এ কোন অচেনা পশ্চিমবঙ্গ

বিস্তীর্ণ দু পারের অসংখ‍্য মানুষের
হাহাকার শুনেও নিঃশব্দে নীরবে
ও গঙ্গা তুমি, গঙ্গা বইছ কেন।
নৈতিকতার শ্খলন দেখেও
মানবতার পতন দেখেও
নির্লজ্জ অলসভাবে বইছ কেন……
তবু যুক্তি বলে মা গঙ্গা এই পাহাড় প্রমাণ অনাচারের মধ‍্যে স্বাভাবিক গতিতে বয়ে চলেছে – আর তাকেই স্বাভাবিকতার ছবি হিসেবে দেখানো হচ্ছে! হিংসা, অত‍্যাচার, অনাচারের মরুদ‍্যানে আমরা একমাত্র ওয়েসিস হিসেবে জানতাম বিচার ব‍্যবস্থাকে। রাজ‍্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখিয়েছে, কমিটেড জুডিসিয়ারী কি হতে পারে। সেইসঙ্গে বিচার ব‍্যবস্থার উপর সংঘবদ্ধ বলপ্রয়োগের খন্ডহার দেখা যাচ্ছে। মনুষ‍্যত্ত্বহীণ রাজনীতির উলঙ্গ নেতৃত্বের ছবি চারদিকে দৃশ‍্যমান। আগে অনুপ্রাণিত সংবাদ-মাধ‍্যম এসব ‘ছোট ঘটনা’ প্রকাশের মত তুচ্ছ কাজ করত না! এখন এ ঘটনা নিত‍্যনৈমিত্তিক অভিজ্ঞতার অঙ্গ হওয়ায় আর তা গোপন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বগটুইয়ের গণহত‍্যার নৃশংসতা ও তৎপরবর্তী প্রশাসনিক গাফিলতি শুধু শাসকের সংবেদনশীলতার অভাবই প্রমাণ করে না, প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে বিরোধী রাজনীতির উপর মিথ‍্যা দোষ চাপিয়ে সাম্প্রদায়িক তাস খেলতেও দেখা যায়। তারপর একে একে যত ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা খবর হতে থাকে ও সেখানে অভিযুক্ত হিসেবে শাসকদলের বিভিন্ন নেতার নাম প্রকাশ‍্যে আসতে থাকে। সংবাদ-মাধ‍্যম এসব ঘটনা আগে প্রকাশ না করায় শাসকের এই সমস‍্যা মোকাবেলা করার ইচ্ছে ও যোগ‍্যতা কোনটাই ছিল না। সেজন‍্য এখনকার পরিস্থিতিতে শাসকের ধৈর্য‍্যচ‍্যুতি ঘটে। হাঁসখালির ঘটনার পর রাজ‍্যের প্রশাসনের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ব‍্যক্তি বললেন, যে মেয়েটিকে ধর্ষণ করার পরদিন মৃত‍্যু হয় ও বেয়াইনীভাবে তার দেহ সাধারন মৃত‍্যুর মত পোষ্টমর্টেম না করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, সে অন্তঃসত্বা থাকতে পারে, তার ধর্ষকের সঙ্গে ভালোবাসা থাকতে পারে ইত‍্যাদি! “বাবু যত বলে, পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ” – এই নীতির প্রয়োগে ডিস্ট্রিক্টের পুলিশ কর্তা ‘অনুপ্রাণিত’ হয়ে বললেন, ঐ মেয়েটি নাকি মদ‍্যপান করেছিল আর সে মদ‍্যপানে অভ‍্যস্ত ছিল! ভিসেরা টেষ্ট না হলে কিভাবে এ তথ‍্য পাওয়া যায়! আচ্ছা, রাজ‍্যের এইসব ‘অনুপ্রাণিত’ কর্তাদের বিদ‍্যাবুদ্ধি কতদূর – সে প্রশ্ন আজ মানুষের মনে আসাই স্বাভাবিক। আরেকটি কথা – হাইকোর্টের আদেশে CBI এই ঘটনার তদন্ত করছে। এক্ষেত্রে রাজ‍্যের কোন পুলিশ আধিকারিক এবং স্বয়ং মন্ত্রী বা মূখ‍্যমন্ত্রীর এ ধরনের প্রমাণবিহীন মন্তব‍্য তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। শুধু তাই নয়, তদন্তকে প্রভাবিত করার জন‍্য CBI তাঁদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু এখানেও আশ্চর্য হতে হয়। রাজ‍্যের এতগুলি ঘটনার তদন্ত করছে CBI – এখনো একটি ঘটনার তদন্ত শেষ করে আদালতে ফাইনাল চার্জশিট পেশ করেনি! আমাদের সকলের কাছে একটি বিষয় খুব পরিষ্কার। রাজ‍্যের পুলিশ যেমন রাজ‍্যের শাসকের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত, তেমনই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত সংস্থা CBI। রাজ‍্যের বিভিন্ন ঘটনার তদন্তে কেন্দ্রের অধীন CBI নিঃসন্দেহে তাদের তদন্তের ব‍্যপারে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ‍্য। রাজ‍্যের সাধারন মানুষ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারী করা যেমন দেখছে, তেমনই CBI এর বিভিন্ন তদন্ত এবং সেগুলির মেগাসিরিয়ালের মত গতি প্রকৃতিও লক্ষ‍্য করছে। আমি রাজ‍্য পুলিশ বা CBI এর কর্মদক্ষতার উপর সন্দেহ প্রকাশ করছি না কারন তাদের কর্মদক্ষতার ভূরিভূরি উদাহরণ আছে। তবে দুই সংস্থার রাজনীতিকরন সম্পূর্ণ হয়েছে বলাই যায়। এই CBI মহারাষ্ট্র সরকারের অতি প্রভাবশালী মন্ত্রীকে গেপ্তার করে জেলে রাখতে পারে, সেখানের প্রাক্তণ পুলিশ কমিশনারকে গ্রেপ্তার করতে পারে; আর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যখনই রাজ‍্যের শাসকদলের কোন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নোটিশ জারি করে তখনই তাঁরা একটি বিশেষ সরকারী হাসপাতালের বিশেষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে যান। আস্তে আস্তে CBI ঐ কেসে ঝিমিয়ে পড়ে। বছরের পর বছর একই স্ক্রিপ্টের কৌতুকাভিনয় দেখে দেখে জনসাধারণ ক্লান্ত! প্রত‍্যেক নেতার বক্তব‍্য একই – “আইন আইনের পথে চলবে” তারপর ঐ বিশেষ নেতার মামলা CBI দপ্তরে শীতঘুমে চলে যায়। এই রাজ‍্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের অদৃশ‍্য অঙ্গুলীহেলনের ইনভেস্টিগেশনে সাধারন মানুষ বীতশ্রদ্ধ।
মনে প্রশ্ন জাগে, যে ৫৬ ইঞ্চির গর্ব করা হয় কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন‍্য ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বিলোপ করার কৃতিত্ব দিয়ে, সেই একই ‘৫৬ ইঞ্চি’র নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব কি নেই পশ্চিমবঙ্গকে আফগানিস্তান হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর? অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বিচার-ব‍্যবস্থা এখন প্রশ্নের মুখে – উচ্চ ন‍্যায়ালয়ের বিচারকদের সততা আজ প্রশ্নের মুখে। আবার উচ্চ ন‍্যায়ালয়ের এক বিচারকের রায় শাসকদলের অপছন্দ হওয়ায় সেই বিচারকের এজলাস বন্ধ করার আন্দোলনের নামে বলপ্রয়োগ – ফ‍্যসিবাদী শক্তিকে মনে পড়ায়। শাসকের অসহিষ্ণুতার বলি হচ্ছে সাধারণ নাগরিক। ডিভিশান বেঞ্চের স্থগিতাদেশের সময়সীমা নিঃসন্দেহে ন‍্যায়ালয়ের সততা নিয়ে প্রশ্ন জাগায়। ১৩ই মে, ২০২২ অব্দি স্থগিতাদেশ। তারপর উচ্চন‍্যায়ালয়ের বছরের দীর্ঘতম ছুটি – সামার ভ‍্যাকেশান। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে বিচারকদের মামলার শিডিউল পাল্টে যাওয়া। তাহলে রায় বাতিল হওয়া আর স্থগিত হওয়ার মধ‍্যে কার্যকরী তফাৎ হল কি? বরঞ্চ রায় বাতিল হলে যুক্তিগ্রাহ‍্য রায় দিতে হত – এক্ষেত্রে তার দায়িত্ব নিতে হল না!
এখানেই ভারতীয় গণতন্ত্রের ব‍্যর্থতা। নির্দিষ্ট বয়সসীমার নাগরিকদের সবাইকে ভোটাধিকার দেওয়ার কুফল এখন বোঝা যাচ্ছে। নির্বাচনে জয়ী নির্বাচিত শাসককুল তাঁদের ক্ষমতা সম্পর্কে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন থাকলেও দায়িত্ব পালনের দায় তাঁরা নেন না। তাঁরা কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী প্রতিস্থাপিত হওয়ার যোগ‍্য। যে কোন দেশের (কম‍্যুনিস্টসহ) রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু এদেশে দলের রাজনৈতিক স্বার্থ, বিশেষতঃ সর্বোচ্চ নেতা-নেত্রীর ব‍্যাক্তিগত স্বার্থ সর্বদা জাতীয় স্বার্থ অপেক্ষা অধিক গুরুত্ব পায়। সেজন‍্য দেশের নাগরিকরাও জাতীয় স্বার্থে সংঘবদ্ধ হতে পারে না। ফলে, অসৎ রাজনৈতিক নেতারা দেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নিজেদের উদ্দেশ‍্য সাধনে সমর্থ হন। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটি সমধিক প্রযোজ‍্য।
এখন আবার একটি কৌশল লক্ষ‍্য করা যাচ্ছে – রাজ‍্যের শাসকদল তিন চার দিনের ব‍্যবধানে ন-দশটি ধর্ষণের ঘটনায় খানিকটা হলেও ব‍্যাকফুটে। কারন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত শাসকদলের স্থানীয় নেতা বা তার নিকট আত্মীয় অথবা ঘনিষ্ঠ। সেজন‍্য জনগণের সহানুভূতি আদায়ে দলের কয়েকজন এমপিকে দিয়ে একই রকম কথা বলানো হচ্ছে – দল এসব সমর্থন করে না; দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক….. ইত‍্যাদি। আবার মূখ‍্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং পুলিশ সুপার তদন্তের ক্ষেত্রে অন‍্যরকম ‘টোন’ ঠিক করে দিচ্ছেন!
এই অরাজকতা আরো বেড়েছে শাসকদলের নিজেদের মধ‍্যে মারামারিতে। বুঝতে অসুবিধা নেই – অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের ভাগাভাগিই এর মূল কারন। বছরের পর বছর সরকারী চাকরীর নামে প্রতারণা, নেতাদের প্রাসাদোপম বাড়ির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিলাসবহুল জীবনযাপন, পেশীশক্তির জোরে দুষ্কর্ম – ইত‍্যাদির চাপে রাজ‍্যের অবস্থা নরকের চেয়ে খারাপ। আবার, রাজ‍্য অর্থনৈতিক ঋণজালে জড়িয়ে গেছে। এই মূহুর্তে রাজ‍্য সরকারের ঋণের পরিমাণ সাড়ে পাঁচলক্ষ কোটি টাকার কিছু বেশী! গত দশ বছরে রাজ‍্য সবচেয়ে বেশী ঋণ নিয়েছে। এই টাকা রাজ‍্যের মানুষের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। টাকা পরিশোধের জন‍্য বাড়ি-জমির ট‍্যাক্স থেকে ধরে অন‍্যান‍্য ট‍্যাক্স হাজারগণ বা তার বেশী বাড়াতে হবে! এই রাজ‍্য উৎপাদনী রাজ‍্য নয়, বরঞ্চ এটি consuming state। ফলে, এখন রাজ‍্য যে পরিমাণ GST পাচ্ছে, আগামী জুলাই ২০২২ থেকে তা অনেক কমে যাবে। সেক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ আরো দ্রুত বাড়াতে হবে! আবার এখনকার নিয়মে রাজ‍্য GDPর সর্বাধিক ৩% পর্যন্ত ঋণ নিতে পারে। প্রথমে রাজ‍্য সরকার রাজ‍্যের GDP অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেখানোয় তা কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নেয়নি। আবার, রাজ‍্য এই ৩%এর ক‍্যাপকে বাড়িয়ে ৫% এনিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছে! স্বাভাবিক নিয়মে কেন্দ্রের এই প্রস্তাব মানার কথা নয়। যদি উচ্চতম নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে কেন্দ্র এই দাবী মেনে নেয়, তবে রাজ‍্যের নাগরিকদের উপর মাত্রাতিরিক্ত ঋণের বোঝা চাপানোর দায় রাজ‍্যের সঙ্গে কেন্দ্রকেও নিতে হবে।
একটা ব‍্যপারে খুব অবাক লাগে। এই যে চারদিকে এত অরাজকতা, দ্রব‍্যমূল‍্য বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে আইন শৃঙ্খলার বিশেষ অবনতি – সামাজিক মূল‍্যবোধের চরম অবক্ষয়, তার সাথে প্রশাসনিক মদতে সাধারণ মানুষের উপর দুর্বৃত্তের অত‍্যাচার – বলা ভালো প্রশাসনের দুর্বৃত্তায়ণ, এর থেকে মুক্তির উপায় রাজনৈতিক স্তরেই হওয়া ভালো না হলে………। ইতিহাসের দিকে একটু দৃষ্টি দেওয়া যাক। সিপাহী বিপ্লব ও তার পরবর্তী বঙ্গপ্রদেশের অরাজক অবস্থার দায় যখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নিল না, তখন বৃটিশ শাসনব্যবস্থার মধ‍্যে ভারতবর্ষকে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করে কোম্পানীর আমলের অরাজক শাসন বন্ধ করা হয় – একথা স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্রের লেখায় পাওয়া যায়।
আইনের শাসন রক্ষায় মহামাণ‍্য আদালতের ভূমিকা সব দেশে, সব সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। আদালত ও বিচারকদের উপর পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ কেউ করে না কারন নিরপেক্ষ বিচারের উপর শাসনব‍্যবস্থার মূল স্তম্ভ দাঁড়িয়ে থাকে। এই রাজ‍্যে তার উপরেও বারবার আঘাত করা হয়। এক বিচারপতিকে ” লালা বাংলা ছেড়ে পালা” শ্লোগান দিয়ে ধাওয়া করা কেউ ভোলেনি। শাসকের পছন্দ নয় এমন রায়দানকারী বিচারককে শারীরিক নিগ্রহ করার ঘটনাও এখানে ঘটে। আমেরিকায় বসবাসকারী আমার এক প্রাক্তন ছাত্র আমায় কিছুদিন আগে কথা প্রসঙ্গে বলে, “sir, politicization of every facets of administration now leads to total corruption”। ওরা পালিয়ে বেঁচেছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ বাঙ্গালী মানুষজনের কি হবে!
চীনের গৃহযুদ্ধের সময় লাল ফৌজ ও সাধারণ নাগরিকরা আদালতের পক্ষপাতদুষ্ট বিচারে বারবার নিগৃহীত হত। কারন, বিচারকেরা নিজেদের চিয়াং কাইশেক এর কুওমিনটাং ও ক্ষমতাশালী, বিত্তশালী জমিদারদের কাছের লোক মনে করতেন – এদের থেকে সর্বদা বিচারকরা উপঢৌকন (উৎকোচ বলা যাবে না) পেতেন। ফলে, দেশের মানুষদের বিচারব‍্যবস্থার উপর আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৯ সালে যখন চিয়াং কাইশেকের ন‍্যাশনালিস্ট চীনা পার্টি মূল ভূখন্ড ছেড়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নিল, আর মূল ভূখন্ডে মাও জে দং এর নেতৃত্বে পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না গঠিত হল, তার প্রথম দিকেমূল ভূখন্ডের বিভিন্ন স্থানে বাতিস্তম্ভে বিচারকদের দেহ ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি বড় মারাত্মক। কোন নাগরিক, তিনি যত বড়ই হোন না কেন, তাঁর চেয়ারের অপব‍্যবহার করার অধিকার নেই। একটি সঙ্গত প্রশ্ন কেউ কি করেছেন – হাঁসখালির যে মেয়েটি ধর্ষিতা হয়ে পরদিন মারা গেছে, সে নাবালিকা। অর্থাৎ এই মামলায় পকসো আইন লাগু হওয়ার কথা – এক্ষেত্রে বিচারকের অধিকার IPC ও সংবিধান নির্দিষ্ট। সুতরাং এইক্ষেত্রে মামলা CBIএর থেকে নিয়ে নেওয়া বা স্থগিতাদেশ দেওয়া যায় না। অবশ‍্য এই মামলায় কোন স্থগিতাদেশ কেউ দেয়নি। তবে, সরকারী চাকরী সংক্রান্ত বেআইনী নিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে তাতে কার লাভ ও কার ক্ষতি – এই বিশ্লেষণ মানুষ করছে। তার ফল বিচারব‍্যবস্থার জন‍্য সুখকর হবে কি?
এবার আসি শেষ কথায়। এমন আইন শৃঙ্খলার অবণতি, অর্থনৈতিক নৈরাজ‍্য ও প্রশাসনিক নিরপেক্ষহীণতার বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির যে তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে তোলার কথা তা কোন গূঢ় কারনে অনুপস্থিত! শুধু টেলিভিশনের পর্দায় কিছু নেতার চেঁচামেচি ও ঝগড়ায় তা সীমাবদ্ধ। আর পশ্চিমবঙ্গের তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবি’কুল শীতঘুমে থেকে তাঁদের পেশাদারী রুদালী চরিত্রের পরিচয় দিলেন! আজকের রাজনীতির কুশীলবরা পশ্চিমবঙ্গকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে কি লাভ করলেন তা ভবিষ‍্যতের দলিলে লেখা থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *