ভারতে কম‍্যুনিষ্টদের রাজনৈতিক ভবিষ‍্যত অন্ধকার

১৯২০ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানতঃ এম.এন. রায়ের উদ‍্যোগে তাসখন্দে ভারতীয় কম‍্যুনিষ্ট পার্টি গঠিত হয়। এই পার্টির গঠনে রাশিয়ার লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক বিপ্লব ও তাদের ক্ষমতা দখল অনুঘটকের কাজ করে। পার্টির প্রথম চেয়ারম‍্যান যদিও দক্ষিণী ব্রাহ্মণ এম. পি. টি. আচার্য, সংগঠনের প্রাণপুরুষ নিঃসন্দেহে এম.এন.রায় এবং তাঁর সহধর্মীনী ইভলিন রায়। এম.এন.রায় বলশেভিকদের অনুসরনে সশস্ত্র বিপ্লবের পথে ইংরেজদের ইংরেজ বিতারণের উদ্দেশ‍্য নিয়ে ভারতের কম‍্যুনিষ্ট পার্টির গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেন। তিনি অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের থেকে প্রথমে কম‍্যুনিষ্ট পার্টির নেতা-কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসু হয়নি। তারপর তিনি গোঁড়া মুসলমান ‘মুহাজির’ সম্প্রদায়ের মধ‍্যে থেকে নেতা-কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করলে তা অধিকতর সাফল‍্যলাভ করে। এদের মধ‍্যে নেতৃত্বে আসা মহম্মদ আলী ও মহম্মদ সফীক উল্লেখযোগ‍্য। এই সফীক পার্টি গঠনের শুরুতে দলের প্রথম জেনারেল সেক্রেটারী হন।
মোহাজির সম্প্রদায় আগ্রাসী প‍্যান-ইসলামিজমে বিশ্বাসী। এদের ইংরেজ বিরোধীতার কারন কিন্তু ভারতের পরাধীনতা নয়। তাদের ইংরেজ বিরোধীতার সূত্রপাত হল অটোমান সাম্রাজ‍্যের তুর্কী খলিফার শ্রেষ্ঠত্ব খর্ব করার জন‍্য। ইংরেজ রাজশক্তি এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও অটোমান সাম্রাজ‍্যের সঙ্গে ইংরেজদের সখ‍্যতা এবং খিলাফৎ আন্দোলনকে ইংরেজ সরকারের পক্ষে কোনরকম পাত্তা না দেওয়া – এই দুটি কারনে গোঁড়া মুসলমান সমাজের একটি বড় অংশ ইংরেজদের বিরোধীতায় নামে। সঙ্গে অবশ‍্যই মুসলিম শাসকদের থেকে ইংরেজদের শাসনভার নেওয়া যা এদের কাছে ইসলামের অবমাননা বলে এরা মনে করে! খিলাফৎ আন্দোলন একটি জিহাদী ইসলামী আন্দোলন। আশ্চর্যজনকভাবে এই আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশ ভারতের কম‍্যুনিষ্ট আন্দোলনে শুধু যে যুক্ত হল তাই নয়, কম‍্যুনিষ্ট আন্দোলনের বড় মুখ হিসেবে তারা চিহ্নিত হল। এরা মননে, স্বপনে পুরোপুরি প‍্যানইসলামী মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় ‘খ্রীষ্টান’ ইংরেজ শাসককুল এদের কাছে শত্রু হিসেবে পরিগণিত হল। এদিকে খিলাফৎ আন্দোলন যখন ঐতিহাসিক কারনে তার গতি হারালো, তখন থেকে এই জিহাদী প‍্যানইসলামীরা কম‍্যুনিষ্ট দলে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় পেল। তারপর যখন কামাল পাশা তুরষ্কের শাসনভার হাতে নিয়ে খলিফা পদেরই অবলুপ্তি ঘটালেন, তখন এই ইসলামী কম‍্যুনিষ্টদের বড় অংশ রাশিয়ার সামরিক ট্রেণিং পাওয়ার পর ঐ দেশের সামরিক বিভাগে যোগদান করল। আর অন‍্য কয়েকটি অংশ মধ‍্যপ্রাচ‍্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে। আর বাকীরা ভারতের কম‍্যুনিষ্ট পার্টিতে রয়ে গেল। এদের রাজনীতি রাশিয়ার বলশেভিকদের, পরবর্তীতে স্টালিনের রাশিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। রাশিয়ার থেকে অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন অনুদান বিবিধ প্রকারে এদের কাছে আসত। এদের বিভিন্ন logistic supportও রাশিয়ার থেকে আসত। এই কম‍্যুনিষ্টদের মধ‍্যে রাশিয়ার কম‍্যুনিষ্টদের অনুকরনে প্রথমেই ধর্মীয় চার্চগুলির অধিকার খর্ব করার জন‍্য যে ধর্ম বিরোধীতা করার কথা বলা হল তার বহিরাঙ্গিক রূপ হল secularism – ধর্মনিরপেক্ষতা। রাশিয়ায় চার্চের কায়েমী স্বার্থ কম‍্যুনিষ্টদের স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় সেখানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ দেওয়া হল তা এখানকার কম‍্যুনিষ্টরা ভারতে প্রয়োগ করতে গেল। ফল হল মারাত্মক। ভারতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সামাজিক বন্ধন সব কিছুই হয়েছে ধর্মভিত্তিক। এই দেশের মানুষের মনুষ‍্যত্বের দিক নির্দেশক হচ্ছে ধর্ম। এ কোন বিশেষ religion নয়।ধর্মের কোন একটি বিশেষ পুস্তক বা ‘আদেশ’ সম্বলিত তথাকথিত ধর্মগ্রন্থ নয়। এই ধর্ম-সংস্কৃতি আমাদের সকল ভারতীয়ের সঙ্গে জন্ম থেকে মৃত‍্যু পর্যন্ত ওতপ্রোতভাবে সংপৃক্ত। ফলে, কম‍্যুনিষ্টদের এই ধর্মীয় অপধার্মীকতা প্রথম থেকেই দেশের মানুষ ভালোভাবে নিল না। কিন্তু পার্টি ত রাখতে হবে! তাই একটি কৌশল করা হল। যে ধর্মের বিরোধীতা করলে সেই ধর্মের মানষকে পাওয়া ত যাবেই না, উপরন্তু ঐ ধর্মের মানষরা কম‍্যুনিষ্টদেরই হর্বতোভাবে বিরোধীতা করবে, সেই ধর্ম সম্পর্কে মৌনং সম্পতি লক্ষণম্ করে ধর্ম বিরোধীতার নামে সরাসরি হিন্দু ধর্মের বিরোধীতা করা শুরু হল! এইভাবে এগোতে গিয়ে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রূপ পেল জেহাদী ইসলামী সমর্থকদের মত সরাসরি হিন্দুধর্ম বিরোধীতায়। এর সাম্প্রতিক রূপ হিসেবে আমরা বাংলাদেশে দূর্গাপুজোয় ভাঙ্গচুর ও সরাসরি হিন্দু নিধন, লুঠপাট, ধর্ষনের যে ঘটনার কথা আমরা জেনেছি, যার নিন্দায় সারা পৃথিবী সরব হয়েছে – ব‍্যতিক্রম শুধু ইসলামী কিছু দেশ এবং তথাকথিত কম‍্যুনিষ্ট শাসিত দেশ কোনো প্রতিবাদ করেনি – সেই ঘটনার সম্পর্কে ভারতের কম‍্যুনিষ্ট দলগুলি মৌণব্রত অবলম্বন করেছে। এমনকি কিছু কম‍্যুনিষ্ট ক‍্যাডার এই ঘটনাকে পরোক্ষে সমর্থন করার ব‍্যর্থ চেষ্টা করেছে! এক কম‍্যুনিষ্ট নেতা তারাপীঠে পুজো দেওয়ার অপরাধে পার্টিতে তিরস্কৃত হলেও এক মুসলমান নেতা তাঁর ছেলের বিবাহের নিমন্ত্রণপত্রে “ইনসা আল্লা” লিখলেও পার্টি নিশ্চুপ থাকে। ভারতীয় কম‍্যুনিষ্টদের প্রথম থেকেই বক্তব‍্য হল ধর্ম আফিম মাত্র! তাই হিন্দু ধর্মাচরন নিন্দনীয়, কিন্তু মুসলমান বা খ্রীষ্টান ধর্ম পালন যার যার ব‍্যক্তিগত অভিরুচি!
কম‍্যুনিষ্টদের চিন্তাধারা সর্বদা বিদেশ থেকে আমদানী করা আর তা সেইসব দেশের স্বার্থের কারনে তৈরী বলে তা কখনোই ভারতীয় প্রেক্ষাপটে খাপ খায়নি। যেমন শুরুতে ইংরেজদের বিরোধীতা থাকলেও পরে যখন ইংল‍্যান্ড ও রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক ফ্রন্টে জার্মানীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামল, ভারতীয় কম‍্যুনিষ্টরা জার্মানীর শতেক দোষ ও ইংরেজদের ততোধিক গুণ আবিষ্কার করল! তখন ভারতে কংগ্রেস ও বিপ্লবীরা ভিন্ন পথে দেশ থেকে বৃটিশ বিতারণের চেষ্টা করলেও কম‍্যুনিষ্টরা ইংরেজ শাসকদের সঙ্গেই নিজেদের সংযুক্ত রাখল। যদিও খিজার হুমায়ুন আনসারী আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত সোশ‍্যালিষ্ট (যদিও এরাই ভারতীয় কম‍্যুনিষ্ট) শিক্ষিত মানুষজনের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা বলেছেন, তবে সেই সব বিদ্বজ্জন, যেমন, মৌলানা হাসরত মোহানি, কাজী আব্দুল গফ্ফর, রফি আহমেদ কিদওয়াই, মহঃ হাবিব, সাগীর নিজামি, ইস্মৎ চুঘতাই, ইসরারুল হক মাজাই, কে. এম. আশরফ, আলী সর্দার জাফরী ও জান নিসার আখতার – এদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান নাকি ভারতীয় ইতিহাসবিদরা ঠিকমত তুলে ধরেন নি!
আসলে আমাদের অভিজ্ঞতা হল, কম‍্যুনিষ্ট প্রচার গোয়েবেলসীয় প্রচারকেও হার মানায়। কয়েকটি তথ‍্য উপস্থাপন করা যাক। প্রথমতঃ খিলাফৎ আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ভারতীয় শিক্ষিত মুসলিম সমাজের এক বড় অংশ সাম‍্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পরেছিল আর অন‍্য একটি অংশ সরাসরি কম‍্যুনিষ্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়। এর একটি কারন হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে। কোরান-হাদিস পড়া শিক্ষিত মুসলমানের কাছে হিন্দুরা ‘কাফের’। কোরান অনুসারী মুসলিম মাত্রই কাফেরদের পুতুল পুজার বিরোধী। কম‍্যুনিষ্টরা এই পুজার সরাসরি বিরোধীতা করলেও মুসলিম ধর্মের আচার আচরনের কোন বিরোধীতা করেনি। সুতরাং ইসলামী আচার আচরন পালন করেও কম‍্যুনিষ্ট হওয়া সম্ভব। আমি কর্মসূত্রে এক বিখ‍্যাত কম‍্যুনিষ্ট নেতার সঙ্গে মিটিংয়ের সময় জানলাম যে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন! তাই আমাদের পূর্ব নির্ধারিত মিটিং পিছিয়ে গিয়েছিল। এর থেকে একটি জিনিষ পরিষ্কার। ইসলামী আচার অনুষ্ঠান পালন করে কম‍্যুনিষ্ট হওয়া সম্ভব। কিন্তু কম‍্যুনিষ্টরা ঘোষিত নীতিতেই হিন্দুদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বিরোধীতা করায় কোন যথার্থ হিন্দু তাঁর ধর্মপালন করে কম‍্যুনিষ্ট হতে পারে না। যদি আলিগড়ী কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের এক পরম্পরা হত স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা, তাহলে ক’জন মুসলমান ইংরেজ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন? ক’জন মুসলমান আইন অমান‍্য করে ভারতের স্বাধীনতার জন‍্য জেল খেটেছেন? এই সংখ‍্যাটা অবিভক্ত ভারতের জনসংখ‍্যার হিসেবে বিচার করলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আধুনিক শিক্ষা কোন মুসলমানকে সহনশীলতা শেখায় না। কারন ধর্মীয় বিধান অনুসারে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ইসলামের অঙ্গ। কোন ধার্মীক মুসলমানের কাছে তা অপরাধ নয়। এই অব্দি ঠিক আছে। কিন্তু যখন ধর্মনিরপেক্ষ কম‍্যুনিষ্টরা তা মেনে নেয়, সেটা হয়ে যায় “ভাবের ঘরে চুরি”।
আবার স্বাধীনতার পরে কিছু মুসলমান বিদ্বজ্জনকে ভারত সরকারে অন্তর্ভুক্ত করলেও তাদের ধর্মীয় প্রভুত্ব করার স্পৃহা কমেনি – তাঁরা কেউই ধর্মনিরপেক্ষতা দুরের কথা, সর্বধর্ম সমন্বয়ের তত্ব সমর্থন করেছেন বলেও জানা নেই। যখন মুসলিম লীগ জিন্নার নির্দেশে ডাইরেক্ট অ‍্যাকশানের নামে বিনা প্ররোচনায় হিন্দুদের হত‍্যা, ধর্ষন ও লুন্ঠনে নেমেছিল – জিন্নার শিষ‍্য গোলাম সারোয়ারের নেতৃত্বে বাংলা জুড়ে হিন্দুদের উপর শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে চরম অত‍্যাচার করছিল; তখন মুসলিম লীগে জিন্নার প্রতিদ্বন্দী আরেক উচ্চশিক্ষিত ব‍্যরিষ্টার হুসেন সুরাবর্দী অত‍্যাচারে জিন্নার দলবলকেও ছাপিয়ে গেলেন। সেই সময় ক’জন আলিগড়ীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমান এই হিন্দু নিধন বন্ধ করার জন‍্য কি করেছেন? ক’জন কার্যকরীভাবে এই গণহত‍্যার প্রতিবাদ করেছেন? ক’জন কম‍্যুনিষ্ট নেতা এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন?
কম‍্যুনিষ্টরা স্বাধীনতার আগে যেমন রাশিয়ার নির্দেশে ইংরেজ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তারই উত্তরাধিকারী হিসেবে নতুন শ্লোগান তুলেছেন, “ইয়ে আজাদী ঝুঠা হ‍্যায়, ভুলো মৎ, ভুলো মৎ”। এইভাবে স্ববিরোধী ও দেশের বৃহত্তর অংশের মূল‍্যবোধকে মাণ‍্যতা না দেওয়ায় কম‍্যুনিষ্ট পার্টি বারবার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। তারা চোখ বন্ধ রেখে এইসব ভাঙ্গনকে ideological difference বলে চাপা দিতে চেষ্টা করেছেন। যেমন, চীন যখন ১৯৬২ সালে ভারত আক্রমণ করে তখন একদল কম‍্যুনিষ্ট চীনের প্রসাদ পাওয়ার লোভে প্রচার করতে শুরু করে যে চীন নয়, আক্রমণকারী দেশ হচ্ছে ভারত! নেতা হওয়ার উদগ্র কামনার সাথে সাথে চীনের উচ্ছিষ্ট লাভের জন‍্য এই নেতারা ভারতের কম‍্যুনিষ্ট পার্টি ভেঙ্গে কম‍্যুনিষ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) তৈরী হয়। তা’হলে কম‍্যুনিষ্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া কি মার্কসবাদকে স্বীকার করনি! আবার এই নতুন পার্টি কয়েক বছরের মধ‍্যে ভেঙ্গে চীনের প্রচ্ছন্ন মদতে ভেঙ্গে ভারতের কম‍্যুনিষ্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) এমন সব কিম্ভুতকিমাকার নাম দিয়ে ধীরে ধীরে টুকরো হতে লাগল। আসলে এসবের মূল কারন নেতৃত্বের লোভ, সত‍্যিকারের নীতিহীনতা এবং বিদেশী শক্তির নিজেদের জাতীয় স্বার্থে তাদের হাতে ক্রীড়নক হওয়ার ফল।
এভাবে ভারতের সকল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা এবং দেশের শত্রু রাষ্ট্রের সমর্থনে কথা বলা – এমন সব কাজ করতে করত কবে যে কম‍্যুনিষ্ট দলগুলি ভারতের জাতীয়তা বিরোধী হয়ে গেছে তা এরা নিজেরাও বুঝতে পারেনি। এখানে উল্লেখ‍্য, পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে জাতীয়তাবাদ ধ্বংস করার রাজনীতি করা হয়। ব‍্যতিক্রম – ভারত। এর দায় কিন্তু দেশের সরকারের উপরেও বর্তায় – এদের এমনভাবে বাড়তে দেওয়ার জন‍্য। এর ফল, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে কম‍্যুনিষ্টদের সমাবেশে শ্লোগান ওঠে, “ভারত তেরত টুকরে হোঙ্গে” – যা পাকিস্তানের ভারত বিরোধী জেহাদীদের শ্লোগান!
এইসব ঘটনা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী জেহাদী শুধু নয়, সমগ্র ভারত বিরোধী শক্তির সঙ্গে অশুভ আঁতাত বা তাদের সমস্ত ধ্বংসাত্মক কাজের সমর্থন করে ধীরে ধীরে কম‍্যুনিষ্টরা ভারতের জাতীয়তাবাদী শক্তি ও জাতীয়তাবোধের পরিপন্থী কাজেই নিজেদের নিয়জিত করেছে। কোন দেশের এমন কোন দল নেই যারা এমন দেশবিরোধী নীতি নিয়ে চলতে পারে। এর ফলে, সংখ‍্যাগরিষ্ট মানুষের জন‍্য অর্থনৈতিক সংস্কারের মত সর্বজনগ্রাহ‍্য নীতি নিয়ে চললেও কম‍্যুনিষ্টদের জন্মলগ্ন থেকে দুটি মারাত্মক আত্মঘাতী নীতি – ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পড়ে ইসলামী জেহাদী তোষণ ও জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর আচরণ – এর জন‍্যই কম‍্যুনিষ্টরা আজ ভারতে জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। কয়েকটি রাজ‍্যে যে তাদের নামমাত্র সংসদীয় উপস্থিতি আছে তা স্থানীয় আঞ্চলিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে পাওয়া! এর একমাত্র ব‍্যতিক্রম কেরল। তার কারন ভিন্ন। কেরলের জনসংখ্যার বিন‍্যাস এমন যে, এখানে মুসলমান ও খ্রীষ্টানদের প্রায় পুরো ভোটটাই তাদের হিন্দুবিরোধী অবস্থানের জন‍্য কম‍্যুনিষ্টরা পায়। সেজন‍্য একমাত্র এই রাজ‍্যেই তারা ক্ষমতায় থাকতে পারে। সংখ‍্যাগুরু হিন্দু ভোট আর এই মূহুর্তে কম‍্যুনিষ্টদের কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার সবচেয়ে বড় কারন ধর্ম সম্পর্কে তাদের অবস্থান। একথা সত‍্যি যে, ভারতে ধর্ম বাদ দিয়ে রাজনীতি বা এক ধর্মকে তোল্লা দিয়ে অন‍্য ধর্মের বিরুদ্ধাচরন করে রাজনীতি – এর কোনটাই সাফল‍্য পাবেনা। কম‍্যুনিষ্টদের ধর্মীয় অবস্থান পরিবর্তন না করলে ভারতে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ‍্যত অন্ধকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *