ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু বাঙ্গালীদের প্রধান আশ্রয়স্থল ছিল আমাদের পশ্চিমবঙ্গ। ১৯৭১ সালের পর সেই পূর্ব পাকিস্তান যখন স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ হল, তখনো হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে রিফিউজি হিসেবে আগমন বন্ধ হল না। “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” – আল্লাহ্ বিনা কোন সত্য মাবুদ বা উপাস্য নাই, মুহম্মদ ছাড়া কোন নবী নাই। এটি ইসলামের মূল কথা। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে কোন ধর্মীয় নমনীয়তা বা সহনশীলতা নেই। এই কারনে কোন ইসলামী ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে পারেন না। অথচ, ইসলামে আরো অনেক কিছু আছে – কোরানেও এমন আয়াত আছে, যেখানে অমুসলিমদের রক্ষা করার বার্তা মুসলিমদের দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ এটি প্রাথমিক হলেও শেষ কথা নয়। গন্ডগোলের জায়গাটা ভিন্ন। আরব মরুভূমিতে যাযাবর মরুদস্যুদের মধ্যে প্রথম এই ধর্মের সূচনা হয়। সেই মানুষদের চিন্তাধারা ও জীবনশৈলীর প্রতিফলন তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে এবং আচার আচরণে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। আরব মরুভূমির কৃষ্টি, সভ্যতা ও জীবনযাত্রার বৈশিষ্ট্য সারা পৃথিবীর মুসলিমদের মত বাংলাদেশের মুসলিমদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে দেখা যায়। আধুনিক বিশ্বের আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে ইসলামী জনগণকে (বিশেষতঃ অশিক্ষা ও দারিদ্রের মধ্যে থাকা মানুষদের) দূরে রাখার প্রচেষ্টা শুরু হয় মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে – যার হোতা মৌলবী ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা। ১৯৪৬ এর “দি গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং” ও “নোয়াখালী গণহত্যা” থেকে কাশ্মীরের হিন্দু নিধন – সবই শুরু হয় এই ধর্মীয় ও শিক্ষার স্থান থেকেই! আসলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও হিংসার উৎস হচ্ছে ধর্মগ্রন্থের খন্ডিতভাবে কিছু আয়াতের উদ্ধৃতি ও তার অপব্যাখ্যা। যেমন, পৃথিবীতে ভালো কাজের জন্য আল্লাহ্ মুসলমান পুরুষকে জন্নতে আরামে রাখবেন বলা হলেও সেখানে বাহাত্তর হুরী (সুন্দরী বেশ্যা) উপভোগ করার কথা পরবর্তীতে এই সব মৌলভীদের অপব্যাখ্যা। আবার মহিলারা ভালো কাজের জন্য জন্নতে গিয়ে কি পাবেন সে সম্বন্ধে এরা নিশ্চুপ। এভাবে পুরুষদের সকল ভোগ- অধিকার – মহিলাদের নয়- এমন পুরুষতান্ত্রিক মরুদস্যুদের মধ্যযুগীয় ব্যবস্থাকে আধুনিক যুগে মানানোর জন্য ধর্মের আশ্রয় নেওয়া ভিন্ন আর কিছু নয়। ইসলাম একটি প্রভূত্ত্ববাদী, বিস্তারক চিন্তার ধর্ম হওয়ায় এই ধর্মকে অনৈতিকভাবে তার জেহাদী আগ্রাসনে ব্যবহার করে রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক ফয়দা তোলার চেষ্টা সবসময় দেখা যাচ্ছে। মধ্যযুগের আরব বেদুইনদের (যারা আদি ইসলামী) ধর্ম হওয়ায় এবং তাদের সমাজ পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় এখনো, বিশেষতঃ, জেহাদী ইসলামীরা তাদের সমাজের নারীদের প্রাপ্য সম্মান দেয় না। অথচ, সেই মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত দেশগুলিতে এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় শিক্ষিত, পরিশীলিত, ভদ্র ইসলামী সমাজে আধুনিকতার স্পর্শে নারী পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত। জেহাদীদের কাছে নারী, বিশেষ করে বিধর্মী নারী (মালাউন) শুধু ‘ভোগের সামগ্রী’। মধ্যযুগীয় আরবী বেদুইন সভ্যতার ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক এই জেহাদী ধর্মীয় মৌলবাদ শুধু ভারতেই নয়, এরা যখন যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় থাকে, সেখানেই তাদের ধর্মীয় মৌলবাদ কায়েমের চেষ্টা করে। বিজিতের ধনসম্পত্তি লুঠ, হত্যা ও নারীর ইজ্জত হরণ এদের ঐতিহাসিক পরম্পরাকে বহন করে।
ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সভ্যতা আবার এখানকার জাতিসত্ত্বা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য বহন করে। সে অর্থে এই উপমহাদেশের হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই একই জাতিসত্ত্বা ও সংস্কৃতি থাকার কথা। কিন্তু, নিজেদের ব্যক্তিগত উন্নতি ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা এই মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে পরধর্ম ঘৃণার বাণী ছড়িয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষের বীজ বপন করে চলেছেন। তা স্বাভাবিক নিয়মেই ভারত বিদ্বেষে রূপান্তরিত হয়েছে। তিন তিনবার ভারতের সঙ্গে লড়াইয়ে decisively হারের পর পাকিস্তান ও জেহাদী শক্তি তাদের আক্রমণের ধরন বদলায়। তারা ভারতের অভ্যন্তরে জেহাদী তৈরী ও অন্য ধর্মের মানুষ অপেক্ষা মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে নজর দেয়। এক্ষেত্রে হিন্দুদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও চিন্তাধারা তাদের কাজের সহায়ক হয়। সঙ্গে তারা তাদের ছদ্মবেশী বন্ধু হিসেবে “ধর্মনিরপেক্ষ” ভারতীয়দের সমর্থন পায়। আগে একাধিক লেখায় দেখিয়েছি, ইসলাম ও খ্রীষ্ট ধর্মে এই “ধর্মনিরপেক্ষ” ভালো কথা বা ভালো গুণ নয়। ধর্ম – তা সে যে ধর্মই হোক না কেন, জীবকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উন্নীত করে। আবার, ভারতের কিছু দেশবিরোধী ছদ্মবেশী রাজনৈতিক নেতার ধর্মনিরপেক্ষ আচরণে তাদের “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতা”র সপক্ষে যুক্তি সাজানোকে বৃহত্তর হিন্দু সমাজ গ্রহণ না করলেও তারা তাদের কুযুক্তি দেশের কিছু জায়গায় অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে! অজস্র ইসলামী সেকুলার কাজের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এক তথাকথিত হিন্দু অভিনেত্রী কাম রাজনীতিক তাঁর ভালো লাগার কথা প্রকাশ করলেন – দূর্গাপুজোয় তিনি গরুর মাংস খাওয়া পছন্দ করেন! এই অর্ধশিক্ষিত মহোদয়াকে যদি ঈদের দিনে শুয়োরের মাংস খাওয়ার নিমন্ত্রণ করা হয়, তিনি আসবেন না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিন্ত। আবার এক সর্বভারতীয় কম্যুনিষ্ট দলের (যারা সবাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’) বঙ্গের সর্বোচ্চ নেতা তাঁর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে নিজের ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রের উপরে ‘ইনশাল্লা’ লেখেন। তার ধর্ম তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ না ইসলাম? এক দেশের এক আইন – সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত ও আদৃত। আমাদের উপমহাদেশের অন্য দেশগুলিতেও তাই ঠিক। কিন্তু ভারতে একই দেওয়ানী আইনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড! ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পর এই ল বোর্ডের অস্তিত্ব থাকাটাই ভারতের স্থায়ীত্ব বিরোধী। আবার দেখা যাচ্ছে, মসজিদ থেকে দিনে পাঁচবার মাইকে আজান দেওয়া হচ্ছে! মন্দিরের সকাল সন্ধ্যা মঙ্গলারতি ও ঘন্টাধ্বনি মুসলিমরা তাদের এলাকায় বন্ধ করে দিচ্ছে! এভাবে, দেশের মধ্যে ইসলামাইজেশানের দিকে সমগ্র ভারতকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক নেতারা রাস্তা আটকে পূজো করার বিরুদ্ধে। তারা কেউ কখনো রাস্তা আটকে নামাজ পড়ার বিরোধীতা করেননি! দূর্গাপুজো ও কালীপুজোর সম য় মাইক ও বাজীর আওয়াজে এই নেতাদের অসুবিধা ও সাধারণ মানুষের ক্ষতির খতিয়ান “বাজারী” সংবাদ-মাধ্যমগুলি প্রতি বছর প্রচার করে; আজানের মাইকের শব্দ ও শবেবরাতের বাজীর শব্দ যখন হয় তখন তাদের নিঃশব্দতা অন্য ধারনা জাগায় না কি? এরা রামনবমীর অস্ত্রসহ মিছিলের বিপক্ষে হলেও মহরমের অস্ত্রসহ মিছিলের পক্ষে! ভাবের ঘরে এরা আর কতদিন এভাবে চুরি করতে থাকবে!
বেশ কিছুদিন আগে এক দৈনিক সংবাদপত্রে আমি লিখি, ভুল পদ্ধতিতে TFR (Total Fertility Rate) গণনার কারনে ভারতে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে শিশু জন্মহার সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। কারন, এক্ষেত্রে মায়েদের জন্ম দেওয়ার হার গণনা করা হয়। কিন্তু একজন ইসলামী পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকতে পারে বলে ইসলামী শিশুর জন্মহার কম দেখানোর সুযোগ আছে। জেহাদী ইসলামের প্রভাবে ভারতে লাভ জিহাদ ও মুসলমানদের মধ্যে যৌন অপরাধ অনেক বৃদ্ধি পেলেও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ তথাকথিত হিন্দুরা নিশ্চুপ থেকে যান। এসবের থেকে একটা ছবি পরিষ্কারভাবে উঠে আসে – জেহাদী ইসলামের বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত ‘সোনার চাবি’র একাংশ এই নমাজপন্থী সমাজবাদীদের অর্থাৎ “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষ” হিন্দুদের কাছে আসে।
এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের কথা বলতে গেলে তাকে শোচনীয়র থেকেও খারাপ বলতে হয়। একে ত এই রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ মানুষ ইসলামী, উপরন্তু এখানে হিন্দু নামধারী ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক। ফলে, এখানে তারা ভোট গণতন্ত্রে জেহাদী মতবাদ ও জেহাদী সভ্যতাকে রাজ্যের জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম। এ রাজ্যের সংবাদ-মাধ্যম পর্যন্ত ‘সোনার চাবি’র গুণে বশীভূত। এ রাজ্যে ‘হালাল মাংসের সমর্থক ধর্মনিরপেক্ষদের একজনকেও ঝটকা মাংসের সমর্থনে এগিয়ে আসতে দেখিনি। আসলে এরা মনে প্রাণে “ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে” গ্যাংয়ের সমর্থক। এদের মত অর্ধশিক্ষিতদের একটা কথা মনে করিয়ে দিই – পৃথ্বীরাজকে মহম্মদ ঘোরী জয়চাঁদের বিশ্বাসঘাতকতায় হারালেও প্রথম দিনের দরবারে ঘোরী প্রথম যাকে কোতল করে সে হল এই জয়চাঁদ! মহম্মদ ঘোরীদের আরব সভ্যতা এভাবেই বিচার করে।
বাঙ্গালী ‘ভদ্রলোক’ হিন্দু ঐতিহ্যের অপব্যখ্যা করার পরম্পরা পেয়েছেন কম্যুনিষ্ট লিগ্যাসীর উত্তরাধিকার হিসেবে। যেমন “বসুধৈব কুটুম্বকম” এর কম্যুনিষ্ট ব্যখ্যা হল, “জেহাদী, রোহিঙ্গাকো আপনাও, ঔর উসকে বাদ হিন্দুত্ব সে আজাদী লাও”! যেমন কিছু অর্ধশিক্ষিত বুদ্ধিজীবী “অমৃতস্য পুত্রাঃ”র সমালোচনা করে বলেছিলেন – এখানে নারীর সম্মান নেই! কারন, পুত্রের কথা বলা হলেও পুত্রীর কথা নাকি বলা নেই! এই বাঙ্গালী তথাকথিত বুদ্ধিজীবির দল এখন আমজনতার কাছে বিরক্তি উৎপাদক আর কমিক চরিত্র হয়ে উঠেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসা কয়েকশ গুণ বৃদ্ধি পেলেও গুরুকুল সংখ্যা কমে এক দশমাংশ হয়ে গেছে। এই মাদ্রাসাগুলি শুধু এদেশেই নয়, বাংলাদেশও জেহাদী তৈরীর কারখানা। মাদ্রাসা-শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙ্গালীদের দাপটে বাঙ্গালী সংস্কৃতির অঙ্গ – বাউল গান, কবি গান – এসব অমূল্য সম্পদ বাংলাদেশে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। তার বদলে আরবী সংস্কৃতির জলসা-মেহফিল বেড়েছে।
এপার ও ওপার, দুই বাংলাতেই আরবী সংস্কৃতির চাপে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমান। তাঁরা না পারছেন বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে ভুলতে; না পারছেন আরবী সংস্কৃতিকে আপন করে নিতে। এভাবে বেশীদিন চললে পশ্চিমবঙ্গে বাঙ্গালী হিন্দুরা নিজেদের স্বভূমে পরবাসী মনে করবেন। তাই দরকার, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় জেহাদের বিরুদ্ধে সবল প্রতিরোধ। একথাও সত্যি যে, বাঙ্গালীর সংস্কৃতি না বাঁচলে শিক্ষিত বাঙ্গালী মুসলমানদের আরবী সংস্কৃতির ক্রীতদাস হয়ে কাটাতে হবে। আর হিন্দু বাঙ্গালী নতুন করে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করার জন্য তৈরী হবে। এই লড়াইয়ের একদিকে বাঙ্গালী মননের শিক্ষিত মুসলমান এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী বাঙ্গালী আর অন্যদিকে জেহাদী ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদের শত্রু,”ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে” গ্যাংয়ের সমর্থক হিন্দু।
পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব আর কতদিন
