অমর্ত‍্য সেন ও কিছু অপ্রিয় সত‍্য

এই লেখাটি লেখার আগে বহুবার ভেবেছি – লিখব কি না! কারন এখানে যে পরিমাণ কাদা ঘাঁটতে হবে তা আমার স্বভাব বিরুদ্ধ। তবু অনেক পাঠক, শুভানুধ‍্যায়ীর সনির্বন্ধ অনুরোধ উপেক্ষা না করতে পেরে কিছু মৌলিক প্রশ্ন রাখলাম – অবশ‍্যই কোন ইজম, রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ব‍্যক্তিগত সম্পর্কের আলো ব‍্যতিরেকে এই উপস্থাপনা। হয়ত ডান,বাম সহ সব “বুদ্ধিজীবীর ঘুমন্ত বিবেক জাগবে না, তবে, নিঃশব্দ চিড়বিড়ানি হবেই!
“বিশ্ববিখ‍্যাত” অর্থনীতিবিদ অমর্ত‍্য সেন একজন জ্ঞানী,গুণী ব‍্যক্তি। এই প্রাজ্ঞ মানুষটি এই দেশে ত বটেই, বিদেশেও সুপরিচিত। বহু মানুষ তাঁর যে কোন বক্তব‍্য বা কাজের সমর্থনে ঝাঁপিয়ে পড়েন! সেই সুযোগে এই নবতিপর মানুষটি সর্বঘটে কাঁঠালি কলার মত সর্ব বিষয়ে তাঁর “বিশেষজ্ঞ” পরামর্শ অর্থাৎ বক্তব‍্য দিয়ে থাকেন! তাঁর এই মন্তব‍্য থেকে, যা অনেক ক্ষেত্রেই আলটপকা মনে হয়, অনেকে তাঁকে দার্শনিক বলে থাকেন! তাঁর দর্শন শাস্ত্রের উপর কোন লেখা আমার জানা নেই। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র বলা হলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পরীক্ষাতেই তিনি কিন্তু প্রথম স্থান পাননি! প্রথম হতেন সুখময় চক্রবর্তী। এই সুখময়বাবু পরবর্তীতে পরিকল্পনা কমিশনের সদস‍্য হয়েছিলেন। তিনি অমর্ত‍্যর মত রাজনৈতিক মতামত পোষণ করা এবং অযথা সব জায়গায় মন্তব‍্য করতেন না। অমর্ত‍্য সেনের “নোবেল স্মারক পুরস্কার” পাওয়া যে ওয়েলফেয়ার অর্থনীতির জন‍্য, তার সঠিক প্রয়োগে পৃথিবীর কোন দেশ সাফল‍্য পেয়েছে বলে জানা যায় না!
এই পুরস্কারকে অনেকে নোবেল পুরস্কার বলে ভুল করেন! আসলে অর্থনীতির উপর এই পুরস্কার এবং তার অর্থমূল‍্য বহন করে Sveriges Riksbank of Sweden যা এখন Bank of Sweden নামে পরিচিত।আলফ্রেড নোবেলের ট্রাস্টের থেকে পাঁচটি মৌলিক বিষয়ে – পদার্থবিদ‍্যা, রসায়ন, শারীরবিদ‍্যা বা চিকিৎসাবিদ‍্যা, সাহিত‍্য এবং শান্তি – এর উপর প্রতি বছর নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এর প্রাপকরা একটি বিষয়ে সর্বাধিক তিনজন এই পুরস্কার ভাগ করে নিতে পারেন। পুরস্কার প্রাপকরা নামের শেষে NL লেখার অধিকার পান। অর্থনীতির এই পুরস্কার বিজ্ঞানের প্রয়োগের সার্থকতার উপর দেওয়া হয় না। অর্থনীতির পুরস্কার নোবেলেরস্মৃতিতে দেওয়া হয় আর তার প্রাপকরা NL লেখার অধিকারী নন। এটা ঠিক যে অমর্ত‍্য সেন কখনো নিজের নামের পাশে NL লেখেননি। অতি সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি নোবেল পাননি। তবে আমাদের দেশের অপরিণত সংবাদ-মাধ‍্যম জোশ দেখিয়ে তাঁকে NL বানিয়েছে! যাক সে কথা। অমর্ত‍্য সেন সম্পর্কে বলতে গেলে একটি কথা খুব প্রণিধানযোগ্য। তিনি অর্থনীতির যে তত্ত্ব দিয়েছেন তার প্রয়োগে কোথাও সার্থকতা পাওয়া না গেলেও তিনি তাঁর কয়েকটি ধারনার উপর বরাবর আস্থাশীল থেকেছেন! প্রথম, সর্বদা বিতর্কিত মন্তব‍্য করলেও কম‍্যুনিস্টদের সব রকম ভারত বিরোধী ধারনাকে মদত দেওয়া, যার প্রতিদানে কম‍্যুনিস্ট ও তাদের সহযোগী কংগ্রেসের থেকে সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়া তাঁর প্রাপ্তির রেকর্ড ঘাঁটলেই বোঝা যাবে। যেখানে যখন যে রাজনৈতিক দল তাঁকে হাইলাইট করেছে, সেখানে তিনি তাদের স্বপক্ষে বক্তব‍্য রেখেছেন! ভদ্রলোক সারা জীবনে যা ডিগ্রি বা উপাধি পেয়েছেন তার শতকরা নব্বইভাগ সাম্মাণিক! ভারত-বিরোধী কম‍্যুনিস্টদের একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে তাদের সাহায‍্যে ভেসে থাকা কংগ্রেসের আমলে অমর্ত‍্য তাঁর আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান “ভারতরত্ন” পেয়েছিলেন! আচ্ছা, কেউ কি বলতে পারেন, দেশের জন‍্য কোন অবদানের স্বীকৃতিতে তিনি এই সম্মান পেয়েছিলেন? এর ফলে, কেউ সম্মানিত হল না, “ভারতরত্ন” সম্মানের মান খোয়ালো। একথা না বললে সত‍্যের অপলাপ হয়, তাঁর অর্থনীতির বই এবং ওয়েলফেয়ার অর্থনীতির প্রয়োগে সাফল‍্যের কারনে অন্ততঃ তাঁকে “ভারতরত্ন” দেওয়া হয়নি! এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রয়াত ইভা কলরনির নামে যে ট্রাস্ট তৈরী করেছেন, সেখানে বক্তৃতা দেবার জন‍্য আহ্বান করেন ভারতের অরুন্ধতী রায়কে!অরুন্ধতী রায় কত বড় অর্থনীতিবিদ তা মানুষ না জানলেও তাঁর ঘোষিত হিন্দু-বিদ্বেষ এবং জিহাদী ভারত-বিরোধীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক তাঁকে অমর্ত‍্যবাবুর কাছে যোগ‍্য বক্তা করে তুলেছে! অমর্ত‍্য সেন ২০১৪ সালে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত বিষোদ্গার করার পর ২০১৫ সালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টারের “পদ” থেকে ইস্তফা দেন। এই পদে তাঁকে বসায় কংগ্রেস সরকার। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টারের ভূমিকায় অমর্ত‍্য সেনের কাজ যথেষ্ট বিতর্কিত। আসলে তিনি সর্বদা তাঁর কথাবার্তা এবং কাজকর্মে বিতর্ক তৈরী করেছেন, যা সুনিপুণভাবে তাঁর উচ্চাকাঙ্খাকে মদত দিয়েছে। ব‍্যক্তিগত জীবনকেও তিনি একই কায়দায় উন্নতির সোপান হিসেবে ব‍্যবহার করেছেন। তাঁকে সবচেয়ে কম বয়সে (২৩ বছর) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ‍্যাপক করে আনা হয় বিশেষতঃ তদানীন্তন মূখ‍্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের ইচ্ছায়। তাঁর গবেষণায় যে দারিদ্র দূরীকরনের দাওয়াই বাতলানো হয়েছে তা তাঁর অন্ধ মার্কসীয় দর্শনের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তাঁর Poverty and Famines : An Essay on Entitlement and Deprivation (১৯৮১) বইয়ে বাংলায় দুর্ভিক্ষের কারন হিসেবে বন্টনগত সমস‍্যার কথা তুলে ধরা তাঁর একমাত্র উল্লেখযোগ‍্য কাজ! তিনি তাঁর অর্থনীতির জ্ঞান ও খুরধার দার্শনিক বুদ্ধির প্রয়োগে এই উপমহাদেশে অর্থনৈতিক অসাম‍্য দূরীকরনের দিশা দেখাতে ব‍্যর্থ। একসময় তাঁকে নিয়ে এদেশে শাসক ও বিরোধী বহু রাজনীতিক উদ্বাহু নৃত‍্য করলেও অন‍্য কোন দেশে তাঁর “জ্ঞান” নেবার চাহিদা না থাকায় তিনি এই দেশে এমনভাবে তাঁর “বাণী” দেন যে তাঁর ব‍্যক্তিগত সুবিধা ও বিশেষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সুবিধা হয়! এভাবেই তিনি সংবাদ-মাধ‍্যমে ভেসে থাকার চেষ্টা করেন। ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের কারন সম্বন্ধে তাঁর মৌলিক কাজ প্রশংসা পেলেও পরবর্তীতে তিনি ভারতভাগের আগের ১৯৪৬ এর হিন্দু-নিধনের সময়ের সময়ে এক ব‍্যতিক্রমী ঘটনা – কাদের মিয়ার ছুরিকাহত হয়ে মৃত‍্যুর কারন অনুসন্ধানে সর্বৈব অসত‍্য এক propagandist তত্ত্ব আরোপ করেন! তাঁর সব কাজের পিছনে উদ্দেশ‍্য থাকে – ভারতীয় উপমহাদেশের বিশেষ গোষ্ঠী এবং বিশেষ রাজনৈতিক মতকে প্রোমোট করা। বিনিময়ে এই গোষ্ঠী তাঁকে মাথায় তুলে নাচতে থাকে। এদের অবদানেই আজ তিনি দার্শনিক হিসেবে সুপারম‍্যান! সেজন‍্য তিনি ১৯৪৬এর দি গ্রেট ক‍্যালকাটা কিলিং এবং নোয়াখালী হিন্দুগণহত‍্যার মত ঐতিহাসিক তথ‍্যকে বিকৃত করার দুঃসাহস দেখাতে পারেন! তাঁর উয়ারির বাড়ির সামনে ছুরিকাহত কাদের মিয়ার মৃত‍্যু তাঁকে এতটাই ভাবায় যে তিনি তার জন‍্য সম্পন্ন হিন্দুদের শোষণ এবং মুসলমানদের দারিদ্রকে দায়ী করেন! হিন্দুদের দ্বারা শোষনের জন‍্যই নাকি ইসলামী প্রতিবাদে সংঘর্ষ! বাঃ…..! কাল্পনিক গল্প হল অর্থনৈতিক তত্ত্ব। ঐ সময়ে ঐ পাড়ায় থাকা এক বৃদ্ধের (এখনো জীবিত) মুখে শুনেছি কাদেরের পিঠে দাঙ্গার সময় আঁচড় লেগেছিল এবং সেই ঘটনার বহু বছর পরেও সে ঐ অঞ্চলে হিন্দুসহ অনেক বাড়িতেই মুনিষ খাটার কাজ করত! এভাবেই অমর্ত‍্য লোক ঠকানো গল্প করে সমাজে বিষ ঢালার চেষ্টা চালিয়েছেন! এমন উগ্র সমর্থনের পরেও পূর্ব-পাক-ই-স্তানের (অধুনা বাংলাদেশ) উয়ারির মানিকগঞ্জে তাঁর দাদামশাই ক্ষিতিমোহন সেনের বাড়ি কেন শত্রু সম্পত্তি ঘোষনায় আত্মসাৎ করা হল তা ঐ দেশের সরকার দুরের কথা, অমর্ত‍্য সেন নিজেও কখনো বলেননি!
Keynesian অর্থনীতির বিপরীতে হেঁটে তিনি যত না বিখ‍্যাত, তার চেয়ে অনেক বেশী পরিচিত হয়েছেন জিহাদী ও উগ্র মার্কসীয় দর্শনের সমর্থক হিসেবে অন্ধ ভারত-বিদ্বেষের কারনে। তিনি হিন্দু ও হিন্দুত্ববাদের বিরোধীতা করতে গিয়ে জিহাদী, দেশ বিরোধী কম‍্যুনিস্টদের হাই-প্রোফাইল দালালের কাজ করেছেন! ২০১৯ সালে যখন অশান্ত কাশ্মীরে কার্ফু জারি করা হয়, তখন তিনি বিবৃতি দেন – “As an Indian, I am not proud of the fact that India, after having done……..we lose that reputation on the grounds of action that have been taken”। তিনি কাশ্মীরিদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বলেন, “a classical colonial excuse”! এই ভারত-বিদ্বেষী, পাক-ই-স্তানি জিহাদীপ্রেমী মানুষটি শুধু নিজের লাভের জন‍্য এসব অপকর্ম করে গেছেন এবং যাদের হয়ে কাজ করেছেন, তাদের বাহবা কুড়িয়েছেন। ওঁর ওয়েলফেয়ার অর্থনীতির প্রয়োগ ভারতসহ কোনো দেশেই সাফল‍্য পায়নি। উনি ভারতের নাগরিক নন – খুব সম্ভবতঃ OCI (বিদেশে বসবাসকারী জন্মসূত্রে ভারতীয়) উনি ভারতের ভোটার নন। যদি ওনার প্রকৃত মালিকদের অঙ্গুলীহেলন ছাড়া উনি এসব মন্তব‍্য করে থাকেন তবে ওনাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞাসার আছে – ১৯৪৬ এর কলকাতা ও নোয়াখালী দাঙ্গায় উনি হিন্দু বাঙ্গালী নিধন, হিন্দু নারী ধর্ষণের মত ঘটনা দেখেননি কেন? ওনার কোন বক্তব‍্য বা লেখায় তার উল্লেখ নেই কেন? কেন কাদের মিয়ার নামে মিথ‍্যা গল্প ফেঁদেছিলেন? উনি কাশ্মীরী পন্ডিতদের উপর জিহাদী ইসলামি অত‍্যাচারের ব‍্যাপারে নিশ্চুপ কেন, বিশেষতঃ যখন ভারত বিরোধী কাজের জন‍্য গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদীদের প ক্ষে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন? সর্বোপরি বালাকোটের স্ট্রাইকের নিন্দা করলেও উনি কেন পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনাদের উপর আক্রমণের বিষয়ে মৌণ থেকেছেন? উনি যখন এতটাই পাক-ই-স্তান প্রেমী অর্থনীতিবিদ, তখন ওনার প্রিয় পাক-ই-স্তানকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচানোর জন‍্য উনি কি করেছেন?
আসলে এই অমর্ত‍্য সেন একটি “মাকাল ফল” যিনি এমন অর্থনীতিবিদ যাঁর নীতি কোন দেশেই সাফল‍্য পায়নি! তিনি বিশেষ মত ও বিশেষ ধর্ম ব‍্যবসায়ীদের এজেন্সী নিয়ে কাজ করেছেন আর তাদের থেকে সমস্ত রকম সুবিধা নিয়েছেন। কিন্তু এখন ভারতে ওনার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাবনার “গুরুঠাকুরদের ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতার কারনে তারা ওনাকে আর আগের মত সুবিধা দিতে পারছে না!
উনি যখন বিশ্বভারতীর জমি আত্মসাৎ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন, যেখানে ১৩ দশক জমি LR রেকর্ড অনুযায়ী জবর দখল করেছেন বলে অভিযোগ উঠল, তখন তিনি অন‍্য খেলা শুরু করলেন! ভারতীয় কম‍্যুনিস্টদের মনে চরম দাগা দিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মূখ‍্যমন্ত্রী মমতা ব‍্যানার্জীর স্তুতি শুরু করলেন! বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় এবং মমতাদেবী রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সর্বদা রণংদেহী মূর্তিতে থাকায় অমর্ত‍্যবাবু মমতাদেবীকে ব‍্যবহার করলেন! আগ বাড়িয়ে, অযাচিতভাবে মমতাদেবীর মনের ঐকান্তিক বাসনাকে উস্কে দিয়ে তিনি সংবাদ-মাধ‍্যমে বললেন, মমতাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ‍্যতম ব‍্যক্তি! মনে রাখা দরকার, অমর্ত‍্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ভোটার, ভারতের নয়। আবার লক্ষ‍্য করলে বোঝা যায়, বাস্তবের সঙ্গে যতই তফাৎ থাকুক, তিনি সর্বদা তাঁর বক্তব‍্যকে আত্মবিশ্বাসের অভিনয়ের সঙ্গেপেশ করেন! এখানেও তার ব‍্যত‍্যয় হল না। এতে যেমন তিনি মমতা ব‍্যানার্জীকে টোপে গাঁথলেন, তেমন বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে অপাংক্তেয় কম‍্যুনিস্টদের মনে চরম দাগা দিলেন। এতে স্বার্থের জন‍্য যে কোন লাইন নেবার চরম সুবিধাবাদী চরিত্র প্রকট হল। মমতাদেবী বিতর্কিত জমির রাজ‍্যসরকারের ‘পর্চা’ নিয়ে নিজে গিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সংবাদ-মাধ‍্যমকে সাক্ষী রেখে অমর্ত‍্যবাবুকে পৌঁছে দিলেন! অযৌক্তিকভাবে রাজ‍্যসরকারের খরচে এই বিদেশী নাগরিকের জন‍্য Z ক‍্যাটাগরির নিরাপত্তার ব‍্যবস্থা করলেন – কেন? তাঁকে কেউ কি হুমকি দিয়েছে? জানা নেই! আশ্চর্যের কথা, এই পরচায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তোলা জমি বিতর্কের মিমাংসা হল না। LR এর রেকর্ড অনুযায়ী অমর্ত‍্যর বাবা আশুতোষ সেনকে বিশ্বভারতী ১২৫ দশক জমি ‘লিজ’ দেয়। আমাদের দেশের আইনে ‘লিজ’ দেওয়া জমির মালিকানা কখনো উপভোক্তার উপর বর্তায় না। ‘লিজ’ বংশ পরম্পরায় স্বাভাবিক নিয়মে পরিবর্তিত হয় না যদি বিশেষভাবে তা লিজ দলিলে উল্লেখিত না থাকে – মালিকের (এক্ষেত্রে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ) লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে হয়। দেখা যাচ্ছে, ২৪শে জানুয়ারী,২০২৩ এর চিঠিতে অমর্ত‍্যর পিতা আশুতোষ সেনকে ‘লিজ’ দেওয়া জমির পরিমাণ ১২৫ দশক (প্লট নং ১৯০০, সুরুল মৌজা)। এই ‘লিজ’ দেওয়া হয় ২৭শে অক্টোবর, ১৯৪৩, যা অমর্ত‍্য সেনের নামে ২০০৬ সালে মিউটেশান হয়।
সুতরাং এটা ঠিক যে, অমর্ত‍্য সেনের বাড়িসহ জমির পরিমাণ ১২৫ দশক। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবী অনুযায়ী অমর্ত‍্য ঐ দাগে যে জমি ভোগ দখল করছেন তার পরিমাণ ১৩৮ দশক! এজন‍্য বিশ্বভারতী যৌথ সার্ভের কথা বলেছে। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। তারপর অমর্ত‍্য কোন পদক্ষেপ না করে, মমতাদেবী ১৩৮ দশক জমির পর্চা নিয়ে সরাসরি হাজির হলেন অমর্ত‍্যবাবুর কাছে! অমর্ত‍্যবাবুও দেখলেন, রাজ‍্যের মূখ‍্যমন্ত্রীকে এই ঘটনায় জড়াতে পারলে তাঁর জমি-বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়া যাবে! এই আশাতেই তিনি প্রথমে মূখ‍্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে তাঁকে বিতর্কে জড়ালেন – এতে মমতাদেবী ফেঁসে গেলেন! কিভাবে?
একটু লক্ষ‍্য করলে বোঝা যায়, রাজ‍্য-সরকার জমির যে পর্চা তৈরী করেছে তা ১৩৮ দশকের। অর্থাৎ, রাজ‍্য-সরকার স্বীকার করছে যে অমর্ত‍্য ১৩৮ দশক জমি ভোগদখল করছেন! এই পরিমাণ জমি দলিলে উল্লিখিত ১২৫ দশকের থেকে ১৩ দশক বেশী। এই অতিরিক্ত জমির জন‍্য কোন দলিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ (লিজ দাতা) বা অমর্ত‍্য সেন (লিজ গ্রহীতা) কারো কাছে নেই। মমতাদেবীর দেওয়া কাগজ বকলমে বিশ্বভারতীর দাবীকেই মাণ‍্যতা দিল। আসলে লিজ-হোল্ড জমির পরিমাণ স্থির হয় লিজ-ডিড এর ভিত্তিতে। এই রেকর্ড অনুযায়ী তা ১২৫ দশকের। তা হলে অমর্ত‍্যবাবুর কাছে আরো ১৩ দশকের লিজ-ডিড থাকার কথা। সেটা দেখালেই ত সব বিতর্ক শেষ – অন‍্যথায় ওঁর দখলদারি আইনি স্বীকৃতিহীন বলতে হবে। এদিকে মমতাদেবীর দেওয়া কাগজ প্রমাণ করে দিল যে অমর্ত‍্যবাবু আদতে ১৩৮ দশক জমি দখলে রেখেছেন। এবার, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং রাজ‍্য-সরকার কি পদক্ষেপ নেয় তার উপর লিজ-হোল্ড জমির মালিকানা ও ভোগদখল নির্ভর করবে। আশা করব, দেশের আইন অনুযায়ী এ ব‍্যপারে দ্রুত ব‍্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *