করোনা যুদ্ধে রাজ‍্যের অপরিনামদর্শিতার ফল ভুগতে হচ্ছে

       কোভিড১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা ভারতের সঙ্গে আমাদের পশ্চিমবঙ্গও বিপর্যস্ত। এখন অবস্থা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখানে সরকার প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে। এখন একমাত্র ভগবান ভরসা। অথচ কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপগুলির সুফল পেয়েছি। আমার মত অনেকেই যখন রাজ‍্য সরকারের ত্রুটিগুলি ধরিয়ে দিয়েছি, বলতে বাধা নেই, রাজ‍্য সরকারও চেষ্টা করেছে সেই ত্রুটি মেরামত করার। ফলে ধীরে ধীরে কোভিড অতিমারী চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির দৌলতে কোভিডবিধি না মেনে প্রচার, মিছিল, এবং পুরো ভোটপর্বটাই কোভিড সম্প্রচারে পুরোদমে সহায়তা করেছে! এর দায় অবশ‍্যই সব রাজনৈতিক দলের। শুধু নির্বাচন কমিশনকে তার নরম মনোভাবের জন‍্য দায়ী করা ঠিক নয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ের অব‍্যবহিত আগে অর্থাৎ প্রথম দু দফার পরেই যদি নির্বাচন স্থগিত করা যেত তবে হয়ত এই রাজ‍্যের করুণ পরিণতি অনেকটা আটকানো যেত।অনেক তথাকথিত বোদ্ধা দেখলাম মন্তব‍্য করেছেন, যে একবার নির্বাচনের পর্ব শুরু হলে তা আরস্থগিত করা যায় না - সম্পূর্ণ ভুল কথা। ১৯৯১ সাশে রাজীব গান্ধীর হত‍্যা হয়েছিল নির্বাচন পর্ব চলার মধ‍্যে। সে সময় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরে তা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এখনকার নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ দেখে আমার মনে হয়েছে, এই কমিশনের এত শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহসের অভাব আছে। যাই হোক, শুধু নির্বাচন অতিমারী ছড়ানোর একমাত্র কারন নয়। অন‍্যতম একটি কারন হল, সাধারণ মানুষের মনে বেপরোয়া ভাব, যেন আমরা করোনা জয় করে ফেলেছি। এদিকে রাজ‍্য সরকারও ঘরের বাইরের সকল বিনোদনের জায়গা - সিনেমা হল, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, শপিং মল, চিড়িয়াখানা, পার্ক এমনকি খেলার মাঠ খোলা রেখে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সং?ক্রমণ বাড়াতে সাহায‍্য করেছে।
       একটি অত‍্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে কোভিড মোকাবেলায় আত্মম্ভরী ঢক্কানিনাদ। ভারতে হাসপাতালের পরিকাঠামো থেকে ধরে ভ‍্যকসিন তৈরী - সবেতেই নাকি আমরা বিশ্বসেরা! এর ফলে সাধারণ মানুষ থেকে আরম্ভ করে সরকারী প্রশাসন, সকলেই মিথ‍্যা আত্মতৃপ্তিতে মশগুল ছিল। সরকার হয়ত কিছু ভালো কাজ করেছে, কিন্তু রাজনৈতিক চাটুকারিতা সরকারের কর্মদক্ষতার উপর অপপ্রভাবও ফেলেছে। এর আরেকটা কারন হল এই সময় ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতার অতিবৃদ্ধি।
     এর ফলে প্রথম যেটির অভাব হল তা কোভিড রোগীর বেডের ঘাটতি। তাও যদিবা সামলানো খেল, তারপর এলো প্রাণদায়ী অক্সিজেনের ঘাটতি। চাহিদার তুলনায় কিছু বেশী অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখাই দস্তুর। কিন্তু রোগীর সংখ‍্যা গুণিতকে বাড়তে থাকায় বর্ধিত অক্সিজেন সিলিন্ডার যোগানো সম্ভব হলনা। ফল, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু,যা সারা দেশে সংবাদ মাধ‍্যমগুলি প্রচার করল। এভাবে মানুষকে অযথা ভীত সন্ত্রস্ত ও সরকারকে চাপে ফেলে দিল। কিছু কিছু জায়গায় বন্টন ব‍্যবস্থার গোলমাল ও তজ্জনীত রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টায়বেশী সময় ধরে অবস্থা খারাপ থাকল। আমরা দিল্লীতে, উত্তর প্রদেশে ও হরিয়ানায় বিনা অক্সিজেনে কত মানুষ মারা গেছে তার পরিসংখ‍্যান সংবাদ মাধ‍্যমে দেখেছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বা মহারাষ্ট্রে অক্সিজেনের অভাবে কত রোগী মারা গেলেন তার পরিসংখ‍্যান দেখিনি। তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় যে, পশ্চিমবঙ্গে অক্সিজেনের অভাবে কোন রোগী মারা যায়নি। তাহলে কি অক্সিজেন নিয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার যে অভিযোগ মূখ‍্যমন্ত্রী করেছেন তা অসত‍্য? না। মূখ‍্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। তবে রাজ‍্যের মেরুদন্ডহীণ সংবাদ মাধ‍্যম এমন কোন সংবাদ পরিবেশন করে না যাতে রাজ‍্যের কোনরকম ঘাটতি প্রকাশ পায়। এটা করতে গিয়ে নিজেদের দায়িত্ব বিস্মৃত হয়ে 'চাটুকারিতা পরম ধর্ম' ব্রত উদযাপন করে তারা সরকারকে সঠিক পথ দেখাতে পারছে না।
        পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ‍্যপরিকাঠামো এমনিতেই খুব উন্নতমানের নয়। অধিকন্তু মারমুখী আত্মীয়স্বজনের চাপে রোগী পরিষেবায় ডাক্তার, সিস্টার ও অন‍্যান‍্য স্বাস্থ‍্যকর্মীরা যথেষ্ট চাপের মধ‍্যে থেকে কাজ করেন। এর উপর আছে স্বাস্থ‍্যভবনের ডাক্তার -আমলাদের অপ্রয়োজনীয় এবং অবান্ছিত হস্তক্ষেপ। ফলে, বেশীরভাগ সময়েই হাসপাতালে work-to-rule পরিষেবা পাওয়া যায়। এছাড়া বেসরকারী হাসপাতাল ও বড় নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে রাজনীতির উপর মহলের অশুভ আঁতাতের কথা সর্বজনবিদিত। এসবের মিলিত ফলশ্রুতিতেই কোভিড১৯এর দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে এভাবে মুখ থুবরে পড়েছে স্বাস্থ‍্য পরিষেবা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশা করা যায়সরকার এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবে। অতিমারী নিয়ে কেন্দ্র-রাজ‍্য কুস্তির একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। এই রাজ‍্যে প্রধান বিরোধী দল এখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে। সেজন‍্য রাজনীতির খেলায় মেতে এ রাজ‍্যের মূখ‍্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে দরবার করলেন, কোভিডের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং অক্সিজেনের উপর যেন GST মকুব করা হয়। তিনি জবাব পেলেন GST আগেই মুকুব করা হয়েছে! রানীতির টানাপোড়েন চলতেই থাকে। Atrial fibrillation আটকানোর ওষুধের ১৪টি ট‍্যবলেটের দাম mrpতে ১২০ টাকা। যখন থেকে এটি কোভিড রোগীর চিকিৎসায় ব‍্যবহার করা শুরু হল, আর এই ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। যাদের হার্টের সমস‍্যার জন‍্য এই ওষুধ লাগে তারা একই compositionএর  অন‍্য কোম্পানির ওষুধ কিনছেন যার দাম ৫০৯ টাকা। কেন্দ্র বা রাজ‍্য, কোন সরকারই এ ব‍্যপারে উচ্চবাচ্য করছেনা! স্বাস্থ‍্যভবনের চিকিৎসক আমলারা, যাদের একমাত্র যোগ‍্যতা চাটুকারিতা, তারা এ খবর রাখেন কিনা জানা নেই।
     এই মূহুর্তে বলা যেতে পারে কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র টীকাকরণ। আমাদের দেশের সমস্ত মানুষজনের টীকাকরণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ‍্যে শেষ করার জন‍্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ‍্য হচ্ছি, রাজনৈতিক কারণে ামাদের দেশে তৈরী টীকা বিদেশে বিক্রি ও সাহায্য হিসেবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষদের সুষ্ঠু টিকাকরনের পরিকল্পনা করা হয়নি। প্রথমে ষাটোর্ধ মানুষের টীকাকরণ শুরু হল। দুটি কোম্পানির টীকা। আমাদের কোন পছন্দের সুযোগ নেই। যে কোম্পানির টীকা পাওয়া যাবে তাই নিতে হবে। সরকারী বা নির্দিষ্ট বেসরকারী স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রে টীকাদান কর্মসূচি শুরু হল। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব প্রথম টীকার পরে দ্বিতীয় টীকা নির্দিষ্ট সময়ের ব‍্যবধানে দিয়ে টীকাকরণ সম্পূর্ণ করা। সরকারের ভুল নীতি এবং কিছুক্ষেত্রে নীতিহীণতার জন‍্য দেশের টীকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হওয়ার মুখে। রাজ‍্যের জনসংখ্যা অনুপাতে সব রাজ‍্যকে টীকা সরবরাহ করার কথা কেন্দ্রের। পরের পর্যায়ে রাজ‍্যগুলি তার নাগরিকদের নির্দিষ্ট কর্মসূচির মধ‍্যে দিয়ে টীকাকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে। এটাই হওয়ার কথা। অথচ পুরো প্রক্রিয়াই বিপর্যস্ত। কেন?  প্রথম কারন হচ্ছে, দুটি টীকা উৎপাদনকারী সংস্থা তাদের ভিন্ন ভিন্ন উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে টীকা তৈরী করছে। দেশের জনসংখ্যার হিসেবে প্রত‍্যেক রাজ‍্যকে কেন্দ্রের টীকা পাঠানোর কথা। পাঠানো হয়নি। না কেন্দ্র, না রাজ‍্য, কোথাও সুষ্ঠু প্ল‍্যানিংয়ের কোন ছাপ নেই। এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে ভারতে ১৬,৮২,৭৬,২১৪টি টীকা দেওয়া হয়েছে। যদি দুটি ডোজের সম্পূর্ণ টীকাকরণকে ধরা হয়, তা সলে দেশের জনসংখ‍্যার মাত্র ১% এর কাছাকাছি মানুষ এখনো অব্দি সুরক্ষিত হয়েছে। এইভাবে চললে আগামী দু বছরেও টীকাকরণ সম্পূর্ণ হবেনা। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সহাস‍্য মুখ দেখিয়ে প্রচার করা হল, আমাদের মহান প্রধানমন্ত্রী নিজেই টীকা তৈরী করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি তা দান খয়রাত করছেন! এটি সত‍্যি হলে তা সামাজিক অপরাধ আর তা না হয়ে থাকলে এমন প্রচার করা সামাজিক অপরাধ। পশ্চিমবঙ্গে এখনো পযর্ন্ত ১,১৯, ৬৩, ৫৩২ টি টীকা দেওয়া হয়েছে। যদি দুই ডোজের টীকাকরণ ধরে টীকা সম্পূর্ণ করার হিসেব করা হয় তবে এখনো অব্দি ০.৫%  মানুষও এই রাজ‍্যে সুরক্ষিত হয়নি। cowin.gov.in এর হিসেবে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ‍্যের জন‍্য প্রেরিত টীকার সংখ‍্যার সঙ্গে রাজ‍্যের জনসংখ্যার কোন মিল নেই। শতকরা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক অনেক বেশী টীকা পেয়েছে। কোন নীতিতে কেন্দ্র টীকা পাঠাচ্ছে তা একদম স্বচ্ছ নয়।
       আবার দেখা যাচ্ছে যে দুটি সংস্থা টীকা তৈরী করছে, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা, কত পরিমাণ টীকা তারা সরকারকে দিচ্ছে তার সঠিক হোমওয়ার্ক না করেই সরকার প্রথমে সিনিয়ার সিটিজেন্স, পরে ৪৫+ বয়েসের এবং সবশেষে ১৮+ বয়েসের সব নাগরিকদের টিকাকরণ শুরু করার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এই রকম অদ্ভুত বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের কর্মদক্ষতার ছাপ নেই। কারন এখনো পর্যন্ত সারা দেশের বয়স্ক নাগরিকের বেশীরভাগেরই এক বা কোন টীকাকরণ হয়নি। এদিকে টীকার সংখ‍্যা কমে যাওয়ায় টীকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে টীকা গ্রহীতার লাইন ও দুর্ভোগের শেষ নেই। মনে হচ্ছে নিজের ক্ষমতার যথাযথ পরিমাপ না করতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার ছনসাধারনের জীবন দুর্বিষহ করে দিচ্ছেন। 'কোভ‍্যকসিন' টীকা প্রস্তুতকারী সংস্থা সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় এবং এদের টীকা তৈরীর সব উপাদান দেশীয়। সরকারের উচিৎ ছিল এই সংস্থাটির উৎপাদন বাড়ানোর জন‍্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করা। প্রয়োজনে এদের multi centered production unit তৈরী করতে আর্থিক ও প্রশাসনিক সাহায‍্য করা। সরকার তা যথাযথভাবে করেনি। আবার 'কোভিশিল্ড' প্রস্তুতকারী সংস্থা যারা সারাদেশে প্রায় ৯০% টীকা সরবরাহ করেছে, তারা ব্রিটিশ সংস্থা অ‍্যস্ট্রাজেনিকার লাইসেন্সে টীকা তৈরী করছে। ফলে, এর একটা আন্তর্জাতিক  সমঝোতার শর্ত আছে। তাছাড়া এর এমন কাঁচামাল লাগে যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সরকার এটি বেশী কিনছে কারন এর দাম কম। আমার প্রশ্ন, সরকারের কাজ কি তার নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ নাকি বানিয়ার মত লাভ-ক্ষতির হিসাব করা।
      জনসাধারণের আরো জানা উচিৎ, এই টীকা তৈরীর জন‍্য বিদেশ থেকে আসা কাঁচামালের আমদানী শুল্ক সরকার তুলে নিয়েছে বলে প্রচার করা হলেও এর অন‍্যান‍্য দেশীয় কাঁচামালের উপর সরকার GST এখনো তুলে নেয়নি। এই ধরনের পদক্ষেপ কিসের সংকেত? অর্থাৎ, এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে সরকারের ভারতীয় নাগরিকদের টীকাকরনের জন‍্য সুষ্ঠু কার্যক্রম নির্মানে ঘাটতি ছিল এবং আছে। সরকারের এবং শাসকদলের কিছু পদাধিকারীর বাগাড়ম্বর পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে। আমাদের দেশের টীকা উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে থাকলে এখন সরকার বিদেশের জনসন, ফাইজার, স্পুটনিকের মত টীকাগুলিকে আনার জন‍্য আকুলি বিকুলি করত না।
       এদিকে দেশের সম্পূর্ণ টীকাকরনের প্রক্রিয়া আরো ধীরে চলতে শুরু করার জন‍্যও কেন্দ্রীয় সরকারের অপরিণামদর্শীতাই দায়ী। তারা টীকাপ্রতি ১৫০ টাকা মূল‍্যে স্বল্প কিছু টীকা কিনে টীকাকরণ শুরু করে দিয়ে বাহবা নিতে গেল। তারপর শর্ত অনুযায়ী সংস্থা দুটি যখন দাম বাড়াতে চাইল, তখন টীকা সংগ্রহের দায়িত্ব অনেকাংশে সরকার নিজের ঘাড় থেকে ছেটে ফেলল! তারা রাজ‍্যগুলির ঘাড়ে টীকার বাড়তি বোঝা আর বেসরকারী টীকাকরণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত সংস্থাগুলির ঘাড়ে আরো সুউচ্চ মূল‍্যের বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিল। সারা দেশে একই দামে টীকাকরণ প্রক্রিয়া না চালালে প্রতিবাদ হবেই। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপকারী চরিত্রের বদলে বানিয়া চরিত্র প্রকাশ পেল। সরকার জনসাধারণের উপকার করার বদলে নিজের ব‍্যবসায়িক লাভের দিকটাই দেখল। ফলে সরকারের জনপ্রিয়তার উপর কালো ছায়া পড়ল। সারা দেশে সরকারের ভাবমূর্তি যথেষ্ট কালিমালিপ্ত হল।
      আরেকটি কথা। এই যে কয়েক বছর ধরে টীকাকরন প্রক্রিয়া চালানো - একটি অবাস্তব পদক্ষেপ। কারন এই RNA ভাইরাস তার রূপ বদল করে মানুষের ইমিউন সিস্টেমে আঘাত করে। সুতরাং সে দীর্ঘ সময় পেলে টীকাকে বোকা বানিয়ে তার ধ্বংসলীলা চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। সরকারের আপাত ব‍্যর্থ পরামর্শদাতাদের এটা মাথায় রাখা উচিৎ।
        পরিশেষে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ত্রুটির জায়গাটা ধরিয়ে দিই। এখানে প্রশাসন চলে অনুপ্রেঢ়নায় আর রাজনৈতিক লক্ষ‍্যে। এমনিতেই টীকাকরণের হার ও মাত্রা অনেক কম হওয়ায় টীকাকরণকেন্দ্রগুলিতে আগ্রহীদের লাইন অনেক বড় হচ্ছে। সরকারের ঘোষিত নীতি সকলকে বিণামূল‍্যে টীকাকরণ - সাধু প্রস্তাব। এদিকে ১লা মে থেকে টীকাকরণের যোগ‍্য মানুষজনের সংখ‍্যা অনেক বেড়ে গেল (১৮+ বয়সের নাগরিকদের টীকাকরন শুরু )। তখনই সরকার বেসরকারী টীকাকরণকেন্দ্রগুলিতে টীকার যোগান বন্ধ করে দিল। ফলে, সরকারী টিকাকরণকেন্দ্রগুলিতে ভিড় বাড়তে লাগায় সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে গেল। অনেক বয়ষ্ক নাগরিক দ্বিতীয় ডোজের সময় হয়ে গেলেও টীকা পাচ্ছেন না। সরকার তাদের জন‍্য বেসরকারী টীকাকেন্দ্রগুলি খোলা রাখলে এই অব‍্যবস্থা এড়ানো যেত। দেশের জনসাধারনকে গিনিপিগ বানানোর প্রক্রিয়া এভাবে আর কতদিন চলবে তার উত্তর এখনো অজানা।

( লেখক পশ্চিমবঙ্গ বায়োটেক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশানের প্রাক্তণ নির্দেশক ও পরামর্শদাতা )

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *