মেকলে প্রবর্তিত ভারতে শিক্ষানীতির অভিমুখ ছিল ভারতীয়দের ইংরেজী ভাষাজ্ঞান দিয়ে তাদের করনিকবৃত্তির জন্য তৈরী করা। কারন ইংরেজ শাসকের বুদ্ধির সঙ্গে নেটিভ হাতের মেলবন্ধন এই বিশাল দেশকে শাসনের জন্য দরকার ছিল। স্বাধীনতার পরে নেহরুভিয়ান নীতির প্রভাবে গঠিত শিক্ষানীতির অভিমুখ বদলে হয়ে গেল “সমাজবাদী শিক্ষা” তার সঙ্গে শিক্ষার গণতন্ত্রীকরনের নামে শিক্ষার রাজনীতিকরন!
ব্যাপারটা খোলসা করে বলতে গেলে বলতে হয়, শুরু থেকেই ভারতে শিক্ষার অভিমুখ ভুল দিকে গিয়েছে। নেহরুর একটা রোমান্টিক বন্ধন ছিল ‘সমাজবাদী’ কথাটার উপর! তাঁর কন্যা এবং পৌত্রের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে “সাম্যবাদী” “ধর্মনিরপেক্ষতা”র নামে জেহাদী মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার রাজনীতি শুরু হয়েছিল। শিক্ষার অঙ্গনে এই নীতির প্রবেশের ছাড়পত্র সরকারী আনুকুল্যেই শুরু হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী পর্যায়ে বুনিয়াদী ও প্রাথমিক শিক্ষায় জোর দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও তা অবহেলা করে শিক্ষাখাতে খরচের সিংহভাগ নিয়োজিত হল IIT, IIM স্থাপনে! একটি বাড়ি তৈরী করার সময় ভিতের দিকে নজর না দিয়ে প্রথমেই উচ্চতম তলের নির্মানের চেষ্টা হলে বাড়ির যে অবস্থা হয়, আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থারও সেই হাল হল। একটি জাতির ভিত সুদৃঢ় করতে প্রয়োজন তার উৎকৃষ্ট ও সর্বব্যপী প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। ইউরোপ, বিশেষতঃ ব্রিটেন, আমেরিকা, কানাডা, এমনকি এশিয়ার জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর তার উদাহরণ। আমাদের দেশে স্বাধীনতার পরে প্রাথমিক স্তর থেকে সার্বজনীন শিক্ষার জন্য কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। Top heavy শিক্ষাব্যবস্থায় অর্থব্যয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা সমাজের সার্বজনীন উপকারে আসেনি। তাছাড়া, দেশের সুদীর্ঘ সময়কালের শাসক পরিবারের ধারনা ছিল, শুধুমাত্র মুসলমান সমাজের শিক্ষার উপরে জোর দিলেই স্বাক্ষরতার হার বাড়বে! এই ধারনা রাজনৈতিক ফয়দা নেবার চেষ্টায়। তাদের ধারনা ছিল আমজনতার স্বাক্ষরতা পাওয়া শিক্ষায় মোক্ষলাভ। উচ্চশিক্ষা elitist মাত্র! এই ধারনার বশবর্তী হয়ে ইসলামী ধর্মীয় শিক্ষার মাদ্রাসা খুলতে সরকারী দাক্ষিণ্য মঞ্জুর করা হল। আবার শিক্ষা ধীরে ধীরে কম্যুনিস্টদের নিয়ন্ত্রনাধীন হওয়ায় তারা তাদের রাজনৈতিক এ্যজেন্ডাগুলি রূপায়নের জন্য শিক্ষা বিভাগকে আঁকড়ে ধরল।
শুরু হল শিক্ষার জেহাদীকরন! মাদ্রাসা শিক্ষার রাশ ইসলামী শিক্ষাবিদদের হাতে না গিয়ে তা গেল মোল্লা, মৌলভী যারা ভারতবিদ্বেষী ত বটেই, হিন্দুবিদ্বেষীও বটে, তাদের হাতে। সেখানে প্রকৃত সহিষ্ণুতার শিক্ষা, যা ইসলামের একটি মূল কথা, না শিখিয়ে ছাত্রদের মধ্যে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদের বীজ রোপনের প্রচেষ্টা ধীরে ধীরে সাফল্য পেতে শুরু করল। কাশ্মীর ও বালুচিস্তান সম্পর্কে নেহরুর অহংকারীভাবে নেওয়া নির্বোধ নীতির ফলে ভারতে জেহাদীর সংখ্যা বাড়তে লাগল। সঙ্গে চলল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইন্ধন। ভারতীয় কম্যুনিস্টরা শুরু থেকেই জেহাদী ইসলামের সমর্থক ও হিন্দুধর্মের বিরোধী হওয়ায় দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী ধর্মনিরপেক্ষতার আমদানী করা হল। দেশে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রীদের শুরু থেকেই হিন্দুদের ধর্মীয় ঐতিহ্য পালনের সুযোগ সাধারন স্কুলগুলিতে কমিয়ে বা বন্ধ করে দেওয়া হল। কিন্তু মুসলমানদের স্কুলে ধর্মপালনের ব্যাপারে বাধা ত নয়ই, বরং উৎসাহ দেওয়া হতে লাগল। একথা মনে রাখা দরকার যে এ কাজ ভারতের হিন্দু-মুসলমান সাধারন মানুষরা করেনি। সরকারে অধিষ্ঠিত কংগ্রেস দল তাদের সহযোগী কম্যুনিস্টদের সঙ্গে মিলে এভাবে শিক্ষায় ধর্মীয় মেরুকরন শুরু করল।
কিন্তু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বুনিয়াদী থেকে উচ্চতম স্তর অব্দি নির্দিষ্ট সিলেবাস গলাধঃকরন করে পরীক্ষার সময় যে ছাত্র সেটা যত বেশী উগরে দিতে পারবে তার নম্বর তত বেশী! এই শিক্ষায় আর যাই হোক, বোধবুদ্ধির বিকাশ হয় না – স্বাধীন চিন্তার বিকাশও হয় না। এর ফলে দেশের শিক্ষিত সমাজের একটি বড় অংশকে আজগুবি ধর্মনিরপেক্ষতার এবং সাম্যবাদের ছাঁচে ঢালাই করে নিতে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের পক্ষে সহজ হল। আর সঙ্গে জাতীয়তাবাদ ও ভারতীয় ঐতিহ্য এবং ভারতীয়ত্বের শিক্ষা না পাওয়ায় দেশের মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদের (nationalism) বোধ কম বা অবলুপ্ত হল। ফলে চরিত্র গঠনের শিক্ষার অভাবে দেশে সমস্ত স্তরে দূর্ণীতি মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেল।
বিশেষতঃ সমাজসেবার নামে নির্বাচনে জিতে কে কত সরকারী অর্থ আত্মস্মাৎ করতে পারে তার জন্য হিংস্র প্রতিযোগীতা শুরু হল। ইসলামী ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেওয়ায় ধীরে ধীরে দেশে জেহাদী হিংসা ও তার বিপরীতে হিন্দু প্রতিরোধ বৃদ্ধি পেল। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের জন্ম হলেও এই হিন্দুস্তান অর্থাৎ ভারতে ইসলামকে অতিরিক্ত সুবিধা ( এটা মনে রাখা দরকার, শুরুতে ভারতীয় মুসলমানরা অতিরিক্ত কোন সুবিধা দাবী করেনি) দিয়ে জেহাদের রাজনীতি শুরু করার দায়িত্ব পুরোপুরি নেহরু ও পরবর্তী সব কংগ্রেস সরকারের। এর ফলে সবচেয়ে অসুবিধায় পড়েছেন ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী মুসলমান নাগরিকরা। একদিকে ধর্মের দোহাই দিয়ে জেহাদী ও তাদের সহযোগীরা ভারতের অস্তিত্বের মূলে আঘাত করছে, প্রতিবেশী রাস্ট্রের পক্ষে নাড়া লাগাচ্ছে; অন্যদিকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ যা এই সব ভারতীয় মুসলমানদের রক্তে। কিভাবে ধান্দাবাজীর রাজনীতি দেশকে বিষিয়ে দিয়েছে তার একটা ছোট উদাহরণ দেওয়া যাক। ফারুখ আবদুল্লার মেয়ে একজন হিন্দুকে বিয়ে করার পর ফারুখ তাঁর জামাইয়ের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের নির্দেশ পাঠালে জামাই তাতে অসম্মত হন। তখন রুষ্ট ফারুখ আবদুল্লা তাঁর মেয়েকে ত্যাজ্যকন্যা ঘোষণা করেন। এই ফারুখ আবদুল্লা আবার কোলকাতায় এসে মঞ্চ আলো করে হাতে হাত মিলিয়ে বিরোধী ঐক্যের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দেন! এইসব তথাকথিত বিরোধী নেতা নেত্রীদের সঠিক শিক্ষার অভাবে এরা সচেতনভাবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে নিজেদের ক্ষুদ্রব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উপায় খোঁজেন। সরকার বিরোধী আন্দোলন কখন যে দেশবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়, তা বোঝার ক্ষমতা এদের অশিক্ষা-কুশিক্ষার কারনে সম্ভব হয় না।
এখন কেন্দ্রে যে রাজনৈতিক দলের সরকার আছে তারা নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করলেও এখনো তার বাস্তবায়ন হয়নি।এই শিক্ষানীতিতে পূর্বের দূর্বলতাগুলি দূর করে প্রাথমিক স্তর থেকে মেধার বিকাশ ও সেইসঙ্গে জাতীয় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার বহন করার শিক্ষা দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। শুভ প্রস্তাব – বাস্তবায়নের আশায় রইলাম। এখানে প্রাথমিক স্কুলশিক্ষা অবৈতনিক করার প্রস্তাব রাখা হলেও তা বাস্তবায়নের পরিকাঠামো নির্মাণ এই মূহুর্তে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এই শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের জন্য সরকারের যে ভূমিকা দরকার তা কিন্তু কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষা নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক ব্যবসা। এর থেকে দুধ দোয়ানোর জন্য সব পক্ষই উদগ্রীব। গত ৩৫-৪০ বছরে শিক্ষকদের, বিশেষতঃ উচ্চশিক্ষায়, বেতন যেমন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, সে অনুযায়ী শিক্ষকদের শিক্ষাদান অপেক্ষা দলীয় কাজে সময় দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। বিশেষতঃ কম্যুনিস্ট শাসিত রাজ্যগুলিতে এই প্রবণতা বেশী থাকলেও অন্যান্য দল শাসিত রাজ্যগুলি তার ব্যতিক্রম নয়। এর সবচেয়ে বড় কারন শিক্ষক নিয়োগে দূর্ণীতি। কোথাও দলদাস নিয়োগ হয় ত কোথাও অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে! এক্ষেত্রে যোগ্যতা ধর্তব্যের মধ্যে আনা হচ্ছে না। এদিকে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্তরের নিয়োগের জন্য বিভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ কমিশন আছে। তার ফলে, অল্প হলেও যেমন খুশী তেমন নিয়োগে অসুবিধা হচ্ছে – বারবার আদালতের আদেশে সরকারের মুখ পুড়ছে। এই অসুবিধা সব রাজনৈতিক দলের। সেজন্য বিভিন্ন রকম ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে! নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষকদের ট্রেণিংয়ের কথা বলা হলেও তাদের নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষ কিছু বলা নেই। অবশ্য এ বিষয়ে বলার কথা UGCর। কিন্তু UGCর সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞপ্তি – ন্যাশনাল হায়ার এডুকেশান কোয়ালিফিকেশান ফ্রেমওয়ার্কের খসড়া তারা সব রাজ্যকে পাঠিয়ে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে মতামত জানাতে বলে! সঙ্গে হায়ার এডুকেশানের ইন্সটিটিউশানাল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানেরও খসড়া পাঠানো হয়। শিক্ষায় রাজনীতিকরনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল এই খসড়া ও তাতে রাজ্যের প্রতিক্রিয়া।
এখানে একটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয় – তা হল, কংগ্রেসী রাজত্বে শিক্ষা যে মানুষের মস্তিষ্ক ও চরিত্র গঠনের ট্রেণিং নয়, শুধুমাত্র কম্যুনিস্ট ধারনা মোতাবেক মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য, তা বোঝাতেই দপ্তরের নাম পাল্টে মানব সম্পদ উন্নয়ণ দপ্তর করা হয়! আমার আগের ধারনার সঠিক প্রতিফলন এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া, বৈচিত্র্যের মাঝে সমন্বয়ের জন্য যে দপ্তর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা, তা নির্বোধের মত কেন্দ্র-রাজ্য উভয়ের যৌথ নিয়ন্ত্রণে এল। কথায় বলে, ভাগের মা গঙ্গা পায় না – এর ফলে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্র তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই দপ্তরকে ব্যবহার করার সুযোগ পেল।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকার ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধীরে ধীরে শিক্ষাকে তার পরিচিত সেট-আপের থেকে বের করে আনার চেষ্টা করে। তাদের পূর্ববর্তী সরকারের অনুগত শিক্ষক বাহিনী শিক্ষার জগতে তাদের রাজনৈতিক চেতনার উত্তরসূরী হিসেবে ছাত্রকুলকে দীক্ষিত করার কাজকে শিক্ষক হিসেবে প্রধান কর্তব্য বলে মনে করতেন। এছাড়া এই শিক্ষককুল তাদের পক্ষে সমাজে যতটা রাজনৈতিক চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতেন, তার থেকে প্রকৃত শিক্ষাদানে ব্যপৃত থাকতেন অনেক কম সময়! সেজন্য এই সরকার তাদের প্রভাব খর্ব করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করে। প্রথমে তারা নিজেদের প্রতি অনুগত শিক্ষকদের বিশেষ বিশেষ চেয়ারে, যেমন, উপাচার্য, প্রিন্সিপাল বা প্রধান শিক্ষক পদে বসাতে শুরু করেন। অবশ্য এ কাজ এখন সারা দেশ জুড়েই চলছে। এটা পরিষ্কার বোঝা যায় এই খসড়া পাঠানোর মধ্যে দিয়ে। এখন আমাদের রাজ্যে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অনেক কম। সেজন্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মেয়াদবৃদ্ধি থেকে ধরে বিভিন্ন নাম দিয়ে শিক্ষিত যুবকদের অত্যন্ত কম বেতনে নিয়োগ করা হচ্ছে। এতে সরকারের অর্থ শিক্ষায় ব্যয় না করে অন্য খাতে ব্যয় করা, বেকারদের সরকারী নীতির দ্বারা শোষণ করা এবং চাকরীর স্থিরতায় প্রশ্ন চিহ্ন রেখে তাদের দলদাস হিসেবে ব্যবহার করা, বিভিন্ন নিয়োগ আয়োগকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ করা – এতগুলি উদ্দেশ্য সাধিত হল! বিনিময়ে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের মান নষ্ট হল। নিকৃষ্টমানের শিক্ষক নিয়োগে নিকৃষ্টমানের শিক্ষাদান হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কিছু এসে যায় না। শিক্ষা যে ব্যবসা নয়, তা দেশের নেতারা আজও বোঝেননি। ২০০৮ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে ঘোষিত শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ছিল ১:১৮। এখনো কাগজে কলমে তাই। কিন্তু এই খসড়ায় বিজ্ঞান ছাড়া অন্য বিভাগে১:৩০ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে ১:২৫ মাত্র। তা হলে যেসব রাজ্যে এবং কেন্দ্রীয় সংস্থায় শিক্ষক সংখ্যা ভালো তাদের ব্যাপক ছাঁটাইয়ের পথে যেতে হবে! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারে এই অনুপাতের চেয়েও শিক্ষকসংখ্যা কম এবং যারা প্রতিনিয়ত শিক্ষায় সংকোচন করে চলেছে তারা একই পথের পথিক হয়ে এই খসড়া প্রস্তাবের বিরোধীতা করেছে – যা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায়। অর্থাৎ প্রতিবাদ করার জন্য প্রতিবাদ। এটা শিক্ষা নিয়ে চরম রাজনৈতিক সুবিধাবাদের প্রতিফলন। আশ্চর্যের বিষয়, সব সরকার বিশাল বিশাল অট্টালিকা বানাচ্ছে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বানানোর জন্য! কিন্তু অধিকাংশ উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ণের সঠিক পরিকল্পনা বা তার রূপায়ন হচ্ছে না।
এভাবে শিক্ষায় রাজনীতিকরন ও সরকারী উদাসীনতার ফলে এখন শিক্ষা বিভাগের পরিচালনা করা যে অসম্ভব হয়ে পড়েছে তা সব সরকারই বুঝতে পারছে। সেজন্য নিজেদের তৈরী করা সংকট থেকে মুক্তিলাভের জন্য তারা শিক্ষা সংকোচন ও তার বেসরকারীকরনের রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করবে। যদিও নতুন শিক্ষানীতিতে স্কুলশিক্ষার বেসরকারীকরন করার কথা বলা নেই, উচ্চশিক্ষায় কিন্তু সরকারের তরফে বেসরকারী বিনিয়োগ করতে আপত্তি থাকছে না। আমি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইউরোপ, আমেরিকায় দেখেছি, অধিকাংশ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান সরকারী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক নিচে। তাছাড়া এইসব বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও শিক্ষার খরচ অত্যন্ত বেশী, এদের অবকাঠামোর মানও অত্যন্ত খারাপ। শিক্ষার খরচ প্রায় সব ক্ষেত্রেই সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের আয়ত্তের বাইরে! আমাদের দেশে এখনো পযর্ন্ত যে সব বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, প্রায় প্রতিটির ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে বিপদ আরো বড়। এখানে এখনো পযর্ন্ত সরকারের চিন্তাভাবনার স্তরে আছে স্কুল শিক্ষার বেসরকারীকরন। এতে দুন স্কুলের মত প্রথম সারির বিদ্যালয় হয়ত ভবিষ্যতে হবে শুধুই উচ্চবিত্ত ও ক্ষমতাশালীদের জন্য। সাধারন মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু স্কুল শিক্ষার সংকোচন অবশ্যম্ভাবী। পরিশেষে বলি, একটি জাতিকে শেষ করার জন্য বিনা অস্ত্রে – শুধুমাত্র তাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করাই যথেষ্ট। আর কম্যুনিষ্টদের জানাই, মাও-জে-দং চীনের ক্ষমতা দখলের পর যে দুটি বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা হল খাদ্য এবং শিক্ষা।
শিক্ষায় মাৎস্যন্যায় চলছে চলবে
