আজকাল আমরা সেজেগুজে থাকা ‘সাজানো’ বিদ্বান মানুষদের কাছে প্রায়শঃই একটি কথা শুনি – দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সর্ববৃহৎ দল ‘বিভেদের রাজনীতি করছে! এই ‘বিভেদ’এর রাজনীতি কি এবং কিভাবে দেশে বিভেদের রাজনীতি এল, কখন শুরু হল, তার বিশদ ব্যখ্যার প্রয়োজন আছে।
এখানে গত একশ বছরে দেশের ঐতিহাসিক চরিত্র, স্বাধীনতার পটভূমি, স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর দেশের সংবিধাধ ও তার বেআইনিভাবে সংশোধন উল্লেখে আলোচনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাংবাদিকসুলভ আষাঢ়ে গল্পের সঙ্গে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারের রাস্তায় হাঁটা হয়নি।
যখন স্বাধীনতার আন্দোলন ধীরে ধীরে গণ-আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত এক কলেজ ড্রপ-আউট ইনফরমাল ল-ইয়ার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী স্বাধীনতা আন্দোলনকে এক নতুন দিশা দিলেন। কিভাবে? ১৯২০ সালে, যখন হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ব্রিটিশরাজে বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হচ্ছে, তখন তিনি এমন একটি পদক্ষেপ করলেন যে তার সুদুরপ্রসারী ফলাফল দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিপন্থী হল। এই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী পরবর্তীতে জাতির জনক হিসেবে চিহ্নিত হন। গান্ধীজী কংগ্রেস পার্টির স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে দেশের মুসলমান সমাজকে জুড়ে দিয়ে সকলের অবিসম্বাদী নেতা হতে চেয়েছিলেন। তার জন্য পুরোপুরি মুসলমানদের একটি ধর্মীয় আন্দোলনকে তিনি হিন্দু অধু্যষিত কংগ্রেস পার্টি তথা দেশের তাবৎ হিন্দুদের হয়ে সমর্থন করেন। আন্দোলনটি হচ্ছে খিলিফৎ আন্দোলন। তুরষ্কে খলিফার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করার ইসলামী প্রয়াস। তিনি মুসলিম ভ্রাতৃদ্বয় সৌকত আলী ও মহম্মদ আলী এবং আবুল কালাম আজাদের মত মুসলিম নেতাদের তাঁর প্রবর্তিত ‘অসহযোগ’ আন্দোলন সমর্থন করার শর্তে খিলাফত আন্দোলনকে হিন্দুদের সমর্থন করার ডাক দেন। খিলাফত একটি ধর্মীয় আন্দোলন। এই ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব কায়েমের জন্য একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর আন্দোলনকে আমজনতার সমর্থন করার যুক্তি দিয়ে তিনি ঐতিহাসিক ভুল করেছিলেন। এর মাসুল এখনো এই উপমহাদেশের আপামর জনসাধারন দিয়ে যাচ্ছেন। ঐ সময় গান্ধীজীকে মানুষ নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তিনি ভারতীয় রাজনীতিতে বারবার একগুঁয়েমীর প্রমাণ রেখেছেন। নিজের মতামতকেই একমাত্র গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর অসহযোগ আন্দোলন সারা ভারতে কৌতুহলের সৃষ্টি করলেও তা যে বৃটিশরাজকে খুব অসুবিধায় ফেলে স্বাধীনতা পেতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল তার কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ মেলে না। আর চরকা কেটে প্রতীকী প্রতিবাদ করা যায় – কার্যকরী প্রতিবাদ নয়। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির কারণগুলি আলাদা।
গান্ধীজীর এই ঐতিহাসিক ভুলের মাশুল আমরা কিভাবে দিচ্ছি? প্রথমতঃ খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট হিন্দু জনগণের কোনভাবেই কোন যোগসূত্র থাকার কথা নয়। শুধুমাত্র গান্ধীজীর বৃহত্তর নেতা হওয়ার ইগো পরিতৃপ্তির জন্য মুসলিম নেতাগোষ্ঠীর ধর্মীয় আন্দোলনকে হিন্দুদের সমর্থন করা তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুযায়ী একটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত। অতঃপর খিলাফত আন্দোলন তেমন গতি পেল না। ওদিকে এর পীঠস্থান তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক অটোমান সাম্রাজ্যের অবসানের পর খলিফার শ্রেষ্ঠত্বের সুযোগও ১৯২৪ সালে শেষ করে দিলেন। এদিকে গান্ধীজীকে মুসলমান নেতারা ব্যবহার করেছিলেন, নিজেরা ব্যবহৃত হননি। হুসেইন সুরাবর্দী, মহম্মদ আলী জিন্নার মত নেতারা দেখলেন যে আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে নিতে হলে মুসলমান সমাজের নেতা হতে হবে। তখন মুসলমানদের তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করার কাজ শুরু হল। এর প্রথম পর্বে যে মোপালা বিদ্রোহ শুরু হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন আলী মুসলীয়ার, কুঞ্জ আহমেদ হাজী ইত্যাদি, তাতে লর্ড কার্জনের বৃটিশ পার্লামেন্টে উল্লিখিত তথ্য থেকে জানা যায় যে অন্ততঃ ২৫০০ জন মোপালা বিদ্রোহী মারা গেছিল এবং দশ হাজার হিন্দু নাগরিকদের বিদ্রোহীরা হত্যা করে শুধুমাত্র মুসলমান না হওয়ার অপরাধে। অন্ততঃ এক হাজার হিন্দুকে বলপূর্বক ইমসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়, অজস্র হিন্দু মহিলা ধর্ষিতা হন ও হিন্দুদের ধনসম্পত্তি লুঠ করা হয়। মালাবারের ইয়ারানাদ, ভাল্লুবাঁধ এই দুটি তালুকের একটি হিন্দু বাড়িও অক্ষত ছিল না। ব্রিটিশ শাসনের উপর রাগের বহিঃপ্রকাশ কিভাবে হিন্দুনিধনে পর্যবসিত হল সেকথা লুকানোর জন্য কমু্যনিষ্ট প্রভাবিত ইতিহাসে এই হত্যাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তখনো গান্ধীজী মোপালা বিদ্রোহকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বলে হিন্দু জনগণের উপর মুসলমান বিদ্রোহীদের অত্যাচারকে গুরুত্বহীন করতে চেষ্টা করেন। এই সময় বেশ কিছু কংগ্রেসের নেতা মোপালা বিদ্রোহকে সমর্থনের বিপক্ষে মত দেন। তখন গান্ধীজী জনসমর্থন হারানোর ভয়ে পিছিয়ে যান। গান্ধীজী সাময়িকভাবে পিছু হটেন। কিন্তু তিনি ভারতের হিন্দু-মুসলমানের যৌথ নেতা হওয়ার নেশায় ভারতকে এক দ্বিজাতিতত্ত্বের দোরগোড়ায় এনে দিলেন। বলতে দ্বিধা নেই, অল্প শিক্ষিত গান্ধীজীর তুলনায় (উনি ম্যাট্রিক পাশ করার পর ভাবনগরের কলেজ ড্রপ আউট, পরবর্তীতে উনি ১৮৮৮ থেকে ১৮৯১ অব্দি informal auditing ছাত্র হিসেবে ছিলেন। যদিও ব্যরিস্টার হিসেবে তিনি মুম্বাই হাইকোর্টে রেজিস্টার্ড ছিলেন, লপাশ করার কোন formal ডিগ্রি ওনার ছিলনা) তখনকার শিক্ষিত, ব্যরিস্টার মুসলিম নেতাদের রাজনৈতিক দুরদর্শিতা অনেক বেশী ছিল। শুধু তাই নয়, গান্ধীজীর নিজের নীতি – তা যতই অবাস্তব হোক, সেটাই অনুসরণ করার একগুঁয়েমীর মূল্য ভারতবাসীকে দিতে হয়েছে। মোপলা বিদ্রোহ ও তার দমনের সয়ই বোঝা গিয়েছিল মুসলিম নেতাদের প্রভূত্ব করার উদগ্র কামনা এবং হিন্দুদের প্রতি অসহনশীলতা, আর তা সফল করার সোজা উপায় ছিলহিন্দুদের হত্যা, ধর্ষন ও তাদের সম্পত্তি দখল অথবা তাদের ধর্মান্তরকরণ। মনে রাখতে হবে, আধুনিক ভারতে হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কের সুচনা হয় এই মোপালা বিদ্রোহের সময়ই। এর দায় গান্ধীজী এড়াতে পারেন না। পরবর্তীকালে ১৯৪৬-৪৭ সালের ভারত বিভাজনের সময় আরো প্রকটভাবে গান্ধীজী হিন্দুনিধন আটকানোর জন্য কোন কার্যকরী ভূমিকা নেননি। এমনকি মুসলিম নেতাদের দ্বারা গ্রেট ক্যলকাটা কিলিং এর সময় তিনি হিন্দুদের উপর অত্যাচারের সময় কোন বাধা দেননি। পক্ষান্তরে, যখন হিন্দুরা প্রতিরোধ শুরু করে তখন তিনি নিজে ছুটে এসে শান্তির বাণী ছড়ালেন। একই রকমভাবে নোয়াখালীর হিন্দুনিধনের সময় তিনি হিন্দুদের বাঁচানোর কোন চেষ্টা করেননি। সুতরাং একথা আজ মানতে হবে, প্রথমদিকে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমরা মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনে না নিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও বিশেষতঃ গান্ধীজীর একাধিক ভুল পদক্ষেপ ক্রমশঃ জিন্না, সুরাবর্দী, সৌকত আলীদের মুসলিম জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
আমাদের একটি বদ্ধমূল ধারনা দেওয়া হয়েছে যে গান্ধীজী সব রকম অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু সেটা বোধহয় ঠিক নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার কোর্টে সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়, “We are fellow members of the Empire. You should not be discriminating against us. We are not like these black people. We are better than they are. We are different from them. And you should not treat us like them.” অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য ছিল, আমরা ভারতীয়রা বৃটিশদের মতই মহান সাম্রাজ্যের প্রজা। সুতরাং ব্রিটিশ সাদা চামড়ার মানুষদের মতই আমাদের ব্যবহার পাওয়া উচিৎ। কিন্তু কালো চামড়ার মানুষরা নিকৃষ্ট। তাদের থেকে ভারতীয়রা উৎকৃষ্ট। সুতরাং তারা বৃটিশদের সমান। তবে তিনি যে কালো মানুষদের নিকৃষ্ট মনে করতেন তা তাঁর বক্তব্যে পরিষ্কার।
গান্ধীজী সর্বদা হিন্দুদের মধ্যে বিভিন্ন socio-economic বিভেদ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। অহিংস উপায়ে হিংসার মোকাবিলা করার মত অবাস্তব পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন sect এর বিভেদ নিয়ে হয় তাঁর কোন ধারনা ছিলনা, নাহয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁদের নেতা হিসেবে থাকার বাসনায় সর্বদা মুসলমানদের একটা ইউনিট হিসেবে দেখেছেন। সেটা মুসলমানদের মধ্যে communal feeling তৈরীতে প্রভূত সাহায্য করেছে। জিন্না যখন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতকে তিন টুকরো করে তার দুটুকরো মুসলমানদের দেওয়ার যুক্তি দিলেন, তখন গান্ধীজী মৌখিকভাবে তার বিরোধীতা করলেও ‘ডাইরেক্ট অ্যকশান’ এর নামে হিন্দু নিধন থামানোর চেষ্টা করেননি। ফলে, দেশভাগ হল। স্বাধীনতা এলো দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে। যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ ) দুটিই ইসলামিক রাষ্ট্র হল, ভারত হিন্দুদের বাসভূমি হিসাবে রইল। তখন বিশেষতঃ গান্ধীজীর প্রভাবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ভারতকে সকল ধর্মের মানুষের বাসস্থান হিসেবে ঘোষণা করল! ফলে ভারতীয় মুসলমানদের homeland হলেও ভারতীয় হিন্দুদের কোন homeland হলনা। ভারতের সংবিধানে সকল নাগরিকের ধর্মপালনের সমান অধিকার স্বীকৃত হল। মৌলিক অধিকার ২৫,২৬ এবং সরকারের কর্তব্য ২৯,৩০ ধারায় সংবিধানে লিপিবদ্ধ হল।
তারপর কাবেরী, গঙ্গা, যমুনা দিয়ে অনেক জল গড়ালো। কংগ্রেসের, বিশেষভাবে নেহেরুর soft peddaling এর কারনে কাশ্মীরের একটা বড় অংশ পাকিস্তানের কবলে চলে গেল।১৯৬২ সালে চীনের আগ্রাসনের কাছে ভারত পর্য্যুদস্ত হল। গান্ধীজীর অহিংস নীতি তাঁর যোগ্য শিষ্য জওহরলাল নেহেরু পালন করতে গিয়ে দেশের বিদেশনীতিকে যার পর নাই পর্যু্যদস্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে পরপারে চলে গেলেন। লালবাহাদুর শাস্ত্রীর অল্প সময়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করার সুযোগ ছিল না। তারপর জওহরলাল নেহেরুর উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীত্বে আসীন হলেন তাঁর কণ্যা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তিনি কংগ্রেসের মধ্যে সোশ্যালিষ্ট লবির সাহায্য নিয়ে বয়ষ্ক ও প্রাচীনপন্থী নেতাদের তাড়ালেন। একাজে তাঁকে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে যথেষ্ট মদত দিলেন দেশীয় কমু্যনিষ্ট ও সোভিয়েত রাশিয়া। ইন্দিরা গান্ধীর একমাত্র ধ্যান জ্ঞান ছিল কি করে রাজনৈতিক সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা যায়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর সম্মুখীন হলেন, দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে কার্যকরীভাবে একনায়কতন্ত্রী ব্যবস্থায় দেশকে নিয়ে গেলেন। সেই সময় তিনি পার্লামেন্টকে avoid করে ভারতের সংবিধানের এমন দুটি সংশোধন করলেন যা ভারতের অস্তিত্বের ভিত্তিই নাড়িয়ে দিল। এতে একাধারে সংফিধানের মৌলিক ধারাগুলির বিরোধীতাই করা হল তাই শুধু নয়, সংবিধানের বিভিন্ন ধারার মধ্যে স্ববিরোধীতার সুচনা হল! তিনি ভারতকে “ধর্মনিরপেক্ষ” ও “প্রজাতান্ত্রিক” রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করলেন। যেহেতু তখন পার্লামেন্ট বন্ধ করে রেখেছিলেন, পার্লামেন্টে আলোচনা সাপেক্ষে এই সংশোধন হয়নি। কিন্তু তারপর যে সকল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার এসেছে তারা কেন এই সংশোধনী দুটি বাতিল করল না; অন্ততঃ সংশোধন করল না তা বোঝা গেল না। আসলে এই “বেআইনী” সংশোধনের উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা ও প্রজাতন্ত্রের স্বরূপ ব্যখ্যার ব্যপারটা তাঁর সোশালিষ্ট ও কমু্যনিষ্ট বন্ধুদের হাতে ছেড়ে দিলেন।
এই প্রসঙ্গে বহুচর্চিত একটা জিনিস ঝালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বাইবেল এবং কোরান দুটি ধর্মগ্রন্থেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মানুষদের ধর্মচ্যুত মানুষ হিসেবে দেখা হয়। এদের স্থান বিধর্মীদের চেয়েও নীচে। সেজন্য কোন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান বা মুসলমান কখনো ধর্মনিরপেক্ষ হয় না। যেজন্য কোন দেশে মুসলমান সংখ্যাধিক্যের কারনে যখন সেই দেশ ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়, পথমেই ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশধারী কমু্যনিষ্টদের তারা বিনাশ করে। যাক সে কথা। এই দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার টার্গেট করা হল হিন্দুদের। এখানে একটা পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে যে, ভারতের প্রথম কমু্যনিষ্ট পার্টি গঠনের দিন থেকে তারা দুটি বিষয়ে কখনো বিচু্যত হয়নি। পথম, ভারত রাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা; দ্বিতীয়, জেহাদী ইসলামকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপায়ে তোল্লা দেওয়া। এর হাজার উদাহরণ আছে। সুতরাং ইন্দিরা গান্ধী যখন “ধর্মনিরপেক্ষতা” দেশের মানুষদের গেলানোর দায়িত্ব তাঁর সোশ্যালিষ্ট ও কমু্যনিষ্ট বন্ধুদের দিলেন, তখন থেকেই ভারতীয় কমু্যনিষ্টদের সৃষ্ট “ধর্মনিরপেক্ষতা” প্রচারের আলোতে এলো। এর যে রূপ আমরা দেখলাম তাতে নিশ্চিতরূপে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্খিত হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকে দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক কাঠামো ধরে রেখে manipulative democracy শুরু হল। এখন তার কদর্যতম রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করছি। যাক, ফিরে আসি ধর্মনিরপেক্ষতায়। যেহেতু মুসলিম ও খৃষ্টানদের ধর্ম বিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ঐ দুই ধর্মকে, বিশেষতঃ ইসলাম ধর্মকে সরকারী স্তরে তোল্লা দিয়ে শুরু হল সরাসরি হিন্দু ধর্মের বিরোধীতা। ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে হিন্দুদের মস্তিষ্ক প্রক্ষালন বিশেষ ব্যপকভাবে শুরু হল। এই কাজ, সঙ্গে দেশের প্রাচীন ইতিহাস চর্চা বন্ধ করে মুসলিম আক্রমনকারী শাসকদের মহত্ব ও দেশ গঠনে তাদের অবদান নতুন করে কমু্যনিষ্ট প্রভাবিত ইতিহাস বই রচনায় জায়গা করে নিল। এর একটি চরম নির্লজ্জ উদাহরন হল মোপলা বিদ্রোহের ইতিহাস নিয়ে সিপিআইএমএর নিকৃষ্ট মিথ্যায় ভরা ‘দলিল’। এখানে হিন্দু নিধনকারী জেহাদীদের দেশপ্রেমিক দেখিয়ে শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে যে গণহ্যা সংঘটিত হয়েছিল সে সম্বন্ধে একটি কথাও খরচ করা হল না! সেইশুরু। তারপর, কাশ্মীরের হিন্দু পন্ডিত, যারা ট্র্যডিশানালি কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন, তাদের হত্যা, ধর্ষণ, ধনসম্পত্তি লুঠ করে কাশ্মীরকে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট জেহাদী স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হল।
তারপর ধীরে ধীরে যখন হিন্দুরা সংঘবদ্ধ হতে শুরু করল তখন হিন্দুদের মধ্যে দলিত, পিছড়ে বর্গ, অতি পিছড়েবর্গ – এই সব শ্রেণী বিন্যাসে হিন্দু একীকরণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হল।তার সাথে দেশে সরকারী সহায়তায় ও অর্থানুকুল্যে মসলমানদের উন্নয়নের নামে ইসলামিক কনসোলিডেশান শুরু হল। মদত দিল চীন ও পাকিস্তান। তাদের ব্যপারে মৌণব্রত অবলম্বন করে নিজেদের ঘৃণ্য কাজ চালিয়ে যেতে লাগল কংগ্রেস ও কমু্যনিষ্টরা। তারপর ধীরে ধীরে মার খেতে খেতে হিন্দু একীকরণ শুরু করার কাজ যে সংগঠণগুলি শুরু করল তাদের উপর সরকারী, জেহাদী ও কমু্যনিষ্টদের আক্রমণ নেমে এলো। তা সত্বেও আজ হিন্দু কনসোলিডেশান প্রাধান্য পাচ্ছে। যত আক্রমণ নেমে আসছে, হিন্দুদের জোটবদ্ধ হওয়া তত গতি পাচ্ছে।
পরিশেষে একটি কথা বলার আছে। যে মূহুর্তে ভারত আবার টুকরো করার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে তখন কয়েকটি নতুন জেহাদী রাষ্ট্রের জন্ম হবে, যেখানে কংগ্রেস ও কমু্যনিষ্ট কোন দলেরই অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে ১৯৭৬ সালে কালো দিনের সাহায্য নিয়ে সংবিধানে যে দুটি পরিবর্তন করা হয়েছিল তা বাতিল করা আশু প্রয়োজন। রাষ্ট্রধর্ম ছাড়া কোন রাষ্ট্র থাকেনা। সুতরাং ভারতের রাষ্ট্রধর্ম হোক হিন্দুত্ব যা সকল religion কে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কোন ‘ইসলামিক সেকুলারিজম’ ভারতের টুকরো টুকরো হওয়াকে আটকাতে পারবে না।
ভারতের বিভেদের রাজনীতির মূল কোথায়
