বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন ও কিছু প্রশ্ন

২১শে এপ্রিল, ২০২২, অনেক ঢক্কানিনাদের সাথে পশ্চিমবঙ্গের বার্ষিক বাণিজ‍্য মেলা অনুষ্ঠিত হল। করোনা পরিস্থিতির কারনে বিগত দু বছর পশ্চিমবঙ্গবাসী “বাণিজ‍্য মেলা” দেখেনি। আমাদের মূখ‍্যমন্ত্রীর ভাষ‍্য অনুযায়ী এই দু বছরে সারা ভারতের বাণিজ্য পরিস্থিতির অধোগতি হলেও পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ‍্যিক অগ্রগতি রেকর্ড করেছে! মমতাদেবীর মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যিক সম্মেলনকে ধরে এটি তাঁর সপ্তম বাণিজ্য সম্মেলন। সম্মেলনের অন্তিমলগ্নে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে ঘোষণা করা হল – এবার ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার নতুন লগ্নীর প্রস্তাব এসেছে! এটি একটি রেকর্ড। রাজ‍্য সরকারের তথ‍্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত Bengal Global Business Summit এ মোট লগ্নীর প্রস্তাব ১২ লক্ষ ৩২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার! আবার কেন্দ্রীয় শিল্প দপ্তরের কাছে পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী তা ৩৭ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা!
রাজ‍্যের শিল্প পরিস্থিতি বোঝাতে দুটি উদাহরণই যথেষ্ট – প্রথমটি রাজ‍্যের সিলিকন ভ‍্যালি, যেটি মূখ‍্যমন্ত্রীর ছবি সহ হোর্ডিং দিয়ে পাঁচিল তুলে ঘিরে রাখা আছে। পরিত‍্যক্ত হোগলার জঙ্গল, গরু চড়ানো ছাড়া এর ভেতরের কোন শিল্প সংক্রান্ত কাজকর্মের কথা জানা নেই। দ্বিতীয়টি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব, যেখানে জমি নেওয়া সজ্জন জিন্দাল সহ অন‍্যান‍্য শিল্পপতিরা জমি ফেরত দিয়ে দিয়েছেন! ফলে, ওই হাবও এখন রাজ‍্য সরকারের হেপাজতে পড়ে আছে।
একটি কথা ঠিক যে, শ্রীমতি মমতা ব‍্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গের ত বটেই, দেশের মধ‍্যে অগ্রগণ‍্য রাজনীতিকদের মধ‍্যে সামনের সারিতে আছেন। কিন্তু তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে আমার রিজার্ভেশান আছে। তবে, ভারতীয় রাজনীতিকদের মধ‍্যে তাঁর মত সাহসী আর কেউ নেই। তিনি জানেন যে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার গগণচুম্বী। সিঙ্গুর থেকে টাটা বিতারণের পর যে পশ্চিমবঙ্গে অমন বৃহৎ শিল্প আর অদূর ভবিষ‍্যতে সম্ভব নয়, তা না বোঝার মত বোকা তিনি নন। আবার, আজকালকার রাজনীতিকদের মত তিনি জনমোহিনী রাজনীতির মাস্টার চ‍্যাম্পিয়ন। সেজন‍্য তিনি তাঁর রাজনীতির বিবিধ ক্ষেত্রের মধ‍্যে একটি ক্ষেত্র হিসেবে BGBSকে দেখছেন। এ ব‍্যাপারে তিনি তাঁর সিনিয়র, জ‍্যোতি বসুর পদাঙ্ক অনসরণ করেছেন। জ‍্যোতি বসু প্রতি বছর কোলকাতায় গরম পড়লেই সরকারী অর্থব‍্যায় করে শীতের দেশে, প্রধানতঃ গ্রেট ব্রিটেনে বিশ্রামে যেতেন। রাজ‍্যের ধামাধরা সংবাদ-মাধ‍্যমগুলি একসঙ্গে শিয়ালের মত রব তুলত, মূখ‍্যমন্ত্রী বিদেশ থেকে শিল্পপতি ধরে এনে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপন করানোর কাজে গেছেন! জ‍্যোতি বসুর দলও এই প্রচারে পুরোপুরি মদত দিত। তারপর, বছরের পর বছর ধরে একই চিত্রনাট‍্যের নাটক দেখে জনসাধারণ হাসাহাসি শুরু করলে তা বন্ধ হয়। পরবর্তীতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপনের জন‍্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলেও নিজের দলের একাংশের অসহযোগীতা এবং শ্রীমতি মমতা ব‍্যানার্জীর আন্দোলনে তা ব‍্যর্থ হয়। পশ্চিমবঙ্গের মূখ‍্যমন্ত্রীদের মধ‍্যে শুধু ডঃ বিধানচন্দ্র রায় ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য বিদেশে গিয়ে রাজ‍্যের জন‍্য লগ্নী এনেছিলেন – একথা ঐতিহাসিক সত‍্য।
জঙ্গী শ্রমিক আন্দোলনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের কলকারখানাগুলি বেশীরভাগ বন্ধ। যে কটি খোলা, তা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। পশ্চিমবঙ্গে কিছু অত‍্যাবশ‍্যকীয় সামগ্রী উৎপাদন শিল্প ও সার্ভিস সেক্টর চালু আছে – যেমন বিদ‍্যুৎ শিল্প। তাও সঞ্জীব গোয়েঙ্কার CESC বিদ‍্যুতের যে দাম নিচ্ছে তা রাজ‍্য বিদ‍্যুৎ নিগমের দামের তুলনায় বেশী। CESC লাভজনক বেসরকারী সংস্থা হলেও রাজ‍্য সরকারের বিদ‍্যুৎ নিগম ভর্তুকির উপর নির্ভরশীল। একদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ‍্যে বিদ‍্যুৎ উদ্বৃত্ত জানাচ্ছে, আবার তারা জিন্দালদের বিদ‍্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাচ্ছে! আদানী গোষ্ঠী উত্তরবঙ্গে বিদ‍্যুৎ বন্টনের দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। এসব থেকে অন্ততঃ একথা পরিষ্কার যে, রাজ‍্যে বিদ‍্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকায় নতুন করে বিদ‍্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র খোলার সম্ভাবনা নেই। শুধুমাত্র রাজ‍্য বিদ‍্যুৎ উৎপাদন ও বন্টন নিগমের ভরতুকী ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলার জন‍্য রাজ‍্য সরকার এই সুদৃঢ় ইনফ্রাস্ট্রাকচার সমন্বিত সরকারী প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী হাতে দিতে চাইছে! এমন কোন শিল্পপতি আছেন কি যিনি লোকসানে চলা এই শিল্পকে নিয়ে ভরতুকীর অর্থ জোগান দিয়ে যাবেন! খেলাটা অন‍্য জায়গায়। এই সরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়ীত্ব নিয়ে বেসরকারী উদ‍্যোগপতি তাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে দুটি দাওয়াই প্রয়োগ করতে পারেন – কর্মী সংকোচন ও কর্মীদের ওয়ার্কলোড বাড়ানো এবং বিদ‍্যুতের মাশুল বৃদ্ধি। রাজ‍্য সরকার এতে রাজি না হলে এই সেক্টারে বিনিয়োগ আসবে না। আবার রাজ‍্য সরকার রাজি হলে কর্মসংস্থান ত বাড়বেই না, বরং কমবে! বিদ‍্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি হলে তার কারনে জনমনে সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়বে।
পশ্চিমবঙ্গের এই বাৎসরিক অনুষ্ঠানের বিনিয়োগজনিত সুবিধা রাজ‍্য সরকার কতটা পাবে তাতে সন্দিহান থাকলেও রাজনৈতিক সুবিধা যে মূখ‍্যমন্ত্রী ও তাঁর দল আদায় করে নেবেন তা বলাই বাহুল‍্য। শিল্প বিনিয়োগের জন‍্য মূখ‍্যমন্ত্রী রাজ‍্যের আটটি সুদৃঢ় স্তম্ভের উল্লেখ করেছেন। এই স্তম্ভগুলি তাঁর মতে দেশের মধ‍্যে পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে ভালো! এগুলি হল – ১) বিশ্বমানের শিল্প পরিকাঠামো; ২) শিক্ষা ব‍্যবস্থার মানোন্নয়ন; ৩) সামাজিক সুরক্ষা ও মহিলাদের ক্ষমতায়ন; ৪) উদ্বৃত্ত বিদ‍্যুৎ, ৫) বন্ধ মুক্ত রাজ‍্য; ৬) সরকারী স্বাস্থ‍্যবীমা; ৭) ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস; 8) ই-গভর্ন‍্যান্স ও ই-টেন্ডারিং। এই বক্তব‍্যে যৌক্তিকতা কতটা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও রাজনীতি যে শতকরা একশভাগ তাতে কোন সন্দেহ নেই। রাজ‍্যের সাধারণ মানুষের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন না করে শিল্পপতিরা শুধুমাত্র মূখ‍্যমন্ত্রীর কথা আর বশংবদ সংবাদ-মাধ‍্যমের উপর বিশ্বাস করে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন ভাবলে মূর্খের স্বর্গে বাস করতে হয়! পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাঘাটের হাল, আইন-শৃঙ্খলা ও সিন্ডিকেটরাজের দৌরাত্ম‍্য, যার বড় রক্ষাকর্তা শাসকদলের পুলিশ – এসব বিনিয়োগে উৎসাহী শিল্পপতিদের অজানা নয়। ই-টেন্ডারিং ও বন্ধ মুক্ত পরিবেশ এই রাজ‍্যের বৈশিষ্ট নয়, যে সব রাজ‍্যে বিনিয়োগ হচ্ছে সেখানকার নূন‍্যতম চাহিদা। ই-গভর্ন‍্যান্স কিন্তু এখনো রাজ‍্যে তৃণমূলস্তরে সম্পূর্ণ হয়নি। সরকারী স্বাস্থ‍্যবীমা ও সামাজিক সুরক্ষার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের খন্ডিত রূপায়ণের পরও এই রাজ‍্য গুজরাট, ওড়িশা, কর্নাটক ও অন্ধ্র, তেলেঙ্গানার তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। আর উদ্বৃত্ত বিদ‍্যুতের কারন যে রাজ‍্যের শিল্পজগতের গঙ্গাজলী যাত্রা, সে জানতে কোন হবু বিনিয়োগকারীর বাকী নেই! এদিকে, স্বাস্থ‍্য সেক্টারে যারা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁরা কি এ রাজ‍্যের সাম্প্রতিক স্বাস্থ‍্য-কমিশন দ্বারা চিকিৎসা পরিষেবার মূল‍্য বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি জানেন? তাঁরা কোন স্তরে কিভাবে কাটমাণি দিতে হয় তার হিসেব জানেন? এই কারনেই স্বাস্থ‍্য পরিষেবায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে বলে ত মনে হয় না।
এ রাজ‍্যে পরিবহন ব‍্যবস্থায় সরকারী হস্তক্ষেপ, কাটমাণি এবং রাস্তাঘাটের হাল ও বিভিন্ন রকম করের বাহুল‍্যে পরিবহণ শিল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে – বিশেষতঃ পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিষ্টেম। এই রাজ‍্যে ‘ওলা’, ‘উবের’ অ‍্যাপ ক‍্যাবগুলি বুকিংয়ের সময় এসি গাড়ীর বুকিংয়ের টাকা নিলেও ড্রাইভাররা এসি চালায় না।রাজ‍্য সরকারের পরিবহণ দপ্তর এসব জানার পরেও কোন গূঢ় কারনে নিশ্চুপ তা জানা যায়নি! এমতাবস্থায় কোন বিনিয়োগকারী পরিবহন সেক্টারে বিনিয়োখের প্রতিশ্রুতি রাখবেন বলে মনে হয় না।
গৌতম আদানীর দশ বছরে দশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজ‍্যের মূখ‍্যমন্ত্রী ত বটেই, বশংবদ সংবাদ-মাধ‍্যমগুলিও আনন্দে গদগদ! পোর্ট, ভোজ‍্যতেল এবং কিছু সার্ভিস সেক্টর মিলিয়ে এই বিনিয়োগ নস‍্যি। এই প্রসঙ্গে একটি খবর জানাই যা বশংবদ সংবাদ-মাধ‍্যম জানাতে ভুলে যায় – এক্সাইড কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ না করে কর্নাটকে ৬০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। কর্নাটক সরকার কিন্তু এ নিয়ে আলাদা কোন উচ্ছ্বাস দেখায়নি। আসলে, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ‍্য মেলা একটি বাৎসরিক মিলনক্ষেত্র, যেখানে কয়েকজন বিনিয়োগকারীকে ডেকে এনে জামাই আদর করে, রাজনৈতিক বক্তব‍্য রেখে – তা বশংবদ সংবাদ-মাধ‍্যমকে দিয়ে রাজ‍্যে ছড়িয়ে, ভোটারদের প্রভাবিত করার কৌশল। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে এই মেলার গুরুত্ব কত তা বোঝা যাবে একটি পরিসংখানে – ২০১৯ এ এই মেলায় ৩৫টি দেশের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। এবারে ১৯টি দেশের প্রতিনিধি এসেছেন।
বাণিজ‍্য মেলার শুরুতে প্রথম দিন এক বহুল প্রচারিত বৈদ‍্যুতিন মাধ‍্যমে দেখলাম যে, মূখ‍্যমন্ত্রী বলেছেন দেড় কোটি মানুষের কর্ম সংস্থান হবে! আবার মেলার শেষে মূখ‍্যমন্ত্রীর মুখে শুনলাম ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে! কোনটা ঠিক? আগের সবকটি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মূখ‍্যমন্ত্রী বেকারদের সাকার বানানোর যে সংখ‍্যাগুলি বলেছিলেন তার মিলিত যোগফলের হিসেব করলে দেখা যাবে এত বেকার এই রাজ‍্যে নেই; অন‍্য রাজ‍্য থেকে বেকার ভাড়া করে আনতে হবে! তাহলে, রাজ‍্য সরকার তথ‍্য প্রমানাদি সহকারে রাজ‍্যের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ‍্যা জানায় না কেন? এভাবে ‘ভাবের ঘরে চুরি’ আর কতদিন চলবে? এই মেলার বড় উদ্দেশ‍্য বাণিজ্য না রাজনীতি সেটা বোঝার জন‍্য একটি ঘটনার উল্লেখ করছি। ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতি – গৌতম আদানী, মুকেশ আম্বানী, কুমার বিড়লা, জিন্দালদের (এদের প্রত‍্যেকের পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বিনিয়োগের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নগন‍্য পরিমাণ) উপস্থিতিতে রাজ‍্যের রাজ‍্যপাল মহোদয়কে সম্বোধন করে মূখ‍্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করতে বললেন যে, এই কথাটা শিল্পপতিরা বলতে পারছেন না, তাই তিনি শিল্পপতিদের হয়ে বলছেন, কেন্দ্রীয় কোন তদন্তকারী সংস্থা যেন এদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করেন! এটি একটি বাণিজ্য সম্মেলন – এখানে এই বক্তব‍্য কি এই শিল্পপতিদের ; নাকি তাঁরা মূখ‍্যমন্ত্রীর কথাকে মাণ‍্যতা দিচ্ছেন! মূখ‍্যমন্ত্রীর এই বক্তব‍্য কি প্রোটোকল ভাঙ্গা নয়? রাজ‍্যপাল কিন্তু কোন প্রগলভতা দেখান নি। হাত জোর করে হেসেছেন। মূখ‍্যমন্ত্রীর এই বক্তব‍্যে কেন্দ্রীয় এজেন্সীগুলির তদন্তের ফলে (যেগুলি আদালতের আদেশে হচ্ছে এবং প্রায় প্রতিটি রায়ের বিরুদ্ধে রাজ‍্য সরকার সর্বোচ্চ আদালতে আপীল-সওয়াল করেছে তদন্ত আটকাতে) মূখ‍্যমন্ত্রীর দলের নেতা-নেত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে, তা পরিষ্কার। এই বক্তব‍্যের পরে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আরো কমার কথা! রাজ‍্যের মূখ‍্যমন্ত্রী কিন্তু মূর্খ নন। তিনি এই কথায় কেন্দ্রকে রাজনৈতিক বার্তা দিলেন। অর্থাৎ, তিনি বিশ্ববঙ্গ বাণিজ‍্য সম্মেলনকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবেই ব‍্যবহার করলেন।
শেষে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়। এই বাণিজ‍্য সম্মেলনের আয়োজক ভারতের একটি অঙ্গরাজ‍্য – পশ্চিমবঙ্গ। উদ্বোধক রাজ‍্যের মাননীয়া মূখ‍্যমন্ত্রী এবং বিশেষ অতিথি রাজ‍্যের মাননীয় রাজ‍্যপাল মহোদয়। কিন্তু মূখ‍্যমন্ত্রীর বক্তব‍্যে ত নয়ই, কোন হোর্ডিংয়ে বা অন‍্য কোথাও পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ নেই। সব জায়গায় বলা হচ্ছে – Bengal (বাংলা)। এই বেঙ্গল ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট থেকে অস্তিত্বহীণ। জানিনা এর ফলে অন‍্য একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে কিনা – তা হল, স্বাধীন বাংলার ধারনা। এটি ভ্রমবশতঃ হয়ে থাকলে সংশোধন করা হোক। সচেতনভাবে করা হলে – সাধু সাবধান। কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষস্থানীয় মানুষদের অনুপস্থিতি একটি অঙ্গ রাজ‍্যের বিশ্ব বাণিজ‍্য সম্মেলনের উদ্দেশ‍্য ও সাফল‍্য সম্পর্কে সন্দেহ জাগায়। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, কোন রাজ‍্য অন‍্য দেশের সঙ্গে বাণিজ‍্য সম্পর্ক করতে চাইলে কেন্দীয় সরকারের কাছে আবেদন ও তার অনুমোদন আবশ‍্যক। সুতরাং এই সম্মেলনের ব‍্যাপারে ধোঁয়াশা রয়েই গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *