ভারতের রাজনীতিতে বাঙ্গালী ব্রাত‍্য কেন

বাঙ্গালী বলতে কি শুধু বাংলাভাষী, নাকি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী (বাংলাদেশ পৃথক রাষ্ট্র) বোঝায় – এই প্রশ্ন এখন উঠেছে। এর পিছনে একাধিক কারন রয়েছে। প্রথমে বলতে হয়, বাঙ্গালী – বিশেষতঃ হিন্দু বাঙ্গালী – তারা ভারতীয়। যেমন দ্রাবিড় সভ‍্যতা ও সংস্কৃতির নিজস্ব ধারা প্রবহমান, তেমনি বাঙ্গালী সভ‍্যতা, তার কৃষ্টি, সংস্কৃতির স্বকীয়তা বর্তমান। ভারতের বিভিন্ন রাজ‍্য তথা মানুষের কৃষ্টি, সভ‍্যতা, সংস্কৃতির বিচিত্র বিবিধতা লক্ষ‍‍্যণীয়। এই বিবিধতার মাঝে মিলনের যোগসূত্রকে ধরে রাখার জন‍্য নেতৃত্বের তিনটি গুণের প্রয়োজন – শিক্ষা, দীক্ষা ও মানসিক ঔদার্য। স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে থেকেই এই তিন গুণের অভাব নেতৃত্বের মধ‍্যে রয়ে গেছে। ফলে, ত্রিখন্ডিত স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীস্তরে দুটি খন্ডের মানুষের ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হল ইসলাম – কারন, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল – এই সত‍্য বৃটিশসহ পরাধীন ভারতের প্রায় সব নেতাই মেনে নিয়েছিলেন। এমনকি পাক-ই-স্তান নামের মধ‍্যেই এই ধর্মীয় কারনে বিভাজনের পরিচয় পাওয়া যায়। পাক-ই-স্তান অর্থ আল্লার স্থান। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও ভারত-বিদ্বেষের মধ‍্যে দিয়ে এই দুই খন্ড তার অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়ে গেল। অথচ ভারত হল ‘ধর্মনিরপেক্ষ’! অর্থাৎ অখন্ড ভারত বিভাজিত হয়ে জনসংখ‍্যার ভিত্তিতে ইসলামীরা পেল দুটি খন্ড আর বিপুল সংখ‍্যাধিক‍্যের হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন ধর্মীয় মানুষদের জন‍্য আলাদা রাষ্ট্র জুটল না। তারা এই দেশীয় নেতৃত্বের জন‍্য ইসলামী এমনকি খ্রীষ্টানদের সঙ্গে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ভাগ করে নিতে বাধ‍্য হল। ভারতভাগের সময় দেশীয় নেতৃত্বের Super leader মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এবং তাঁর চয়নকরা কংগ্রেস নেতৃত্ব – জওহরলাল নেহরু, বল্লভ ভাই প‍্যাটেল ইত‍্যাদির ইচ্ছায় ভারতের সংখ‍্যাগরিষ্ট ধর্মের মানষের জন‍্য কোন রাষ্ট্র রইল না। সে সময়, বৃটিশ শাসকগোষ্ঠীর কাছে ডঃ শ‍্যামাপ্রসাদ মূখোপাধ‍্যায় তদানীন্তন বাংলা ভাগের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সমর্থ হন। সেকারনেই জন্ম হয় নতুন রাজ‍্য পশ্চিমবঙ্গের – বাঙ্গালী হিন্দুদের একমাত্র বাসস্থান, যা পূর্ব পাক-ই-স্তান থেকে আগত হতভাগ্য হিন্দু শরণার্থীদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায়।
গান্ধী-নেহরু-প‍্যাটেল কোম্পানি বাঙ্গালী হিন্দুদের জন‍্য কিছু করেনি। শুধু তাই নয়, গান্ধী, বাঙ্গালী হিন্দুদের জন‍্য যেমন কোন বাক‍্যব‍্যয় করেননি, তেমনি তিনি কোন বাঙ্গালী নেতার প্রশংসা করেননি। সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে তিনি যে ব‍্যবহার করেছেন, তা মোটেই বড় মনের নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে না। এই গান্ধীজীই ছিলেন স্বাধীনতা পর্বে ভারতের বেশীরভাগ নেতার গডফাদার। এমনকি, সর্দার বল্লভ ভাই প‍্যাটেলের দাদা বিঠল ভাইজী খোলাখুলিভাবে সুভাষ চন্দ্র বোসকে সমর্থন করতেন বলে গান্ধীজী বিঠল ভাইয়ের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। এই গান্ধীকে “most over rated politician” বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর অদ্ভুত যুক্তি – আত্মরক্ষার প্রয়োজনেও হিংসা বর্জনীয় – ভারত মায়ের অনেক সুযোগ‍্য সন্তানকে হারাতে সাহায্য করেছে! বাঙ্গালী হিন্দুদের এক বৃহৎ অংশ তাঁর অবহেলার কারনে ধর্মীয় হিংসার শিকার হয়েছেন। এমনকি গান্ধীজীর শিষ‍্যরা, যারা দেশের নেতা, কেউ এই হতভাগ‍্য বাঙ্গালীদের সাহায‍্যে এগিয়ে আসেনি। Clement Attlee,যিনি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি BBC তে সাক্ষাৎকারের সময় বলেছিলেন, ভারতের স্বাধীনতা কারনগুলি হল – INA ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে তার কর্মচাঞ্চল‍্য, নৌবিদ্রোহ, ভারতের বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের ত্রিখন্ডিত করার যুক্তি মেনে নেওয়া। এক সাক্ষাৎকারে ডঃ বি আর আম্বেদকরও মোটামুটি এই যুক্তিই দিয়েছিলেন। এমনকি, পরবর্তী সময় যখন Attleeকে প্রশ্ন করা হয়, ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব কতটা – তখন তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব ছিল – “minimal”!
এভাবে একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতার বাংলা ও হিন্দু বাঙ্গালীদের প্রতি অবহেলার আবহে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বের বাঙ্গালী হিন্দুদের উপর অবহেলা থেকে উভয় তরফেই এক অবিশ্বাসের বাতাবরন তৈরী হয়। শুধু সুভাষ চন্দ্র নয়, ভারতীয় বিপ্লবের জনক রাসবিহারী বোসেরও সঠিক মূল‍্যায়নে গোবলয়ের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেসীদের অনীহা লক্ষ‍্যণীয়!
এখন হয়ত সময় ও চিন্তা দুইই বদলেছে। পূর্ব তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে বঞ্চনা করা হয়েছে, তা অনেকাংশে শুধরানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু দুটি কারনে এই চেষ্টা পশ্চিমবঙ্গে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। প্রথমতঃ, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল কেন্দ্রের শাসকদলের বিরোধী; দ্বিতীয়ত, গান্ধীজী ও তাঁর চ‍্যালাদের সহিংস-বিপ্লব এবং সুভাষ বিরোধী মনোভাব সার্বিকভাবে “বাঙ্গালী” বিরোধীতায় রূপ নিয়েছে! একটি ব‍্যাপার খুব অবাক করার মত ; তা হল, বাঙ্গালী দেশপ্রেমিক নেতা সুভাষ চন্দ্রকে সারা ভারতের মানুষ বীরের সম্মানে ভূষিত করলেও কিছু বাঙ্গালী রাজনৈতিক উদ্দেশ‍্যে তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা করেছে, এমনকি তাঁকে “তোজোর কুকুর” বলা হয়েছে! অথচ যতই গান্ধীজী তাদের চিন্তাধারার পূর্বসূরী না হোন, কোন গুজরাতি মানুষ নেই যিনি গান্ধীজীকে জাতির জনক “বাপুজী” মনে করেন না। এখানে দুঃখজনক সত‍্যিটা হল, ভারতের সব রাজ‍্যের মানুষ নিজেদের “ভারতীয়” বললেও জাতীয় ঐক‍্যের প্রশ্নে নিজের ভাষা, ঐতিহ‍্য, সংস্কৃতির জাতিভিত্তিক চেতনাকে সবার উপরে স্থান দেন! একজন গুজরাতি যদি গুজরাতি, তামিলি যদি তামিলি, ওড়িয়া যদি ওড়িয়া থেকে যান, তাহলে ভারতীয়ত্ত্ববোধ ধাক্কা খেতে বাধ‍্য। বিশেষতঃ রাজনৈতিক নেতারা এমন বোধের শিকার হন, তা কখনোই কাম‍্য নয়।
হয়ত বাঙ্গালী-বিরোধী চিন্তা থেকেই প্রাদেশিকতার জন্ম হলেও দেশের গত একশ বছরের ইতিহাসে বাঙ্গালী হিন্দুদের ভারত বিরোধীতার পরিচয় নেই। যদিও গান্ধীজীর নেতৃত্বে জওহরলাল অ‍্যান্ড কোং বারবার পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় (২০ বছর) ধরে পশ্চিমবঙ্গের শাসনভার কংগ্রেসের হাতে ছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে বেশী শহিদ হয়েছেন বাঙ্গালী হিন্দু, তারপরের স্থানে পঞ্জাব। অথচ স্বাধীনতার সময়ে ভারতের নেতাদের, বিশেষভাবে কংগ্রেসের, অনুমতিক্রমে এই দুটি রাজ‍্যকে ভেঙ্গে টুকরো করে পাক-ই-স্তানে জুড়ে দেওয়া হল। তারপরেও পঞ্জাবে হিন্দু ও শিখ শরণার্থীরা ভারত সরকার তথা কংগ্রেসের কাছ থেকে যে সাহায‍্য পেয়েছেন, তার ছিটেফোঁটাও বাঙ্গালী হিন্দু শরণার্থীদের কপালে জোটেনি। এমনকি, গান্ধী ও তাঁর কংগ্রেসী নেতৃত্ব বাংলাকে পূর্ব-পাকিস্তানের অন্তভূর্ক্তিতে কোন আপত্তি করেনি। সে সময় শ‍্যামাপ্রসাদ তাঁর পশ্চিমবঙ্গ গঠনের আন্দোলনে গান্ধীজী ও তাঁর কংগ্রেসী অনুচরদের থেকে খোলাখুলি কোন সাহায‍্য, এমনকি সহানুভূতি পাননি। এসবের জন‍্যই এই দুই রাজ‍্য, পশ্চিমবঙ্গ ও পঞ্জাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আগুন জ্বললে তার ফয়দা তুলল আঞ্চলিক দলগুলি। কেন্দ্রে পালা বদল হলেও এখনো পশ্চিমবঙ্গের উপর বিমাতৃসূলভ আচরণ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে – বলা যাবে না।
যুক্তি, বিপরীত যুক্তি অনেক দেওয়া যায় – তবে আসল সত‍্যিটা হল, গোবলয়ের রাজনীতিকরা এখনো বাঙ্গালী রাজনীতিকদের পুরোপুরি বিশ্বাস করেন না। এইখানেই গান্ধীজীর ভাবধারার ক্রমধারাবাহিকতা লক্ষ‍্য করা যায়। কংগ্রেসের নেতা গান্ধীজী কিন্তু এখনকার কংগ্রেস বিরোধী ক্ষমতাসীন দলের কাছেও পুজনীয় ব‍্যাক্তি! এইসব কারনে পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী হিন্দুদের মনে যদি প্রাদেশিকতার ভাব জন্মায়, তবে তা কতটা দোষের! যেভাবে বাঙ্গালী তার দেশাত্মবোধের পরিচয় দিয়েছে তার দাম গোবলয়ের রাজনীতিকরা দিয়েছেন কি? এমনকি, বাঙ্গালীর দূর্গাপুজাকে গোবলয়ের মানুষ বাঙ্গালীর পুজা-অনুষ্ঠান বলে; আর রামনবমী থেকে শিবাজী উৎসব, করবা চৌথ হয়ে যায় ভারতীয় উৎসব! এ ধরনের বিভেদকামী প্রভূত্ববাদী প্রচার কখনোই সার্থকভাবে দেশাত্মবোধ জাগাতে পারে না। প্রাদেশিকতা দোষে দুষ্ট গোবলয়ের পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্ব কখনোই বাঙ্গালী হিন্দুদের নিজের সমগোত্রীয় মনে করেনি। ছোটবেলায় কলকাতায় অবাঙ্গালী গোবলয়ের মানুষদের প্রতিবেশী হওয়ার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, শুধু “মছলিখোর” বলে তারা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখত। শুধু তাই নয়, সামাজিক মেলামেশায় “মছলিখোর” হওয়ার কারনে আমরা তাদের সমাজে ব্রাত‍্য ছিলাম।
ভারতীয়ত্বের যে ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক মেলবন্ধনের কথা তথাকথিত জাতীয়তাবাদী নেতারা বলে থাকেন, তার সারমর্ম হচ্ছে – গোবলয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ – যা আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী। “আমার নেতৃত্বে, আমার ধারনার সঙ্গে মিলে তুমি আমার সংস্কৃতি, পোষাক, খাদ‍্যরুচির অনুসরন করলে জাতীয়তাবাদী” – এমন অদ্ভুত ভাবনা কখনোই ধান্দাবাজ চামচা ছাড়া প্রকৃত দেশভক্ত তৈরী করে না। তামিল, বাঙ্গালী, গুজরাতী, মারাঠি, রাজস্থানী ইত‍্যাদির সমন্বয়ে গত ৭৫ বছরেও ভারতীয় সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। যদি তা হত, তবে গোবলয়ের বাঙ্গালী বিরোধী, সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম বিরোধী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এখনো গোবলয়ের, বিশেষ ভাবে গুজরাতীদের হিরো হত না। একই সঙ্গে গান্ধী এবং সুভাষকে সম্মান দেখানো রাজনৈতিক দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। ওড়িশা, তেলেগু, দ্রাবিড় অঞ্চলে আঞ্চলিক দলগুলির দীর্ঘ দিনের প্রাধান‍্য এই রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতার ফল!
জাতীয়স্তরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে তিনটি আবশ‍্যিক গুণের কথা বলা হয়েছে, তার অভাব এখনো অনেকাংশে অনুভূত হচ্ছে। এই “মছলিখোর” বিরোধী মানসিকতার প্রতিফলন দেখা গেছে “বাঙ্গালী”র মছলি খাওয়াকে অবজ্ঞাসূচক বিদ্রুপের মধ‍্যে দিয়ে। যদিও পরবর্তী সময়ে ঐ অভিনেতা-কাম-রাজনীতিক বিশ্লেষণাত্মক ব‍্যাখ‍্যা দিয়েছেন, তিনি বাঙ্গালী বলতে রোহিঙ্গা (!) ও বাংলাদেশী বলতে চেয়েছেন! এইসব অর্ধ শিক্ষিত প্রাদেশিকতা দোষে দুষ্ট নেতারা জানেন না যে স্বর্গীয় অটল বিহারী বাজপেয়ীজীর প্রিয় খাবারের মধ‍্যে “মছলি” ছিল! উচ্চতম নেতৃত্ব সঠিক নেতা চয়ন না করলে দল তথা দেশকে ভুগতে হবে।
এখন রাজনীতিতে নিম্নবর্গীয় নেতৃত্বের কারনে দলীয় নেতৃত্বের কাছে প্রশ্নাতীত আনুগত্য একমাত্র যোগ‍্যতার মাপকাঠি। হয়ত সে কারনেই পশ্চিমবঙ্গের ঐ দলের পক্ষ থেকে এমন বাঙ্গালী বিদ্বেষী উক্তি নিয়ে কোন প্রতিবাদ হয়নি! আরেকটা কারন হতে পারে, বাঙ্গালীদের প্রতি গোবলয়ের অবিশ্বাস তত্ত্বে দলের বঙ্গ নেতাদের বিশ্বাস আছে বলেই তাঁরা এর সমালোচনা করে উচ্চ-নেতৃত্বের বিরাগভাজন হতে চাননি! আবার এর সমালোচনা করতে গিয়ে থেবলা, গাঠিয়া খাওয়া মানুষদের বিদ্রুপ করার ঘটনাও একই রকম নিন্দনীয়। এভাবে প্রাদেশিকতাবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ জাতীয়তাবাদের বিরোধীতা করা – এ ব‍্যাপারটা জাতীয়স্তরের শীর্ষনেতৃত্ব খেয়াল রাখলেই মঙ্গল। শুধু বাঙ্গালী নয়, ভারতের রাজনীতির চিরকালীন দায়িত্বজ্ঞানহীন ভোগলিপ্সা জাতীয় ঐক‍্য ও মূল‍্যবোধের পরিপন্থী কার্যকলাপের জ‍ন‍্য বহুলাংশে দায়ী। যেমন, দেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্বে চাপিয়ে দেওয়া প্রবাসী, ভূঁইফোড় বাঙ্গালী নেতাদের যে রাজ‍্যের মানুষ প্রত‍্যাখ‍্যান করেছে তা তাদের নির্বাচনের ফলেই প্রতিভাত। অসমে যোগ‍্য, নতুন দলে আসা অহমীয়া এবং রাজ‍্যে রাজনীতি করা মানুষকে নেতৃত্বে বসিয়ে সাফল‍্য পেলেও পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালী নেতৃত্বকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর দল তাদের অপশাসনের কোন কুফল ত ভোগ করছেই না, পরন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ও তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাধ‍্য হচ্ছে এই রাজ‍্য-সরকারকে সাথে নিয়ে চলতে!
পরস্পরকে অবিশ্বাস ও সবজান্তা মূর্খ, ধান্দাবাজ নেতৃত্ব পশ্চিমবঙ্গের সব রাজনৈতিক দলের জন-বিচ্ছিন্নতার বড় কারন। ফলে, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে ব্রাত‍্য বাঙ্গালীর উত্থান সুদূরপরাহত বলেই আপাতত মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *