১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দেশের বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে ভারতের তদানীন্তন নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ব্যর্থতা দেখা গিয়েছিল – এখনো সারা দেশ তার খেসারত দিয়ে চলেছে। আমাদের দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তের বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে ভুলের কথা বলা হয়েছে। দেশের বর্তমান প্রজন্ম আমাদের এই সীমান্ত সমস্যা বিষয়ে সম্যক অবহিত নয় – তার সবচেয়ে বড় কারন হল, দেশের সংবাদ-মাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের সময় রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অপেক্ষা আভ্যন্তরীন বিশেষ রাজনৈতিক স্বার্থকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া!
স্বাধীনতার পর ভারত পঞ্চশীল নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে চীনকে অযাচিতভাবে পরম বন্ধু মনে করে তার সঙ্গে সখ্যতা স্থাপনের জন্য রাষ্ট্রসংঘে চীনকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার পক্ষে সওয়াল করে! আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রশ্নে সর্বদা দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপার থাকে। এক্ষেত্রে চীন কি দিয়েছে তা কেউ জানে না! ১৯৫৯ সালে তিব্বতে পূর্ণ দখলদারি কায়েম করার পর চীন নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ১৯৬২ সালে বিনা প্ররোচনায় ভারত আক্রমণ করে। ভারতের কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই সেই আক্রমণে তারা ভারতকে পর্যুদস্ত করে আকসাই চীন সহ NEFAর অনেকটা এলাকা দখল করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রথম থেকেই তাদের বিস্তারধর্মী আগ্রাসী নীতিতে নতুন নতুন এলাকা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ঐ আক্রমণের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিল যে আকসাই চীন সহ বর্তমান অরুনাচল প্রদেশ যা তদানীন্তন উত্তর-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিল, পুরোটাই নাকি চীনের অংশ! এর স্বপক্ষে চীনের একমাত্র যুক্তি ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি! এভাবে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির ভুলের সুবিধা নিয়ে চীন যা করেছে তাকে চরম বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। একথা বলা বাহুল্য, সে সময়ের ভারতের পররাষ্ট্র নীতি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরনে জওহরলাল নেহরুর অনীহা চীনকে ভারত আক্রমণের সাহস জুগিয়েছিল।
অনেকের ভ্রান্ত ধারনা আছে, তিব্বত একটি রুক্ষ, পার্বত্য জায়গা যেখানে প্রাকৃতিক নিয়মেই চীনের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্ব আসে! এ বিষয়ে অপপ্রচার ও ক্ষেত্র বিশেষে মৌনতার কারনে যে ভুল ধারনা জন্মেছে তার নিরসনের জন্য বলি, তিব্বত ভূখন্ডের আয়তন ২৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার যা চীনের ভূখন্ডের চার ভাগের এক ভাগ এবং ভারতের আয়তনের এক তৃতীয়াংশ। পৃথিবীর উচ্চতম গিরিশৃঙ্গ হিমালয় এই তিব্বতেই। রাজধানী লাসা। তিব্বতের মোট জনসংখ্যা ৬৭ লক্ষ, যার অধিকাংশ বিশেষ মতের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এদের ধর্মীয় আচার-বিচার চীনাদের থেকে পৃথক। তিব্বতী ভাষাও চীনা ভাষার থেকে আলাদা। এই তিব্বতী জাতিগোষ্ঠী এবং তাদের কৃষ্টি-সভ্যতা ও ধর্মাচরন প্রক্রিয়া চীনাদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর থেকে পৃথক। তিব্বতীদের মূল জীবিকা কৃষি ও পশুপালন। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে মূল চীনা ভূখন্ডের কোন সীমানা নেই! ভারতের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ আছে তিব্বতের। আমাদের উত্তর, পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তের দেশগুলি হল – পাকিস্তান, পূর্ব তুর্কিস্তান, তিব্বত, নেপাল, ভূটান ও মায়ানমার। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জন্মের পর থেকেই লক্ষ্য ছলে-বলে-কৌশলে তাদের সীমান্তবর্তী দেশগুলিকে ধীরেধীরে আত্মসাৎ করা। তাছাড়া, উপমহাদেশে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে একমাত্র বাধা ভারতকে ব্যতিব্যস্ত রেখে চাপ সৃষ্টি করে স্ট্র্যাটেজিক ভূখন্ডের দখল নেওয়া যাতে ভবিষ্যতে তাদের সীমানা বিস্তারে সুবিধা হয়। ভারতের স্বাধীনতা-উত্তর ক্ষমতায় থাকা নেতারা তা বুঝতে না চাওয়ার খেসারত যেমন তিব্বতকে দিতে হচ্ছে, তেমনি ভারতকেও দিতে হচ্ছে।
১৯৫০ সালের অক্টোবর মাসে কামডো (Chamdo) দখলের মাধ্যমে চীন তিব্বতে তাদের বিক্ষিপ্ত সামরিক অভিযান শুরু করলেও ১৯৫৯ সালের ২৫শে মার্চ চীনা লালফৌজ লাসা দখল করে। তারা তাদের তাঁবেদার পাঞ্চেন লামাকে চতুর্দশ দালাই লামার স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা করলেও সাধারণ তিব্বতীরা তা মেনে নেয়নি। সে সময় যুদ্ধে ৮৭০০০ তিব্বতীর মৃত্যু হয় এবং ১০০০০০ তিব্বতী শরণার্থী বিশেষতঃ ভারত, নেপাল ও ভূটানে পালিয়ে যান। দালাই লামা ভারতে এসে হিমাচলের ধরমশালায় তাঁর Government of Tibet in exile গঠন করেন। রাষ্ট্রসংঘ চীনা আগ্রাসনকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করে এবং ভারতের পুরুষোত্তম ট্রিকমদাসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের (বার্মা, শ্রীলঙ্কা, ঘানা, ভারত, মালয়, নরওয়ে ও সিয়াম) কমিটি তৈরী করে তিব্বতের উপর রিপোর্ট দিতে বলে। সেই রিপোর্ট মোতাবেক রাষ্ট্রসংঘের সাধারন সভায় ২১শে অক্টোবর, ১৯৫৯ সালে তিব্বতের উপর একতরফা চীনা আগ্রাসন ও সেখানে চীন দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করে প্রস্তাব নেওয়া হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৬০-৬২ এই দু বছরে শুধু চীনাদের দ্বারা মনুষ্য আরোপিত দুর্ভিক্ষে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ তিব্বতী প্রাণ হারান। এই সময় চাপে পরে চীন সরকার ১৯৬৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর স্বশাসিত তিব্বত অঞ্চল (Tibetan Autonomous Region) গঠন করে। এর সর্বেসর্বা হন একজন চীনা নাগরিক যিনি পার্টির উচ্চ নেতৃত্বে থাকেন! তারপর থেকে ক্রমশঃ তিব্বতের উপর চীনের ফাঁস যত শক্ত হতে থাকে, তত তিব্বতীদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনা চাপা দেওয়া হতে থাকে। ফলে, উপর উপর কিছু লোক দেখানো পরিবর্তন হলেও তিব্বতের উপর চীনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তেই থাকে। তার ফলশ্রুতিতে যে সব প্রতিবাদ আন্দোলন হয়, সেগুলো মধ্যযুগীয় বর্বরতায় দমন করা হয়েছে।
আসলে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের লক্ষ্য হচ্ছে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া। যখনই চীনে কোন গোষ্ঠীর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেখানকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ রাখার কৌশল হিসাবে সব সম্রাটই যুদ্ধ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে কৃত্রিম চীনা জাতিসত্তা জাগানোর চেষ্টা করেছে। তা এখনো চলছে। এখানে কোন ‘ইজম’ বা তত্ত্ব বড় কথা নয়, আসল ব্যাপার হল, বর্তমান চীনা নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই নীতির কোন পরিবর্তন না আসা! সামরিক শক্তিতে দূর্বল ও খনিজ সম্পদে ভরপুর তিব্বতকে স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে দখল করে চীন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তিব্বত দখল করা হয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগকে মাথায় রেখে! ইতিমধ্যে জওহরলালের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় আকসাই চীনের ৩৬,৮৪৬ বর্গকিলোমিটার জায়গা চীন দখল করে নিয়েছে এবং অরুনাচল প্রদেশের ৯৩,০০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাকে শুধুমাত্র গায়ের জোরে তাদের বলে দাবী করে আসছে। বর্তমান ভারত সরকার কড়া হাতে সীমান্ত সংঘর্ষ মোকাবিলা করায় চীনের হানাদারি একটু থমকালেও তাদের পরিকল্পনার কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
মনে হয়, চীনা কর্তৃপক্ষ পৃথিবীর সব flat noseএর মানুষের বাসস্থানকেই তাদের দেশ বলে দাবী করা মনস্থ করেছে! সেজন্য চীনের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করা দেশ নেপাল, ভূটান, ভারত, লাওস, মায়নামার (পূর্বতন বার্মা), মঙ্গোলিয়ার ভূখন্ড চীন নিজেদের বলে দাবী করছে! আবার যাদের সঙ্গে স্থল নয়, জলপথে যোগ আছে, যেমন, ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ব্রুনেইয়ের উপর চীনা হস্তক্ষেপের হুমকি দেওয়া হচ্ছে চীনের তরফে! লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, এসব দেশে flat nose জনগোষ্ঠী আছে। এমন মধ্যযুগীয় আগ্রাসন নীতির জন্য চরম খেসারত দিতে হচ্ছে তিব্বতীদের। তিব্বতীদের দেশপ্রেমজনিত প্রতিবাদকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য চীন শুধু সামরিক বাহিনীর উপরেই নির্ভর করছে না; তারা তিব্বতে জাতিগত নির্মূলীকরন (ethnic cleansing)এর দিকে এগোচ্ছে। তিব্বতীদের নিজস্ব ধর্মাচরনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। চীন তিব্বতী মোনাষ্টারি বন্ধ করছে। চীনাদের ধর্মাচরন প্রক্রিয়া অনুসরন করা তিব্বতীদের জন্য বাধ্যতামূলক। স্কুলে তিব্বতী ভাষা শিক্ষা বন্ধ। শুধুমাত্র চীনা ভাষা শিক্ষা ও চীনা ভাষায় পড়াশুনো করার স্বীকৃতি মিলেছে!
তিব্বতে সেখানকার জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করে সেখানে সামরিক ঘাঁটি ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা করে চীন সরাসরি ভারতকে সামরিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল নেহরুকে লেখা ১৯৫০ সালের ৭ই নভেম্বরের চিঠিতে দুঃখ করেছিলেন – তিব্বতী জনগণ তাদের স্বাভাবিক বন্ধু ভারতের থেকে যে সাহায্য আশা করেছিলেন, তা পুরন করতে ভারত এগিয়ে আসেনি। পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় তিব্বতের স্বাতন্ত্রতা রক্ষা না হলে ভারতের ঐক্য ও স্বাধীনতা বিপন্ন হবে বলে ১৯৫৫ সালের ১৯শে এপ্রিল মন্তব্য করেন। রাজ্যসভায় ১৯৫৪ সালে ডঃ ভীমরাও আম্বেদকার আসল কথাটি বলেন, “যদি ১৯৪৯ সালে চীনকে স্বীকৃতি না দিয়ে ভারত তিব্বতকে স্বীকৃতি দিত, তাহলে আজকে ইন্দো-চীন কোন সমস্যাই তৈরী হত না”। এমনকি লোকসভায় ১৯৬০ সালের ১৭ই মার্চ বিরোধী নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী বলেন যে, তিব্বতের উপর চীনের মারণ আক্রমণ ভারতের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। সুতরাং, সে সময়ের বিভিন্ন নেতার সতর্কবার্তা পর্যন্ত নেহরু ও তাঁর সরকারকে আত্মঘাতী ভুল রাস্তা থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি। এর দায় তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার ও তার কর্নধার নেহরুর উপরেই বর্তায়।
এখন তিব্বতে সর্বদা নূন্যতম পাঁচ লক্ষ চীনা সেনা মজুত থাকছে। তাদের অন্ততঃ ১৫টি সামরিক বিমান বন্দর এবং ১৭টি গোপন রাডার তিব্বতের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এছাড়া ৮টি ক্ষেপনাস্ত্র ঘাঁটি আছে, যেখানে ৭০টি মধ্যপাল্লা এবং ২০টি অন্তর্বর্তী পাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র মজুত আছে। ৫০টি ভি-স্যাট স্টেশন পুরো TAR জুড়ে ছড়িয়ে আছে। তিব্বতের খনিজ আকরিক উত্তোলন করে চীনের উন্নয়ণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই কাজে নিয়োজিত তিব্বতী শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরী থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এভাবে আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে খনিজ সম্পদ আহরনের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। হিমবাহ গলে যাচ্ছে কিন্তু তথাকথিত কম্যুনিস্ট পরিবেশবিদরা নীরব!
তিব্বতের পরিকাঠামোগত উন্নয়ণের নামে চীন তার সামরিক শক্তিকে দ্রুত ভারতের বিরুদ্ধে নিয়োজিত করছে। ২০০৬ সালে গোর্মো থেকে লাসা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে চীন তিব্বতের বুকে তার আধুনিক সমরাস্ত্র এনে জড়ো করেছে। পুরো তিব্বত জুড়ে ৫৮,০০০ কিলোমিটার রাস্তা বানানো হয়েছে সামরিক বাহিনীর দ্রুত চলাচলের জন্য। চীন ৩২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে আগামী কয়েক বছরে ১,১৮,০০০ কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরীর পরিকল্পনা নিয়েছে। তিব্বতের বিমান বন্দর ও রানওয়েগুলির মূখ্য উদ্দেশ্য শুধু আকাশ পথে তিব্বত শাসনে নজরদারি চালানোই নয়, ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিকাংশ শহরকেই তারা আকাশ-নিশানায় এনে ফেলেছে। এরপরও চীন আরো উন্নত বিমানবন্দর বানানোর পরিকল্পনা করছে।
এখন ‘গালওয়ান’ সহ সীমান্তে চীনা কার্যকলাপ এবং ভারত সীমান্ত বরাবর চীনের বিভিন্ন নির্মান তৎপরতা ও সেইসঙ্গে তিব্বতের অভ্যন্তরে সামরিক বাহিনী পরিবহন করা ও রসদ সরবরাহের তাগিধে সড়ক ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতিসাধন শুধুমাত্র ভারতের উপর চীনা আক্রমণের উপক্রমনিকা হিসেবেই দেখার কথা!
ডঃ আম্বেদকারের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যেতে পারে, এটাও সত্যি যে, পশ্চিমী শক্তি, বিশেষতঃ আমেরিকা এবং সর্বোপরি ভারত এখনো তিব্বতীদের নির্বাচিত সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি! ফলে, রাষ্ট্রসংঘের আর বিশেষ কিছু করার ক্ষমতা থাকছে না! প্রথমে চীনের যে অজুহাত ছিল – দালাই লামার শাসনব্যবস্থায় কিছুমাত্র গণতন্ত্র না থাকা – তা কিন্তু ধর্মশালার তিব্বত সরকারের বর্তমান ব্যবস্থার পরিচায়ক নয়। বহু চেষ্টার পরেও এখনো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা তিব্বতী জাতিগোষ্ঠীদের ধর্মীয় নেতার জায়গায় চতুর্দশ অর্থাৎ বর্তমান দালাই লামার স্থান অটুট। তাছাড়া, এই সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। তাঁদের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী Rimchen Khandu Khrimey। যদি ভারতীয়রা রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে বাঁচানোর ব্যপারে মনোযোগী হন, তবে একই ভাবে চীনের আগ্রাসন থেকে তিব্বতকে বাঁচানোর চেষ্টায় তাঁদের ব্রতী হওয়ার কথা। এর অবিসম্বাদী ফল হচ্ছে চীন ও ভারতের মধ্যে কোন সরাসরি সীমান্ত না থাকলে এবং বন্ধু তিব্বত সরকার পাশে থাকলে চীনের ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা অনেক সহজ হবে।
একথা মনে রাখা দরকার, ভারতে বহমান বেশকিছু নদীর উৎসমুখ তিব্বতে এবং সেখানে বিভিন্ন জায়গায় নদীবাঁধ তৈরী করে চীন তার নাশকতামূলক কাজের পরিচয় দিচ্ছে। তারা একদিকে তিব্বতীদের কোথাও শুখা রেখে আর কোথাও কৃত্রিম বন্যা বইয়ে তাদের কৃষি-ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে, অন্যদিকে তাদের এই কাজের ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতের নদীগুলিতে শুখা ও বর্ষার মরসুমে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে ভারতের অসীম ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করতে পারে। এর ফলে তিব্বতের হিমবাহগুলিকে সংকুচিত করে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করা হচ্ছে।
ভারতকে রাষ্ট্রসংঘ এবং পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে মিলিতভাবে একটি কার্যকর, স্থায়ী সমাধান সূত্র বের করে তিব্বতীদের নিজেদের হাতে তাদের ভাগ্য-নিয়ন্ত্রনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এই উপমহাদেশের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অতীব জরুরী।
ভারতের হিমালয়ান ব্লান্ডার
