পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ ন্যায়ালয়ের একজন বিচারপতির ঘর তালাবন্ধ রেখে এবং আদালত ও সেই বিচারপতির বাসভবনে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে (অবশ্যই নেতৃত্বের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে) যে পোস্টার লাগানো হয় এবং ঐ বিচারপতির আদালত বয়কট করে শ্লোগান দেওয়া হয়, দলবদ্ধভাবে জোর করে উকিল সহ কাউকে তাঁর এজলাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, তা নিঃসন্দেহে বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অশুভ শক্তি প্রয়োগে দমিয়ে রাখার চেষ্টা বলেই মনে হয়। অধিকাংশ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ একে সমর্থন করেন না। তবু যেসব আইনজীবি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁদের ইতিহাসের পাতা উল্টাতে বললে তাঁরা অনেকেই হয়ত লজ্জা পেয়ে চুপ করে যাবেন বা দুকান কাটা রাজনীতিকের মত লাভের অঙ্ক কষে চেঁচামেচি করে জল ঘোলা করবেন!
আমাদের দেশে আদালতের বিচারপতিদের উপর চাপ তৈরী করার ন্যক্কারজনক পদ্ধতি অবলম্বন করা একটি রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের বার কাউন্সিলের বড় নেতা, যিনি একসময় তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে এমএলএ হয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে কংগ্রেসের হয়ে বাম-কংগ্রেস জোটপ্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছেন – তিনি এই ঘটনার নিন্দা করেছেন! এই নিন্দার সময় ওনার কি মনে ছিল যে, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে ইন্দিরা গান্ধীর নির্বাচন বাতিল হওয়ার পর পুনরায় কোন আসন থেকে নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টা না করে সরাসরি সারা দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে হাইকোর্টের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়েছিলেন? আসলে এখন সাধারণ মানুষ বিদ্যজ্জন ও তথাকথিত বুদ্ধীজীবিদের কথার মধ্যে শুধু তাঁদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি এবং দলবাজির গন্ধ পান বলে এখন আর কেউ সংবাদ-মাধ্যমে এদের প্রচারিত “বাণী” সিরিয়াসলি নেন না।
আমাদের দেশে ত বটেই, এমনকি এই পশ্চিমবঙ্গেও বিচারকদের সঙ্গে চরম অসভ্যতার অনেক নমুনা পাওয়া যায়। বর্তমানে রাজ্যের বিধানসভায় শূণ্য আসন সংখ্যার একটি রাজনৈতিক দল, যাদের যুব-আন্দোলনকারীরা অনেক ন্যায্য ও ভালো কথা বলছে, সেই দলের “পিতামহ ভীষ্ম” মার্কা নেতা তাদের সুখের সময় নিজে হাইকোর্টের একজন মাননীয় বিচারপতির বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন! তিনি তাঁর দলবল নিয়ে শ্লোগান দেন, “লালা (বিচারক) বাংলা ছেড়ে পালা”! এখানেই শেষ নয়, তদানীন্তন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাতের ফলে তারা যখন ঐ বিচারককে এই রাজ্য থেকে বদলি করাতে সক্ষম হল, তখন দলের ক্যাডাররা তাঁর বিদায়বেলায় গাড়ি আটকে ঐ শ্লোগান শুনতে বাধ্য করে। এছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ ভয় দেখানোর প্রক্রিয়া সেই বামফ্রন্ট আমলেই শুরু হয়। সুতরাং এখন ঐ দলের সাধু সাজার চেষ্টা ভন্ডামি মাত্র। কয়েক বছর আগে সিপিএমের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব, যারা ভারতে ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতার সবচেয়ে বড় সমর্থক, রামমন্দির সংক্রান্ত রায়ের পর, দেশের সুপ্রিম কোর্টের তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি মাননীয় রঞ্জন গোগৈকে কুৎসিত ব্যক্তি আক্রমণ করে বিবৃতি দেন! বিচারপতিদের “কালো হাত ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও” শ্লোগানের উদ্গাতাও এই দল! দুটি রাজনৈতিক দল – কংগ্রেস ও সিপিএমের ভাবাদর্শে গঠিত দল – তৃণমূল কংগ্রেসও যে প্রয়োজনে বিচারপতিদের “কালো হাত ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও”এর পথে হাঁটবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সময় এবং এই প্রদর্শনের কারন বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব নিতান্ত নিরুপায় হয়ে এই রাস্তা নিয়েছে!
এখানে একটি কথা বলা দরকার। এই মূহুর্তে শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নয়, পুরো তৃণমূল দলটাই আদালতের বিভিন্ন প্রকারের দুর্ণীতির রায়ে এবং মাননীয় বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে যথেষ্ট বিব্রত। একথা সত্যি যে আমাদের দেশে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের দুর্ণীতি নতুন কিছু নয়। নতুন যা সেটি হল, তৃণমূল দল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তার আলাদা অস্তিত্ব না রেখে রাজ্য-প্রশাসনের সব পর্যায়ে প্রশাসনিক প্রধানদের জায়গাকে দলীয় চেয়ারে পরিণত করেছে! থানার ওসি তৃণমূল দলের সমাবেশে মঞ্চ শোভিত করে দলের দেওয়া উত্তরীয় গলায় ঝুলিয়ে বসে থাকেন! এই দলের সর্বাধিনায়িকা – “অনুপ্রেরনা” দিদি সংবাদ-মাধ্যমে বিবৃতি দেন, মানুষের জন্য এই করলাম……., ঐ দিলাম…… ইত্যাদি! অথচ, সংবিধান অনুসারে কোন মন্ত্রী – এমনকি মূখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা শুধু নীতি নির্ধারন করাতেই সীমাবদ্ধ। তারা সরকারি কোষাগারের এক টাকাও খরচ করতে পারেন না। তারা আর্থিক অনুদান, “শ্রী” যুক্ত বা শ্রীহীণ প্রকল্পের পরামর্শ দিতে পারেন মাত্র – আর্থিক ব্যয়ের ক্ষমতা বিভাগীয় প্রধান IAS প্রশাসকদের হাতে থাকে। সেজন্য সরকারি তহবিল তছরুপে কোন মন্ত্রী বা রাজনীতিকের সরাসরি যুক্ত থাকার কথা নয়! কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান সময়ে সংবিধান মানার চেয়ে তা না মানার ঘটনাই বেশী। প্রশাসনের উপর দলীয় নেতাদের খবরদারি ও তাদের মৌখিক আদেশজারির বহু উদাহরণ আমরা সংবাদ-মাধ্যমের দৌলতে অবগত আছি। কিন্তু প্রশাসনের এভাবে দলীয় নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণের নজির আর নেই! পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এর বড় কারন গত ৫৫ বছর ধরে এখানে রাজ্যের শাসকদল ক্রমাগত প্রশাসনকে কুক্ষিগত করে দলদাস তৈরীর চেষ্টা করেছে! প্রথমদিকে কিছু বিরোধীতা থাকলেও ধীরেধীরে সম্পূর্ণ প্রশাসন শাসকদলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে! বর্তমান রাজ্য-সরকারে “অনুপ্রেরনা” এবং “ভাইপো” হচ্ছেন সুপ্রিমো! যতদিন শুধু অনুপ্রেরনার অধিনায়কত্ব ছিল, ততদিন ঐ দলের ভিতরের এবং বাইরের গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায়নি। পিসি, ভাইপোর মধ্যে যখন নেতৃত্ব ভাগ হল, তখন দলীয় আনুগত্যের সঙ্গেসঙ্গে প্রশাসনের আনুগত্যও দুভাগ হল!
সারদা কান্ড এই দলের সরকারে আসার পর প্রথম বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। তাতে সরকারি প্রশাসনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তেমন না পাওয়া গেলেও “অনুপ্রেরনা”র কাছের মানুষ, রাজ্যসভার দলীয় সাংসদ ও সাংবাদিক জেলে গেলেন ঐ কেলেঙ্কারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের কারনে। কয়েক বছর জেলে থাকার সময়ে তিনি বিক্ষিপ্তভাবে সংবাদ-মাধ্যমে যা জানিয়েছিলেন তার মর্মার্থ হল, এই সারদা কেলেঙ্কারির মূল কান্ডারী এবং এই আর্থিক কেলেঙ্কারির মূল অর্থ আছে “কালিঘাটের টালির চালা”র মালকিনের বাড়িতে! ইঙ্গিত স্পষ্ট – সরাসরি সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে অভিযোগ! অথচ দলের নেত্রীর বিরুদ্ধে এত বছরেও অভিযোগকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা কোন সরাসরি অভিযোগ আনতে পারেনি! সময়ের সঙ্গেসঙ্গে এই প্রাক্তণ এমপি, যিনি জামিনে ছাড়া আছেন, তিনি এখন দলের একজন প্রথমসারির নেতা! দুর্জনে বলে, এই জামিনে ছাড়া পাওয়া নেতা নাকি অনুপ্রেরনা নয়, “ভাইপোর লোক”! সে যাই হোক, নেতার কথা সত্যি হলে “অনুপ্রেরনা”র “টালির চালা” অনুসন্ধান করা অবশ্য কর্তব্য ছিল; আর সেখানে কিছু না মিললে মিথ্যা ‘অপবাদ’ দেওয়ার কারনে এই নেতার পুনরায় জেলযাত্রা অনিবার্য ছিল! এসব কিছুই হল না! সব কেমন রিপ ভ্যান উইঙ্কিলের মত ঘুমিয়ে পড়ল! কারন কেউ জানে না! এর দায় নিঃসন্দেহে ঐ এজেন্সির। এই কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রসঙ্গে অন্য মামলায় একজন বিচারক নিন্দাসূচক কথা বলেন তাদের তদন্তে ঢিলেমির জন্য। সাধারণ মানুষের মনে হচ্ছে, এই অনুসন্ধানকারী সংস্থা যেন কোন অদৃশ্য শক্তির অঙ্গুলী হেলনে পুতুল নাচের কুশীলবদের মত নাচছে! একবার তেড়েফুঁড়ে অনুসন্ধানে জোড় দেওয়া হচ্ছে – তারপরই কোন সাড়াশব্দ নেই! মনে হয়, কোন অদৃশ্য শক্তি চাইছে না যে, এই সব তদন্ত শেষ হোক! এমন ‘খেলা’ দীর্ঘদিন ধরে চললে আমজনতার এইসব দুর্ণীতি তদন্তের ব্যাপারে আর কোন মাথাব্যথা থাকে না। এক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। এই কারনে বিচারকের উপর আঘাত হেনে বিচার-ব্যবস্থাকে সন্ত্রস্ত করা চেষ্টা হবে কেন? কারন ভিন্ন।
এইসব ব্যাপার যদিও রাজনৈতিক ভাবে দল সামলে নিচ্ছিল বিভিন্ন রকমের সমঝোতার মাধ্যমে, গোলমাল বাঁধল উচ্চ-আদালতের একাধিক বিচারকের দুর্ণীতির তদন্ত আদেশ দেওয়ার প্রশ্নে। বিচারকরা তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থাদের সরাসরি আদালতের কাছে তদন্তের অগ্রগতি জানানোর আদেশ দিলেন! কোন অদৃশ্য শক্তির অঙ্গুলিহেলন ব্যতিরেকে সংস্থারা বাধ্য হল বিভিন্ন হাইপ্রোফাইল দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করতে! এই নেতারা সবাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন সরকারি অর্থ তছরুপের দায়ে নয়; তাঁদের গ্রেপ্তারের কারন বেআইনি কাজে মদত দেওয়া এবং আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির কারনে। সুতরাং, যারা ধরা পরল তাদের খলনায়ক বানিয়ে দলের দুই স্তম্ভ যখন ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত, তখন অনুসন্ধানকারী সংস্থাদের থেকে আদালতে পেশ করা তথ্য সংবাদ-মাধ্যমে বেরোতে লাগল। যার ফলে পিসি- ভাইপো জুটির ইমেজ প্রচন্ডভাবে কালিমালিপ্ত হল। প্রথমতঃ, এই রাজ্য-প্রশাসন শাসকদলের সমার্থক হওয়ায় দায় এসে পড়ছে সংবাদ-মাধ্যমের দ্বারা larger than life চেহারা দেওয়া “টালির চালা”র “অনুপ্রেরনা”র উপর! কারন, তাঁর উক্তি অনুযায়ী তিনিই সব কিছু করেন!প্রত্যেক বিধানসভা ভোটের সময় প্রচারে বলেন, ২৯৪টি আসনেই তিনি প্রার্থী!তাঁকে দেখেই মানুষ যেন তাঁর পছন্দ করা দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেন। মানুষ সে কথা শুনেছে। এখন যারা দুর্ণীতির দায়ে ধরা পরেছেন এবং দলের অন্য বড় নেতারা সবাই বলেন, সবই তাঁর”অনুপ্রেরনা”য়! সেজন্য এই দুর্নীতি স্বতঃসিদ্ধভাবে তাঁরই অনুপ্ররনায় অনুপ্রানিত হয়ে করা – বলে ধরা উচিৎ! আবার দলের কাটমানি তৈরীর অভিনব পদ্ধতি, এমনকি, শিক্ষা-দপ্তরে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা আদালতে বিচারকের রায়ে প্রমাণিত হয়, তখন তার দায়ও শীর্ষ নেতৃত্বের উপর বর্তায় – কারন এই নীতি উচ্চ পর্যায়ের সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়। এদিকে যাদের আদালতের রায়ে অবৈধ উপায়ে “কাটমানি” দিয়ে পাওয়া চাকরি চলে যায়, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই তাদের দেওয়া টাকা ফেরৎ চায়! ফলতঃ, দলীয় এজেন্টদের নামও প্রকাশ্যে এসে যাচ্ছে! শুরুর দিকে জিহাদী তোষণ করে, সাধারন বাঙ্গালী মুসলমানদের মিষ্টি কথা বলে এবং বিশেষ বিশেষ ইসলামী পরবে হিজাব পড়ে আল্লার দোয়া মাঙ্গার অভিনয় করে বৃহত্তর ইসলামী সমাজকে ধোঁকা দিতে পারলেও তাঁরা অবশেষে এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ধরে ফেলে “অনুপ্রেরনা”র ঝান্ডা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এই ব্যাপারের সঙ্গে আবার “অনুপ্রেরনা” অনুগামীর সাথে “শান্তিনিকেতন”এর “ভাইপো” অনুগামীদের গোলমাল বিভিন্ন জায়গায় চরমে পৌঁছেছে! উচ্চ-আদালত নির্দেশিত অনুসন্ধানের ঠেলায় এখন পুরো দলের অবস্থা হল, কে কত কাটমানি তুলে “টালির চালা” বা “শান্তিনিকেতনে জমা দিতে পারে তার প্রতিযোগিতায় দলের সামাজিক পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে – এই ব্যাপারটি বিচারকদের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার উপর নজরদারিতে পুরো দল এবং প্রশাসনকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। আদালতের দৃষ্টির নীচে অনুসন্ধান বন্ধ করার ক্ষমতা দলীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসন কারোরই নেই। সেজন্য দলীয় নেতৃত্ব স্বাভাবিক কারনেই বিচার-বিভাগকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তাদের দুর্ণীতির বিরুদ্ধে আদালতের রায়কে নিজেদের পক্ষে আনার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা মাননীয় বিচারপতির এজলাস বয়কট সহ তার বসতবাড়িতে পর্যন্ত পোস্টার সাঁটিয়েছে। কাউকে বিচারপতির এজলাসে ঢুকতে দেয়নি!এতে পুলিশ-প্রশাসন-রাজনৈতিক দলের আঁতাত স্পষ্টতই প্রমাণিত।
সরকারি কর্মচারিদের ডিএ বঞ্চনা, সরকারি ও সরকার পোষিত সংস্থায় চাকরির সংকোচনের সঙ্গেসঙ্গে টাকার বিনিময়ে অনৈতিক উপায়ে চাকরি বিক্রি, উন্নয়ণের নামে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ ব্যয়ে “কাটমানি” ইত্যাদি অভিযোগে জর্জরিত রাজ্য-সরকার জানে, এভাবে বেশিদিন তারা রাজ্যপাট ধরে রাখতে পারবে না! এই মূহুর্তে সমস্যা হল, এই বিচারপতির এজলাসে এমন একটি কেস এসেছে যেখানে “ভাইপো” এবং তাঁর শ্যালিকার যুক্ত থাকার অভিযোগ আছে! এই কেসে শ্যালিকা গ্রেপ্তার হলে “ভাইপো” আর কতদিন খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন! তখন আদালতের আদেশে হয়ত কেন্দীয় সরকারের ‘অনিচ্ছা’ থাকলেও এই রাজ্য-সরকারকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হবে! এই ভয় থেকেই এমন ব্যবহার। কোন বিচারপতি কি ধরনের কেসের বিচার করবেন তা ঠিক করেন প্রধান বিচারপতি। সুতরাং এক্ষেত্রে তারা যদি ভীতি প্রদর্শনে সফল হত তাহলে পরবর্তী টার্গেট অবশ্যই প্রধান বিচারপতি!
এখন রাজ্যের রাজনৈতিক অবস্থা মোটেই সুস্থির নয়। ক্ষমতাসীন দলের দুর্ণীতি সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত হচ্ছে। আবার কোন বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা আছে বলে মনে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের একমাত্র বিপদ আসতে পারে আদলতের দিক থেকে। তাই তারা পূর্বসূরিদের থেকে আরো aggrasive হয়ে বিচারকদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে দূর্ণীতির প্রশ্নে আদালতের রায়কে নিজেদের দিকে আনতে চাইছে। ভুল তাদের একটি জায়গায় – আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকদের সহযোগীতায় ভোটের সময় সাধারন ভোটারকে সন্ত্রস্ত করা আর উচ্চ-আদালতের বিচারকদের সন্ত্রস্ত করা এক নয়! শস্তা, নোংরা রাজনীতির রেকর্ড তৈরী হল। এতে ক্ষতি হল রাজ্যের শাসকদলেরই।
বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কেন
