সত্যি বলতে কি, এখন আমাদের দেশের কোভিড পরিস্থিতি চিকিৎসা ব্যবস্থার হাতের বাইরে চলে গেছে। দেশের মানুষদের বাঁচাতে হলে শক্ত, অভিজ্ঞ ও যোগ্য হাতে এর মোকাবিলা করা প্রয়োজন। দুখেঃর সঙ্গে বলতে হয় যে তার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। টিভি এবং সোশ্যাল মাধ্যমের দায়িত্ব পালনেও এ ব্যপারে কোন স্পষ্ট রূপরেখা পাওয়া যাচ্ছেনা। বিশেষতঃ, আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা তার পরিচালনার দায়িত্ব যার হাতে, সেই স্বাস্থ্যভবনের ভূমিকা সমালোচনার ঊর্ধে নয়। করোনা মোকাবিলায় পরামর্শ দিতে পারার মত পারদর্শিতা যাদের সবচেয়ে বেশী, তারা হলেন চিকিৎসকদের মধ্যে ভাইরোলজিষ্ট আর চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে বায়োটেকনোলজিষ্টদের একটি অংশ। আমাদের রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় যত বিশেষজ্ঞ দল তৈরী হয়েছে তাতে এদের স্থান হয়নি। বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে যে ডাক্তারবাবুরা আসেন তাদের মধ্যে বিশেষভাবে থাকেন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিষ্ট আর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জেনরা! থাকে কিছু অভিনেতা/অভিনেত্রী আর সর্বঘটে নৈবেদ্যের কলার মত কিছু মানুষ যাদের সংবাদ মাধ্যম আরোপিত বিশেষজ্ঞ "বুদ্ধিজীবি" সংজ্ঞা! এদের পরামর্শে আমজনতার কি উপকার হচ্ছে তা কেউ জানেনা। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত আছে ক্লিনিশিয়ান ডিগ্রিধারী কিছু স্তাবক আমলার দল যারা স্বাস্থ্যভবন আলো করে রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্যের দেখভাল করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
এই ধরনের RNA ভাইরাসের ধর্ম অনুসারে দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউ যে আসবে সে সম্পর্কে এইসব বিশেষজ্ঞ (!) সরারকে কোন সঠিক পরামর্শ দিয়েছিলেন কি? এর জন্য যে পরিকাঠামো তৈরী করার কথা তা তৈরী ত করেননি, অধিকন্তু আগের পরিকাঠামোর অনেকটাই বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের উৎসবের মরসুমে সংযম দেখানো মানুষজনকে প্রলুব্ধ করার জন্য রেষ্টুরেন্ট, সিনেমা হল, শপিং মল ও অন্যান্য বিনোদনের জায়গা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হল। গণপরিবহনে বাস, অটো সবেতে সমস্ত বাধানিষেধ সরিয়ে নেওয়া হল। এমনকি স্কুল,কলেজ খুলতে শুরু করল। এইসব বিশেষজ্ঞরা এমন কোন প্রমান দেখাতে পারবেন যে, তাঁরা সরকারকে দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে সতর্ক করে পরিকাঠামো ভাঙ্গার পরিবর্তে আরো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন? না। অনেক দেশ যেমন বেলজিয়াম, হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং আরো বহু দেশ লকডাউন অব্দি তোলেনি। এই বিশেষজ্ঞরা কি এমন প্রমাণ দেখাতে পারবেন যে তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড পরিকাঠামো যখন রোগীর অভাবে বন্ধ করতে হচ্ছে তখন তাদের পরবর্তী ঢেউয়ের ব্যপারে সতর্ক করে পরিকাঠামো চালু রাখতে বলেছেন! রেমডিসেভিরের (স্বল্প থেকে মধ্যমমানের কোভিড সংক্রমণের প্রশমণে ব্যবহার করা হয়) স্টক যে হাসপাতালগুলিতে দ্রুত কমে যাচ্ছে, সরকারী স্টক দ্রুত নামছে,তখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে তা বাড়ানোর কথা কোন আমলা-বিশেষজ্ঞ বলেছেন কি? এইসব প্রাথমিক কাজগুলোই স্বাস্থ্যভবনের আমলারা করে উঠতে পারেননি।
দেশের অক্সিজেনের মোট চাহিদা দিনপ্রতি ৭৫০০ মেট্রিক টন। এই মূহুর্তে কোভিড পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের চাহিদা দিনপ্রতি ৫৫০০ মেট্রিক টন। অভাবরয়েছে অক্সিজেন ট্যাঙ্গার আর সিলিন্ডারের। তার কারন খালি ট্যাঙ্কার এবং সিলিন্ডার বসিয়ে রাখার যুক্তি নেই বলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশী এগুলো রাখা যায় না। সাধারণ সময়ে এভাবে চলে যায়, কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আসার কথা ধরে নিয়ে যে প্রশাসন যত তাড়াতাড়ি এই পরিকাঠামো উন্নত করতে পারবে তারাই সফল। অন্যেরা ব্যর্থ। সেই দিক দিয়ে দেখলে দেশের আরো কয়েকটি রাজ্যের মত পশ্বিমবঙ্গও ব্যর্থ। উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল,তেলেঙ্গানা তাদের পরিকাঠামো দ্রুততার সঙ্গে উন্নত করছে। সেখানে আমরা বাজিয়ে চলেছি কেন্দ্রের বঞ্চনার ভাঙ্গা রেকর্ড। এটা রাজনীতিকদের বক্তব্য হতে পারে, স্বাস্থ্যভবনের আমলাদের নয়। এমনকি ন্যশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মত জায়গায়ও অক্সিজেন মহার্ঘ! এ রাজ্যেও দিল্লী এবং অন্যান্য রাজ্যের মত অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের কালোবাজারীতে দর সিলিন্ডার প্রতি দশ হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মনে রাখতে হবে, একটা সিলিন্ডারের অক্সিজেন গড়ে ঘন্টা ছয়েক চলতে পারে। এই কালোবাজারী বন্ধ করতে না পারা জঘন্য অপরাধ। এইসব কালোবাজারীদের সংক্ষিপ্ত বিচারে প্রাণদন্ডের বিধান যুক্তিযুক্ত।
এবার প্রসঙ্গ পাল্টানো যাক। ভোটযুদ্ধের রাজনৈতিক উত্তাপে বাঙ্গালী নিজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দৈন্যতার পরিচয় আগেই দিয়েছে। এবার কোভিডের বাড়বাড়ন্তের সময় তার অহংকারী নির্বুদ্ধিতার পরিচয় রাখছে। আমাদের রাজ্যের 'রেডিমেড' বুদ্ধিজীবীর দল, পেশাদার রাজনীতিকরা যেভাবে কোভিডবিধি ভেঙ্গেছেন, যেভাবে বৈদ্যুতিন মাধ্যম বারবার তাদের দেখিয়েছে, তাতে এক বড় অংশের মানুষের মনে বদ্ধমূল ধারনা হয়েছে যে এরা যদি কোভিডবিধি না মানে তবে তাদেরও তা মানার দরকার নেই। আমি পরিস্থিতির ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য সংক্ষিপ্ত সরকারী পরিসংখ্যান তুলে ধরছি।
এই লেখার সময় দেশে একদিনে আক্রান্ত :৩৪৭ হাজার; মৃত: ২৬২৪। পশ্চিমবঙ্গে একদিনে আক্রান্ত :১২৮৭৬ ; মৃত: ৫৯। ভ্যাকসিন পেয়েছেন দেশের ১.৫% (২০১৯৭১২২) মানুষ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ১% মানুষ। এই সময় ভাইরাসের চেন ভাঙ্গার জন্য দযকার ছিল ৭ থেকে ১০ দিনের পূর্ণ লকডাউন। এই দায়িত্ব নেওয়ার ইচ্ছে বা ক্ষমতা কোনটাই মনে হয় আমাদের কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নেই। খন্ডিত শকডাউনে চেন ভাঙ্গা সম্ভব নয়, শুধু সাধারন মানুষের দুর্দশা বাড়বে মাত্র।
এবার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যপারে কিছু টেকনিক্যাল কথা সাধারণ মানুষের বোঝার মত করে বলতে চেষ্টা ঈরি। প্রথমতঃ করোনা ভাইরাসের পরিবর্তিত জিন মিউটেশান নিয়ে আগে একাধিকবার আলোচনা করেছি। এখন একটা কথা অনেকেই বলছে, ডাবল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট, ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট ইত্যাদি। আমাদের দেশে এখনো অব্দি নয় প্রকারের মিউট্যান্ট করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। ভাইরাসের ধর্ম বোঝা যায় তার জিনোম সিকোয়েন্মিং দেখলে। এই জিনোম সিকোয়েন্মিংয়ে যখন কোন পরিবর্তন হয়, তখন তাকে মিউট্যান্ট বলে। যখন একটি জায়গায় পরিবর্তন হয়, তখন সেটা সিঙ্গল মিউট্যান্ট; দুটি জায়গায় হলে তাকে ডাবল মিউট্যান্ট আর তিনটি হলে তাকে ট্রিপল মিউট্যান্ট বলে। এইভাবে জিনোমের পরিবর্তনের ফলে করোনা ভাইরাসের যে নতুন জ্ঞাতি পাওয়া গেল তাকে ভ্যারিয়েন্ট বলে। এই ভ্যারিয়েন্টগুলি যখন আগের ভাইরাসের থেকে চরিত্রগত পরিবর্তন দেখায়, যেমন সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি (replication), বিভিন্ন অর্গ্যানকে আক্রমণ করার ক্ষমতা, মৃত্যুহার বৃদ্ধি ইত্যাদি, তখন তাকে বলে নতুন স্ট্রেইন। আমাদের দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী পাওয়া গেছে ব্রিটেন স্ট্রেইন (B.1.1.7)। এছারা সাউথ আফ্রিকা স্ট্রেইন, ব্রাজিল স্ট্রেইনও পাওয়া গেছে। প্রথমঢেউয়ের চার পাঁচটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্বিতীয় ঢেউয়ে পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সিঙ্গল মিউট্যান্ট বেশী, ডাবল ল মিউট্যান্ট ও একটি ট্রিপল মিউট্যান্ট পাওয়া গেছে। এদের ধর্ম যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই নোভেল করোনা ভাইরাসের থেকে আলাদা, আমাদের ভ্যকসিন এই নতুন ভাইরাসের উপর কতটা কার্যকরী হবে তা কেউই সঠিকভাবে বলার জায়গায় নেই। এখানেই কথা হচ্ছে যে, ভ্যকসিনেশানে হয়ত প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে কিন্তু তা full proof না হওয়ায় কোভিড আচরণবিধিতে কোন ঢিলেমি দেওয়া চলবে না। ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট, যেটা আমাদের রাজ্যে পাওয়া গেছে, সেই (B.1.618) ভাইরাসের জন্য ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী হবে তাতে সন্দেহ আছে।
এদিকে, আমাদের দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল অবস্থার মধ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও হংকং নতুন করে ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। উল্লেখ্য, বেশীরভাগ ইউরোপের দেশ ২০২০র লকডাউনের সময় ভারতীয়দের উপর ভ্রমণে যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল তা বহাল রেখেছে। আবার টীকাকরনের ঢক্কানিনাদে প্রশাসনিক অপদার্থতা ও রাজনীতিকরনের বিষ মিশে গিয়ে পরিস্থিতি ঘুলিয়ে দিয়েছে। টীকাকরন ক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের রেকর্ড অন্য অনেক রাজ্যের থেকে ভালো, যদিও আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। যেমন এই মূহুর্তে ৪৫ বছরের ঊর্ধে সব নাগরিকের টীকা নেওয়ার কথা। তার জন্য জনপ্রতি দুটি ডোজ ধরলে টীকা লাগে ছয় কোটি। কেন্দ্র টীকা পাঠিয়েছে এক কোটি। অর্থাৎ প্রয়োজনের ১৬% মাত্র। সেজন্য পশ্চিমবঙ্গে টীকাকরনের হার ৮% (দুটি ডোজ ধরে) এর বেশী হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একটি করে ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৯% মাত্র। সুতরাং, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রতিরক্ষা, পুলিশ, ভোটকর্মীদের এই টীকা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেওয়ার পরেও মনে হয় কিছু টীকা যাদের পাওয়ার কথা নয়, তারাও পেয়েছেন। আমাদের কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় একটি ফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য নথিভুক্ত করতে হয়েছে। সুতরাং ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সব তথ্য সরকারের কাছে থাকার কথা। তবে, এ রাজ্যে টীকার ভায়াল বা ডোজ নষ্ট হয়নি। সেটা প্রশংসনীয়।
অব্যবস্থার ছাপ সর্বত্র। এক রাজ্যের অক্সিজেন সংকটের মধ্যে সেই রাজ্যে উৎপন্ন অক্সিজেন যাচ্ছে অন্য রাজ্যে। দিল্লীতে কোন অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। সেখানকার মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে। তার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের অব্যবস্থার জন্য নয় কি? এটা নিশ্চিতরূপে প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আবার আমাদের রাজ্যে দেখছি কোভিড বেডে ভর্তির জন্র মানুষ কি কি করবে, স্টেপ বাই স্টেপ, সেই গাইডলাইন সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে বহুল প্রচারিত নয়। আমার মনে হয়, দ্বিতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলা করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য, কোন প্রশাসনই তৈরী ছিল না। দেরীতে হলেও কেন্দ্রের ঘুম ভেঙ্গেছে। তবে রাজ্য প্রশাসনের কাজ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা দুইই না থাকায় তারা দোষারোপ করেই কর্তব্য সারছে।
রেল কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেলের চত্বরে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করেছে - না পড়লে জরিমানা আদায় করছে। কিন্তু রাজ্য পরিবহন, বিশেষতঃ বাস, মিনিবাস, অটোরিক্সার মত গণ পরিবহনে এবং রাস্তাঘাট, বাজারে মানুষ মাস্ক ত দূরের কথা, অন্য কোভিডবিধিও মানছে না। এই ব্যপারে রাজ্য সরকারের কোন হেলদোল আছে বলে মনে হয় না। রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড সংক্রান্ত মিটিংয়ে, যা প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে হয়েছে, হাজির না হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তিনি করোনা থেকে রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করতে চান না, করোনা নিয়ে রাজনীতি করতেই তিনি বেশী আগ্রহী।
টীকাকরন প্রসঙ্গে বললে এর পিছনে রাজনীতিকদের নোংরামিটাও পরিস্কার বোঝা যাবে। প্রথমে আসি বহুল ব্যবহৃত কোভিশিল্ডের কথায়। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠাণ, পুণের সিরাম ইন্সটিটিউট, অক্সফোর্ড অ্যস্ট্রাজেনিকার গবেষণালব্ধ এই টীকা বানানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী টীকা বিক্রির ৫০% টাকা অ্যস্ট্রাজেনিকা পায়। কেন্দ্রীয় সরকারকে সিরাম ইন্সটিটিউট জানায় যে তারা টীকার প্রতি ডোজ ১০০০ টাকা দাম রাখবে। এতে তারা কার্যকরী দাম পাবে ৫০০টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার ঐ দামে কিনতে চায় না। এদিকে তখন সিরাম ইন্সটিটিউট টীকার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে বরাত পেল। ফলে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বাড়ানোর দরকার হল। তখন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কোন সিকিউরিটি ছাড়া তিন হাজার কোটি টাকা সফ্ট ঋণ দিল। আর একই সঙ্গে চুক্তি করল যে, সিরাম ইন্সটিটিউট আগামী জুলাই মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে এগারো কোটি ডোজ টীকা প্রতিটি ১৫০ টাকা দরে দেবে। তবে তারপর তারা বাজারে ৬০০ টাকা প্রতিডোজ দামে এবং সরকারকে ৪০০টাকা দামে বেচবে। না হলে সিরাম ইন্সটিটিউট লোকসানে ব্যবসা করতে পারবে না। এইভাবে ভারত বায়োটেকের সঙ্গেও কেন্দ্রীয় সরকার একই দামে টীকা কেনার চুক্তি করে। তাদের ১৫০০ কোটি টাকার সফ্ট লোন দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার হিসেব করে দেখে যে ডোজ প্রতি রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহণ, ওঅন্যান্য খরচখরচা মিলিয়ে ১০০টাকা পড়ছে। সেজন্য তারা ডোজপ্রতি দাম ধরে ২৫০ টাকা।মনে রাখতে হবে, এই দাম আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত। তারপর সিরাম ইন্সটিটিউট ডোজ প্রতি১০০০ টাকা দামে সিরাম বেচতে পারবে। তখন আর সরকারের সঙ্গে তার কোন চুক্তি থাকবে না। দেশের বিপুল সংখ্যর মানুষের কথা মাথায় রেখে বলা যায় যে সরকারের পক্ষে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, বিশেষতঃ কোভিড ভ্যাকসিনের মত জিনিসের, দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারী কোম্পানীকে লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য করা যায় না। শুধু মাত্র মূর্খ ধান্দাবাজ রাজনীতিকরা এমন কথা বলে বাজার গরম করতে পারে মাত্র। বিনা পয়সায় সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা যারা বলছেন তাদের সবিনয়ে বলি, আপনাদের সরকার এই টাকার বরাদ্দ রেখেছেন কি? সরকারী টাকা মানুষের করের টাকা। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিলে তার বরাদ্দের টাকাটা কোথা থেকে আসবে সেটাও একই সঙ্গে জানাবেন। বেসরকারী প্রতিষ্ঠাণ থেকে টীকা কিনে এবং আনুসঙ্গিক খরচের সংস্থান না রেখে, বাজেট তৈরী না করে এ ধরনের কথা বলা ধাপ্পাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়
(লেখক পশ্চিমবঙ্গ বায়োটেক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশানের প্রাক্তণ ডিরেক্টর ও সায়েন্টিফিক কন্সালটেন্ট