থা এড়ানো যেত। দেশের জনসাধারনকে গিনিপিগ বানানোর প্রক্রিয়া এভাবে আর কতদিন চলবে তার উত্তর এখনো অজানা।

( লেখক পশ্চিমবঙ্গ বায়োটেক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশানের প্রাক্তণ নির্দেশক ও পরামর্শদাতা )