প্রশাসক তুমি কার জন‍্য

ইংরেজ প্রদত্ত ভারতের ডোমিনিয়ান স্ট‍্যাটাসের সময় থেকে আভরা দেশের প্রশাসনিক দায়িত্বের জন‍্য ICS ও IPSদের সার্ভিস রুল পুরোটাই ব্রিটিশদের থেকে ধার করে চালিয়েছি। তারপর প্রজাতন্ত্র লাভের পর সর্বভারতীয় সার্ভিস এ‍্যক্ট ১৯৫১ তৈরী হয়। আর তারপর প্রশাসনিক অফিসার ICSদের যেমন IAS অর্থাৎ সিভিল সার্ভিস থেকে তা প্রশাসনিক সার্ভিস হল, তেমনি IPSও IASদের সার্ভিস রুল (এ‍্যক্ট নয়) পরিবর্তন করা হল। এটি১৯৫৪ সালে সার্ভিস এ‍্যক্টের অংশ হিসেবে চালু করা হল। তখন বিভিন্ন রাজ‍্যে কর্মরত ও নির্দিষ্ট IASদের কেন্দ্রীয় সরকার মনে করলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা দ্বারা গৃহীত হলে, অন‍্য রাজ‍্যে স্থায়ীভাবে বদলি করে দেওয়া যেত। এভাবেই ব্রহ্মানন্দ রেড্ডি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন উজ্জ্বলকান্তি রায়কে স্থায়ীভাবে অন্ধ্র ক‍্যাডার থেকে পশ্চিমবঙ্গ ক‍্যাডারে বদলী করেন। তারপর ১৯৬৮তে আবার যখন ক‍্যাডার রুল পরিবর্তন করা হয় তখন এই ব‍্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়। যেহেতু এই ক‍্যাডারে চাকুরীরতদের কেন্দ্রীয় সরকারের সার্ভিস রুল দ্বারা govern করা হয় সেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার যখন সার্ভিসে যা পরিবর্তন করেন সেটা এই ক‍্যাডারে চাকরীরতদের উপর প্রযোজ‍্য হয়।
এই ঘটনার উল্লেখ করে শুধু এটুকু বলা যায় যে, এই ক‍্যাডার পোষ্টগুলি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা সৃষ্ট, কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থীদের চয়ন, তাদের ট্রেণিং ও প্লেসমেন্ট করে। প্রতি রাজ‍্য শুধু তাদের নিদিষ্ট ক‍্যাডারের প্রয়োজন অনুযায়ী অফিসারের সংখ‍্যা জানাতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার তার মধ‍্যে যতটা সম্ভব পুরণ করার চেষ্টা করে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ‍্যসরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই অফিসারদের প্লেসমেন্ট দেয়। এক্ষেত্রে রাজ‍্যসরকারের ভূমিকা সীমিত। এছাড়া শেষ সংশোধনী অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট শতকরা হিসেবে রাজ‍্যের প্রশাসনিক অফিসারদের, যেমন WBCS, মধ‍্যে থেকে পদোন্নতির মাধ‍্যমেও IAS ও IPS হওয়া এখন একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। যদিও রাজ‍্যের অফিসারদের এই ধরনের পদোন্নতি সংক্রান্ত রাজ‍্যের সুপারিশের পরে শেষে তাদের নিয়োগপত্র আসে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে। এই ক‍্যাডারদের নিয়োগপত্রের শুরুতে থাকে – “The President of India is pleased to appoint…….”। আবার রাজ‍্য সরকারের অফিসার, যেমন WBCS, নিয়োগের সময় নিয়োগপত্র শুরু সময় লেখা থাকে – “The Governor is pleased to appoint……….”। এর থেকে এটা পরিষ্কার হল যে এই ক‍্যাডার পোষ্টগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। এজন‍্য এই অফিসাররা যে যে রাজ‍্যে কর্মরত, সেসব রাজ‍্য কর্মচারীদের মত না হয়ে এদের মহার্ঘভাতা, বাড়িভাড়াভাতা ইত‍্যাদি কেন্দ্রীয় হারে পেয়ে থাকেন।
আরো একটি প্রশ্ন উঠছে – রাজ‍্যসরকার নাকি এইসব রাজ‍্যে কর্মরত ক‍্যাডার অফিসারদের বেতন দেন! এমন প্রচার করে আমাদের রাজ‍্যের সংবাদ-মাধ‍্যমগুলি নিজেদের শুধু খেলো নয়, হাস‍্যাষ্পদ করেছে। আসলে এই অফিসারদের বেতন ইত‍্যাদি রাজ‍্যের প্ল‍্যান-এক্সপেন্ডিচার বাজেটের অন্তর্গত। আর প্ল‍্যান-এক্সপেন্ডিচারের বেতন ইত‍্যাদিসহ একটি বড় অংশ মিটিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। একমাত্র নন্-প্ল‍্যান এক্সপেন্ডিচার অংশ রাজ‍্যের এক্তিয়ার। সেখানেও আমাদের রাজ‍্যসরকার একটি সূক্ষ্ম চাল চেলেছে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার দু এক বছরের মধ‍্যে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি কেন্দ্রীয় অর্থ বন্টন ব‍্যবস্থাকে সরলীকরনের নামে বিভিন্ন প্রকল্পভিত্তিক অর্থাৎ, হেড অনুযায়ী রাজ‍্যগুলিকে অর্থমঞ্জুর না করে এ‍্যাডহক ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ ও অর্থ রিলিজ করেন। ফলে, কেন্দ্র হয়ত এক কাজের জন‍্য অর্থ দিচ্ছে, কিন্তু রাজ‍্যসরকার সেই অর্থ অন‍্য খাতে ব‍্যবহার করলে তাতে আইনী বাধা থাকে না। আর এইভাবেই কেন্দ্রের দেওয়া টাকায় রাজ‍্যের প্রকল্পগুলি রাজ‍্যের নামে চলতেই পারে – সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থকরা সোশাল মিডিয়ায় যতই বিপ্লব করুন, রাজ‍্যসরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার আইনতঃ কোন দোষ দিতে পারবে না। কিন্তু এখানে একটা ব‍্যপার পরিষ্কার। কেন্দ্রীয় IAS ও IPS অফিসার যারা এই রাজ‍্যে কর্মরত, তাদের বেতন, ভাতা সবই কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে আসে। এই অফিসারদের কর্মরত অবস্থায় রাজ‍্যসরকারের অধীনে থাকলেও এদের চাকরী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। এই কারনে প্রাইজ পোস্টিং সহ পদোন্নতির সুপারিশ ও অন‍্যান‍্য স্বার্থের প্রয়োজনে এরা অনেক সময় রাজ‍্যসরকারের রাজনৈতিক তাঁবেদারী করে থাকেন। এদের যদি কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজন ও ক্ষেত্র বিশেষে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে ডেকে নেয় তাহলে তাতে রাজ‍্যসরকারের যুদ্ধংদেহী ধরনের প্রতিবাদের কারন কি?
এই ব‍্যপার বুঝতে গেলে আমাদের বর্তমান রাজ‍্যসরকারের মোডাস অপারেন্ডি বোঝা প‍্রয়োজন। রাজ‍্যের বিভিন্ন বিভাগের মন্ত্রীদের ক্ষমতা অসীম মনে হলেও সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রীরা, এমনকি মূখ‍্যমন্ত্রী পর্যন্ত শুধু পরামর্শ দিতে পারেন; সরকারের নীতি নির্ধারণ করতে পারেন – আইনগত যথার্থতা ও তার রূপায়নের ভার থাকে বিভাগীয় সচিব অর্থাৎ IASদের হাতে। এমনকি বিভাগের অর্থনৈতিক দায়িত্ব সচিবের হাতে – মন্ত্রীর নয়। সংবিধান অনুযায়ী চললে তাই। কিন্তু রহস‍্য লুকিয়ে এদের কর্মপদ্ধতিতে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এই IAS সচিবকুল নিজেদের জাত্মাভিমান নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন! সরকারী নীতি অনুযায়ী বিভিন্নস্তরের অফিসারদের জন‍্য গাড়ি ও তার খরচ নির্দিষ্ট। নির্দিষ্ট তেল খরচ ও ভাড়াগাড়ী হলে তার খরচও নির্দিষ্ট। এটি অর্থ দপ্তরের থেকে সার্কুলার দিয়ে জানানো থাকে। অথচ প্রতি বিভাগের সচিবের জন‍্য বিভাগের গাড়ি ছাড়াও বিভাগীয় কর্পোরেশান থেকে গাড়ি বরাদ্দ হয়। জানিনা এমন ক’জন বিভাগীয় সচিব আছেন যার জন‍্য বিভাগের থেকে একটিমাত্র গাড়ি নির্দিষ্ট আছে। বরঞ্চ একসঙ্গে একাধিক গাড়ি চড়ার ক্ষমতা এইসব সচিবরা আয়ত্ব করেছেন। কোন বিভাগীয় মন্ত্রী এতে আপত্তি করেছেন বলে জানিনা। কারন একটাই – প্রশ্নাতীত আনুগত‍্য। তাহলেই সব ঠিক রহেগা!
IASদের কাজ হল সরকারী প্রশাসন সাধারন মানুষের স্বার্থ বজায় রেখে আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে চালানো। তাঁরা people’s servant। কিন্তু কার্যক্ষেত্র এদের ঠাটবাট, চলনে বলনে দেখি এরা বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে চাকরী করতে আসে যে people are their servants। এটি কিন্তু পরাধীন দেশের বৃটিশ সিস্টেমের উত্তরাধিকার। এরা নিজেদের ইগো আর ভ‍্যানিটি নিয়েই থাকে – এমনকি অধীনস্ত কর্মচারীদেরও প্রাপ‍্য সম্মানটুকু দেয় না। তবে, একটি ব‍্যপারে তারা অতিমাত্রায় সচেতন। সেটা হল যথা সময় যথা স্থানে তৈলমর্দন। রাজ‍্যের তথাকথিত শাসনকর্তারা, যারা সর্বদা “অনুপ্রেঢ়না” চালিত, জানেন যে, তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। যদি বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করা যায় তাহলে শুধু পকেটনয়, আরো অনেক কিছু ভর্তি করা যেতে পারে। তবে, একাজের জন‍্য তারা পুরস্কার ও তিরস্কার নীতির টোপ ঝুলিয়ে এইসব প্রশাসকদের, জেলাস্তর থেকে বিভাগীয়স্তর পযর্ন্ত কন্ট্রোল করে। এই অফিসাররাও পোস্টিংয়ের সুবিধা সহ অন‍্যান‍্য সুবিধার জন‍্য রাজনীতিবিদদের তাঁবেদারী করতে আগ্রহী হয়। কোন অফিসারের ‘সততার চুলকানি’ উঠলে তা দমন করার রাস্তাও রাজ‍্যসরকারের হাতে আছে। তাহল তথাকথিত রসকষহীণ স্থানে বদলি – এমনকি অফিসার-অন-স্পেশাল ডিউটি করে বসিয়ে রাখা। এভাবেই এই কেন্দ্রীয় অফিসারদের রাজ‍্যসরকার তার তাঁবে করে রেখে দেয়।আবার যখন সেট-ইনএ থাকা কোন অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকার বদলি (বলা হয় ডেপুটেশান; কারন এরা এখন স্থায়ীভাবে রাজ‍্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী) করে, তখন স্বাভাবিক কারনেই সেট-ইন বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কায় রাজ‍্যসরকার তাদের ছাড়তে চায় না। এখানে রাজ‍্যসরকারের ডাবল স্ট‍্যান্ডার্ড প্রকাশ পাচ্ছে। রাজ‍্যের ধামাধরা বাংলা সংবাদ-মাধ‍্যমগুলি তারস্বরে চেঁচাতে শুরু করেছে, রাজ‍্যসরকার এই IAS, IPSদের ছেড়ে দিলে সরকারের প্রশাসন অচল হয়ে পড়বে! এটি অত‍্যন্ত হাস‍্যকর যুক্তি। কারন রাজ‍্যসরকারের ‘সুপ্রিমো’ থেকে পায়াভারী মন্ত্রী, সকলেই বলেছেন যে, মাস্টাররা শিক্ষাঙ্গনে রাজ‍্যসরকারের হুকুম তামিল করতে বাধ‍্য – কারন রাজ‍্যসরকার তাদের বেতন দেয়! এইভাবে বেতন দেয় বলে আজকে রাজ‍্যসরকারের অধীনস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অবস্থা নবান্নের করণিকদের চেয়েও অধম! তাহলে সেই একই যুক্তিতে IAS, IPSদের নিয়োগ থেকে বেতন সবই কেন্দ্রীয় সরকার দেয় বলে তারা কেন কেন্দ্রের হুকুম মানবেন না – আর কোন যুক্তিতে রাজ‍্যসরকার ও তার ধামাধরা সংবাদ-মাধ‍্যম এজন‍্য কেন্দ্রের বিরোধীতা করে। কোন যুক্তিতে এই অফিসারদের কেন্দ্রে ডেপুটেশানে যেতে হলে ‘মাননীয়া’র অনুমতি নিতে হবে তা কিন্তু কেউ স্পষ্ট করে বলছেন না। যে সং সাজা মাধ‍্যমগুলি এত লাফালাফি করছে তাদের উদ্দেশ‍্যে বলি – চরিত্র আগেই বিকিয়ে দিয়েছেন, এখন মেরুদন্ড হারিয়ে কি পেলেন!
IAS, IPSদের সার্ভিস রুল কেন্দ্রীয় সরকারের বিচার্য বিষয়। রাজ‍্যসরকারী কর্মচারীদের চাকরী ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টি থাকলে তাঁরা স্টেট অ‍্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব‍্যুনালে (SAT) আপীল করতে পারেন। কিন্তু IAS, IPSদের ক্ষেত্রে অন‍্য কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীর মত একই কারনে সেন্ট্রাল অ‍্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব‍্যুনালে (CAT) যেতে হয়। তাহলে রাজ‍্যে থাকতে অধিকাংশ IAS, IPS এত আগ্রহী কেন? কারন পরিষ্কার – প্রাইজ পোষ্টিং – রাজ‍্যের মধ‍্যে যা সম্পূর্ণভাবে রাজ‍্যসরকারের এক্তিয়ারভূক্ত। আর এই পোষ্টিংএই ত যত গুড়,মধু! কারন এই অফিসারদের সঙ্গে রাজ‍্যসরকার চালানো রাজনৈতিক দলের ‘সেটিং’ একবার হয়ে গেছে। তা নষ্ট হলে নতুন অফিসারের সঙ্গে সেটিং করা শুধু সময়সাপেক্ষ নয়, অনিশ্চয়তাও আছে। কাজেই কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারের জায়গায় রাজ‍্যের এই প্রতিবাদী হস্তক্ষেপ। যদি কেন্দ্রীয় সরকার এ ব‍্যপারে পিছিয়ে যায়, তাহলে পর্দার পিছনে অন‍্য রাজনৈতিক খেলা সম্পর্কে জনমানসের ধারণা আরো বদ্ধমূল হবে।
এবার এই প্রশাসনিক পদগুলি – বিশেষতঃ IASদের কাজকর্ম এবং এদের রাখার যৌক্তিকতা বিষয়ে আলোকপাত করা যেতে পারে। ICS কুল ছিল বৃটিশদের দ্বারা সৃষ্ট এবং শুধু তাদের স্বার্থ দেখা ও ভারতীয় “নেটিভ”দের দমিয়ে রাখার কাজের জন‍্য তারা নিয়োজিত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর নাম পাল্টে এই সার্ভিস হল IAS। এক্ষেত্রে কাজের ধারা ও তার অভিমুখ সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা করতে গেলে যে সুদূরপ্রসারী দুরদৃষ্টি থাকা দরকার তা তদানীন্তন শাসকদের মধ‍্যে দেখা যায়নি। বৃটিশ সিস্টেমের উপর কিছু কসমেটিক ও সিম্বলিক পরিবর্তন করা হল মাত্র। ব‍্যপারটা কেমন দাঁড়ালো? গাউন পরিহিত বৃটিশ ভদ্রমহিলা যদি গাউনের উপর ভারতীয় মহিলাদের ব্লাউজ পরেন তবে যেমন দেখায় তেমন দাঁড়ালো – না ঘরকা না ঘাটকা। এই নতুন শ্রেণী যারা আমলা নামে অভিহিত হল তারা রাজনৈতিক নেতাদের ‘হাত’ হিসেবে নেতাদের হুকুম তামিল করতে লাগল – বিনিময়ে নিজেদের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিতে লাগল। এই সার্ভিসের মত পৃথিবীর কোথাও এমন টাইম বাউন্ড প্রমোশান সহ স্থায়ী চাকরীর দেখা মেলে না। এদের কার্যকারিতা বিচারের গন্ডি না থাকায় যদি সমাজের উন্নয়ণ এদের কার্যকারিতার পরিমাপ হয়, তাহলে এরা কেউ পাশ করার যোগ‍্যতা অর্জন করবে না। এই প্রশাসককুল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে জনগণের সেবার বদলে রাজনৈতিক বসদের সেবাকেই ‘সার্ভিস রুল’ মনে করল। ঔদ্ধত‍্য, আত্মম্ভরীতা ও দূর্ণীতি ধীরে ধীরে পুরো সার্ভিসটাকেই নষ্ট করে দিল। যে কোন চাকরীতে মূল‍্যায়ন হয়। শুধু এদের হয়না। এদের প্রভূত্ব সমাজের সব স্তরে লক্ষ‍্য করা যায়। এরা বিনা ট্রেণিংয়ে সব বিষয়ের ‘বিশেষজ্ঞ’ হিসাবে সরকারী নোট দেন! এর ফলে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সামাজিক অনুন্নয়ন ও বৈষম‍্যের চিত্র সর্বস্তরে দেখা যাচ্ছে।
এখন এ ধরনের সার্ভিস সারা বিশ্বেই অচল। পরিবর্তে বিশেষজ্ঞের যুগ। এখন দায়িত্ব দিয়ে বিভাগীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়োগের মাধ‍্যমে এই IASদের প্রতিস্থাপন করার সময় এসেছে। এমন অচল, স্থবির ব্রিটিশ উত্তরাধিকার দেশবাসীকে কতদিন বইতে হবে কে জানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *