আজকাল বিশ্বভারতী নিয়ে সংবাদ-মাধ্যম থেকে রাজনৈতিক নেতারা – সবাই নাকি খুবই চিন্তিত! বিশ্বভারতীর শিক্ষা-ব্যবস্থা নাকি ভেঙ্গে পড়ার মুখে! এমনকি, শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলন করা বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্রছাত্রীরা অব্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বহিষ্কার চাইছে! তারা জানে না, তাদের রাজনৈতিক গুরুঠাকুররা অপছন্দের উপাচার্যদের সঙ্গে কেমন পাশবিক ব্যবহার করেছে – কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্যকে দিয়ে যা শুরু! এই দলের ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অপেক্ষা আন্দোলনকে (নিজেদের দলীয় মত প্রতিষ্ঠা না হওয়া পযর্ন্ত) চালিয়ে যাওয়া তাদের প্রাথমিক কর্তব্য মনে করে! আবার অন্য রাজনৈতিক দলের স্বার্থ যখনই বাধা পায়, তখনই তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা উপাচার্যের বিরুদ্ধে কামান দাগা শুরু করে! মনে হয়, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যেন এইসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলনের “পাঞ্চিং ব্যাগ”। রাজ্য এবং দেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনটা দেখা যায় না।
এর কারন অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রথমেই যেটা মনে হল, তা হচ্ছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কি ছিল তা বর্তমান প্রজন্ম জানে না। ক্ষমতাশালী মানুষজন কখনো সেই উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দেয়নি। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন বিশ্বভারতীতে এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে, যেখানে প্রথাগত শিক্ষা – বিশেষতঃ শিক্ষার dogmatic বাধ্যবাধকতা থাকবে না – যেখানে মুক্ত, খোলা পরিবেশে, শ্রেণীকক্ষের বাইরে, মাটির কাছে থেকে, প্রকৃতিকে উপভোগ করার সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা অন্তরের টানে শিক্ষার আলোকে আলোকিত হবে। এই শিক্ষা-ব্যবস্থা মেকলে প্রবর্তিত নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম ভিত্তিক, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট বিষয়ের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা-ব্যবস্থার থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। এই পদ্ধতির অভিনবত্ব লুকিয়ে আছে – তার প্রকৃতির কোলে চড়ে চাপমুক্ত জ্ঞানার্জনের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই এই পদ্ধতি সার্থক রূপ পায়। ১৯২১ সালের ২৩শে ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ এই আশ্রমিক মডেল শিক্ষায়তনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন বলে ধরা হলেও তার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতিপর্ব চলেছিল। প্রথাগত শিক্ষা-ব্যবস্থাকে এই শিক্ষা-ব্যবস্থা যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল, তা রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই সার্থক হয়েছিল।
কবিগুরুর মৃত্যুর পর থেকে স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব ছিল তাঁর সুযোগ্য পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। তিনি পিতার স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বহু বছর জড়িত থাকার সুবাদে প্রতিষ্ঠানের স্বাতন্ত্র, ঐতিহ্য এবং মানের ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর পরিস্থিতিতে পুরো ছবিটাই দ্রুত পাল্টাতে থাকে। ইতিমধ্যে কবিগুরু এবং অন্য আশ্রমিকদের প্রচেষ্টায় বিশ্বভারতীর সুনাম আন্তর্জাতিকস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। তখন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষবৃদ্ধি ও তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপ্তির কারনে যে অর্থের প্রয়োজন, তা ঠাকুর পরিবারের পক্ষে যোগানো কষ্টসাধ্য ছিল। উপরন্তু, সরকারি দাক্ষিণ্য পেলে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপ্তির কাজ অনেক সহজ হয় বলে, রথীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীকে ভারত সরকার দ্বারা অধিগ্রহণের প্রস্তাবে সায় দেন। ঠিক হয়, এটি এই রাজ্যে প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসন বজায় থাকবে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয় যেখানে প্রথম উপাচার্য হিসেবে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম অনুমোদন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার যোগানোর দায়িত্ব নেয়। বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক হন দেশের রাষ্ট্রপতি এবং আচার্য হন প্রধানমন্ত্রী। সেই মোতাবেক প্রথম আচার্য হলেন জওহরলাল নেহরু। ১৯৫১ সালের মে মাসে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পার্লামেন্টে আইন করে একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেব আত্মপ্রকাশ করে। পরিদর্শক রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রথম উপাচার্য হিসেবে রথীন্দ্রনাথ নিযুক্ত হন।
এর পর থেকে দ্রুত পটপরিবর্তন হতে থাকে। বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য, তার বিচারধারা, শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে সম্পূর্ণ অপরিচিত থাকা রাজনীতিক এবং আমলারা বিশ্বভারতীকে আর পাঁচটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত ভেবে সরকারি সম্পত্তি মানে – “আমাদের সম্পত্তি” মনে করে তার উপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করলেন! রাজ্যের অধুনা জেল হাজত নিবাসী একজন প্রাক্তণ শিক্ষামন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষকদের মাইনে দেন বলে নাকি শিক্ষকরা তাঁদের “চাকর”! এমন মধ্যযুগীয় প্রভুত্ববাদী চিন্তার প্রকাশের জন্য সে সময় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আমার মত অনেকেই নিন্দা করেছিলেন। কিন্তু কথাটা নির্মম সত্যি যে, ভারতের রাজনীতিকদের শিক্ষাজগৎ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক ধারনার অভাব প্রথম থেকেই ছিল। জওহরলাল এবং তাঁর দলবল বিশ্বভারতীকে সরকারি প্রতিষ্ঠান মনে করে তার স্বশাসন ব্যবস্থার ডানা ছাটতে উদ্যোগী হলেন। “বাবু যত বলে, পারিষদ দলে বলে তার শতগুণ” – আমলারাও ঝাঁপিয়ে পড়লেন একই অভিপ্রায় নিয়ে। এদের সম্মিলিত ভোগলিপ্সা ও চিন্তার দৈন্যতায় কবিগুরুর স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হল!
আমাদের দেশে এক অদ্ভুত সিষ্টেম চালু আছে – যদি কাউকে কোন জায়গা বা প্রতিষ্ঠান থেকে হটাতে চাও ত তার বদনাম কর! দেশের মানুষ দুটি বদনাম ভালোভাবে “খায়” – একটি চারিত্রিক অর্থাৎ অবৈধ সম্পর্ক, দ্বিতীয়টি আর্থিক তছরুপ! লক্ষণীয় বিষয় হল, কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা অধিগ্রহনের পর স্বশাসিত বিশ্বভারতীর শিক্ষা পদ্ধতিতে অর্ধশিক্ষিত রাজনীতিক এবং মেকলে প্রবর্তিত শিক্ষায় শিক্ষিত আমলাদের দুর্বিনীতের মত নাক গলানো মেনে নেওয়া রথীন্দ্রনাথের মত একজন প্রশাসকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফল যা হবার তাই হল! অযথা প্রতি পদে সরকারের থেকে বাগড়া দেওয়ার পর, কিছু লোভী মোসাহেবকে দিয়ে রথীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পর্ক এবং বিশ্বভারতীর তহবিল তছরুপের অভিযোগ আনা হল! এখন কিন্তু এই অভিযোগে অভিযুক্ত রাজনৈতিক নেতারা বীরের সম্মান পান! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রের পক্ষে এ অপমান সহ্য করা সম্ভব ছিল না। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কিছুদিনের মধ্যে পদত্যাগ করলেন।
এটাই কেন্দ্রের রাজনীতিকদের উদ্দেশ্য ছিল। তারা তখন তাদের মোসাহেবদের থেকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিভিন্ন “সভা” গঠনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ইয়েসম্যানদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে শুরু করলেন। বিশ্বভারতীর সংস্কার ও সম্প্রসারণের নামে “আরেকটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়” হিসেবে বিশ্বভারতীর আত্মপ্রকাশ ঘটল! বিষয়ভিত্তিক পঠন-পাঠনে মেকলে প্রবর্তিত শিক্ষা-ব্যবস্থার যে কাঠামো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল, তেমনই একটি বিশ্ববিদ্যালয় হল বিশ্বভারতী! রবীন্দ্রচিন্তায় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল, রাবীন্দ্রিক চেতনায় যার শিক্ষা পদ্ধতির উদ্ভব, সেখানে কিভাবে set patternএর পদার্থবিদ্যা, রসায়ণ ইত্যাদির মত বস্তুনিষ্ঠ বিশুদ্ধ বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয় পড়ানো হতে পারে? ইউজিসি নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একই ধাঁচে, একই পাঠ্যক্রমে বিশ্বভারতীর শিক্ষা ব্যবস্থাকে ফেলা হল। এভাবেই রবীন্দ্রনাথের মানসপুত্র বিশ্বভারতী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মৃত্যু ঘনিয়ে আসে।
তারপর সময়ের সাথে সাথে কেন্দ্রে এবং রাজ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সরকার ক্ষমতায় এলেও বিশ্বভারতীর উপর কর্তৃত্ব ফলানোর সুযোগ কেউই ছাড়তে রাজি হয়নি। সম্প্রতি একটি খবর জেনে ভালো লাগছে – যেসব অভিযোগের কারনে রথীন্দ্রনাথ উপাচার্য পদ ছেড়ে চিরদিনের জন্য বিশ্বভারতী ত্যাগ করে চলে যান, সেসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে, স্বার্থান্বেষী মহল বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য ও গরিমা নষ্ট করার পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে তাদের প্রথম বাধা উপাচার্য রথীন্দ্রনাথকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল!
এস ওয়াজেদ আলীর গল্পের বিখ্যাত লাইন মনে পড়ল – “সেই ট্র্যাডিশান সমানে চলেছে” – রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করে বিশ্বভারতীর উপর কর্তৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা। ধীরে ধীরে শুধু রাজনৈতিক দল তথা নেতার বশংবদকে উপাচার্য বানিয়েই ক্ষান্ত না হয়ে বিশ্বভারতীর নীতি নির্ধারন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া – সব জায়গায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেড়ে যেতে লাগল। বিশ্বভারতীর একটি মূল্যবান asset হল তার প্রভূত স্থাবর সম্পত্তি। এই সম্পত্তির অংশবিশেষ আত্মসাৎ করার চেষ্টায় রাজ্য তথা স্থানীয় প্রশাসনের নেতারা সক্রিয় হল! অভিযোগ আছে যে, এক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পযর্ন্ত এই বেআইনী দখলদারী প্রক্রিয়ার সুযোগে নিজের ব্যক্তি মালিকানার বাড়ির জমির মধ্যে বিশ্বভারতীর জমির কিয়দংশকে নিজের বলে দাবী করেছেন! এই অভিযোগের জবাব পর্যন্ত ঐ অর্থনীতিবিদ দেননি – অস্বীকার করা ত দূরের কথা! এক অশিক্ষিত রাজনৈতিক নেতা, যিনি তাঁর সাম্প্রতিক জেলযাত্রার আগে পর্যন্ত শান্তিনিকেতনের মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন বললে ভুল হয় না, প্রায় প্রতিদিন নিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কাজের সমালোচনা করতেন! শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কহীন রাজনৈতিক নেতাদের অযাচিত হস্তক্ষেপে বিশ্বভারতীর অবস্থা হার্বিভোরাস ডাইনোসরের মত! বহু অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত এবং কিছু শিক্ষিত ধান্দাবাজদের আক্রমণ তাকে সহ্য করতে হচ্ছে।
বিশেষতঃ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কংগ্রেস জমানায় কংগ্রেস-কম্যুনিস্ট হনিমুনের সুযোগে শিক্ষক নিয়োগ থেকে ছাত্র-সংসদ, সবেতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কম্যুনিস্ট কন্ট্রোল চলে আসে। শিক্ষাকে কন্ট্রোল করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবেই কম্যুনিস্টরা এভাবে এগিয়েছে – বিশ্বভারতী তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার বামপন্থীকরন নীতির রূপায়নে কোন রকম বাধা এলেই এরা কম্যুনিস্ট ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে ধ্বংসাত্নক আন্দোলনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশ্বভারতীতেও একই কায়দা অনুসৃত হচ্ছে। অল্প সংখ্যক ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করে তাদের দলীয় নেতৃত্বের সুনজরে আসতে চেষ্টা করে যাতে ভবিষ্যতে তারা প্রত্যক্ষ রাজনীতিকে জীবিকা হিসেবে নিতে পারে! এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বংসাত্মক গুরুত্বহীন আন্দোলন চালানো হয়। প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রচ্ছন্ন মদত থাকায় এই আন্দোলন দমন করার প্রকৃত ক্ষমতা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বা উপাচার্যর নেই।
একথাও সত্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য চয়ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন – সব জায়গায় হস্তক্ষেপ – তা রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় তরফেই – রাজনীতিকদের একটি রুটিন অধিকারে দাঁড়িয়েছে! ফলে, প্রকৃত ক্ষমতাহীন অনুগৃহীত প্রশাসকের পক্ষে ও ধরনের তৈরী করা নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা অসম্ভব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এতে লাভ কার? শুধু কিছু তাৎক্ষণিক সুবিধা নেওয়া এবং অনৈতিকভাবে পাওয়া অর্থনৈতিক লাভ ছাড়া রাজনীতিকদের আর কোন লাভ নেই। কবিগুরুর স্বপ্ন, দেশের শিক্ষা জগতের গৌরব, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের অধিগ্রহণ ও তারপর তাকে আর পাঁচটা সাধারণ শিক্ষায়তনের পর্যায়ে নামিয়ে আনার দায় এই রাজনৈতিক নেতাদের। শিক্ষার দৈন্যতা, গগনচুম্বী লোভ, বিশ্বভারতীর স্বতন্ত্রতা বিষয়ে বোধের অভাব – এ সব মিলে আজ এই বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি মূমুর্ষ অবস্থায় আইসিইউতে! এর দায় শুধু বিশ্বভারতীর প্রশাসককে দিয়ে লাভ নেই। কারন প্রশাসককেও চয়ন করেন একই রাজনীতিবিদরা। এভাবে একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষার বদলে ১৯৫১ সালের অধিগ্রহণ ও তৎপরবর্তী রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এর ধ্বংসের মূল কারন। একে বাঁচাতে হলে রাজনীতিমুক্ত প্রশাসন এবং প্রকৃত স্বশাসন একমাত্র ওষুধ।
বিশ্বভারতীতে কবিগুরুর স্বপ্নের মৃত্যুর কারন
