ভারত সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্প আমাদের সেনাবাহিনীকে শুধু সম্বৃদ্ধ করবে তা ই নয়, দেশের যুবশক্তির মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মানুবর্তিতা ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করবে। অল্পকথায় বলতে গেলে, এটি ১৭ থেকে ২৩ বছর (শুধু বর্তমান বছরের জন্য, অন্যথায় ২১ বছর) বয়সের যুবকদের জন্য (যুবতীরা নেভির জন্য বিবেচিত হবেন) একটি ঐচ্ছিক ট্রেণিং প্রকল্প। এই প্রকল্পে ছমাসের ট্রেণিংসহ মোট কাজ করার সময় চার বছর। শিক্ষান্তে ট্রেণিদের, যাদের “অগ্নিবীর” বলা হবে, থেকে বাছাই করে ২৫% অগ্নিবীরকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীতে স্থায়ী কমিশন্ড হিসেবে নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। বাকীরা চার বছরের শেষে সার্টিফিকেট পাবে এবং এই ট্রেণিংয়ের পরে তাদের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী সংস্থায় কর্মসংস্থানের সুবিধে হবে। এছাড়া সরকারের কিছু কিছু দপ্তরে, যেমন সিভিল ডিফেন্স, চাকরীর ক্ষেত্রে এই অগ্নিবীরদের ১০% সংরক্ষণ কোটা করা হবে। তাদের বছরে প্রায় ৫ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। ভাতার উপর নির্ভর করে মাসে ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা কেটে রেখে চার বছরের শেষে সর্বোচ্চ সুদসহ করমুক্ত ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। প্রত্যেক অগ্নিবীরের জন্য সরকার ৪৮ লক্ষ টাকার বীমার সংস্থান রাখছে। এছাড়া, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মত এদেরও ফ্রি রেশন, মেডিক্যাল ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।
পৃথিবীর বহু দেশ, যেমন সুইডেন, নরওয়ে, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইরান, ইজরায়েল, বারমুডা, সাইপ্রাস, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, সিঙ্গাপুর, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়া – এইসব দেশে এমন প্রকল্প আছে। সেগুলো কিন্তু আমাদের মত ঐচ্ছিক নয় – আবশ্যিক, অর্থাৎ conscription করা হয়। এদের প্রত্যেকের প্রকল্পগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সবার মধ্যে আমাদের দেশের প্রকল্পই ট্রেণিদের পক্ষে সবচেয়ে সুবিধাজনক। তাছাড়া, ট্রেণিংয়ের শেষে ২৫% শিক্ষার্থীর স্থায়ী ক্যাডারে যোগদানের সুযোগ এইসব দেশের প্রায় কারোরই নেই। উত্তর কোরিয়াতে ত ১৪ বছরেই conscriptuon করা হয় – চলে ৩০ বছর বয়েস অব্দি! তাদের ভাতাও অতি নগণ্য। আমাদের ভাতা রাশিয়ার থেকে বেশী! আমাদের অগ্নিপথ প্রকল্প রাশিয়া, ইজরায়েল, ইরান ও তুরস্কের থেকে অনেকটাই ভালো।
তবু কিছু রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতৃবৃন্দ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে – হিংসাত্মক বিক্ষোভের মূল লক্ষ্য সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করা! কংগ্রেস দলের পারিবারিক সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দলকে অগ্নিপথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই – ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা দুর্বল হোক। সোনিয়া গান্ধীর বাবা, স্টেফানো মাইনো ছিলেন রাশিয়ার কম্যুনিস্ট দলের অনুগামী (তখনকার ইটালীর বেশ কিছু মানুষ রাশিয়ার অনুপ্রেরণায় ইটালীয়ান কম্যুনিস্টদল গঠন করে)। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইটালীর সৈন্যদলে যোগ না দিয়ে পালিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। আবার সেই রাশিয়াতে কিন্তু আইনমাফিক সামরিক ট্রেণিং বাধ্যতামূলক! বিহারের এক কম্যুনিস্ট নেতা (যিনি আবার জেহাদী ইসলামের সমর্থক) বলেছেন, অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিল করতে হবে! আমি সরাসরি তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, ক্ষমতা থাকলে একই রকম প্রকল্প চালু রাখার জন্য রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া আর তাদের বিশেষ বন্ধু রাষ্ট্র তুরস্ক ও ইরানকে এমন প্রকল্প চালু রাখার জন্য নিন্দা করে বিবৃতি দিক – সে ক্ষমতা এসব বিদেশী রাষ্ট্রশক্তির দালালী করা কাগুজে নেতাদের নেই। ভারতের প্রতিরক্ষা দূর্বল করার চেষ্টা একটি কারনেই করা – পাকিস্তান ও চীনের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করা। একই কথা সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এখানে একটি তথ্যের অবতারনা করা বোধহয় প্রাসঙ্গিক হবে। তাহল, গত কয়েক বছরে দেশে অনলাইন কোচিং সেন্টার বা কোচিং কোম্পানীগুলির বাড়বাড়ন্ত। এদের এক একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ বিশাল! এতে বিদেশ থেকেও মোটা অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি কেন্দ্রীয়ভাবে এবং রাজ্য বিশেষে হাজার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়! এদের সম্পর্কে সাধারন মানুষের আলাদা করে কোন কৌতুহল ছিল না। কিন্তু হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু ও বিহারে অগ্নিপথ প্রকল্প বিরোধী মূখ্য চরিত্র হিসেবে এমন ই-কোচিংয়ের মালিকদের নাম উঠে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ এইসব কোম্পানীর modus operandi এবং এদের অর্থ বিনিয়োগের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা। এরা বিভিন্ন ট্রেণিং ও পেশার ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির পরীক্ষারও তালিম দেয় – অবশ্যই উচ্চহারে ফি নিয়ে। পরীক্ষার কৃতকার্যতার কোন নিশ্চয়তা নেই! আবার, বিভিন্ন গবেষণার কাজে, এমনকি পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গবেষণার কাজে যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্নাতকোত্তর প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ ভাতার চেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ অগ্নিবীরদের ভাতার পরিমাণ অনেক বেশী। এছাড়া, অগ্নিবীরদের খাওয়া থাকা সহ বিভিন্ন পরিসেবা একদম ফ্রী। মেয়াদ অন্তে ২৫% অগ্নিবীরের স্থায়ী ক্যাডারে চাকরীর সুযোগ থাকায় এদের মধ্যে একে অন্যকে ছাপিয়ে যাওয়ার স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগীতা থাকবে। যেসব অগ্নিবীর সেনাবাহিনীতে স্থায়ী চাকরী পাবে না, তারা বিভিন্ন সরকারপোষিত ও সরকারী সংস্থায় চাকরীতে ১০% সংরক্ষণ পাবে। এছাড়া তাদের ট্রেণিংয়ের কারনে তারা বেসরকারী সংস্থায় চাকরী পাবে। যারা ব্যবসা করতে চায়, সেসব অগ্নিবীরদের মূলধনের জন্য ব্যাঙ্কগুলি সহজ প্রকল্পে তাদের মূলধন যোগাবে। অন্য কোন দেশ কিন্তু এই সুবিধা দেয় না।
এক অদ্ভুত যুক্তি খাড়া করে এই প্রকল্পের বিরোধীতা করা হচ্ছে – চার বছর ট্রেণিংয়ের পর সবাইকে নাকি স্থায়ী চাকরী দিতে হবে! কম্যুনিস্টসহ যে সব বিরোধী রাজনীতিবিদ একথা বলছেন, তারা তাদের শাসনে থাকা রাজ্যে কিন্তু কোন ট্রেণিং বা কোর্স করার পর স্থায়ী চাকরী দেননি বা দেওয়ার কোন প্রকল্প করেননি! সদ্য পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভায় পাশ করা হয়েছে একটি ট্রেণিং প্রকল্প, যেখানে ট্রেণিং শেষে চাকরীর কোন প্রতিশ্রুতি নেই – শুধুমাত্র ট্রেণিংকালে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে – অবশ্যই অন্য কোন সুবিধাছাড়া! পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী চাকরীগুলো তুলে দিয়ে শুধু চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। বিনা ট্রেণিংয়ে নিযুক্ত “সিভিক” পুলিশের চুক্তিভিত্তিক বেতন মাসিক পাঁচ হাজার টাকা, আবার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানোর “সিভিক” শিক্ষকেরও মাসিক বেতন পাঁচ হাজার টাকা। এখানে “অনুপ্রেঢ়না”য় চাকরী হয় বা যায়! এখান থেকে যখন অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অনুপ্রেঢ়না-বাণী শুনতে হয়, তখন একটিই পুরানো প্রবাদ মনে পড়ে – “চোরের মায়ের বড় গলা”! এইসব যারা করে, তারা যখন “অগ্নিপথ প্রকল্প”কে আটকাতে হিংসাত্মক ও ধ্বংসকারী আন্দোলনকে উস্কানি দিয়ে বক্তব্য রাখেন, তখন দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, তারা দেশের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করছেন শুধু ভারতের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার জন্য – শত্রুরাষ্ট্রের “হাতে তামাক খাওয়া”। এরা কেউই কম্যুনিস্ট দেশগুলি ও ইসলামী দেশগুলির বাধ্যতামূলক (conscripted) সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলে না বলেই এদের ভারতের জাতীয়তাবাদ বিরোধী অভিপ্রায় বুঝতে অসুবিধা হয় না।
এই বিরোধীরা আমাদের সেনাবাহিনীর দীর্ঘ সময় ধরে চালু ব্যাবস্থার কথা কিছু বলছে না। আমাদের সেনাবাহিনীতে দু ধরনের কমিশন্ড হয়। একটি পার্মানেন্ট বা স্থায়ী – এখানে অফিসাররা তাদের র্যাঙ্ক অনুযায়ী ও চাকরীর সময় অনুসারে তাদের চাকরীর মেয়াদ পূর্ণ করেন এবং অবসরগ্রহণের পর পেনশন পান। আবার বড় সংখ্যায় মানুষ সেনাবাহিনীর সব বিভাগেই শর্ট কমিশন্ড হিসাবেই সার্ভিস দেন। এদের বাহিনীতে বিশেষ কয়েকবছরের সার্ভিস দেওয়ার কথা। তারপর এঁরা যখন সেনাবাহিনী থেকে সরে যান, এককালীন exgratia সহ এঁরাও অবসরকালীন টাকা পান। সেইসঙ্গে এরা যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারী চাকরীতে – এমনকি ক্যাডার ভিত্তিক IAS ও IPsএও এরা যোগ দিতে পারেন। এঁদের জন্য সংরক্ষিত কোটার প্রবন্ধন করা আছে। সোনিয়া গান্ধীর কাছে আমার জিজ্ঞাস্য – আপনার স্বামী, শাশুড়ি এবং দাদাশ্বশুর প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় যে সিস্টেম চালু ছিল, আপনি কি তার বিরোধীতা করছেন? এই অগ্নিপথ প্রকল্প ত শর্ট কমিশন্ড সার্ভিসেরই আধুনিক ও উন্নততর সংস্করণ। এর বিরোধীতা করা মানুষজনের মোটিভ ও তাঁদের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করলে বোঝা যায় যে, তাঁরা কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিরোধীতা করার অছিলায় ভারতের সার্বভৌমত্বের বিরোধীতা করছেন, যা দেশের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষে বিপজ্জনক।
অগ্নিবীরদের তৈরী করার মাধ্যমে ভারতের যুবশক্তির মধ্যে জাতীয়তাবোধের চারাগাছ রোপধ করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অবশ্যই একাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে – গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে ভারতবিরোধী শক্তির হাতে তামাক খাওয়া রাজনীতিবিদদের শতবাধা সত্বেও। আরেকটি ব্যপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে – জেহাদীশক্তি যেন কোনভাবে এর সুযোগ নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে না পারে।
অগ্নিপথ একটি যুগান্তকারী প্রকল্প
