আফগানিস্তানে বাইডেনের দাদাগিরির পরিসমাপ্তি

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যে নাটক শুরু হয়েছিল তা ক্লাইমাক্সে পৌঁছালো ১৫ই আগষ্ট,২০২১এ বিনা রক্তপাতে কাবুল দখলের মধ‍্যে দিয়ে। শুরুটা অবশ‍্য করে গিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে সৈন‍্য সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কাতারের দোহাতে এনিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা বলেন। পরবর্তীতে অতিমারী ও নির্বাচনের গুরুত্বে এই সৈন‍্য অপসারণ প্রক্রিয়া আর বিশেষ এগোয়নি। আফগানিস্তানের শেষ নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি তখন থেকেই বলতে থাকেন যে পাকিস্তানের জঙ্গীরা আফগানিস্তান দখলের চক্রান্ত করছে। এমনকি আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই কথাকে পাত্তা না দিয়ে পাকিস্তান দ্বারা লালিত-পালিত তালিবানগোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ‍্যে বাইডেন প্রশাসন তাদের সৈন‍্য অপসারণ প্রক্রিয়ার ব‍্যপারে শুধু তাদের সঙ্গেই কথা বলে। ফলে, তালিবান আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখলের লক্ষ‍্যে শুধু এগিয়েই যায়নি, তারা আন্তর্জাতিক স্তরে রাজনৈতিক স্বীকৃতি পেয়ে যায়। আমেরিকার ইচ্ছে ছিল, তারা অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে শক্তিশালী আফগান সৈন‍্যদল তৈরী করতে আফগান সরকারকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবে। যার ফলে, ভবিষ্যতে তালিবান, আইসিস বা অন‍্য কোন জঙ্গী সংগঠন আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে বসে আমেরিকার স্বার্থের পরিপন্থী কোন কাজ করতে পারবেনা। প্রতিটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ না বলা কথা থাকে। এখানে আমেরিকা তার পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ রাখার ব‍্যবস্থা হিসেবে তালিবানদের দূর্বল দেখতে চাইলেও নির্মূল করতে চায়নি।
ফলে, ২০০১ সালে যখন তালিবান আফগানিস্তানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালো তখন তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেও তাদের মধ‍্যে সমন্বয় রেখে তাদের সংগঠন টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নেয় পাকিস্তান এবং একাজে তারা তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইকে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগায়। তালিবানের মাদক চোরাচালানের ব‍্যবসা সম্প্রসারণের পেছনে পাকিস্তানের অবদান প্রচুর। তাছাড়া, ওয়াহাবী ইসলামের চিন্তাধারায় সুন্নি তালিবান পাকিস্তানের মধ‍্যে সহমর্মিতার সন্ধান পায়।
এদিকে আমেরিকায় গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ই বোঝা গিয়েছিল যে আমেরিকান মুসলমানেরা একযোগে বাইডেনকে ভোট দিয়েছে। বাইডেনের ডেপুটি কমলা হ‍্যারিসের কথাবার্তায় পরিষ্কার যে তারা পাকিস্তান ও ভারতের মধ‍্যে তুলনায় পাকিস্তানকে অধিকতর বন্ধু মনে করে। কাশ্মীর প্রশ্নেও কমলা হ‍্যারিসের অবস্থান সন্দেহজনক। যাই হোক, আফগানিস্তানে বাইডেন প্রশাসন প্রথম থেকেই তালিবানদের সাথে ও তাদের বিশেষ বন্ধু পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা এবং পাকিস্তানের উপর নির্ভর করে এখন এমন অবস্থায় পড়েছে যে তাতে বাইডেনের ভোট ব‍্যাঙ্কের তেমন ক্ষতি না হলেও কিন্তু বিশ্বের দরবারে আফগানিস্তানের থেকে আমেরিকার শর্তহীন পলায়ন তাকে বিশ্ব-দাদাগিরির মর্যাদা থেকে এক ধাক্কায় মাটিতে আছড়ে ফেলে দিল। এমনকি অন্তিম পর্যায়ে তালিবানের ধমকে ভীত সন্ত্রস্ত মনোভাব দেখিয়ে তাদের দাবিমত বাইডেন ৩০শে আগষ্টের মধ‍্যে আমেরিকার সৈন‍্যদের আফগানিস্তানের থেকে বের করে আনল। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এমনকি বিমান, হেলিকপ্টার ফেলে আমেরিকা পালিয়ে গেল। তারপর কুড়ি বছরের যুদ্ধ শেষে বাইডেন পরাজিত সৈন‍্যদলের নেতার মত সংবাদ মাধ‍্যমে বার্তা দিলেন যে তিনি কত দ্রুততার সঙ্গে এই ‘পলায়ন’ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছেন! প্রথম থেকেই আমেরিকা পরিকল্পনা করেছিল যে তারা তালিবানের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। কারন তারা আলোচনা পর্বে তালিবান ছাড়া আর কোন আফগান গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কথা বলেনি। অথচ ২০০১ সালে যখন তালিবানদের তারা হঠিয়ে দেয়, তারপর থেকে আফগানিস্তানে জনগোষ্ঠীগুলির রাজনৈতিক ও সামাজিক অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আবার কুড়ি বছরেও আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকারগুলি যদি শক্তিশালী সৈন‍্যদল তৈরী করতে না পারে তার দায় কিন্তু আমেরিকার সরকার এড়াতে পারে না। অধিকন্তু মহিলা সহ নাগরিকদের অধিকার এফং আইনের শাসন, যা তালিবান জমানায় একেবারেই ছিল না সেটি অনেকাংশে প্রতিষ্ঠিত করার কৃতিত্ব আফগান সরকারের প্রাপ‍্য। আমেরিকা হটাৎ একদিন মনে করল যে তাদের অনেক অর্থ খরচ হচ্ছে এবং তাদের সৈন‍্যদলের প্রাণহানি হচ্ছে, তাই রাতারাতি তালিবানদের ডেকে তাদের হাতেই ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমেরিকার পলায়ন – আর যাই হোক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের নাক গলানোর অভিপ্রায়ে চরম আঘাত করল, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এখানে একটি প্রাসঙ্গিক কথা বলি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পেট্রোলিয়াম কেনার টাকা মেটানোর জন‍্য প্রধান মাধ‍্যম হল আমেরিকান ডলার! এটাই তাদের দাদাগিরি। ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ভারত ইরান থেকে তেল আনলে তা ভারতের টাকায় মেটাতে পারে। ইরানের সঙ্গে আমাদের দেশের এই চুক্তির সবচেয়ে বেশী বিরোধিতা করেছে আমেরিকা। অবশ‍্যই অন‍্য যুক্তি সাজিয়ে। এই সব দাদাগিরি এখন বন্ধ হবে। আবার বন্ধু হিসেবে আমেরিকা যে একদম বিশ্বাসযোগ‍্য নয়, তাও প্রমানিত হয়ে গেল। আরো বোঝা গেল যে আমেরিকার ধারনা,কথা ও কাজে স্বচ্ছতার বড়ই অভাব।
এখানে আফগানিস্তানের নাগরিকদের বিভিন্ন গোষ্ঠী, তাদের পরিচয় ও ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। আফগানিস্তানের মানুষজন সতেরোটির বেশী গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এর মধ‍্যে সংখ‍্যা ও প্রতিপত্তির দিক থেকে উল্লেখযোগ্য হল পাস্তুন, তাজিক, উজবেক, হাজারা, তুর্কমেন ও বালুচগোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলিতে এমন নেতারা আছেন যারা প্রত‍্যেকেই নিজের নিজের গোষ্ঠীর মধ‍্যে যথেষ্ট ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি রাখেন। কিন্তু আমেরিকা ও ন‍্যাটো বাহিনী এই গোষ্ঠীগুলির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে শুধু তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে – তাঁরা তালিবানদের হাতেই শুধু ক্ষমতা হস্তান্তরের নক্সা করেছে বলেই মনে হয়। কে এই তালিবান? তালিবান কথাটির অর্থ হল ‘ছাত্র’। তালিবানরা মূলতঃ আফগান হলেও তারা একটি বিশেষ জাতিগোষ্ঠীভুক্ত নয়। এদের মধ‍্যে অল্পসংখ‍্যক অআফগানও থাকতে পারে। এরা বিশেষতঃ পাকিস্তানের, এবং অল্প কিছু ক্ষেত্রে ভারতের মাদ্রাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত ওয়াহাবী মতের সুন্নি মুসলমান যাদের তৈরী করা হয়েছে দেওবন্দী ইসলামী আন্দোলন এবং সাভরিক সংগঠন ও সন্ত্রাসের মাধ‍্যমে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য। এরা বেশীরভাগই পাস্তুনগোষ্ঠীর।ফলে, এরা ওয়াহাবী সুন্নি মুসলমান অধ‍্যুষিত পাকিস্তানের সঙ্গে ধর্মীয় একাত্মতা অনুভব করে। ২০১৬ সাল থেকে এদের উচ্চতম নেতা মৌলভী হাইবাতুল্লা আখুন্তজাদা। এদের মধ‍্যে পাস্তুন ছাড়া বেশ কিছু সংখ‍্যক তাজিকও আছে। এদের শিক্ষা, ঐতিহ্য ও চিন্তাধারা জিহাদধর্মী। এরা ইসলামী মৌলবাদ ও অসহিষ্ণুতার ধারক এবং বাহক। এরা বাইরে যতই দেখাক যে আইসিস এদের শত্রু, চিন্তাধারা, ভাবাদর্শ এবং কাজকর্মে কিন্তু তা দেখা যায়নাহ ভারতের ক্ষতি করা যাদের জিহাদের মূখ‍্য উদ্দেশ‍্য সেই জৈশী মহম্মদ ও আল কায়দা এদের বন্ধু। এছাড়া এরা হাক্কানি নেটওয়ার্কেরও ঘনিষ্ঠ। চীন, তুরষ্ক, কাতার ও বিশেষতঃ পাকিস্তান এদের আফগানিস্তানের একচ্ছত্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। এরা এবার আফগানিস্তানে যে ইসলাভী এমিরেটস এর কথা বলছে, ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে এরা একই কাজ করেছিল। ২০০১ সাল অব্দি এদের অত‍্যাচারে লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মহিলাদের সামান‍্যতম স্বাধীনতা এরা দেয়না। মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার এরা বিরোধী। বহু হাজার মানুষ, লক্ষাধিক, এদের দ্বারা নিহত হয়। বিশেষতঃ মহিলাদের এরা নির্দয়ভাবে হত‍্যা করে। ২০০১ সালে আমেরিকা ও ন‍্যাটো বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণের মুখে এরা পিছু হটতে বাধ‍্য হয়। এখানে উল্লেখ‍্য যে সে সময়ও নর্দার্ন এ‍্যালায়েন্স পঞ্জশির এলাকায় তালিবানদের রুখে দিয়েছিল। এবারেও তারা একই ভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তালিবানরা এবারে ক্ষমতায় এসে ফলেছে শরিয়তী আইন মোতাবেক এরা দেশ চালাবে! নারী স্বাধীনতাও তারা দেবে শরিয়তী আইন মোতাবেক! কিন্তু এটা বলছে না যে শরিয়তী আইনের ব‍্যখ‍্যা এরা নিজেদের মত করবে। তাই এদের সাধারণ স্বাধীনচেতা আফগান জনগন বিশ্বাস করছে না। মার্কিন ও ন‍্যাটো বাহিনীর অবস্থানের সময় আফগানদের দেশত‍্যাগের ঐকান্তিক চেষ্টাই তার প্রমাণ।
তালিবানরা অত‍্যাচার ও ভয়ের বাতাবরন তৈরী করতে পারে। কিন্তু একটা দেশকে কি করে শাসন করতে হয় সেটা এদের জানা নেই। যখন প্রথমবার ২০০১ সালে তালিবানরা আফগানিস্তান থেকে বিতারিত হল, তখন এক প্রান্তিক জায়গায় তারা বিদ্রোহী যোদ্ধা হিসেবে আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করে। এদের রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রেনিং ও অন‍্যান‍্য কৌশলগত সাহায্য – সব কিছুই পাকিস্তান যোগায়। এদের বেশীরভাগ মানুষ পাস্তুন হওয়ায় পাকিস্তানেরও সুবিধা হয়। পাকিস্তানের উদ্দেশ‍্য একটা। তা হল, এদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে পাকিস্তান প্রসুত জৈশী মহম্মদ ও অন‍্যান‍্য ভারতবিরোধী জঙ্গী সংগঠনগুলিকে যুক্ত করে ভারত থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করা। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ অন‍্যান‍্য নেতৃবৃন্দ এবং ফৌজীরা সরাসরি সেকথা বলছেও। এই উদ্দেশ‍্যে এদের সঙ্গে ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদার লালন-পালনও পাকিস্তান করছে। এখন পাকিস্তান একারনেই ইসলামিক সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে। এই সন্ত্রাস দমনের জন‍্য যখন বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানের সাহায্য নেয় তখন মার্কিনীদের উদ্দেশ‍্য নিয়ে বিশ্ব-জনমতের সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, এই তালিবানরা আফগানিস্তান থেকে ক্ষমতাচ‍্যুত হওয়ার পর এদের অর্থনৈতিকভাবে মজবুত করার লক্ষ‍্যে এদের পৃথিবী জুড়ে মাদক চোরাচালানের ব‍্যবসা ও তোলাবাজির কাজে পাকিস্তান পুরোদস্তুর সহযোগিতা করেছে। এখন তালিবানদের ‘ভালো’ সার্টিফিকেট দেওয়া এবং বিভিন্ন দেশ, বিশেষতঃ ইসলামিক দেশগুলি যাতে তালিবান সরকারকে মান‍্যতা দেয়, তার জন‍্য পাকিস্তান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মত।
আফগানিস্তানের আশরফ গণি সরকারের অযোগ‍্যতা ও পাহাড়প্রমান দূর্ণীতির পর পশ্চিমী দেশগুলির আফগানিস্তান থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার কারনে আফগানিস্তানের অথনীতি এখন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। বিদেশী সাহায‍্য ছাড়া এই অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কোন সম্ভাবনা নেই। আজ তালিবানদের কাছে সবচেয়ে বড় চ‍্যালেঞ্জ আফগান জনসাধারণের মুখে খাবার যোগানো। এই মূহুর্তে চীন তাদের রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করলেও বিপুল পরিমান বিনিয়োগ যে করবে না তা বলাই বাহুল‍্য। যে জন‍্য পাকিস্তান দ্বারা প্রতিপালিত তালিবান নেতৃত্ব একাধিকবার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা বলে ভারতের চলতে থাকা বিনিয়োগগুলি বন্ধ না করতে অনুরোধ করেছে। এক্ষেত্রেও ভারতকে অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে যেতে হবে। কারন দেশ শাসন সম্পর্কিত তাদের ঘোষিত নীতিই তালিবানদের আধুনিক সভ‍্য সমাজের কাছে সন্দেহভাজন করে তুলেছে। আবার পাকিস্তান তাদের ‘পালক পিতা’ হলেও পাকিস্তানের অর্থনীতি এমন যে তাদের নিজেদেরই বিদেশী সাহায্য ছাড়া চলেনা। সুতরাং পাকিস্তানের দিক থেকে বিশেষ আর্থিক সাহায্য পাওয়া যাবেনা ধরে নিয়ে তালিবান পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের ২৬৭০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী যাতে সাধারণ আফগানরা এবং অবশ‍্যই তালিবানরা, পাকিস্তানের মাটি ব‍্যবহার করতে পারে। তাজিকিস্তানের সঙ্গে ১৩৫৭ কিলোমিটার সীমান্ত থাকলেও তাদের সঙ্গে তালিবানের সম্পর্ক খারাপ। তাছাড়া তালিবান বিরোধী নর্দার্ন এ‍্যালায়েন্সকে তাজিকিস্তান সাহায্য করছে। এরপর ইরানের সঙ্গে ৯২১ কিলোমিটার সীমান্ত ইরান বন্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে ৮০৪ কিলোমিটার ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে সঙ্গে ১৪৪ কিলোমিটার সীমান্ত থাকলেও ঐ দুই দেশের সঙ্গে তালিবানদের সম্পর্ক মোটেই ভালো নয়। চীনের সঙ্গে ৯১ কিলোমিটার সীমান্ত থাকলেও চীন নিজের প্রয়োজনে তা ব‍্যবহার করতে পারে। তালিবানের প্রয়োজনে নয়। যদিও পাকিস্তান সর্বদা তালিবানদের প্ররোচিত করবে ভারতবিরোধী কাজের জন‍্য, তবু তালিবান ভৌগলিক কারনে পাকিস্তানের মাটি ব‍্যবহার করেই ভারতে আসতে পারবে। এই মূহুর্তে আফগানিস্তানে তালিবানের যে অবস্থা তাতে অতি বড় মূর্খও ভারত আক্রমণের ঝুঁকি নেবে না। সুতরাং ঢালাও আন্তজার্তিক সাহায‍্য না পেলে তালিবানের একমাত্র বাঁচার রাস্তা পাকিস্তানকে দোহন করা।
এই আশঙ্কা থেকে পাকিস্তান তার সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সিল করার প্রস্তাব দয়। তালিবান তৎক্ষণাৎ সে প্রস্তাব নস‍্যাৎ করে দেয়। তারা যুক্তি দেয়, এতে দু দেশের সাধারণ নাগরিকদের অসুবিধা হবে। এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের গরিষ্ট অংশই পাস্তুন। আবার তালিবানরাও পাস্তুন। ফল, তালিবান তাদের অসুবিধা দুর করার জন‍্য পাকিস্তানীদের উপরেই নির্ভর করবে। আর একানেই রয়েছে পাকিস্তানের মৃত‍্যুবাণ। কিভাবে?
আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক চাহিদার কিয়দংশ মেটানোর ক্ষমতাও পাকিস্তানের ইমরান খান সরকারের নেই। তালিবান তার শিকার খুঁজবে পাকিস্তানের মধ‍্যেই। তালিবানের পক্ষে সেটাই সবচেয়ে সহজ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ। পাকিস্তান স্বাভাবিক কারনেই তাতে বাধা দেবে। আর তখনই শুরু হবে সংঘর্ষ। এমতাবস্থায় পাকিস্তান হয়ত জৈশী মহম্মদ ও অন‍্যান‍্য জঙ্গীগোষ্ঠীর সহযোগিতায় ভারতে অনুপ্রবেশ ও নাশকতা বৃদ্ধির চেষ্টা করবে। রিবর্তিত পরিস্থিতে ভারত সরকারের উচিৎ শক্ত হাতে এসবের মোকাবিলা করা – প্রয়োজনে বারবার পাকিস্তানের অভ‍্যন্তরে ঢুকে জঙ্গী ঘাঁটিগুলি ভেঙ্গে দেওয়া ও আইএসআইয়ের logistic support networkগুলি নষ্ট করে দেওয়া। এই সময় আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে ভারতের চানক‍্যনীতি অনুযায়ী সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করা উচিৎ। চীন পাকিস্তানকে মদত দেয় তার অর্থনৈতিক করিডোর তৈরীর জন‍্য। যখন আফগানিস্তানে চীনের বন্ধু সরকার থাকবে তখন পাকিস্তানের মত একটি জঙ্গী তোষনকারী দেশের দায় চীন নেবেনা।
সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, আফগানিস্তানে তালিবান সরকার প্রতিষ্ঠার পিছনে পাকিস্তানের অবদান ও আমেরিকার সরকারের আত্মহনন যেমন দায়ী, তেমনি বেশীদিন যদি তালিবান আফগানিস্তানের মসনদে থাকে তবে তা পাকিস্তানের স্থায়ীত্বের পক্ষে বিপজ্জনক। এখানে ভারতের বিচক্ষণ ভূমিকা থাকা আবশ‍্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *