পার্থ-কান্ড পরবর্তী সময়ে সংবাদ-মাধ্যমের – বিশেষতঃ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত তথ্য হচ্ছে বঙ্গ রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে ‘সেটিং’! এটি বুঝতে গেলে সংবাদ-মাধ্যমগুলির স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞবৃন্দ ও রাজনৈতিক দলের থেকে পাঠানো বিশেষজ্ঞরা নিজ নিজ দলের রাজনৈতিক অবস্থান সঠিক প্রতিপন্ন করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এই সব আলোচনা সভা প্রায় সব সময়ই মাছের বাজারকেও চিৎকার, চেঁচামেচিতে হার মানায়। এসব দেখে মানুষজন আরো বিভ্রান্ত, বীতশ্রদ্ধ হন।
‘সেটিং’ কথাটা রাজনীতিতে এসেছে বহুদলীয় জোটের শাসন এবং বিরোধী পক্ষের জোটবদ্ধ অবস্থান থেকে। বঙ্গ রাজনীতিতে বহুদলীয় জোটের শাসন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে। এই ফ্রন্টের চালিকাশক্তি ছিল সিপিএম। অবশ্য স্বাধীনতাপূর্ব প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলীতে যে স্বল্প সময়ের পরিবর্তনশীল জোটের দেখা মিলেছিল, তা রাজনীতির নিয়মে বিশেষ পরিস্থিতি এবং পরিবর্তনশীল জাতীয় ও প্রাদেশিক স্বার্থের প্রেক্ষিতে সময়ের দাবী হিসেবেই দেখা হয়। এখানে স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে ভারতীয় রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে। এই ‘সেটিং’ তত্ত্ব বঙ্গ-রাজনীতির আঙ্গিনায় প্রথম আমদানি করে যুক্তফ্রন্টের বকলমে কম্যুনিষ্টরা – বিশেষভাবে সিপিএম। পরবর্তী পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের চুড়ান্ত রূপ দেখা এবং সমাজজীবনে রাজনৈতিক হিংসা রক্তক্ষয়ী দিকে মোড় নেয় বামপন্থী – নরম, চরম, অতিবাম ইত্যাদি বিভিন্ন কম্যুনিষ্ট দলের প্রত্যক্ষ মদতে। এই সময় থেকেই পুলিশকে শাসকদলের অধীনে “সরকারি গুন্ডা”র মত ব্যবহার করা শুরু হয় কম্যুনিষ্ট মদতে – স্ট্যালিনিস্ট ডিক্টেটরশিপের প্রাদেশিক আদলে! সেই সময় থেকেই সাধারণভাবে সমগ্র দেশে, আর নির্দিষ্টভাবে পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মাধ্যম (social and cultural media) প্রভাবিত হতে লাগল বামপন্থী চিন্তাধারায়। এমনকি, সংবাদ-মাধ্যম ও পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ বৈদ্যুতিন মাধ্যমের নীতি ও সাংবাদিক নিয়োগে বামপন্থী চিন্তাধারা সর্বাধিক গুরুত্ব পেতে লাগল। আশির দশকে উচ্চশিক্ষায় UGC বেতনক্রম চালু হওয়ার পর থেকে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বঙ্গীয় শিক্ষা-জগতকে বামমনস্ক শিক্ষকদের দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হল। এই শিক্ষকদের প্রধান কাজ ছিল তাদের দলের চিন্তাধারা এবং বক্তব্যকে বামপন্থীয় বৈজ্ঞানিক চিন্তা – বলে প্রচার করা এবং তারা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ দলের বামপন্থায় দীক্ষার সূতিকাগার হিসেবে ব্যবহার করতে লাগলেন। এভাবে বাঙ্গালী মননে তাদের বামপন্থী রাজনীতি যে বিশেষ বিষয়গুলি ঢুকিয়ে দিচ্ছিল তা হল, বিশ্বের বেশিরভাগ ধর্ম – বিশেষত খ্রীষ্ট ও ইসলাম – ধর্মনিরপেক্ষতাকে নীচু চোখে দেখলেও ধর্মনিরপেক্ষতার বামপন্থীয় রূপকে আধুনিক জ্ঞানের স্তম্ভ হিসেবে বাঙ্গালীর মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়া! ভারতীয় কম্যুনিষ্টরা আদর্শগতভাবে পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামের প্রতি নরম মনোভাবের কারনে বাঙ্গালীর মধ্যে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস ও অসহিষ্ণুতা তৈরী হয়েছে। সে কারনে বাঙ্গালীর কম্যুনিষ্টসূলভ ধর্মনিরপেক্ষতা “ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতা”য় পর্যবসিত হয়েছে। কম্যুনিষ্টরা সর্বদা ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করায় বাঙ্গালী সমাজে জাতীয়তাবোধের অভিব্যক্তি অনেক কমে গেছে। সেইসঙ্গে কম্যুনিষ্টসূলভ গোয়েবেলসীয় প্রচার (যা পরবর্তী সময়ে স্ট্যালিনের বড় ইউএসপি হয়ে দাঁড়ায়) করার ফলে বাঙ্গালী ও বাংলার সংস্কৃতি বলতে আরবীভাষাও সংস্কৃতি সংপৃক্ত বাংলাদেশের ভাষাকে পশ্চিমবঙ্গের ভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা সাম্প্রতিককালে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।
পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীদের এই বিশেষ অবস্থানের কথা মাথায় রেখে ‘সেটিং’ তত্ত্বের সাম্প্রতিক রূপের ব্যাখ্যায় আসতে হবে। ২০১১ সালের ঐতিহাসিক পালা বদলের পর পশ্চিমবঙ্গে কম্যুনিষ্ট শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শে কম্যুনিষ্টদের অনুসারী না হলেও চাতুর্যপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে কম্যুনিষ্টদের ছাপিয়ে
গেলেন। কম্যুনিষ্টদের আদর্শের নামে লিখিত বা অলিখিত জোট, “lesser enemy” ইত্যাদি তত্ত্ব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের পরেই তৃণমূল সুপ্রিমো তাঁর দলের “যখন যেমন, তখন তেমন” নীতির সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে কখনো বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের জোটসঙ্গী, আবার কখনো কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের জোটসঙ্গী হিসেবে কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন। আবার নিজের ও দলের স্বার্থে হটাৎ জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে সেই সরকারের চরম বিরোধীতা করেছেন! সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস পরবর্তী সময়ে কম্যুনিষ্ট ও তৃণমূল শাসনে রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বার্থে বিপরীতধর্মী দলের সাথে সমঝোতার লম্বা ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত। এই সময়ের সমঝোতার গোপন প্রয়াসকেই শ্লেষাত্মক শব্দে ‘সেটিং’ বলে অভিহিত করা হয়েছে!
কম্যুনিষ্ট লবি থেকেই এই ‘সেটিং’ কথাটা বলা হচ্ছে – মমতার তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের চালিকা শক্তি বিজেপি দলের। এ প্রসঙ্গে একটা চালু প্রবাদ মনে এল – “রতনে রতন চেনে” – কারন, রাজনীতির ইতিহাসে এই ধরনের গোপন সমঝোতা বঙ্গীয় কম্যুনিষ্ট নেতৃবৃন্দ, বিশেষতঃ জ্যোতি বসু ও তাঁর দল সিপিএম কেন্দ্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষতঃ রাজীব গান্ধীর কংগ্রেস এবং পরবর্তী নরসিংহ রাওয়ের কংগ্রেসের সঙ্গে এই ধরনের গোপন সমঝোতা করেছিলেন। তারও আগে থেকে, ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে কম্যুনিষ্টদের সঙ্গে ইন্দিরার দীর্ঘ সময়ের ‘সেটিং’ ছিল। তখন কম্যুনিষ্টদের হাতে শিক্ষানীতিসহ বিভিন্ন রাজ্যে তাদের বিস্তারের সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে ইন্দিরা কম্যুনিষ্টদের সাহায্যে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিল পাশ করাই শুধু নয়, তাদের আন্তর্জাতিক যোগসূত্রকে সম্বল করে ইন্দিরা সোভিয়েট রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ়তর করেছেন – বাংলাদেশ স্বাধীনতার সময়ে তা যথেষ্ট কাজে লেগেছে।একেই এখন কম্যুনিষ্টরা ‘সেটিং’ বলছেন! এমনকি মনমোহন সিংয়ের সরকারের সময়ে যখন কম্যুনিষ্টরা তাদের সমর্থন তুলে নিল, তার পরও এই ধরনের ‘সেটিং’ হয়েছিল বলে শোনা যায়। একে ঐ সময়ের বিরোধী দলগুলি “কেন্দ্রে দোস্তি, রাজ্যে কুস্তি” বলে অভিহিত করত! মজার বিষয় হল, এখন এ রাজ্যে সিপিএম তথা কম্যুনিষ্টরা রাজ্য বিধানসভায় এবং লোকসভায় আসনসংখ্যার নিরিখে শূন্য হলেও, সংবাদ-মাধ্যম ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তাদের অহেতুক গুরুত্ব দেওয়া হয়! এতেই বোঝা যায় যে, এখনো সংবাদ-মাধ্যমে কম্যুনিষ্ট প্রভুত্ব বজায় আছে। রাজীব গান্ধীর সময়ে কম্যুনিষ্টদের গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক। কারন, তাদের ভাষায় – ‘সেটিং’। সিপিএম তাদের দলের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, যিনি বিভিন্ন উচ্চ আদালতে পশ্চিমবঙ্গের সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনজীবী হিসেবে লড়ছেন, তাঁর রাজ্যসভায় জেতার সময় তৃণমূল দলের সঙ্গে ‘সেটিং’ কতটা কাজ করেছে তা দলের তরফে বলা হয়েছে কি? অঙ্কের নিয়মে কিন্তু বিকাশবাবুর ‘সেটিং’ ছাড়া জেতার কথা নয়। বিকাশবাবুর আগে কংগ্রেসের এক বরিষ্ট নেতার ক্ষেত্রেও রাজ্যসভায় জেতার প্রশ্নে তৃণমূল দলের সঙ্গে ‘সেটিং’ করার কথা আমরা জানি। সুতরাং, ‘সেটিং’ কম্যুনিষ্ট ও কংগ্রেস, সর্বদাই স্বার্থের প্রয়োজনে করে থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে এই ‘সেটিং’ তত্ত্ব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাজারে ছাড়া হয়েছে – অবশ্যই সিপিএম এর প্রবক্তা! অথচ কিছুদিন আগে, গত মার্চ মাসের শেষের দিকে কেরলের সিপিএমের মূখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রীর চেয়ে আরো বড় ও কালারফুল ফুলের বোকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন – একে ‘সেটিং’ বলার সাহস কোন কম্যুনিষ্ট নেতার নেই! সততার পরাকাষ্ঠা দেখানো বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবীকুল (১০০% রিডাকসান সেলে বিক্রি হওয়া) ও সিপিএম নেতারা একে ‘সেটিং’ বলুন দেখি! পশ্চিমবঙ্গের ইডি ও সিবিআইয়ের অনুসন্ধানে মূখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের জরিত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে যদি এই দাবী করা যায় ত, কেরলের মূখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধেও ইডি, সিবিআই, এমনকি সোনা পাচারের মত গুরুতর অভিযোগের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। সুতরাং, গোয়েবেলসীয় প্রচারনীতিতে কম্যুনিষ্ট প্রচারের ফানুস – মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘সেটিং’ বা তাঁর তুষ্টিকরনের জন্য গিয়েছেন আর বিজয়নের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকা – এই প্রশ্নে কম্যুনিষ্টরাই সন্দেহের র্যাডারে পড়েছেন!
বঙ্গীয় তথা ভারতীয় কম্যুনিষ্টদের একটি প্রধান দোষ হল, তারা ভারত ও ভারতীয়ত্ত্ব বিরোধী অবস্থান নিলেও সেটি দেশের জনগণকে মিথ্যার বুননে ভালোভাবে ‘গেলানো’র কাজে ধারাবাহিক ব্যর্থতা। এই কারনেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভায় এবং রাজ্য বিধানসভায় তাদের প্রতিনিধি সংখ্যা শূণ্য। তবু, এরা এদের রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিবর্তন করবে না!
আসলে রাজনীতিতে ‘সেটিং’ বলে কোন তত্ত্ব হয় না। আবার রাজনৈতিক সুবিধার জন্য marriage of convenience একটি প্রচলিত প্রথা। যেমন, আদর্শগতভাবে কংগ্রেস ও শিবসেনা বিপরীত মেরুতে থাকলেও তারা একসঙ্গে মহারাষ্ট্রে সরকার চালিয়েছে। এ ধরনের সমঝোতা করলে আখেরে যে তা রাজনৈতিকভাবে ভালো হয় না, তা দেরীতে হলেও উদ্ধব এখন বুঝতে পারছেন। কিন্তু বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে কাশ্মীরে জেহাদী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করে কম্যুনিষ্টরা ক্রমশঃ ক্ষয়িষ্ণু শক্তি হলেও তারা তাদের দেশবিরোধী লাইন পাল্টায়নি! এমনকি ১৯৬২ সালে চীন যখন ভারত আক্রমণ করে তখন অনেক ভারতীয় কম্যুনিষ্ট নেতা উল্লাস প্রকাশ করে বলেন যে, এবার চীন ভারতকে উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দেশের উত্তর-পূর্বে কম্যুনিষ্ট চীনের ঝান্ডা তুলবে! এমন ক্যুইসলিং (বাংলায় বললে মীরজাফর) শুধু ভারতীয় কম্যুনিষ্টরাই হতে পারে।
এবার দেখা যাক এই কম্যুনিষ্ট প্রচারিত ‘সেটিং’ তত্ত্বে কার লাভ। যদি ‘সেটিং’ তত্ত্ব সঠিক বলে রাজ্যের জনগণকে বোঝানো যায়, তবে, তৃণমূল সমর্থকদের কাছে মমতা বন্দোপাধ্যায়সহ তৃণমূল নেতাদের উপর অবিশ্বাস ও সন্দেহ তৈরী হবে এবং একইভাবে বিজেপি সমর্থকদের কাছে বিজেপির উপরে হতাশা ও অবিশ্বাস জন্মাবে। ফলে দুই দলের ভোটারদের বড় অংশ তাদের দলের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম তথা কম্যুনিষ্টদের ভোটবাক্স ভর্তি করবে! এই আশায় নিজেদের কমিটেড সংবাদ-মাধ্যমদের কাজে নামিয়ে তারা ‘সেটিং’ তত্ত্বের হাইপ তুলে জনমানসকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
আমি মনে করি এমন তত্ত্ব বালখিল্য চিন্তার ফসল। কারন marriage of convenience তত্ত্বের নিরিখে তৃণমূল দলকে প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপির কোন প্রয়োজন নেই। রাজ্যসভা বা লোকসভায় তৃণমূল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিক – তাতে ফলের কোন হেরফের হবে না। তৃণমূলের আন্তজার্তিক স্তরেও আলাদা কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। বরঞ্চ তৃণমূলের সঙ্গে সামান্যতম সমঝোতায় রাজ্যে বিজেপির সমূহ ক্ষতি। প্রথমতঃ এ রাজ্যে বিজেপি প্রধান বিরোধী দল এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্ণীতির দায় বিজেপির ঘাড়ে চাপলে তাদের ভোটব্যাঙ্কে বিশাল ধ্বস নামার সম্ভাবনা। এই কথা মাথায় রেখে স্রেফ ভোট ভাঙ্গানোর রাজনীতি করার জন্যই সিপিএমের এমন অপপ্রচার।
এই অপপ্রচারকে হাওয়া দিচ্ছে কম্যুনিষ্ট তাঁবেদারীতে প্রশিক্ষিত সংবাদ-মাধ্যম ও বৈদ্যুতিন মাধ্যম। অথচ, এরা একবারের জন্যেও ইতিহাসের পাতা উল্টে বলছে না যে, ‘সেটিং’ তত্ত্বে কম্যুনিষ্টদের একচেটিয়া অধিকার। আবার বলি, এই সেটিং তত্ত্বে বিন্দুমাত্র সত্যতা থাকলে ক্ষতি তৃণমূল ও বিজেপির – লাভ সিপিএমের। আর, যে কোন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী অনুমোদন সাপেক্ষে সর্বদা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন – তার জন্য কম্যুনিষ্টদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়না। কোন রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করলে তা অনুমোদন করাই দস্তুর। সুতরাং মমতা বন্দোপাধ্যায় বা বিজয়নের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের অন্য কোন অর্থ করার উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে সততার পরিচয় বহন করে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে কাশ্মীরের সাংসদ ফারুখ আবদুল্লার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হেসে হেসে কথা বলার ছবি সংবাদ-মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। কই, কম্যুনিষ্টরা এক্ষেত্রে ত ‘সেটিং’য়ের আওয়াজ তুলছে না!
এভাবে ‘সেটিং’ তত্ত্বের ভিত্তিহীন গল্প ফেঁদে কম্যুনিষ্ট ও তাদের বশংবদ সংবাদ-মাধ্যম জনগণকে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের কাজ হাসিল করার জন্য যে নাটক মঞ্চস্থ করেছে তা ফ্লপ হতে বাধ্য। এভাবে পশ্চিমবঙ্গে কম্যুনিষ্টদের অন্তর্জলী যাত্রা ত্বরাণ্বিত হবে মাত্র।
বঙ্গ রাজনীতিতে সেটিং তত্ত্ব
