নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণার পর বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে। এখন মনে হচ্ছে "ভোট যুদ্ধ" জয়ের তাগিধে নয়া শিক্ষানীতির রূপায়ণ প্রায় স্থগিত হয়ে আছে। জানিনা কবে আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে নয়া শিক্ষানীতি রূপায়ণের পরিকল্পনা ও সেই উদ্দেশ্যে কাজকর্ম শুরু হবে।
অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে, এই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ত বলেই দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা এই শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করবেন না। তা'হলে এই রাজ্যে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা কি করে হবে! আসলে এ ধরনের রাজনৈতিক ভাষণ পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদেরই শোভা পায়। এই ভাষণ অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত পার্টি কর্মী, সমর্থকদের খুশী করার জন্য যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশী মন্ত্রী হিসেবে আত্মশ্লাঘা অনুভব করা। এটি একটি অদ্ভুত দলের কিম্ভুত সরকার। মূখ্যমন্ত্রী বলেন, "তুই টাকা দিস যে হিসেব দেব"! দেশের সংবিধান ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে সঠিক ধ্যান ধারনার অভাব আর তার সঙ্গে অশিক্ষা, কুশিক্ষার বহিঃপ্রকাশ এসব সদম্ভ উক্তি।
দেশের শিক্ষানীতি একটি জাতীয় কাঠামো। এর রূপরেখা সর্বদা কেন্দ্রীয়ভাবেই তৈরী হয়। স্বাধীনতা উত্তর রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারে এবং তার দায়িত্বও কেন্দ্রীয় সরকারের। শেষ শিক্ষানীতি, যেটির বাস্তবায়ন হয়েছে, সেটি রূপায়নের দায়িত্বে ছিল যে কমিটি তার অধিকাংশ সদস্যই বামপন্থী। কিছু ছিল নেহেরু ঘরানার সোশাল ডেমোক্র্যাট। এই বামপন্থীরা সরাসরি তাদের এ্যাজেন্ডা রূপায়িত করার জন্য শিক্ষানীতিকে ব্যবহার করেছে। সেজন্য প্রথমেই তারা এমন সিলেবাস বানিয়েছে যেখানে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যকে হয় অবহেলা বা বিকৃত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী প্রথমে নরম ইসলামিকরন ও পরে সরাসরি ভারতের বুকে ইসলামি অনুপ্রবেশকে বিকৃত ইতিহাসের মাধ্যমে মহিমান্বিত করেছে। তাদের প্রতিষ্ঠিত "বহিরাগত আর্য" সভ্যতার তথ্য Cambridge ও Harvard বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভুল প্রমাণিত হয়েছে দ্রাবিড়ীয় সভ্যতাকে অনার্য সভ্যতা হিসেবে দেখানোও। এই সব কল্পিত ইতিহাস সুক্ষভাবে শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রদের মগজ ধোলাইএ প্রভূত সাহায্য করেছে। আর 'ইসলামিক সেকুলার' তত্ত্ব প্রচার করে অবিভক্ত কমু্যনিষ্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি গঙ্গাধর অধিকারীর থিসিস মোতাবেক ভারতের আরো খন্ডিতকরন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য পরিবেশ তৈরীতে সাহায্য করেছে। যেসব অধ্যাপকদের এই কাজে ব্যপৃত থাকতে দেখা গেছে তাঁরা সকলেই কোন না কোন কমু্যনিষ্ট পার্টির সদস্য বা উগ্র সমর্থক, যেমন, রোমিলা থাপর, ইরফান হাবিব, বিপন চন্দ্র ইত্যাদি। পক্ষান্তরে, রমেশ মজুমদার কালীকিঙ্কর দত্ত, এইচ সি রায়চৌধুরী ইত্যাদি লেখকের গবেষণালব্ধ জ্ঞানের ভান্ডারকে ধীরে ধীরে পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। তাজমহলের গায়ের pietra dura কাজকে নতুনত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হল। এটি সর্বৈব ভুল। Fergusonএর Indian Archtecture বইতে তা জানানোও হয়েছে। তাজমহল তৈরীর আগে অন্ততঃ দুটি জায়গায়, অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির ও যমুনার অন্য পারে নুরজাঁর তৈরী তার পিতার কবরসৌধে এই কাজ দেখা যায়। মোদ্দা কথা, ইসলামের যা কিছু তা ভালো আর ভারতের প্রাচীন সব কিছু খারাপ!
যতদিন দেশে গান্ধী পরিবারের শাসন চলেছে, অত্যন্ত সূক্ষভাবে হিন্দুবিদ্বেষ ও প্রাথমিকভাবে ইসলামতোষণ এবং তারপর ২০০৪ সাল থেকে কিছুটা হলেও খ্রীষ্টান তোষন। এর একটা কারন নিঃসন্দেহে বলা যায় গান্ধী পরিবারের যে বা যারা যখন ক্ষমতার শীর্ষে থাকেন তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ। যেহেতু এই পরিবারের শাসকদের সঙ্গে লেখাপড়ার যোগ নেই, তাই শিক্ষার আলোকে এদের ধর্মীয় আবেগযুক্তিগ্রাহ্যরূপে প্রকাশ পায়নি। "ধর্মনিরপেক্ষ" ও "সমাজতান্ত্রিক" এই দুটি কথা ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী দেশের সংবিধানে জোর করে ঢোকানোর পর শিক্ষানীতিতেও "ইসলামিক ধর্মনিরপেক্ষতা" ও "সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা" ব্যবস্থার নামে মানব সম্পদ তৈরীর কৌশল প্রয়োগ করায় বামপন্থী শিক্ষানীতির সুপরিকল্পিত ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। এই শিক্ষানীতিতে জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কথা ভুলিয়ে দিয়ে বিদেশী 'ইজম্' ও মধ্যপ্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের লুঠেরাদের মধ্যে 'মহান ব্যক্তিত্ব' খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন ছোট ছোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে এধরনের ভ্রান্ত প্রচার চালিয়ে তাদের নিজস্ব শিকরকে ভুলিয়ে দেওয়া গেছে। কিন্তু সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সুবিশাল দেশ ভারতে তা সম্ভব নয়। টাকা ও ক্ষমতার জেরে এই চাপিয়ে দেওয়া নীতি একসময় উল্টে যেতে বাধ্য। দেশে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র ও কমু্যনিষ্টদের ভন্ডনীতির রাজনীতি যখন অস্তাচলের পথে, তখনই এলো এক নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। এই নীতির প্রথম দিশা পাওয়া গেল শিক্ষার্থীদের "মানব সম্পদ" থেকে "ছাত্র" নামের উত্তরণে। পার্টির স্বার্থে মানুষকে পার্টির মত করে পার্টির নীতি রূপায়ণের শিক্ষার বদলে মুক্ত চিন্তা করার মধ্যে দিয়ে ছোট বয়েস থেকেই ছাত্রদের বৌদ্ধিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়া হল। ফলে, ছাত্রদের মস্তিষ্কের বিকাশ উপযোগী শিক্ষার সূচনা করবে এই নতুন শিক্ষানীতি। সাধারণ একটি উদাহরন দেওয়া যাক। একটি বিষয়ের কোন অধ্যায় শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পড়ালেন। কেউ তাঁর মত করে বুঝিয়ে দেন, কেউবা নোটস দেন। পরীক্ষায় তার থেকে প্রশ্ন আসে, ছাত্ররা মুখস্ত করে, স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করে সে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়। এই ছিল আগের শিক্ষানীতিতে পঠন পাঠনের ধরন। কিন্তু নতুন শিক্ষানীতিতে শিক্ষক ঐ অধ্যায় বোঝানোর জন্য বিভিন্ন উদাহরণ, যা কেস হিস্ট্রিও বলা হয়, সহযোগে ছাত্রদের বুঝিয়ে দেবেন এবং ছাত্রদের শ্রেণীকক্ষে বসে তাদের বিচার বুদ্ধি অনুযায়ী চিন্তা করে উত্তর দিতে হবে। বিদেশে এধরনের শিক্ষা অনেক আগে থেকেই চালু আছে। এতে ছাত্রদের বৌদ্ধিক বিকাশের পথ সুগম হয়। ছাত্রদের বিষয় চয়নের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে যে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে তাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি শিক্ষানীতির একটি উল্লেখযোগ্য পজিটিভ দিক। যদিও এই শিক্ষানীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে অবকাঠামো (infrastructure) নির্মাণ সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ, তার সফল রূপায়ণের সদিচ্ছা থাকলে কাজটি দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। এর জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তাই শুধু নয়, উপযুক্ত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক তৈরীর ট্রেণিং পরিকাঠামো নির্মাণও জরুরী। সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে তার স্তরভিত্তিক বাস্তব রূপায়ণে জোর দিতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগ ও তাঁদের নিরন্তর ট্রেণিং অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে পরিকল্পনা মাফিক করতে হবে। শুধু তাই নয়, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। সকল স্তরের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া রাজনীতিমুক্ত শিক্ষক-নিয়োগ আয়োগের মাধ্যমে করলে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে সুযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির প্রবেশ এবং শিক্ষাকে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র চয়ন থেকে পরীক্ষা পদ্ধতির কারসাজি সমস্তই বন্ধ হবে যদি শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনীতির প্রবেশ বন্ধ হয়। অনেক সভ্যদেশেই শিক্ষকদের রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিফলন তাঁদের শিক্ষকতার কাজে নাপড়ে সেটা দেখা হয়। আমাদের দেশেও তা বলবৎ করা অত্যন্ত জরুরী। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দ্রুত নেমে যাচ্ছে শিক্ষাকে রাজনীতিকরনের জন্য। এটি বন্ধ করা আশু প্রয়োজন।
যেহেতু ছাত্রদের বিষয় চয়নের জন্য ব্যপক পছন্দের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত বিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি জায়গায় সব বিষয়ের পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সেজন্য এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে পঠন-পাঠনের, বিশেষতঃ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, গুচ্ছ (cluster) study পদ্ধতির ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষায় উন্নত দেশগুলিতে এই পদ্ধতির প্রয়োগ দেখেছি। যতটা সম্ভব কাছাকাছি জায়গার মধ্যে বিদ্যায়তনগুলিকে গুচ্ছ করে সবাইকার মধ্যে বিষয়গুলি ভাগ করে ছাত্রদের এক বিদ্যায়তন থেকে নির্দিষ্ট রুটিনে অন্য বিদ্যায়তনে পাঠ নেওয়ার সুযোগ দিলে প্রথমেই ব্যয়সাধ্য পরিকাঠামো উন্নয়ণের খরচ অনেকটাই কমানো যাবে।
একটি ব্যপারে নতুন শিক্ষানীতি নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। সেদিকে আলোকপাত করার প্রয়োজন আছে। তাহল বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে। আমি তুরস্কের ইস্তানবুল শহরে দেখেছি উচ্চশিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছড়াছড়ি। শহর সীমার মধ্যে আটটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে তুরস্কের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্তানবুল ইউনিভার্সিটি ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে স্থাপিত। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেষ্ট হাউসে ছিলাম সেটি ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্তানবুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি। এটি ১৭৭৩ খ্রীষ্টাব্দে পথ চলা শুরু করে। এর প্রশাসনিক ভবনটি গথিক আর্টের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পঠন-পাঠনের মান অত্যন্ত উন্দত। কিন্তু এর সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, এই শহরেই ত্রিশটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলি প্রাইভেট ফাউন্ডেশান বা ট্রাষ্টের অধীন। এরা অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানের বিশ্ববিদ্যালয়। এদের ডিগ্রী দেওয়ার কোম্পানি বলাই বোধহয় ভালো। আমি এমন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছি যেটি একটি রেস্তোরাঁর উপরে একটি তলা ভাড়া নিয়ে চলছে! সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান ও বেতন কাঠামো উচ্চমানের হলেও এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অতি নীচু মানের। এদের জন্য ইস্তানবুলের শিক্ষার মান অনেক নেমে যাচ্ছে। আবার আমেরিকায় দেখেছি, সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেমন, ইয়েল, প্রিন্সটন, হারভার্ড ইত্যাদির মানের সঙ্গে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানও নামতে থাকে। আমেরিকার অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের মান আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির তুলনায় নিকৃষ্ট। এইসব মাথায় রেখে শিক্ষকদের উৎকর্ষতা অনুযায়ী বেতন কাঠামো স্থির করা শিক্ষানীতির সঠিক রূপায়ণের জন্য জরুরী। আর এখানেই একটি অনিয়মের ব্যপারে আলোকপাত করা দরকার। আমাদের দেশে বামপন্থী সাম্যবাদী কায়দায় মুড়ি মিছরির একদর বানিয়ে ইউ জি সি নির্ধারিত পেস্কেল সব শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ হল। ফার্স্ট গ্রেড টু লাস্ট গ্রেড, সমস্ত কলেজের প্রিন্সিপালদের বেতনক্রম সমান। এমনকি সরকারপোষিত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বেতনসমান! এবার কিন্তু নতুন শিক্ষানীতির প্রয়োগের সময় আমাদের সরকারের মাথায় রাখতে হবে, কমু্যনিষ্ট আইডিওলজির সাম্যাবস্থার নীতি শিক্ষার ও শিক্ষার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির অন্তরায়। কোন জাতীয়তাবজাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র তা করে না।
শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, স্বজনপোষণ, দূর্ণীতি ইত্যাদি থাকায় এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিক্ষকদের উচ্চতর পদ ও বেতন নিশ্চিতকরন করে শিক্ষার উৎকর্ষতার সঙ্গে আপোষ করা হয়েছে। এর পরিবর্তন দরকার। একই রকমভাবে বেসরকারী বিদ্যালয় থেকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সমস্ত স্তরেই শিক্ষক নিয়োগের সূষ্ঠু ও স্বচ্ছ নীতি না থাকায় এবং নির্দিষ্ট বা নূন্যতম পেস্কেল না থাকায় (অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ইউ জি সি নির্ধারিত পেস্কেল দেয় না) এইসব শিক্ষায়তনের শিক্ষকদের থেকে উপযুক্ত শিক্ষাদান আশা করা যায় না। এইধরনের বিদ্যায়তনগুলি সম্পর্কে সরকারকে একটি সুস্থ ও বিজ্ঞানভিত্তিক নীতি প্রনয়ণ করতে হবে। কাজের স্থিরতা ও বেতনবৃদ্ধির নিশ্চয়তা যেমন একজন শিক্ষককে অলস ও কর্তব্যবিমুখ করে দিতে পারে, তেমনি শিক্ষকের কাজের উৎকর্ষতার জন্য তাঁর কর্মক্ষেত্রে আর্থিক ও অন্যান্য স্বীকৃতি মেলারও প্রয়োজন আছে।
সুতরাং বলাযেতে পারে যে নতুন শিক্ষানীতি পরিকল্পিত পথে রূপায়িত করতে হলে শিক্ষক শিক্ষন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন, শিক্ষক চয়ন পদ্ধতি ও তাঁদের শিক্ষাদান একটি পূর্ণ সময়ের সূচীর মধ্যে রাখা, শিক্ষকদের দায়বদ্ধতার হিসেব ও তাঁদের সামাজিক সন্মান - এই বিষয়গুলিতে জোর দিতে হবে। এখন একজন IAS বা WBCS অফিসারের কথা ছেড়ে দিন, শিক্ষা দপ্তরের সাধারণ করণিকও শিক্ষকের প্রাপ্য অর্থনৈতিক চাহিদার ফাইল চালানোর জন্য ঐ শিক্ষককে দপ্তরে ডেকে পাঠান। অনাবশ্যক কারনে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকেন। এই পদ্ধতির পরিবর্তন দরকার। কারন শিক্ষক তাঁর কাজ অর্থাৎ পড়ানো বন্ধ রেখে অযথা দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করলে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষাদান পদ্ধতি। শিক্ষকদের চাকরী সম্পর্কীয় কোন ফাইল আটকে রেখে কোন আমলা, তিনি যত বড়ই হোন না কেন, যদি অনাবশ্যক দীর্ঘসূত্রতা করেন, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা উচিৎ।
পরিশেষে জানাই, বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মান, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির উপর সরকারের কার্যকরী নজরদারি থাকলেই এদের নূন্যতম মান নিশ্চিতকরন সম্ভব হবে।