দেশভাগের যন্ত্রণার নেপথ‍্যে

সারা দেশ স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তির আনন্দে গত আগষ্ট মাস জুড়ে উৎসবে মেতেছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বক্তৃতা “Tryst with destiny” সাধারণ মানুষের মনে বিশেষ উদ্দীপনা সৃষ্টি না করলেও সম্ভ্রান্ত সমাজ এবং ইউরোপীয় সমাজের কাছে আদৃত হয়েছিল। আজ ভারতের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের তথ‍্য ঘাঁটলে জানা যায়, এটি একটি অলীক কল্পনা মাত্র। ইতিহাসে উপেক্ষিত অসংখ‍্য মানুষের রক্ত, প্রাণের বিনিময়ে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তর ব্রিটেনের বেহাল আর্থিক হাল ফেরানোর তাগিদে বৃটিশরা ভারত সহ তাদের অধিকাংশ উপনিবেশকে স্বরাজ দিতে বাধ‍্য হয়। চরকা কেটে আর অহিংসা প্রচার করে যে পৃথিবীর কোথাও স্বাধীনতা অর্জন করা যায়নি তা ইতিহাসই বলছে! বরঞ্চ বলা ভাল, এই খন্ডিত স্বাধীনতা ভারতীয় হিন্দু, বিশেষতঃ বাঙ্গালী হিন্দুদের কাছে যুগের যন্ত্রনা (pangs of era)। ভারতের ত্রিখন্ডিত স্বাধীনতার আগে ও পরে হিন্দু বাঙ্গালীর উপর যে চরম অত‍্যাচার – অবিচার নেমে আসে তা, “সমাজতান্ত্রিক” কংগ্রেসী এবং “ধর্মনিরপেক্ষ” কম‍্যুনিস্ট ঐতিহাসিকদের অবহেলা, অবজ্ঞা ও মিথ‍্যাচারে দেশের মানুষের কাছে কখনো সঠিকভাবে প্রচার করা হয়নি। বর্ধিষ্ণু বাংলা প্রদেশ ধর্মীয় জিহাদ ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদের শিকার হয়ে যাওয়ায় এবং তার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা উত্তর ভারতের অঙ্গরাজ‍্য পশ্চিমবঙ্গ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পঙ্গুত্বের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রইল।
যে খন্ডিত স্বাধীনতা পাওয়া গেল, তার হীণবল ও শক্তি হ্রাসের জন‍্য দায়ী একদিকে ইসলামী মৌলবাদ, অন‍্যদিকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অপদার্থ নেতৃত্ব ও গান্ধীজীর অহংকারী, একগুঁয়ে, পক্ষপাতদুষ্ট পরিচালনা এবং সেইসঙ্গে শাসক বৃটিশের নোংরা রাজনীতি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর পূর্ববর্তী সময়ে (১৮৫৭র সিপাহী বিপ্লবের পরবর্তী সময়কালে) দেশে হিন্দু ও ইসলামীদের মধ‍্যে সর্বব‍্যাপী ধর্মীয় বিদ্বেষ ও হিংসার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি। এই হিংসার কারন হিসেবে প্রথমতঃ, গান্ধীজীর নির্বোধের মত খিলাফত আন্দোলনকে সার্বিক সমর্থন দেওয়া; দ্বিতীয়ত, প্রাক্তণ খিলাফতী সৌকত আলীকে জেনারেল সেক্রেটারী করে ভারতের কম‍্যুনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা ও তাদের পরবর্তী কার্যপ্রণালী।
খিলাফত আন্দোলন একটি পুরোপুরি ধর্মীয় আন্দোলন – তুরষ্কে খলিফার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার ইসলামী সংগ্রাম। এই আন্দোলনকে কংগ্রেসের সমর্থনের মধ‍্যে গান্ধীজীর রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতার পরিচয় পাওয়া যায় না। হয়ত তাঁর ধারনা ছিল, এই আন্দোলনকে সমর্থন করার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ দেশের ইসলামীরাও কংগ্রেসের সত‍্যাগ্রহ ও স্বরাজের অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করবে! গান্ধীজীর এই সিদ্ধান্ত ইসলামী ধর্মবিশ্বাস, ঐতিহ‍্য ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর অজ্ঞতার প্রমাণ। গান্ধীজীর এই জিহাদী ইসলামী প্রীতির খেসারত ভারতকে বিশেষতঃ বাংলাকে চরম মূল‍্য দিতে বাধ‍্য করেছে এবং এই লোকটি তার জন‍্য কখনো দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করেনি! মুস্তাফা কামাল পাশা তুরষ্ক দখলের পর খলিফার অস্তিত্বকেই বিলুপ্ত করেন। ফলে, খিলাফত আন্দোলনের কারন না থাকলেও ঐ সময় এই পরিস্থিতিতে ইসলামী মানুষদের মধ‍্যে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের সঞ্চার হয়। আবার, ইংরেজরা এদেশের শাসনভার গ্রহণের পর তাদের কাজকর্মের সুবিধার্থে ভারতীয়দের মধ‍্যে ইংরেজী শিক্ষার প্রসার ও তৎকালীন আধুনিক পড়াশুনার সুযোগ করে দেয়। তখন হিন্দুরা অধিক সংখ‍্যায় শিক্ষিত হলেও ইসলামীরা সাধারনভাবে ইংরেজী শিক্ষায় বিমুখ ছিল। আবার নবাব আবদুর রহিমের বৃটিশদের কাছে দরবার – যেখানে তিনি উর্দুভাষী আশরাফি ইসলামীদের ইংরেজী ভাষায় শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করলেও আতরাফি ইসলামীদের (মুলতঃ বাঙ্গালী ইসলামী, যারা হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত) জন‍্য শুধু বাংলা ভাষায় শিক্ষার দাবী করেন – যার অবিসংবাদী ফল হল, বাঙ্গালী ইসলামীরা অশিক্ষায় নিমজ্জিত থেকে মূলতঃ শ্রমিক ও মুনিষ খাটার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
এমতাবস্থায়, ভারতের ইসলামীরা, বিশেষতঃ আশরাফি ইসলামীরা আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সারা ভারতে ইসলামীদের মধ‍্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজনে ইসলামীদের জন‍্য আধুনিক উচ্চশিক্ষার প্রসারের চেষ্টায় জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠা করেন – মহম্মদ হাসান দেওবান্দী, মহম্মদ আলী জউহর, হাকিম আজমল খান, মুখতার আহমেদ আনসারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ‍্য। তখন থেকেই ভারতের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষতঃ ইসলামী মহল্লায়, মাদ্রাসা তৈরী ও মাদ্রাসা-শিক্ষার ব‍্যাপ্তি শুরু হয়। মহম্মদ আলী জিন্না, লিয়াকত আলী খান, ইস্কান্দার মির্জা, হুসেইন সাহিদ সুরাবর্দী এই প্রয়াসের ফসল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এই ইসলামী নেতৃবৃন্দ পরবর্তীকালে ব‍্যাক্তিগত ক্ষমতা করায়ত্ব করার জন‍্য তাদের ধর্মকে ব‍্যবহার করে মসজিদের ইমাম, মৌলভীদের সঙ্গে জোট বেঁধে অশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত আরজালি ও আতরাফি ইসলামীদের (এদের ৯৮ শতাংশই অতি দরিদ্র) ধর্মভীরুতার সুযোগ নিয়ে এবং লোভ-ভোগের অনুভূতিকে জাগ্রত করে ভারতের হিন্দুদের বিরুদ্ধে ইসলামী ঐক‍্যের আওয়াজ তুলতে শুরু করেন। এভাবে আধুনিক ভারতে যে ইসলামী মৌলবাদ জাগ্রত হল তার দায় গান্ধীজী ও তাঁর অঙ্গুলী হেলনে চলা কংগ্রেস নেতৃত্বের উপর বর্তায়। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হল ‘মুসলিম লীগ’ নামের ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন। লক্ষ‍্য করলে দেখা যায় যে, এই দলের নেতৃত্বের উচ্চকোটিতে একমাত্র আশরাফি ইসলামীরাই ছিলেন!
মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব শুরুতে সারা ভারতে গ্রহণযোগ‍্যতা আদায়ের জন‍্য কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ আন্দোলন ও যৌথ নেতৃত্বের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু গান্ধীজী আন্দোলন পরিচালনায় তাঁর বশংবদ নেতা ছাড়া আর কাউকে নেতৃত্বের ছিঁটেফোঁটা ভাগ দুরের কথা, স্বীকৃতি পর্যন্ত দিতেন না! তাঁর দেখানো পথ ও মত, তা যতই অবাস্তব হোক, যিনি অনুসরণ করবেন, তাঁকেই শুধু গান্ধীজী কংগ্রেসে শামিল হওয়ার যোগ‍্য মনে করতেন। এমনকি তিনি বৃটিশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধসহ সহিংস আন্দোলনের বিরোধীতা করে বৃটিশ সরকারের হাতকেই শক্ত করেছেন। ত্রিপুরী কংগ্রেসের পর গণতান্ত্রিক উপায়ে কংগ্রেসের নির্বাচিত সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে গান্ধী-জওহর জুটির আচরণ ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ‍্যায়! ভগৎ সিংয়ের ফাঁসির যৌক্তিকতা আবিষ্কার করেছিলেন গান্ধীজী! এমনকি তিনি ‘অনুশীলন সমিতি’ ও ‘যুগান্তর’ এর বিপ্লবীদের কার্যকলাপের যে ভাবে নিন্দা করেছেন তা একজন বৃটিশ ভক্তর মুখে মানালেও, দেশভক্তর মুখে মানায় না। যেজন‍্য একাধিক বিদেশী ইতিহাসবিদ গান্ধীজীর অহিংস স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা over-hyped আন্দোলন বলেছেন। এর ফলে, কংগ্রেস দলে যেমন সুযোগ‍্য নেতা ও দেশনায়কের অভাব ছিল, তেমনি গান্ধীজীর অদূরদর্শী রাজনৈতিক পদক্ষেপ বারবার জিন্না ও তাঁর মুসলিম লীগকে জিহাদী মতবাদের দিকে ঠেলে দিতে সাহায‍্য করেছে। গান্ধীজী যত বেশী বেশী লীগ নেতাদের দাবী মেনে নিয়েছেন, লীগ তাদের দাবী আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে! এই পর্বে গান্ধীজী ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক ব‍্যার্থতা মুসলিম লীগের মূল শক্তি। অনেক ক্ষেত্রেই গান্ধীজী লীগ নেতাদের কংগ্রেসের নেতা, যেমন বিঠলভাই প‍্যাটেল, সুভাষচন্দ্র বসুর চেয়ে বেশী বিশ্বাস করেছেন। গান্ধীজী শিক্ষিত হিন্দু নেতাদের মধ‍্যে জওহরলাল ও বল্লবভাই প‍্যাটেলকেই পছন্দ করতেন। তিনি সুভাষচন্দ্র, বাবাসাহেব আম্বেদকর ও শ‍্যামাপ্রসাদকে খুবই অপছন্দ করতেন। তাঁর ব‍্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করত। একই ভাবে তিনি জিন্না, লিয়াকত আলী, ইস্কান্দার মির্জা ও সুরাবর্দীকেও অপছন্দ করতেন। আবার এই নেতাদের সঠিক রাজনৈতিক উপায়ে মোকাবিলা করার ক্ষমতা জওহরলালদের ছিল না। ফলে, প্রতিপদে তাঁদের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দেশবাসীকে দিতে হয়েছে।
বারবার কংগ্রেসের থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে মুসলিম লীগ নেতাদের কংগ্রেস, বিশেষতঃ গান্ধীজী সম্পর্কে ধারনা হল, তারা যত চাপের রাজনীতি করবে, ততই কংগ্রেস দল মুসলিম লীগকে জমি ছাড়বে! এই ধারনার বশবর্তী হয়ে জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লীগ শুধুমাত্র ইসলামীদের জন‍্য ভারত ভেঙ্গে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পুরো পঞ্জাব এবং পুরো বাংলার সঙ্গে অসম ও বিহারের একাংশ দাবী করল। এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন। এই সময়ে সমাজে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও হিংসার প্রকোপ ছিল না। তবু মুসলিম লীগ দাবী করল, হিন্দু ও মুসলিম দুই আলাদা জাতি এবং মুসলিমরা হিন্দুদের সাথে সহাবস্থান করতে পারবে না! শুধুমাত্র মুসলিম লীগ নেতারা ধর্মীয় জিগির তুলে হিন্দুদের সাথে সহাবস্থানে তাঁদের অসহিষ্ণুতার কারনে ভারতভাগ দাবী করে। একাজে তারা দেশের মৌলানা, ইমাম ও মৌলভীদের দেশের সাধারন ইসলামীদের মগজ ধোলাইয়ের কাজে নামিয়ে দেয়।
যথারীতি গান্ধীজী ও কংগ্রেস এর মৌখিক বিরোধীতা করলেও একে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করেনি। ফলে, কংগ্রেসের অযোগ‍্যতা এবং অকর্মণ‍্যতার কারনে মুসলিম লীগ স্বাধীনতার পূর্বে ধর্মীয় উন্মাদনা ও ইসলামী ঐক‍্যের মেকী বাতাবরন তৈরীতে সমর্থ হয়। অবশ‍্য এ কাজে ভারতীয় কম‍্যুনিস্টদের অবদান অস্বীকার করা যায় না। তারা গোড়া থেকেই ইসলামী ও হিন্দু-বিরোধী জিহাদী শক্তিকে সমর্থন করে এসেছে – অবশ‍্যই হাস‍্যকর অজুহাত তৈরী করে। তাদের বিশিষ্ট তাত্ত্বিক নেতা ও প্রাক্তণ জেনারেল সেক্রেটারী ডঃ গঙ্গাধর অধিকারী বারবার তাঁর লেখনীতে ভারতের সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করেছেন; ভারতকে বিভিন্ন স্বশাসিত প্রদেশের সমষ্টি বলেছেন! শুধু তাই নয়, তিনি ইসলামী সমাজকে শোষিত, নিপীড়িত সমাজ বলে পাক-ই-স্তান গঠনকে সমর্থন জানিয়ে ছিলেন! এই কারনে (!) পুরো বাংলা সহ অসম, বিহারের কিয়দংশ নিয়ে পূর্ব পাক-ই-স্তান গঠনের প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়েছিলেন! ‘peoples war’ এবং ‘peoples age’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর তত্ত্ব ভারতীয় কম‍্যুনিস্ট পার্টি গ্রহণ করে। সম্পূর্ণ বাংলাকে পাকিস্তানে দেওয়ার পক্ষে বঙ্গীয় কম‍্যুনিস্টদের মধ‍্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন মুজফফর আহমেদ ও জ‍্যোতি বসু। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এ‍্যাটলী ১৯৪৬ সালে ভারতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নির্ধারণের জন‍্য যে ক‍্যাবিনেট মিশন পাঠালেন তারা ত্রিস্তরীয় শাসন ব‍্যবস্থা কায়েম করার কথা জানিয়েছিলেন। সে সময় সেই ব‍্যবস্থা মেনে নিলে ভারতভাগ আটকানো যেত। কিন্তু জওহরলাল তাঁর রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে লর্ড ওয়াভেলকে জানালেন যে এই ব‍্যবস্থা অমোঘ নয় এবং ভবিষ‍্যতে কংগ্রেস এর পরিবর্তন ও পরিমার্জন করতে পারবে! আর এতেই হিন্দু সংখ‍্যাধিক‍্যের জোরে মুসলিম লীগের ক্ষমতা হ্রাসের সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে মুসলিম লীগ এই প্রস্তাব প্রত‍্যাখ‍্যান করে। তারা সরাসরি “লড়কে লেঙ্গে পাক-ই-স্তান” এর ডাক দেয় এবং জিন্না জঙ্গী আন্দোলনের স্তরে পাক-ই-স্তান প্রাপ্তির জন‍্য “devide India else destroy India” শ্লোগান তুললেন!
এদিকে বাংলার শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ ইসলামী হলেও এই প্রদেশের পশ্চিমদিকের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের প্রাধান‍্য থাকায় বাংলা ভাগের প্রস্তাব দিলেন হিন্দু মহাসভার নেতা এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতের সম্মিলিত বিরোধীদের নেতা ডঃ শ‍্যামাপ্রসাদ মূখার্জী। রমেশ মজুমদার সহ বাংলার বহু বিদ্বজ্জন এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিলেন। আবার কৃষকপ্রজা পার্টির সৈয়দ হাবিবউল রহমান হিন্দু-মুসলমানের ঐক‍্যবদ্ধ ভারতের জন‍্য আওয়াজ তুললেও দুই যুযুধান দল – কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ভারতভাগের প্রস্তাব মেনে নিতেই জিন্না মুসলিম লীগের পতাকায় তাঁর পাক-ই-স্তান (আল্লার পবিত্র ভূমি) এর জন‍্য যত বেশী সম্ভব জায়গার দাবী তুললেন। এদিকে তখন মুসলিম লীগ সমগ্র বাংলাকে পূর্ব পাক-ই-স্তানে অন্তর্ভূক্তির দাবীতে অনড়। তখন কলকাতাকে পাক-ই-স্তানে অন্তর্ভূক্তির জন‍্য বাংলার তৎকালীন মূখ‍্যমন্ত্রী সুরাবর্দী যে ঘৃণ‍্য নীল নক্সা তৈরী করেছিলেন তা তার বিগত মাসগুলির কর্মপদ্ধতি বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যেত! মূখ‍্যমন্ত্রী হয়ে সুরাবর্দী বাংলার পুলিশ বাহিনীতে ব‍্যাপকহারে বিহার ও ইউনাইটেড প্রদেশ থেকে উর্দুভাষী ইসলামীদের নিয়োগ করতে লাগলেন। ফলে, তাঁর পক্ষে ডাইরেক্ট অ‍্যাকশানের সময় পুলিশের সহায়তা লাভ সম্ভব হয়।
বাংলাভাগ বন্ধ করার জন‍্য হিন্দু হত‍্যালীলার মাধ‍্যমে বাংলায় হিন্দু নিধনের প্ল‍্যান কার্যকরী করার প্রশ্নে হুসেইন সাহিদ সুরাবর্দী জিন্নাকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। তাঁর গোপন উদ্দেশ‍্য ছিল ইসলামীদের কাছে জিন্নার চেয়ে নিজেকে বড় নেতা হিসেবে মেলে ধরা! সফল হলে তিনি পাক-ই-স্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে থাকতেন!
এ উদ্দেশ‍্যেই তিনি জিন্নাকে ইসলামের পবিত্র দিনে (হজরত মহম্মদ এই দিনে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ‍্যে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে যে ধর্মযুদ্ধ শুরু করেন, তার সমাপ্তিতে জয়ের মধ‍্যে দিয়ে তিনি মক্কার উপর অধিকার কায়েম করেন) অর্থাৎ ১৬ই আগষ্ট, ১৯৪৬এ ডাইরেক্ট অ‍্যাকশান ডে পালনে প্ররোচিত করেন। ঐ দিন জুম্মার নামাজের পর দুপুর থেকে যে হিন্দু-হত‍্যালীলা শুরু হয়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে ঘৃণিততম ধর্মীয় হত‍্যার ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *