পার্থ-কান্ডে রাজ্য রাজনীতি সরগরম। সংবাদ-মাধ্যম তাদের তৈল-মর্দন-নীতি বজায় রেখে টিআরপি বাড়াতে যার পর নাই সচেষ্ট। এমন হাইপ তোলা হচ্ছে যেন, সর্বকালের সেরা চোর ও লাম্পট্যে বিশ্ব-চাম্পিয়ন প্রাক্তণ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়! মানুষ সর্বদা কলঙ্কের রসালো গল্প নিয়ে মশগুল থাকতে ভালোবাসে – এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। মদের সঙ্গে যত মুখরোচক ‘চাট’ থাকে, আসর ততই জমে ওঠে। এখানে ‘চাট’ খুব মুখরোচক। তাই, ভালো মানুষের ছেলেপুলেরা যখন মদের আসরে মাতলামি শুরু করল, তখন জনসাধারণরূপী ‘চাট’খোরেরা ঐ চাটের স্বাদেই বিভোর! লক্ষ্যণীয় হল, দলমত নির্বিশেষে রাজনীতিকরা পার্থর নিন্দায় মুখর। এভাবে “মিডিয়া ট্রায়াল”এর বিরুদ্ধে একমাত্র তৃণমূলের দলনেত্রী তথা মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সরব হয়েছেন। এমনকি, অত্যন্ত ক্ষমতাশালী “যুবরাজ” পর্যন্ত পার্থর নিন্দায় খুবই সক্রিয়। অবশ্য, যে চিত্রনাট্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হচ্ছে তার ফলে জনসাধারণের কি লাভ এবং তার আসল উদ্দেশ্য কি তা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে।
গত ৩৪+১১ বছরের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি রাজ্যের জনসাধারণকে দিয়েছে এমন রাজনীতি যা মানুষে মানুষে কুৎসা, হিংসা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে অসহিষ্ণুতার জন্ম দিয়েছে। সেইসঙ্গে এই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতাদের চুরি, জোচ্চুরি, ধাপ্পাবাজি, লাম্পট্য যেমন বেড়েছে, নেতৃত্বের সর্বচ্চোস্তরের অভিনয় দক্ষতা সময়ের সঙ্গেসঙ্গে আরো নিপুনতা পেয়েছে! এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় – সমাজের যত ক্রিমিনাল, তারা সব সমাজসেবী হয়ে গেছে! সে কারনে রাজনীতির অন্ধকার, পঙ্কিল সরণীতে চোরাগোপ্তা মার ও “কিচেন কন্সপিরেসি” বেড়েছে – যা মুঘল শাসনের শেষদিকে দিল্লী দরবারে দেখা যেত, তা এখানেও দেখা যাচ্ছে।
কোন এক মণীষী বলেছিলেন, “যা সাদা চোখে দেখছ তা ঘটেনি, যা তুমি চোখে দেখনি সেটাই ঘটেছে” – এই কথার সারবত্তা এখন অনুভব করা যাচ্ছে। বিশেষতঃ পার্থ-কান্ড বিশ্লেষণ ও তার পরবর্তী রাজনীতির ময়দানের প্রতিক্রিয়ায় আমার তাই মনে হয়েছে। মাথায় যদি ঘিলু বলে কোন পদার্থ থাকে, তাহলে কিভাবে মানুষ বিশ্বাস করে যে, পার্থর বিশেষ ‘ঘণিষ্ট’ অর্পিতা এত টাকা, অলঙ্কার, বিভিন্ন ভূয়ো ও কাগুজে কোম্পানীর মালিকানা এফং জমি-বাড়ির দলিল – সব ফটাফট স্পুটনিকের গতির দ্রুততায় তদন্তকারী সংস্থা ইডি বের করে ফেলল! ইডির কর্মদক্ষতার ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলে। দ্বিতীয় একটি ব্যপার খুবই রহস্যজনক – ইডি যে কটি জায়গায় হিট করেছে, প্রতিটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এবং পার্থ-অর্পিতা ছাড়া এখনো অব্দি তাদের হিট লিষ্টে অন্য কেউ আসেনি! এমন নির্দিষ্ট ও সুচারু অপারেশান বোধহয় দেশের প্রথিতযশা সার্জেনরাও করতে পারতেন না! অথচ অর্পিতার তিনটি মূল্যবান গাড়ি নিখোঁজ! পার্থ-অর্পিতার একটি বাড়ি থেকে নাকি বস্তাবন্দি মালপত্র (!) চুরি হয়ে গেছে – এসবের কোন কিনারা হয়নি! আশ্চর্য লাগে, ইডি পার্থ ঘণিষ্ট বিভিন্নজনের স্থাবর-অস্থাবর কোন সম্পত্তি এখনো বাজেয়াপ্ত করল না, শুধু যে দুটি ফ্ল্যাটে গেল সেখান থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার উপর সম্পত্তি পেল! এসব দেখে মানুষের মনে হতেই পারে, পার্থর কাছের এবং দলের কোন শক্তিশালী মহল থেকে ইডিকে যেটুকু ‘খবর’ দেওয়া হয়েছে, ইডি সেটুকুই এগিয়েছে! একটা কথা ভুললে চলবেনা যে, এই অনুসন্ধানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপির কোন সম্বন্ধ নেই – এটি হাইকোর্ট নির্দেশিত তদন্ত এবং ইডিকে হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হচ্ছে। আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার যার একটিই মুখ, মমতা বন্দোপাধ্যায়, তারা প্রতিটি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপীল করেছে, এই কেসে কিন্তু সেভাবে তারা আপীলে যায়নি। যদিও, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেস ছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট যেসব মামলায় হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে তার মধ্যে অন্যতম হল, শিক্ষা দপ্তরের নিয়োগ দুর্ণীতি। যত সময় এগিয়েছে, তত দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়েছে, গত দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গের সরকারে যত নিয়োগ হয়েছে তার সমস্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে যেখানেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অনুসন্ধান করেছে, সেখানেই দুর্ণীতির গন্ধ পেয়েছে। ফলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকারের নৈতিকতার ধ্বজা প্রায় ধুলায় মিশে গেছে। অথচ, ইডির modus operandi দেখলে বোঝা যায় যে, ইডি নির্দিষ্ট খবরের উপর ভিত্তি করে, নির্দিষ্ট মানুষদের টার্গেট করে তাদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় তৃণমূল দলের মধ্যে নেতৃত্বের অবস্থান বৈপরীত্য লক্ষ্যণীয়। একদিকে কেন্দ্র তথা বিজেপির বিরুদ্ধে “ষড়যন্ত্র” তত্ত্বের কথা আউরে বিষোদগার ও পার্থর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করে মমতা ঘণিষ্ট নেতা নেত্রীদের বক্তব্য প্রথমদিকে ফলাও করে সংবাদ-মাধ্যমে বেরোল; আবার সময়ের সাথে সাথে আরো কোনঠাসা হয়ে পড়া পার্থকে “যুবরাজ” ঘণিষ্ট নেতারা মন্ত্রীত্ব ও দল থেকে সরাসরি বহিষ্কারের দাবী তোলে। শেষ পর্যন্ত যুবরাজ ঘণিষ্ট নেতাদের চাপে বরিষ্ট নেতা ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মত নেতা, যিনি প্রথমে পার্থর দপ্তরের দুর্ণীতিকে মন্ত্রীসভার “যৌথ দায়িত্ব” বলেছিলেন, তিনিও পরবর্তী সময়ে পার্থর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন! বোঝা যাচ্ছে যে, ফিরহাদ হাকিম যুবরাজের ঘণিষ্ট বৃত্তের সঙ্গে একাত্মতার বার্তা দিয়ে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করলেন! তৃণমূল নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন বক্তব্য অনুধাবন করলে তাদের দলের আভ্যন্তরীন লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ফলে, শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত হাস্যকর প্রয়াস চালাচ্ছেন। ফিরহাদ হাকিম বললেন, ‘ইচ্ছে’ বাড়িটি ১১ নম্বর প্লটের উপর বসতবাড়ি হিসেবে দেখানো হলেও আদতে এটি একই মালিকের ১০, ১১ ও ১২ নম্বর এই তিনটি প্লটের উপর বানানো হয়েছে এবং এটি কমার্শিয়াল ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত আট বছর ধরে এই বাড়ি ব্যবহার করা হলেও পার্থ-কান্ডের পর ফিরহাদবাবুর ঘুম ভেঙ্গেছে এবং তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বলেছেন, বকেয়া কর জরিমানা সহ আদায় করা হবে; প্রয়োজনে নাকি বেআইনি নির্মাণ ভেঙ্গে দেওয়া হবে! এতদিন বাদে কুম্ভকর্ণের মত জেগে ওঠার পিছনে কি উদ্দেশ্য? হটাৎ ফিরহাদের এমন পার্থ-অর্পিতা বিরোধী অবস্থান নেওয়ার কারন কি যুবরাজকে আনুগত্যের বার্তা দেওয়া – ভবিষ্যত এর উত্তর দেবে।
আবার মমতা বন্দোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় একসুরে বলেছেন, ১৮ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা পশ্চিমবঙ্গে নিয়োগ করা হবে – এটি মমতা সরকারের সাফল্য! অনুপ্রাণিত সংবাদ-মাধ্যম এদের জয়ধ্বনির কোরাস শুরু করল! কিন্তু আসল ঘটনা হল, এই নিয়োগ হাইকোর্টের আদেশে করতে হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে পরীক্ষা বা বিনা পরীক্ষা – যেখানেই শিক্ষক নিয়োগের ব্যপারে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, সেখানেই আর্থিক দুর্ণীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে! এসবই এখন হাইকোর্ট নিয়োজিত তদন্তের ফলে প্রকাশ পাচ্ছে; আর মমতা সরকার সব আদেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চ ও তারপর সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে! দুর্ণীতি ঢাকার এমন মরিয়া চেষ্টা সরকারের তরফে ভারতে আগে কখনো হয়েছে বলে জানা যায়নি। এমনকি, মমতাদেবী সর্বসমক্ষে বললেন, “একশটা চাকরী দিলে একটা কি নিজের লোককে দেবে না”! ভারতের অন্য কোন জননেতা প্রশাসনিক পদে থেকে এমন কথা বলেছেন কিনা তা জানা নেই। সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক এই কথা সম্পর্কে বলতে হয়, উনি যখন মূখ্যমন্ত্রীত্বে শপথ নিয়েছেন, তখন সংবিধান মোতাবেক “without fear and without favour” কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন! ওনার মতে হয়ত অল্প-চুরি, চুরি নয়! সুতরাং এখন যদি প্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্ণীতির গণতন্ত্রীকরন হয়, তাহলে তার দায় কি মমতাদেবী এড়াতে পারেন?
ভারতীয় সংবিধানের ১১ নম্বর পার্টে খুব বিস্তৃত ও নির্দিষ্টভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির ক্ষমতার বিভাজন লিপিবদ্ধ আছে। মমতা বন্দোপাধ্যায় মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কারনে কেন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষমতাকে রাজ্যের এক্তিয়ারে বলে জাহির করেন। সে বিষয়ে তিনি শোরগোল তুলে রাজনীতির বাজার গরম করার চেষ্টা করেন। তিনি যুক্তি ও আইনের চেয়ে তাঁর নিজের সুবিধাকে সর্বদা প্রাধান্য দেন! তাঁর অসম্ভব পরিশ্রম করার ক্ষমতা, সংবাদ-মাধ্যমকে ব্যবহার করার দক্ষতা, বিরোধী অনৈক্য এবং অলস বাঙ্গালীর অনুদানজীবি মানসিকতাকে সম্বল করে তিনি এতদিন রাজনীতির মঞ্চে সাফল্য পেয়েছেন। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর দলের মধ্যে মমতাদেবীর ‘ইচ্ছে’র থেকে অন্য কিছু বেশী গুরুত্ব পেতে চলেছে।
সেই ‘অন্য কিছু’ কি? আমরা দেখেছি যে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ‘যুবরাজ’ এক সময় প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবীদার থাকলেও তার মা তাকে “পিএম অন ওয়েটিং” করে রাখলেন! তারপর যুবরাজের সঙ্গেসঙ্গে তার দল কংগ্রেসও শুকিয়ে গেল। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কিন্তু এখানকার “যুবরাজ” রাজ্যের সিংহাসনে এখনই বসতে উদগ্রীব! আমাদের দেশের রাজনীতিকদের বংশানুক্রমিক দেশসেবার ঠিকাদারী নেওয়াই দস্তুর। তাই পশ্চিমবঙ্গের “যুবরাজ”-এর ইচ্ছা খুব স্বাভাবিক। সে কারনে তিনি অনেকদিন ধরে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। প্রথমে দলের মধ্যে তাঁর বশংবদ একটি গোষ্ঠী তৈরী করেছেন। তারপর দলের বরিষ্ট নেতা, যারা তাঁর বশংবদ হতে রাজী হবেন না এবং যাদের রাজ্য রাজনীতিতে কিছুমাত্র প্রতিষ্ঠা আছে, তাদের একএক করে দলে না থাকার মত পরিস্থিতি তৈরী করেছেন। দুই বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী দুরকম ভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। তারপর এক এক করে যেসব নেতারা একমাত্র “অনুপ্রেঢ়ণা” ছাড়া আর কারোর দ্বারা অনুপ্রাণিত হন না, তাদের বিদায়ের ঘন্টা বাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হল। সুব্রত মূখোপাধ্যায় মরে গিয়ে হয়ত জেল হাজত ও অন্যান্য অপমানকর পরিস্থিতির থেকে রক্ষা পেয়েছেন। ফিরহাদ হাকিম টার্গেটে থাকলেও অনুপ্রেঢ়ণার “দুধেল গাই” তত্ত্ব এবং বগটুই কান্ডের পর এই মূহুর্তে হাকিমের চেয়ার ধরে টান না পড়লেও তিনি নিঃসন্দেহে অপেক্ষমান লিস্টে আছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মত নেতা খুব স্বাভাবিকভাবেই টার্গেট হবেন। কারন সুব্রত মূখোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর অনুপস্থিতিতে তিনিই দলীয় ক্ষমতায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন – এটাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাল হল। যেমন, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধী প্রথম যে উইকেটের পতন ঘটান তা প্রণব মূখোপাধ্যায়ের। এই মূহুর্তে তৃণমূল দলের জেলা সভাপতিদের মধ্যে সবচেয়ে মমতা-ঘণিষ্ট হলেন বীরভূমের অনুব্রত মন্ডল। দেখা যাচ্ছে,তাঁর পিছনে নির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা লেগে আছে। ইতিমধ্যে তাঁর দেহরক্ষীর থেকে প্রচুর বেআইনি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অনুব্রতবাবুর গাড়ির বেআইনি লালবাতির জন্য রাজ্য পুলিশ তাঁর ফাইন করেছে – এই পুলিশের বিরুদ্ধে তৃণমূল দলের পাইক বরকন্দাজ হিসেবে ব্যবহারের বহু অভিযোগ। পুলিশ অনুব্রতবাবুকে ঘাঁটানোর সাহস (হাইকোর্ট বললেও) কোথা থেকে পায়! তৃণমূলের উচ্চ পর্যায়ের সাহায্য ছাড়া এইসব হাইপ্রোফাইল নেতাদের আর্থিক ও অন্যান্য কেলেঙ্কারীর খবর তদন্তকারী সংস্থাদের জানা সহজ নয়। সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে, এই মূহুর্তে তৃণমূল দলের নেতৃত্ব স্পষ্টতই দুভাগে বিভক্ত – বর্তমান ও আগামী। বর্তমানকে আপাত অসম্ভব পুরষ্কারের লোভ দেখানো হচ্ছে – ২০২৪শে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী চেয়ার – প্রধানমন্ত্রীত্ব! তবে তার আগে যুবরাজের রাজ্যাভিষেক পাকা করতে হবে।
এখন, রাজ্যের সাধারণ মানুষের চাকরী, রোজগার কিছুই নেই। শুধু নেই রাজ্য থেকে রাজনীতিকদের কোটি কোটি অসৎ উপায়ে লোক ঠকিয়ে উপার্জন করা অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে! “যুবরাজ” কালো টাকার জন্য মোদীর জবাব চাইছেন! এতেই বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেসের যুবরাজের সঙ্গে এই রাজ্যের যুবরাজের বুদ্ধির স্তরে কোন তফাৎ নেই। এ অনেকটা বামপন্থীদের শ্লোগান সর্বস্ব আন্দোলনের মত – “নিকারাগুয়ার প্রতিবিপ্লবীদের উপর মার্কিন আগ্রাসন হল কেন, কেন্দ্র তুমি জবাব দাও”! এদেরকে ব্যঙ্গ করে কোলকাতায় একটি চালু ছড়া ছিল, “ভুলতে পারি বাপের নাম, ভুলবো নাকো ভিয়েতনাম”!
দুর্বল চিত্রনাট্যের আরেক দিক হল, “যুবরাজ” তাঁর পয়লা নম্বরের মোসাহেব, যিনি নিজে সারদা কেলেঙ্কারীতে দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন, তাকে সঙ্গে নিয়ে ৫০০ দিন আন্দোলনরত পরীক্ষা উত্তীর্ণ চাকরীপ্রার্থীদের সঙ্গে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন! দেখা গেল, মোসাহেবি করা কিছু সংবাদ-মাধ্যম যুবরাজের উদারতার প্রশংশায় পঞ্চমুখ! আজ, আন্দোলনের ৫০০ দিন বাদে যুবরাজের আন্দোলনরতদের কথা মনে পড়ল! উনি কয়েকজন নির্দিষ্ট আন্দোলনকারীর সঙ্গে আলাদা দেখা করলেন। আমার প্রশ্ন, “যুবরাজ” কোন ক্যাপাসিটিতে তাদের সঙ্গে দেখা করলেন এবং কোন ক্ষমতাবলে তাদের প্রতিশ্রুতি দিলেন! তার চেয়ে অনেক কার্যকরী হত যদি উনি “অনুপ্রেঢ়ণা”কে দিয়ে এই ছেলেমেয়েগুলির ন্যায্য চাকরীর বন্তোবস্ত করে দিতেন। আসলে উনি কিছুই করতে চান না এবং বর্তমান অবস্থায় কিছু করতেও পারবেন না। উনি শহীদুল্লার মত কয়েকজনকে বেছে নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বে এমন ধারনা তৈরীর চেষ্টা করলেন যে,তিনি আন্দোলনকারীদের দাবীর প্রতি সহানুভূতিশীল! এই নাটকের দুটি উদ্দেশ্য – এক, আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধন্দ্ব সৃষ্টি করা; দুই, নিজের নেতৃত্ব জাহির করা।
এভাবে “অনুপ্রেঢ়ণা”কে সরিয়ে “যুবরাজ”-এর অভিষেক প্রক্রিয়ার চিত্রনাট্য অনুযায়ী নাটক শুরু হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি তদন্ত প্রক্রিয়া আরো জোরদার করবে। বিরোধী দলগুলি আরো চেঁচামেচি করবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে “অনুপ্রেঢ়ণা”কে “যুবরাজ” প্রতিস্থাপন করলে জনগণের কি লাভ? এ হল, “head I win, tail you loose” গোছের ব্যাপার।
পার্থ-কান্ডের নেপথ্যে কে
